thereport24.com
ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল 24, ৬ বৈশাখ ১৪৩১,  ১১ শাওয়াল 1445

শেয়ার প্রতি আয় বেশি দেখিয়েছে পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালস

২০১৭ জানুয়ারি ১৫ ২১:২৩:০৯
শেয়ার প্রতি আয় বেশি দেখিয়েছে পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালস

পপুলার ফার্মাসিউটিক্যাসের আর্থিক হিসাবে আন্তর্জাতিক ও বাংলাদেশ হিসাব মান (আইএএস ও বিএএস) লঙ্ঘন করে শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) বেশি দেখানো হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানটিতে শ্রম আইন ব্যত্যয়সহ নানা অনিয়ম ঘটেছে। কোম্পানির রেড হেরিং প্রসপেক্টাস পর্যালোচনায় এ তথ্য উঠে এসেছে।

কোম্পানি কর্তৃপক্ষ আইএএস ও বিএএস-৩৩ লঙ্ঘন করে ২০১১ ও ২০১৩ সালে ইপিএস বেশি দেখিয়েছে। ২০১৩ সালে কোম্পানির ০.২৯ টাকা ইপিএস হলেও ০.৪১ টাকা দেখিয়েছে। ২০১১ সালের ২.৮৬ টাকার পরিবর্তে ২৮.৬২ টাকা দেখিয়েছে।

এ বিষয়ে কোম্পানি সচিব শফিউল আজম বলেন, ‘ইপিএস হিসাবে ভুল হয়েছে। তবে পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) সংশোধনী জমা দেওয়া হয়েছে।’

ওষুধ কোম্পানি হিসাবে শেয়ার প্রতি আয়ে অনেক পিছিয়ে রয়েছে পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালস। এ কোম্পানি ৬ মাসে যে পরিমাণ ইপিএস করেছে, তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর ৩ মাসের ইপিএস তার চেয়ে অনেক বেশি।

দেখা গেছে, পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালসের ২০১৬ সালের ৬ মাসে বা ২ প্রান্তিকে ০.৯৬ টাকা ইপিএস হয়েছে। কিন্তু শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত এসিআই পপুলারের অর্ধেক সময়ে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের ৩ মাসে বা ১ম প্রান্তিকে ৪.৫ টাকা ইপিএস করেছে। এ ছাড়া এই ৩ মাসেই একমি ল্যাবরেটিরিজ ১.৭৯ টাকা, বেক্সিমকো ফার্মা ১.৩৩ টাকা, ইবনে সিনা ১.৯২ টাকা, ওরিয়ন ফার্মা ১.১৭ টাকা, ওরিয়ন ইনফিউশন ০.৩৬ টাকা, রেনাটা ১০.৭২ টাকা, স্কয়ার ফার্মাসিটিক্যালস ৩.৮৯ টাকা ও অ্যাম্বি ফার্মা ০.৫৫ টাকা ইপিএস করেছে। এক্ষেত্রে শুধুমাত্র ওরিয়ন ইনফিউশন পপুলারের তুলনায় পিছিয়ে।

২০১৬ সালের ১ম ৬ মাসে ইউটিলিটি মেশিনারির ওপর অবচয় কম চার্জ করে মুনাফা ও সম্পদ বেশি দেখানো হয়েছে। এ সময় নতুন ১ কোটি ৫৩ লাখ টাকার ইউটিলিটি মেশিনারি কেনা হলেও এর ওপর অবচয় চার্জ করা হয়নি।

প্রাচীর, ফ্যাক্টরির ভিতরে রাস্তা, পার্কিং প্লেস, বাগান ইত্যাদি ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট। এসব সম্পত্তির নির্দিষ্ট আয়ুষ্কাল আছে। যে কারণে বিএএস-১৬ অনুযায়ী, ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অবচয়যোগ্য সম্পদ। কিন্তু পপুলার কর্তৃপক্ষ এ সম্পদের ওপর অবচয় চার্জ না করে সম্পদ ও মুনাফা বেশি দেখিয়ে আসছেন।

বিএসইসি’র সাবেক অফিস অব দ্য চিফ অ্যাকাউন্টেন্ট, কনসালটেন্ট মো. মনোয়ার হোসেন (এফসিএমএ, সিপিএ, এফসিএ, এসিএ) বলেন, ‘অ্যাকাউন্টিং স্টান্ডার্ড অনুযায়ী অবশ্যই ল্যান্ড ডেভেলপমেন্টের ওপর অবচয় চার্জ করতে হবে। অন্যথায় মুনাফা ও সম্পদ বেশি দেখানো হবে। যা বিনিয়োগকারীদের মাঝে ভুল তথ্য প্রদান করা হবে।’

ব্র্যাক ইন্টারন্যাশনালের সাবেক হেড অব ইন্টারনাল অডিট সামসুর রহমান (এফসিএমএ) বলেন, ‘প্রাচীর, ফ্যাক্টরির ভিতরে রাস্তা, পার্কিং প্লেস, বাগান ইত্যাদি ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সম্পদ। এসব সম্পদ কখনো ভবন বা সিভিল কনস্ট্রাকশনের সাথে যুক্ত হতে পারে না।’

শ্রম আইন ২০০৬ অনুযায়ী, ২০০৬ সাল থেকে নিট আয়ের ওপর ৫ শতাংশ ডব্লিউপিপিএফ ফান্ড গঠন করতে হয়। কিন্তু পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালস ২০১২ সাল পর্যন্ত এ ফান্ড গঠন করেনি। আর ২০১৩ সালে গঠন করলেও বিধান অমান্য করে তা ২০১৪ সালে বিতরণ করেনি।

রিটার্ন অন ইক্যুইটি অর্থাৎ নিট সম্পদ বা ইক্যুইটি ব্যবহারের তুলনায় পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালসের মুনাফা তুলনামূলক কম। কোম্পানির এ হার ২০১৬ সালের ৬ মাসে হয়েছে ২.৭৪ শতাংশ। যা যেকোনো ব্যাংকে এফডিআর করলেও পাওয়া যাবে। এক্ষেত্রে কোনো ধরনের ঝুঁকি থাকবে না। তবে পপুলারে ঝুঁকি আছে।

আইএমএস এর তথ্যানুয়ায়ী, দেশে ওষুধ উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোর মধ্যে ১৫তম অবস্থানে রয়েছে পপুলার ফার্মাসিটিক্যালস। এর আগে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত স্কয়ার, বেক্সিমকো, রেনাটা, এসিআই ও একমি ল্যাবরেটরিজ রয়েছে। বাকিগুলোর নন তালিকাভুক্ত। ১ নম্বরে থাকা স্কয়ার দেশের টোটাল বাজারের ১৮.৮৩ শতাংশ দখল করে আছে। এক্ষেত্রে পপুলারের অবস্থান ১.৮৮ শতাংশ।

কোম্পানি সচিব শফিউল আজম বলেন, ‘বাজারজাতকরণ ও সুদজনিত ব্যয় বেশি হওয়ায় ইপিএস ও রিটার্ন অন ইক্যুইটি কম হয়েছে। এ ছাড়া শেয়ার সংখ্যা বেশি হওয়াও একটি কারণ। আর শ্রমিক ফান্ডের টাকা এরই মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে।’

(দ্য রিপোর্ট/আরএ/জেডটি/এনআই/জানুয়ারি ১৫, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর