thereport24.com
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ 24, ১৪ চৈত্র ১৪৩০,  ১৮ রমজান 1445

রাষ্ট্রপতির কাছে ন্যাপের ১১ দফা প্রস্তাব

২০১৭ জানুয়ারি ১৬ ২২:০০:৪১
রাষ্ট্রপতির কাছে ন্যাপের ১১ দফা প্রস্তাব

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট মো. আবদুল হামিদের আমন্ত্রণে সংলাপে অংশ নিয়ে১১ দফা প্রস্তাব ও ৫টি সুপারিশ করেছে ২০ দলের শরিক বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ। সোমবার বিকেলে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে অনুষ্ঠিত সংলাপে অংশ নিয়ে দলটির চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি এ প্রস্তাব ও সুপারিশ করেন।

রাষ্ট্রপতিকে তিনি বলেন, শুধুমাত্র শক্তিশালী ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করাই সকল সমস্যার সমাধান নয়। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষভাবে কাজ করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। আর সেই জন্য, অবশ্যই নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়টি নিয়েও আপনাকে ভাবা উচিত।

এ সময় দলের ১১ সদস্যবিশিষ্ট প্রতিনিধি দলে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ন্যাপ মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া, প্রেসিডিয়াম সদস্য আলহাজ গোলাম সারওয়ার খান, সাদ্দাম হোসেন, ব্যারিস্টার মশিউর রহমান গানি, ভাইস চেয়ারম্যান মনির এনায়েত মল্লিক, মো. ফারহানুল হক, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ শাহজাহান সাজু, মো. নুরুল আমান চৌধুরী, সম্পাদক মো. শহীদুননবী ডাবলু ও মো. কামাল ভূঁইয়া।

রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দেওয়া প্রস্তাবগুলো হলো- ১. (ক) সব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনার প্রেক্ষিতে সার্চ কমিটি গঠন করে অথবা আপনার চিন্তা-চেতনা, বিবেক-বিবেচনায় ব্যক্তিত্বসম্পন্ন দেশপ্রেমিক মানুষদের নিয়ে দেশের মানুষের আস্থাভাজন গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন। এবং কমিশনে অবশ্য অবশ্যই একজন নারী সদস্য অন্তর্ভুক্ত করবেন। (খ) বাছাই কমিটি গঠনকল্পে আমরা মনে করি রাষ্ট্রপতি সর্বজন শ্রদ্ধেয় সৎ, নিরপেক্ষ, অভিজ্ঞ, প্রাজ্ঞ এবং নৈতিকতা ও ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন ব্যক্তিদের নিয়ে ৫-৭ সদস্যবিশিষ্ট একটি বাছাই কমিটি গঠন করবেন। (গ) বাংলাদেশের অবসরপ্রাপ্ত এবং কর্মক্ষম একজন সাবেক প্রধান বিচারপতিকে (যিনি বিতর্কিত নন) এবং অবসরের পর সরকারের কোন লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত নন বা ছিলেন না। এমন একজনকে সার্চ কমিটির প্রধান করবেন। (ঘ) আপীল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত একজন বিচারপতি (যিনি বিতর্কিত নন এবং অবসরের পর সরকারের কোন লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত নন বা ছিলেন না), সরকারের অবসরপ্রাপ্ত সচিব (যিনি বিতর্কিত নন এবং অবসরের পর সরকারের কোন লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত নন বা ছিলেন না ও সৎ এবং দল নিরপেক্ষ), সাবেক সেনাপ্রধান বা সিনিয়র সেনাকর্মকর্তা (যিনি বিতর্কিত নন এবং অবসরের পর সরকারের কোন লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত নন বা ছিলেন না), বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, সর্বজন শ্রদ্ধেয় বিশিষ্ট নাগরিকদের মাঝ থেকে সদস্য মনোনীত করবেন। (২) দেশের গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় নির্বাচন কমিশন এবং নির্বাচন প্রধান উপাদান। তাই নির্বাচন কমিশন এবং নির্ভেজাল নির্বাচন জাতির জন্যে খুবই জরুরি। অতএব, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণ থেকে সম্পূর্ণ স্বাধীন মুক্ত করার প্রস্তাব করছি। (৩) মাছ যেমন পানি ছাড়া বাঁচে না, তেমনি নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ছাড়া চলার কথা না। কিন্তু বর্তমান নির্বাচন কমিশন কখনো কোন রাজনৈতিক দলের মতামতের তোয়াক্কা করেনি। নির্বাচন কমিশনের জন্যে যখন আগামীতে বিধি-বিধান প্রণীত হবে তখন অবশ্যই তাতে বিধান রাখতে হবে প্রতি বছর অন্তত তিনবার নির্বাচন কমিশন নিবন্ধিত দলের সাথে নিয়মিত আলাপ-আলোচনা করবে। এছাড়া কোন নতুন রাজনৈতিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে সে বিষয়েও বাধ্যতামূলক আলোচনার বিধান রাখতে হবে। এবং নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মতামত না নিয়ে নির্বাচন কমিশন নতুন কোন নির্বাচনী বিধি-বিধান বহাল বা পরিবর্তন করতে পারবে না। (৪) নির্বাচনী প্রচারে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের চেয়ারম্যান/সভাপতি এবং মহাসচিব/সাধারণ সম্পাদকের উপর কোন বিধি-নিষেধ রাখা যাবে না। (৫) গণতন্ত্রের প্রধান স্তম্ভ হচ্ছে রাজনৈতিক দল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেমন প্রতিবার বিদেশ সফর করে মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করেন, ঠিক তেমনি নিবন্ধিত দলের সাথে বছরে অন্তত একবার দেশের পরিস্থিতি, অগ্রগতি, শান্তি-শৃঙ্খলা এবং ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে দলগুলোর মতামত নিবেন এবং তিনি তার মতামত ব্যক্ত করবেন। (৬) নিবন্ধনকৃত সকল রাজনৈতিক দলের সাথে রাষ্ট্রপতির বৈঠকের কার্যবিবরণী এবং বৈঠকের সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ, সকল রাজনৈতিক দলের উপস্থিত প্রতিনিধিদের স্বাক্ষরযুক্ত দলিলরূপে, রাষ্ট্রপতি কার্যালয় সর্বসাধারণের অবগতির জন্য প্রকাশ করবে। (৭) নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। তাই এর প্রতি তদরূপ মান্যতা ও মর্যাদা থাকতে হবে, যাতে করে নির্বাচন পরিচালনা ও এর তত্ত্বাবধানে নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণমুক্ত স্বাধীন পরিবেশে কাজ করতে পারবে। এবং সংবিধানের ১১৮ বিধি বাস্তবায়নে আইনের বিধানবলি অনুসারে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য একটি আইন তৈরি করা। তবে, বর্তমান জাতীয় সংসদ যেহেতু সকল দলের অংশগ্রহণে গঠিত নয়, সেহেতু আগামীতে সকল দলের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত নির্বাচিত জাতীয় সংসদে সেই আইন প্রণয়ন করা যায়। (৮) নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী করা প্রসঙ্গে এই কমিশনকে তথ্য ও প্রযুক্তির যুগে সারা বছর সরকারি বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলোতে দেশের সংবিধান পড়ার আহ্বান করে নির্বাচন, গণতন্ত্র ও শাসনরীতির তাগিদ রেখে নাটিকা ও ডকুমেন্টারি প্রচারের উদ্যোগ নিতে হবে। এখানে দেখা যায়, শুধুমাত্র নির্বাচন এলেই এমন কিছু নাটিকা তৈরি হয়। মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধিতে ভোটারদের সামাজিকভাবে শিক্ষিত করে তোলার পথ দেখাতে হবে এই নির্বাচন কমিশনকে। বাংলাদেশের শাসন ব্যবস্থায় ভাঙাচোড়া গণতন্ত্রের রাস্তায় এমন কিছু না করা গেলে অবুঝ জনশ্রেণির ভোটগুলো কার্যকরী হওয়ার সুযোগ নেই। (৯) নির্বাচন কমিশন গঠনে এই কমিশনের জন্য কাজ করা অভিজ্ঞ ব্যক্তিবর্গকে নিয়োগের কথাও আলাদা করে চিন্তা করার অবকাশ থেকে যায়- যারা বিভিন্ন পর্যায়ে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করার খ্যাতিতে থেকে অতীতে কিংবা বর্তমানে এই কমিশনের দায়িত্বশীল পদে ছিলেন বা আছেন। (১০) ইতোমধ্যে দেশের গণমাধ্যমের মাধ্যমে দেশবাসীসহ আমরা অবগত হয়েছি যে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণের প্রস্তাব করেছে। বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ এ প্রস্তাব পরিপূর্ণভাবে সমর্থন করে না। কারণ, আমরা মনে করি বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির বাস্তবতায় এই ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণকে বিশ্বাসযোগ্য মনে করে না। আর বিশ্বের যে সকল রাষ্ট্রে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ করা হয় সেখানেও আজ এই পদ্ধতি বিতর্কের ঊর্ধ্বে নয়, বরং কোন কোন ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি বাতিলের দাবি উঠেছে। এমনকি প্রতিবেশি রাষ্ট্র ভারতেও এই পদ্ধতি প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে। তাই আমরা মনে করি এই পদ্ধতি এখনই কার্যকর করা সঠিক হবে না। (১১) ক) গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় রাজনৈতিক দল করা একটি গণতান্ত্রিক অধিকার। সেই গণতান্ত্রিক অধিকারকে আইনের নাগপাশে বাঁধা সঠিক বলে আমরা মনে করি না। এই ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দল নিবন্ধন যুক্তিসংগত হলেও নিবন্ধনের শর্তগুলো আরও বেশি সহজতর করা উচিত বলে আমরা মনে করি। খ) জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে ১% ভোটারের সম্মতি গ্রহণে যে শর্ত আরপিওতে দেওয়া হয়েছে তা সংবিধান ও গণতান্ত্রিক চেতনার পরিপন্থী। অতএব, আরপিও-এর এই ধারাটি বাতিলেরও জোর দাবি জানাচ্ছি। গ) RPO এর Defination Clause Article 2 (XIaa) তে ‘Law Enforcing Agency’ হিসাবে অন্যান্য বাহিনীর সাথে Defense Services of Bangladesh’ পুনঃস্থাপন করতে হবে।

(দ্য রিপোর্ট/কেএ/এপি/এনআই/জানুয়ারি ১৬, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর