thereport24.com
ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল 24, ৭ বৈশাখ ১৪৩১,  ১১ শাওয়াল 1445

প্রকাশনী সংস্থার টাকায় গাইড বই বন্ধে মতবিনিময় সভা!

২০১৭ জানুয়ারি ১৯ ১১:১৮:৫২
প্রকাশনী সংস্থার টাকায় গাইড বই বন্ধে মতবিনিময় সভা!

দেবু মল্লিক, যশোর : শিক্ষার মান উন্নয়নে যশোরে ‘পাঠ্যপুস্তকই হোক একমাত্র সহায়ক’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলা শিক্ষা অফিসের ব্যবস্থাপনায় অনুষ্ঠিত এই মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক ড. হুমায়ুন কবীর। তবে গাইড ও নোট বই পড়ানোকে নিরুৎসাহিত করতে এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হলেও আয়োজনের ব্যয় একটি প্রকাশনী সংস্থা বহন করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে শিক্ষা কর্মকর্তা ও শিক্ষকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। শিক্ষক সমিতির এমন কর্মকাণ্ডে অনেক শিক্ষক ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জেলা শিক্ষা অফিসার ও জেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি। শিক্ষা অফিসারের দাবি, ‘জেলা শিক্ষা অফিস থেকে সব ব্যয় বহন করা হয়েছে। আর শিক্ষক সমিতির সভাপতি বলেন, ‘সমিতির ফান্ড থেকে আগতদের আপ্যায়ন করা হয়েছে।’

শিক্ষা অফিসের ব্যবস্থাপনায় গত বুধবার (১৮ জানুয়ারি) যশোর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় মিলনায়তনে মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। শিক্ষার মান উন্নয়নের আকাঙ্ক্ষায় আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন যশোর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আমিনুর রহমান টুকু। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এএসএম জিল্লুর রশিদ, প্রবীণ শিক্ষক তারাপদ দাস, জেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি আব্দুল মজিদ, যশোর জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক একেএম গোলাম আযমসহ জেলার বিভিন্ন স্তরের শিক্ষা কর্মকর্তা, শিক্ষক ও অভিভাবকবৃন্দ।

শিক্ষক সমিতি সূত্রে জানা যায়, গাইড ও নোট বই পড়ানোর কারণে শিক্ষার্থীরা পাঠ্যপুস্তক বিমুখ হয়ে পড়ছে। এতে শিক্ষার মান দিন দিন নিম্নগামী হচ্ছে। এ সমস্যার সমাধানে জেলা শিক্ষা অফিসের ব্যবস্থাপনায় ‘পাঠ্যপুস্তকই হোক একমাত্র সহায়ক’ শীষক মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। কিন্তু অনুষ্ঠানে দুই শতাধিক শিক্ষকসহ আগতদের আপ্যায়নের খরচ বহন করে একটি প্রকাশনী সংস্থা। বিষয়টি সমন্বয় করে জেলা শিক্ষক সমিতি। এ নিয়ে সমিতির শীর্ষ নেতাদের উপর ক্ষুব্ধ শিক্ষকরা। তারা মনে করেন প্রকাশনী সংস্থার টাকায় গাইড ও নোট বইয়ের বিরুদ্ধে অনুষ্ঠান আয়োজন করে মূল উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ কয়েকজন প্রধান শিক্ষক জানান, অনুষ্ঠানের শেষ দিকে জেলা শিক্ষা অফিসার ও শিক্ষক সমিতির সভাপতি আগতদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনাদের জন্য আপ্যায়নের ব্যবস্থা আছে।’ বিষয়টি শোনার পর তারা টাকার উৎস নিয়ে একে অপরের সাথে আলোচনা করেন। শেষ পর্যন্ত তারা নিশ্চিত হন আপ্যায়নের ব্যয় বহন করেছে ‘হ’ দিয়ে শুরু একটি প্রকাশনী সংস্থা।

সূত্র বলছে, দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষক সমিতির কোন অনুষ্ঠান আয়োজন করলে প্রকাশনী সংস্থা তার ব্যয়ভার বহন করতো। তবে সাবেক শিক্ষা সচিব নজরুল ইসলাম খান (এআই খান) একবার যশোরে এসে নোট ও গাইড বই না পড়ানোর জন্য শিক্ষকদের নির্দেশনা দেন। এরপর থেকে সমিতি কোন অনুষ্ঠান আয়োজন করলে শিক্ষকদের কাছ থেকে চাঁদা নেওয়া হয়। এ নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার শিক্ষকদের একটি মানববন্ধন রয়েছে। এজন্যও শিক্ষকদের কাছ থেকে চাঁদা নিচ্ছে শিক্ষক সমিতি। কিন্তু গতকালের অনুষ্ঠানের জন্য কোন চাঁদা নেওয়া হয়নি। সমিতির শীর্ষ নেতারা ওই প্রকাশনী সংস্থার সাথে আতাত করে যশোরে নোট ও গাইড বইয়ের বাণিজ্য আরো বিকাশ ঘটাতে চাইছেন।

এব্যাপারে যশোর জেলা শিক্ষা অফিসার আমনুল ইসলাম টুকু বলেন, ‘অনুষ্ঠানটি যশোর জেলা শিক্ষা অফিস আয়োজন করে। এর সব ব্যয়ও করেছে শিক্ষা অফিস।’

তবে অনুষ্ঠানের আপ্যায়ন ব্যয় শিক্ষক সমিতি বহন করেছে দাবি করে সমিতির সভাপতি আব্দুল মজিদ বলেন, ‘বুধবারের মতবিনিময় সভার জন্য শিক্ষকদের কাছ থেকে কোন চাঁদা নেওয়া হয়নি। আপ্যায়ন খরচ সমিতির ফান্ড থেকে দেওয়া হয়েছে। তবে এজন্য কোন প্রকাশনী সংস্থার কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়নি।’

(দ্য রিপোর্ট/এন/এনআই/১৯ জানুয়ারি ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর