thereport24.com
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল 24, ১২ বৈশাখ ১৪৩১,  ১৬ শাওয়াল 1445

জানুয়ারিতে ইন্টারনেটের গতি ফিরছে না

২০১৭ জানুয়ারি ২০ ২০:৫১:০২
জানুয়ারিতে ইন্টারনেটের গতি ফিরছে না

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক :বাংলাদেশে ইন্টারনেটের গতি জানুয়ারি মাসের মধ্যে স্বাভাবিক হচ্ছে না। ২০ জানুয়ারির মধ্যে গতি ফিরে আসার কথা থাকলেও সাবমেরিন কেবলের বিকল্প দুটি আন্তর্জাতিক টেরিস্ট্রিয়াল কেবলের মেরামত শেষ না হওয়ায় চলতি মাসের মধ্যে পুরোপুরি ঠিক হচ্ছে না। ফলে জানুয়ারি মাসজুড়েই ইন্টারনেটে ধীর গতির সমস্যা থাকছে।

ঝড়ের কবলে পড়ে ভারতের সাবমেরিন ক্যাবল আইটুআই এলোমেলো হওয়ার পর থেকে এখনও তার মেরামত কাজ শেষ হয়নি। ফলে আইটিসির (ইন্টারন্যাশনাল টেরেস্ট্রিয়াল ক্যাবল)মাধ্যমে ভারতে থেকে ‘আমদানি নির্ভর’ ব্যান্ডউইথের সরবরাহ স্বাভাবিক না হওয়ায় ব্যান্ডউইথ পাচ্ছে না বাংলাদেশ। চাহিদার তুলনায় ব্যান্ডউইথ সরবরাহ কম হওয়ায় তার প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশে।

ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক এ বিষয়ে জানান, ২০ জানুয়ারির মধ্যে ইন্টারনেট স্বাভাবিক হবে, নাকি হবে না, আইটুআই আমাদের কিছুই জানায়নি। যেহেতু তারা আমাদের জানায়নি, তাই আমরা ধরে নিয়েছি ইন্টারনেট পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে না। ৩০ জানুয়ারির আগে মেরামত কাজ শেষ হবে বলে মনে হচ্ছে না।

আইএসপিএবি সূত্রে জানা গেছে, আইটিসি নির্ভর ব্যান্ডউইথের সরবরাহ না থাকায় আইএসপিগুলো বিকল্প হিসেবে সাবমেরিন কেবল কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিসিএল) থেকে ব্যান্ডউইথ নিয়ে ইন্টারনেট ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু ব্যান্ডউইথের মান ভালো না হওয়ায় ইন্টারনেটের গতি, প্রকৃতি ঠিক রাখা যাচ্ছে না।

এমদাদুল হক আরও জানান, আমরা বিএসসিসিএল থেকে ব্যান্ডউইথ নিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছি। কিন্তু ওই ব্যান্ডউইথের মান খারাপ হওয়ায় তা সেভাবে কাজে আসছে না।

ইন্টারনেট গেটওয়ে কোম্পানি ফাইবার অ্যাট হোমের প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা সুমন আহমেদ সাবির গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ভারতীয় এয়ারটেলের কেবল মেরামত কাজ কয়েকদিনের মধ্যে শেষ হতে পারে। আর এ মাসের শেষ নাগাদ টাটা ইনডিকমের কেবল ঠিক হতে পারে।

বাংলাদেশের দৈনিক ইন্টারনেট ব্যবহারের পরিমাণ ৪০০ জিবিপিএসের বেশি। এই ৪০০ জিবিপিএসের মধ্যে ১২০ জিবিপিএস রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কোম্পানি লিমিটেডের (বিএসসিসিএল) মাধ্যমে আসে। বাকি ২৮০ জিবিপিএস আইটিসির ব্যান্ডউইথ, ‍যা ভারত থেকে আমদানি করা হয়।

বাংলাদেশের ছয়টি আইটিসি অপারেটর প্রায় চার বছর ধরে প্রতিবেশী ভারত থেকে এই ব্যান্ডউইথ কিনে দেশে সরবরাহ করছে। এর বড় একটি অংশ টাটা ইনডিকম ও ভারতী এয়ারটেল দিচ্ছে বলে সুমন আহমেদ সাবির জানান।

২০১২ সালের আগে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ সংযোগের জন্য একটি মাত্র সাবমেরিন কেবলের ওপর নির্ভর করতো। ২০১২ সালের অক্টোবর থেকে আইটিসি অপারেটরগুলো কাজ শুরু করে।

এসব অপারেটর টেরিস্ট্রিয়াল অপটিক্যাল ফাইবার লাইনের মাধ্যমে ভারতীয় বিভিন্ন টেলিযোগাযোগ কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত। কোনো কারণে সাবমেরিন কেবল ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এই বিকল্প ব্যবস্থায় তারা বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্কে যুক্ত রাখতে পারে।

চলতি বছরই একটি কনসোর্টিয়ামের আওতায় সি-মি-ইউ-৫ নামের দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবলে যুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে বাংলাদেশের। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ অতিরিক্ত ১ হাজার ৩০০ গিগাবাইট ব্যান্ডউইডথ পাবে বলে সরকার আশা করছে।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি ভারতের ওপর দিয়ে প্রলয়ঙ্করী ঝড় বয়ে যায়। সেই ঝড়ে ভারতের সাবমেরিন কেবল আইটুআই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আইটুআই নামের ওই সাবমেরিন কেবল সিঙ্গাপুরের সঙ্গে যুক্ত। চেন্নাইয়ের সমুদ্রতীর থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে কেবলটি ঝড়ের কবলে কাটা পড়ায় গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর রাত ২টা থেকে তা অকেজো হয়ে যায়। টাটা ইনডিকম কেবল নামে আরও একটি সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে সিঙ্গাপুরের সঙ্গে ভারত যুক্ত রয়েছে। ৩ হাজার ১৭৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ ক্যাবলটি ভারতের চেন্নাই ও সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি এলাকার মধ্যে সংযোগ স্থাপন করেছে। ওই কেবলটিও অকেজো হয়ে পড়ে।

এছাড়া ইন্ডিয়া-মধ্যপ্রাচ্য-পশ্চিম ইউরোপ আরেকটি ফাইবার অপটিক কেবল দিয়ে ভারত ও মধ্যপ্রাচ্যের মধ্য দিয়ে ইউরোপের সঙ্গে যুক্ত। এই কেবলটিও এখন অকেজো। যে কারণে কোনও আইটিসির মাধ্যমে দেশ ব্যান্ডউইথ না আসায় দেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা ইন্টারনেটে ধীরগতি পাচ্ছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশ দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবলের সংযোগ পাওয়া না পর্যন্ত ইন্টারনেটে এ ধরনের সমস্যা থেকেই যাবে। আইটিসি সংযোগ পাওয়ার আগ পর্যন্ত ধারণা করা হতো দেশের একমাত্র সাবমেরিন কেবলের বিকল্প না আসা পর্যন্ত মাঝে মাঝে রিপিটার মেরামত, কেবল কাটা পড়ার মতো ঘটনায় ইন্টারনেট সেবা বিঘ্নিত হতো। ওই সময় বলা হয়েছে, আইটিসি সংযোগ চালু হলে ইন্টারনেটের সমস্যা আর থাকবে না। কিন্তু সম্প্রতি ভারতের সাবমেরিন কেবলে সমস্যা হওয়ায় আইটিসির মাধ্যমেও ইন্টারনেট সেবা স্বাভাবিক রাখা যাচ্ছে না। ফলে আবারও দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবল সংযোগ এখন সময়ের দাবি হয়ে উঠেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

(দ্য রিপোর্ট/কেএ/এপি/এনআই/জানুয়ারি ২০, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর