thereport24.com
ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল 24, ৩ বৈশাখ ১৪৩১,  ৭ শাওয়াল 1445

আখেরি মোনাজাতে মুসলিম উম্মার কল্যাণ কামনা

২০১৭ জানুয়ারি ২২ ১১:৫৯:৪৭
আখেরি মোনাজাতে মুসলিম উম্মার কল্যাণ কামনা

গাজীপুর প্রতিনিধি : মুসলিম উম্মাহর সুদৃঢ় ঐক্য, দুনিয়া ও আখেরাতের শান্তি, দেশের কল্যাণ কামনা করে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে রবিবার শেষ হলো তাবলিগ জামায়াত আয়োজিত ৫২তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব।

আখেরি মোনাজাতে আত্মশুদ্ধি ও গুনাহ মাফের পাশাপাশি দুনিয়ার সব বালা-মুসিবত থেকে হেফাজত করার জন্য দুই হাত তুলে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে প্রার্থণা করা হয়। এ সময় আমিন, আল্ল¬হুম্মামিন ধ্বনিতে আকাশ-বাতাস মুখরিত করে মহামহিম আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টি লাভের আশায় লাখ লাখ মুসল্লি আকুতি জানায়।

মোনাজাত পরিচালনা করেন বিশ্ব তাবলিগ জামাতের শীর্ষস্থানীয় মুরব্বি ভারতের হযরত মাওলানা মুহাম্মদ সা’দ কান্ধলভি। তিনি আরবি ও উর্দু ভাষায় মোনাজাত করেন।

ভোর থেকে দিক-নির্দেশনামূলক বয়ানের পর লাখ লাখ মানুষের প্রতীক্ষার অবসান ঘটে বেলা ১১টা ১০ মিনিটে। জনসমুদ্রে হঠাৎ নেমে আসে পিনপতন নীরবতা। যে যেখানে ছিলেন সেখানে দাঁড়িয়ে কিংবা বসে হাত তোলেন আল্লাহর দরবারে। কান্নায় বুক ভাসান তারা। ৩৩ মিনিট ব্যাপী মোনাজাতে মাওলানা সা’দ কান্ধলভি প্রথম ১০ মিনিট মূলত পবিত্র কোরআনে বর্ণিত দোয়ার আয়াতগুলো উচ্চারণ করেন। শেষ ২৩ মিনিট দোয়া করেন উর্দু ভাষায়।

মুঠোফোন ও স্যাটেলাইট টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারের সুবাদে দেশ-বিদেশের আরও লাখ লাখ মানুষ একসঙ্গে হাত তোলেন আল্লাহর দরবারে। অনেকে বিমানবন্দর গোল চত্বর কিংবা উত্তরা থেকে আখেরি মোনাজাতে অংশ নেন। এদিন রাজধানী ঢাকা ছিল প্রায় ফাঁকা। আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে টঙ্গী, গাজীপুর, উত্তরাসহ চারপাশের এলাকার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কলকারখানা, মার্কেট, বিপণি বিতান, অফিস ছিল বন্ধ।

৪ দিন বিরতি দিয়ে ২০ জানুয়ারি শুক্রবার থেকে শুরু হবে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব। ১৫ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হয় ৫২তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব।

রবিবার সকালে চারদিক থেকে লাখ লাখ মুসল্লি হেঁটেই টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমা স্থলে পৌঁছায়। সকাল ১০টার আগেই ইজতেমা মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে মুসল্লিরা মাঠের আশপাশের রাস্তা, অলি-গলি, বিভিন্ন ভবনের ছাদে অবস্থান নেন। ইজতেমাস্থলে পৌঁছাতে না পেরে কয়েক লাখ মানুষ কামারপাড়া সড়ক ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান নেন। ভোর থেকেই ফজরের নামাজ ও আখেরি মোনাজাতের জন্য পুরানো খবরের কাগজ, পাটি, সিমেন্টের বস্তা ও পলিথিন সিট বিছিয়ে বসে পড়েন। এছাড়াও পার্শ্ববর্তী বাসা-বাড়ি-কলকারখানা-অফিস-দোকানের ছাঁদে, যানবাহনের ছাঁদে ও তুরাগ নদীতে নৌকায় মুসল্লিরা অবস্থান নেন। যে দিকেই চোখ যায় সে দিকেই দেখা যায় শুধু টুপি-পাঞ্জাবি পড়া মানুষ। সবাই অপেক্ষায় আছেন কখন শুরু হবে সেই কাঙ্খিত আখেরি মোনাজাত। ইজতেমাস্থলের চারপাশের ৩-৪ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। আখেরি মোনাজাতের জন্য রোববার আশপাশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কলকারখানাসহ বিভিন্ন অফিস-আদালতে ছিল ছুটি। কোন কোন প্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা না করলেও কর্মকর্তাদের মোনাজাতে অংশ নিতে বাধা ছিল না। নানা বয়সী ও পেশার মানুষ এমনকি মহিলারাও ভিড় ঠেলে মোনাজাতে অংশ নিতে সকালেই টঙ্গী এলাকায় পৌঁছেন।

মোনাজাতে যা বলা হয় : মাওলানা সাদ মোনাজাতে বলেন, হে আল্লাহ তুমি তো ক্ষমাশীল, তোমার কাছেই তো আমরা ক্ষমা চাইব। দ্বীনের ওপর আমাদের চলা সহজ করে দাও। হে আল্লাহ, তুমি আমাদের ওপর সন্তুষ্ট হয়ে যাও। আমরা যেন তোমার সন্তুষ্টি মাফিক চলতে পারি সে তওফিক দাও। দুনিয়ার সব বালা-মুসিবত থেকে আমাদের হেফাজত করো। নবীওয়ালা জিন্দেগি আমাদের নসিব করো।

মুসল্লিদের বাঁধভাঙা জোয়ার : বিশ্ব ইজতেমায় অংশগ্রহণকারীরা তো ছিলেনই, শুধু আখেরি মোনাজাতে শরিক হতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা ছুটে আসতে থাকেন শনিবার থেকেই। বাস, ট্রাক, মিনিবাস, কার, মাইক্রোবাস, ট্রেন, লঞ্চ ও স্টিমারে করে টঙ্গীতে পৌঁছে অবস্থান নিতে শুরু করেন। রাজধানীসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার লোকজন ভিড় এড়াতে শীত, কুয়াশা ও নানা ঝক্কি ঝামেলা উপেক্ষা করে রাতেই টঙ্গীমুখো হন। সকাল ৮টার মধ্যে গোটা এলাকা জনতার মহাসমুদ্রে পরিণত হয়।

গুরুত্ত্বপূর্ন ব্যাক্তিদের মোনাজাতে অংশগ্রহণ: বিশ্ব ইজতেমায় আগত লাখ লাখ মুসল্লির সঙ্গে ইজতেমা ময়দানের পূর্ব পাশে শহীদ আহসান উল্লাহ মাষ্টার স্টেডিয়ামে স্থাপিত পুলিশ কন্ট্রোল রুমে বসে আখেরী মোনাজাতে অংশ নেন সংসদ সদস্য জাহিদ আহসান রাসেল, গাজীপুরের পুলিশ সুপার মো: হারুন অর রশীদ, গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খান, সিটি কর্পোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরন,মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের সহ সভাপতি আমিরুল ইসলাম বাবু প্রমুখ।

মোনাজাত শেষে যানজট : আখেরি মোনাজাত শেষ হওয়ার পরপরই বিভিন্ন স্থান থেকে আশা মানুষ নিজ গন্তব্যে পৌঁছার চেষ্টা করে। আগে যাওয়ার জন্য মুসল্লিরা তাড়াহুড়া করতে শুরু করে। এতে টঙ্গীর কামারপাড়া সড়ক, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক, টঙ্গী-কালীগঞ্জ সড়কের আহসান উল্লাহ মাষ্টার উড়াল সেতু ও আশপাশের সড়ক-মহাসড়ক এবং সংযোগ সড়ক গুলোতে সৃষ্টি হয় দীর্ঘ জনজট ও যানজট। এতে গাজীপুরের জেলা প্রশাসকসহ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের গাড়ি দীর্ঘ যানজটের কবলে পড়েন।

আইন শৃঙ্খলা : ইজতেমা এবং আখেরী মোনাজাতে অংশগ্রহনকারী সকল মুসল্লী বাড়ি ফিরে যাওয়া পর‌পর্যন্ত গাজীপুর জেলা পুলিশের তৎপরতা চালু থাকবে এমনটাই বলেছেন, পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ জানিয়েছেন।

গাজীপুর ও টঙ্গীর সকল কারখানায় ছুটি : বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের আখেরী মোনাজাত উপলক্ষে গাজীপুর ও টঙ্গীর সকল কারখানায় ছুটি ছিল। ফলে এবার এসব কারখানার শ্রমিকদের ইজতেমায় আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে সমস্যা হয়নি।

(দ্য রিপোর্ট/এআরই/জানুয়ারি ২২, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর