thereport24.com
ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল 24, ৩ বৈশাখ ১৪৩১,  ৭ শাওয়াল 1445

বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদন

‘ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করেননি শ্যামল কান্তি’

২০১৭ জানুয়ারি ২২ ১৪:২৩:২৯
‘ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করেননি শ্যামল কান্তি’

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : ইসলাম ধর্ম ও আল্লাহকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জের পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের কটুক্তি করার সত্যতা পাওয়া যায়নি। এছাড়া নারায়ণগঞ্জ-৫ (শহর-বন্দর) আসনের জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমান নির্দেশেই শ্যামল কান্তি কান ধরে ওঠবস করতে বাধ্য হন। ভিডিও ফুটেজ দেখে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। তবে উপস্থিত স্থানীয় জনগণের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সাংসদ ওই নির্দেশ দিয়েছেন।

নারায়ণগঞ্জে শিক্ষক লাঞ্চনার ঘটনা নিয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনে এমন বক্তব্যই ওঠে এসেছে। মোট ৬৫ পৃষ্ঠার মূল প্রতিবেদনের সঙ্গে সংযুক্তি হিসেবে আরও নথিপত্র রয়েছে। তদন্তকালে মোট ২৭ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়।

১৯ জানুয়ারি ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম শেখ হাফিজুর রহমান ওই প্রতিবেদন হলফনামা আকারে হাইকোর্টে দাখিল করেন।

বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদন রবিবার (২২ জানুয়ারি) বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি জে বি এম হাসানের হাইকোর্ট বেঞ্চে উপস্থাপন করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু। পরে আদালত এই ঘটনায় করা জিডির প্রেক্ষিতে নন-এফআইআর অভিযোগের বিচারের জন্য ঢাকার মূখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে স্থানান্তরের নির্দেশ দেন। তাই নারায়ণগঞ্জের মূখ্য বিচারিক হাকিমকে এ সংক্রান্ত সকল প্রতিবেদন সেখানে পাঠাতে বলেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে পূর্বে জারি করা রুল নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন আদালত।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু। অপরদিকে রুলের পক্ষে শুনানি করেন সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এমকে রহমান।

শ্যামল কান্তিকে লাঞ্ছনার ঘটনায় বিচারিক তদন্ত প্রতিবেদনে ছয়টি সিদ্ধান্ত এসেছে। সিদ্ধান্ত সমূহ হলো-

প্রথমত: শ্যামল কান্তি ওই স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র মোহাম্মদ রিফাত হাসানকে গত বছরের ৮ মে মারধর করেছেন বলে তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে।

দ্বিতীয়ত : তদন্ত প্রতিবেদনের দ্বিতীয় সিদ্ধান্ত, ইসলাম ধর্ম ও আল্লাহকে নিয়ে শ্যামল কান্তির কটুক্তি করার সত্যতা পাওয়া যায়নি।

তৃতীয়ত : গত বছরের ১৩ মে ওই স্কুলের পরিচালনা পর্ষদের সভা চলাকালে স্থানীয় জনৈক শামসুল হকের ছেলে অপুর নেতৃত্বে ১০-১২ জন সভাকক্ষে ঢুকে প্রধান শিক্ষককে মারধর করার বিষয়ে সত্যতা পাওয়া গেছে। তবে অপু ছাড়া বাকি ১০-১২ জনের নাম কোনো সাক্ষীই প্রকাশ করেননি।

চতুর্থত : গত বছরের ১৩ মে বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভা চলাকালে আনুমানিক বেলা ১১টার দিকে স্থানীয় মসজিদ থেকে ঘোষণা প্রদান করা হয় যে ইসলাম ধর্ম ও আল্লাহকে নিয়ে কটূক্তি করেছেন শ্যামল কান্তি ভক্ত। কে বা কারা ওই ঘোষণা দিয়েছেন, তা নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। তবে বিদ্যালয়ের উন্নয়নমূলক কাজ নিয়ে কমিটির সদস্যদের মধ্যে বিরোধের কারণে এমন ঘোষণা দেওয়া হতে পারে বলে বিশ্বাস করার কারণ আছে।

পঞ্চমত : গত বছরের ১৩ মে বিকেল পাঁচটার দিকে সাংসদ সেলিম ওসমান প্রধান শিক্ষকের রুমে ঢুকে তাঁকে গাল-কান জুড়ে দুই হাত দিয়ে পরপর চারটি থাপ্পড় দিয়েছেন—এমন দাবির সত্যতা পাওয়া যায়নি।

ষষ্ঠত : সাংসদ সেলিম ওসমানের নির্দেশে শ্যামল কান্তি ভক্ত কান ধরে ওঠবস করতে বাধ্য হয়েছেন—ভিডিও ফুটেজ দেখে প্রতীয়মান হয়েছে। তবে সাক্ষীদের সাক্ষ্য পর্যালোচনায় প্রতীয়মান হয়েছে যে উপস্থিত স্থানীয় জনগণের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সাংসদ ওই নির্দেশ দেন।

উল্লেখ্য, নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তিকে গত বছরের ১৩ মে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে লাঞ্ছিত করা হয়। স্থানীয় সাংসদ সেলিম ওসমানের নির্দেশেই যে শ্যামল কান্তি কান ধরে ওঠবস করেছেন, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতেও তা দেখা যায়।

ওই ঘটনা নিয়ে সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে আনা হলে গত বছর ১৮ মে হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত রুলসহ আদেশ দেন। নির্দেশ অনুসারে পুলিশ একটি প্রতিবেদন দাখিল করে। ওই ঘটনায় পুলিশ প্রতিবেদন গ্রহণযোগ্য নয়, বলে গত বছর ১০ আগস্ট হাইকোর্ট পুরো ঘটনা তদন্ত করে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমকে নির্দেশ দেন। তার করা সেই প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতেই আজ আদালত এই আদেশ দিলেন।

(দ্য রিপোর্ট/কেআই/এস/এআরই/জানুয়ারি ২২, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর