thereport24.com
ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল 24, ৭ বৈশাখ ১৪৩১,  ১১ শাওয়াল 1445

অবশেষে ময়মনসিংহের সেই স্কুলটি বন্ধের নোটিশ

২০১৭ জানুয়ারি ২২ ২০:৩৫:৩৯
অবশেষে ময়মনসিংহের সেই স্কুলটি বন্ধের নোটিশ

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি : সরকারি অনুমোদনহীন ও ‘পাকিস্তানি পতাকা’ সম্বলিত মনোগ্রামসহ স্কুলের সার্বিক কার্যক্রমে স্বাধীনতা বিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় অবশেষে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে ময়মনসিংহ শহরে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর মোনেম খাঁন’র স্মৃতি রক্ষায় প্রতিষ্ঠিত অন্বেষা ইন্টা. স্কুল এন্ড কলেজ।

রবিবার (২২ জানুয়ারি) দুপুরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে জেলা প্রশাসক স্বাক্ষরিত চিঠিতে শহরের অন্যতম ইংলিশ মিডিয়াম এ স্কুলটি বন্ধের নোটিশ প্রধান ফটকে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়।

এ খবর ছড়িয়ে পড়লে স্কুল প্রাঙ্গণে ভিড় জমান আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির এ পরাজয়ে তারা বাংলাদেশের লাল-সবুজের পতাকা হাতে আনন্দ-উল্লাস করে এবং প্রতিষ্ঠানটির উপাধ্যক্ষ নিলুফার ইয়াসমিনসহ শিক্ষকদের হাতে পতাকা তুলে দেন। এদিকে স্কুলটি বন্ধ করে দেওয়ায় বিপাকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।

তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর মোনেম খাঁন’র স্মৃতি রক্ষায় ১৯৯৬ সালে ময়মনসিংহ শহরের নতুন বাজার এলাকায় প্রতিষ্ঠা করা হয় অন্বেষা ইন্টা. স্কুল এন্ড কলেজ। শহরের অন্যতম এই ইংলিশ মিডিয়াম প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করতেন মোনেম খাঁ’র মেয়ে নাসরিন মোনেম খাঁ। প্লে গ্রুপ থেকে ‘ও’ লেভেল পর্যন্ত এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি ব্রিটিশ কাউন্সিল অনুমোদিত থাকলেও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোনো অনুমোদন ছিল না। প্রতিষ্ঠানটির সকল নম্বরপত্র, সার্টিফিকেট ও দাপ্তরিক সকল নোটিশে মোনেম খানকে ‘শহীদ’ উল্লেখ করা হতো। সকল প্যাড ও সনদপত্রে প্রতিষ্ঠানের নামের নিচেই উল্লেখ রয়েছে ‘ডেডিকেটেড টু দি মেমোরি অফ শহীদ গভর্নর আবুল মোনেম খাঁন’ এইচপিকে (হিলালী অব পাকিস্তান)। মনোগ্রামেও রয়েছে চাঁদ তারার পাকিস্তানী পতাকার চিহ্ন।

এ নিয়ে সম্প্রতি বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় তোলপাড় শুরু হলে প্রশাসনের টনক নড়ে। এরপরও সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বিলিকৃত ভর্তি সংক্রান্ত লিফলেটে হিলাল-ই পাকিস্তান খেতাবপ্রাপ্ত (পাকিস্তান সরকারের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পুরস্কার) তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর মোনেম খাঁন কে ‘শহীদ গভর্নর’ আখ্যা দেওয়াসহ প্রতিষ্ঠানের মনোগ্রামে স্বাধীনতা বিরোধী ‘পাকিস্তানি পতাকা’ থাকায় তোলপাড় শুরু হয়। ক্ষোভ দেখা দেয় স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার, নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থী ও ৯০ দশকের ছাত্রনেতাদের মাঝে। পরে ৯০ দশকের ছাত্রনেতারা স্বাধীনতা বিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধের দাবি জানিয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করে।

বিষয়টি তদন্তে জেলা প্রশাসক ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে সত্যতা পায়। পরে জেলা প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় বরাবর চিঠি প্রেরণ করেন। তদন্ত শেষে ১৬ জানুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব সালমা স্বাক্ষরিত জেলা প্রশাসক বরাবর এক চিঠিতে স্কুলটি বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে রবিবার দুপুরে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান ফটকে বন্ধের নোটিশ ঝুঁলিয়ে দেওয়া হয়।

এ খবর ছড়িয়ে পড়লে স্কুল প্রাঙ্গণে ভিড় জমান সাবেক ছাত্রনেতা ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল, সিপিবি সভাপতি অ্যাডভোকেট এমদাদুল হক মিল্লাত, জাসদ জেলা কমিটির যুগ্ম-সম্পাদক অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম চুন্নুসহ আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। এ সময় তারা লাল-সবুজের পতাকা হাতে আনন্দ-উল্লাস করে।

তারা বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি বন্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা বিরোধীদের পরাজয় হয়েছে।

এদিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি আকস্মিকভাবে বন্ধ করে দেওয়ায় বিপাকে শিক্ষার্থী-শিক্ষক ও অভিভাবকরা। ক্ষু্ব্ধ প্রতিক্রিয়ায় তারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি চালু রেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানান।

এ ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানটির উপাধ্যক্ষ নিলুফার ইয়াসমিনসহ শিক্ষকরা জানান, আমরা নীতিমালা অনুযায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি চালু রাখতে চাই। শুধুমাত্র পাকিস্তানি পতাকা সংবলিত লোগো ও প্রতিষ্ঠানের কাগজপত্রে কিছু লেখার কারণে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে যাবে, এটা মেনে নেওয়া যায় না।

তারা ক্ষোভের সাথে জানান, ‘এখন আমাদের কি হবে, আমাদের শিক্ষার্থীদের কি হবে।’

স্কুলটি বন্ধের খবর শুনে আসা বেশ কয়েকজন অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা জানায়, শহরের অন্যতম ভালো এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি এভাবে বন্ধ করে দেওয়া ঠিক হয়নি। জানুয়ারি মাস শেষ হয়ে যাচ্ছে। শহরের ভালো স্কুলগুলোতে আসন ফাঁকা নেই। এখন কি করবেন তারা। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা সরকারের সুদৃষ্টি ও সহযোগিতা কামনা করেছেন।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে ২৫৮ জন শিক্ষার্থী পড়াশুনা করছে। এর মধ্যে রবিবার পর্যন্ত ১৭৯ জন নতুন করে রেজিস্ট্রেশন করে ভর্তি হয়েছেন।

(দ্য রিপোর্ট/এমএইচএ/এপি/জানুয়ারি ২২, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর