thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল 24, ৬ বৈশাখ ১৪৩১,  ১০ শাওয়াল 1445

জলবায়ু অর্থায়নে সক্ষমতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধির আহ্বান

২০১৭ জানুয়ারি ২৩ ১৯:৩৮:২০
জলবায়ু অর্থায়নে সক্ষমতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধির আহ্বান

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : জলবায়ু অর্থায়নে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান প্রকল্প বাস্তবায়নে সক্ষমতা, স্বচ্ছতা, ন্যায্য বণ্টন এবং কার্যকর জবাবদিহিতার আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

রাজধানীর ধানমন্ডিতে টিআইবি কার্যালয়ে ‘জলবায়ু অর্থায়ন ও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান: প্রকল্প বাস্তবায়নে সুশাসন’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে এ সংক্রান্ত তথ্য তুলে ধরেন রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি বিভাগের সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার এএসএম জুয়েল এবং ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার নাহিদ শারমিন। এ গবেষণায় আরো সংযুক্ত ছিলেন একই বিভাগের প্রোগ্রাম ম্যানেজার ফারহানা রহমান ও সিএফজি ম্যানেজার গোলাম মহিউদ্দিন।

টিআইবি’র ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, জনগণের অর্থে পরিচালিত এই তহবিল যেন সুষ্ঠুভাবে এবং কোন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত না হয় সে দিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নজর দিতে হবে। বিসিসিটি’র জন্য তহবিল ব্যবস্থাপনার দক্ষতা বৃদ্ধির কোন বিকল্প নেই।

স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান বাস্তবায়িত বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড (বিসিসিটিএফ) প্রকল্প সুশাসনের দৃষ্টিকোণ থেকে শক্তিশালী বা দুর্বল দিক এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন শক্তিশালী বা দুর্বল হওয়ার কারণ এবং প্রভাব নির্ণয়ের লক্ষ্যে ২০১৬ সালের মার্চ-নভেম্বর গবেষণাটি পরিচালিত হয়েছে। এই গবেষণায় বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড (বিসিসিটিএফ) অর্থায়নে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান বাস্তবায়িত ছয়টি প্রকল্পের- প্রকল্প প্রণয়ন, বাস্তবায়ন এবং পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন সংশ্লিষ্ট বিষয় পর্যালোচনা করা হয়। গবেষণায় সুশাসনের আটটি সূচক যেমন- প্রকল্পগ্রহণে যৌক্তিকতা, জনঅংশগ্রহণ, স্বচ্ছতা, ন্যায্যবণ্টন, সংগতিপূর্ণ বাস্তবায়ন, কার্য-সম্পাদন দক্ষতা, জবাবদিহিতা এবং শুদ্ধাচার আলোকে তথ্য সংগৃহীত ও বিশ্লেষিত হয়েছে।

গবেষণায় ইতিবাচক দিকগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে— দু’টি প্রকল্পে জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবেলায় ভিন্নধর্মী উদ্যোগ গ্রহণ (পরিবারভিত্তিক দুর্যোগ সহনশীল ঘর নির্মাণ এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা), দু’টি প্রকল্পে তথ্য বোর্ডের মাধ্যমে প্রকল্প সংক্রান্ত তথ্যাদি প্রকাশ ও চারটি প্রকল্পে প্রস্তাবনার সাথে বাস্তবায়নের সঙ্গতি, সকল প্রকল্পের প্রাথমিক কার্যক্রম বিসিসিটি ও প্রকল্প বাস্তবায়ন শেষে স্থানীয় সরকার বিভাগ পরিদর্শন, একটি প্রকল্পের ক্ষেত্রে উপকারভোগীরা নিজেরাই জনপ্রতিনিধিদেরকে তাদের এলাকায় পেয়ে অভিযোগ জানালে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ একটি প্রকল্প মূল্যায়ন করা হয়েছে।

গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, প্রকল্প প্রণয়নে সুশাসনের যে সকল চ্যালেঞ্জ পাওয়া গেছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো— ছয়টি প্রকল্পের কোনোটিতেই কমিউনিটি পর্যায়ে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি ও প্রভাব এমনকি চাহিদা নিরূপণ কিংবা বিপদাপন্নতা বিশ্লেষণ করা হয়নি; ছয়টি প্রকল্পের কোনোটিতেই প্রকল্প প্রণয়নকালে জনঅংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়নি; প্রকল্প প্রস্তাবনা তৈরিতে সংশ্লিষ্ট মেয়র বা জেলা পরিষদের ক্ষেত্রে প্রশাসক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, প্রকৌশলী ও পৌর সচিবের মুখ্য ভূমিকা; পাঁচটি প্রকল্পের ক্ষেত্রে কাউন্সিলরদের অংশগ্রহণ না থাকা; চারটি প্রকল্পের ক্ষেত্রে কমিউনিটি পর্যায়ে চাহিদা নিরূপণ ও বিপদাপন্নতা বিশ্লেষণ ছাড়াই প্রস্তাবনায় যেসব সমস্যা উল্লেখ করা হয় তার ভিত্তিতে অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠান থেকে প্রকল্প কর্মসূচি এবং বাজেট কমানো হয়; চারটি প্রকল্পে গতানুগতিক অবকাঠামো নির্মাণ; সম্ভাব্যতা যাচাই না করেই প্রকল্প প্রস্তাবনা প্রণয়ন। এ ছাড়া প্রকল্প বাস্তবায়ন পর্যায়ে তথ্যের উন্মুক্ততার ঘাটতি রয়েছে।

জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট আইন, ২০১০ অনুসারে জলবায়ু প্রকল্পের সাথে অন্য প্রকল্পের দ্বৈততা পরিহারের নির্দেশ থাকলেও একটি প্রকল্পের মাধ্যমে অন্য প্রকল্পের অসমাপ্ত প্রাচীর নির্মাণ করা হয়। দরপত্র প্রক্রিয়ায় অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের মধ্যে পাঁচটি প্রকল্পে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের সচিব, মেয়র ও প্রকৌশলীর আত্মীয়, বন্ধু এমনকি রাজনৈতিক বিবেচনায় ঠিকাদার নির্বাচন করা হয়েছে। একটি প্রকল্পে তহবিল বরাদ্দের পরও নবনির্বাচিত মেয়র ভিন্ন রাজনৈতিক দল সমর্থিত হওয়ায় প্রকল্প পরিচালক পরিবর্তন করে অন্য প্রতিষ্ঠানকে বাস্তবায়নের দায়িত্ব প্রদান করা হয়। এ ছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রাম বিধি, ১৯০০ অনুযায়ী আদিবাসীরা করের আওতামুক্ত হওয়ায় পার্বত্য চট্টগ্রামের একটি প্রকল্পে কর ও মূসক ফাঁকি দেওয়ার উদ্দেশ্যে কাগজে কলমে আদিবাসী ঠিকাদার নির্বাচন করা হলেও বাস্তবে কাজ সম্পন্ন করা হয় বাঙালী ঠিকাদার দিয়ে। প্রকল্প বাস্তবায়নে সুশাসন সম্পর্কে স্থানীয় উপকারভোগীরা সংগতি, জবাবদিহিতা ও ন্যায্যবণ্টন মোটামুটি হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেছে এবং সুশাসনের মাপকাঠিতে উপকারভোগীগণ সার্বিকভাবে কোনো প্রকল্পকেই শক্তিশালী মনে করেননি।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রকল্প পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়নে ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো বিসিসিটি গুণগত পরিবীক্ষণ এবং প্রকল্প বাস্তবায়নকালে স্থানীয় সরকার বিভাগ, স্থানীয় প্রশাসন পরিবীক্ষণে ঘাটতি এবং বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ প্রকল্প মূল্যায়নে ঘাটতি। এ ছাড়া পরিবীক্ষণের সময় স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে কার্যকরভাবে সম্পৃক্ত করা হয় না। সুশাসনের ঘাটতির কারণ হিসেবে আইন, নীতিমালা ও নির্দেশিকায় দুর্বলতা, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের সক্ষমতা ও সমন্বয়ের ঘাটতি, প্রকল্প পর্যালোচনা এবং অনুমোদন প্রক্রিয়ায় দুর্বলতা, স্থানীয় জলবায়ু বিপদাপন্নতা এবং বরাদ্দের মধ্যে অসামঞ্জস্য উল্লেখযোগ্য। সুশাসনের ঘাটতির প্রভাব হিসেবে প্রকল্পের ফলাফল কার্যকর না হওয়া অন্যতম।

টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বিসিসিটি তহবিলের বরাদ্দ বৃদ্ধিসহ ট্রাস্টি বোর্ড পুর্নগঠনের দাবি জানিয়ে সততা ও জবাবদিহিতার মাধ্যমে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের আহ্বান জানান।

এ সময় গবেষণায় বাস্তবায়নকারী সংস্থা হিসেবে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান, বিসিসিটি, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের জন্য আট দফা সুপারিশ উত্থাপিত হয়েছে যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো— জলবায়ু ঝুঁকি ও বিপদাপন্নতা বিবেচনায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী সমাধান নিশ্চিত করার জন্য জলবায়ু তহবিল বৃদ্ধি; বিসিসিটি ট্রাস্টি বোর্ড পুনর্গঠন; স্থানীয় জলবায়ু ঝুঁকি যথাযথভাবে যাচাই করে প্রকল্প অনুমোদন এবং বিসিসিটি’র ভূমিকা পরিমার্জন ও সক্ষমতা বৃদ্ধি, নীতিমালা, আইন ও নির্দেশিকা পরিমার্জন।

এ ছাড়াও ওয়েবসাইটে প্রকল্প প্রস্তাবনা, নিরীক্ষা, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন প্রতিবেদন এবং প্রকল্প এলাকায় দরপত্র, প্রকল্প নকশা, বাস্তবায়নকৃত এলাকা, বাজেট ইত্যাদি তথ্য বিলবোর্ড ও নাগরিক সনদের মাধ্যমে তথ্য উন্মুক্ত করণ এবং জবাবদিহিতার মানদন্ড ও পরিবীক্ষণের প্রক্রিয়া সুনির্দিষ্ট করে সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও প্রতিষ্ঠানের সম্পৃক্ততা ও সমন্বয় নিশ্চিতসহ তদারকিতে নাগরিক অংশগ্রহণ নিশ্চিতের সুপারিশ করে টিআইবি।

টিআইবি’র ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন অ্যাডভোকেট সুলতানা কামালের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন— টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, উপ-নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের ও রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান।

(দ্য রিপোর্ট/এমএসআর/এপি/জানুয়ারি ২৩, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর