thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল 24, ১২ বৈশাখ ১৪৩১,  ১৭ শাওয়াল 1445

সক্রিয় কারসাজিচক্র

ফাঁস হচ্ছে শেয়ার কেনাবেচার গোপন তথ্য

২০১৭ জানুয়ারি ২৩ ২০:৩০:৫২
ফাঁস হচ্ছে শেয়ার কেনাবেচার গোপন তথ্য

রেজোয়ান আহমেদ, দ্য রিপোর্ট : ফাঁস হয়ে যাচ্ছে বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ও ইউনিট ক্রয়-বিক্রয়ের মতো অতি স্পর্শকাতর এবং গোপনীয় তথ্য। যা দিয়ে স্বার্থ হাসিল করছে একটি মহল। এমন একটি বিষয় ফাঁস হওয়াকে শেয়ারবাজারের জন্য হুমকি বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শীর্ষস্থানীয় ব্রোকারেজ হাউজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, গত নভেম্বর মাস থেকে ডিএসই থেকে শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়ের তথ্য ফাঁস হচ্ছে। সাধারণত লেনদেন শেষে কোন ব্রোকারেজ হাউজ কি পরিমাণ কিনছে এবং বিক্রয় করছে তা ফাঁস করা হয়। এমনকি লেনদেন চলাকালীন সময়ও এ তথ্য ফাঁস হয়ে যাচ্ছে। শেয়ার লেনদেনের গোপন তথ্য দিয়ে অন্যরা ক্রয়-বিক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেন বলে যোগ করেন তিনি।

কোন নির্দিষ্ট দিনের নির্দিষ্ট কোম্পানির শেয়ার কোন ব্রোকারেজ হাউজ থেকে কেনা হচ্ছে এবং কোন ব্রোকারেজ হাউজ থেকে বেচা হচ্ছে তা ফাঁস হচ্ছে। ডিএসইর ট্রেকহোল্ডার ব্রোকারেজ হাউজগুলোর কেনা-বেচার তথ্য ডিএসই থেকে ফাঁস হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

গত ১৮ ডিসেম্বর ডরিন পাওয়ার জেনারেশন অ্যান্ড সিস্টেমসের ক্রয়-বিক্রয়ের তথ্য ফাঁস হয় ওইদিন লেনদেন শেষ হওয়ার পরে। এক্ষেত্রে ১৪টি ব্রোকারেজ হাউজ থেকে ৪ লাখ ৫১ হাজার ২৮টি শেয়ার কেনার তথ্য ফাঁস করা হয়। কোন ব্রোকারেজ হাউজ থেকে কি পরিমাণ ক্রয় করা হয়েছে তা পাওয়া যাচ্ছে ফাঁস হওয়া তথ্যে।

দেখা গেছে, ব্র্যাক ইপিএল সিকিউরিটিজ থেকে ডরিন পাওয়ারের ৫৩ হাজার ৬২টি শেয়ার কেনা হয়েছে। আর ইবিএল সিকিউরিটিজ থেকে ৪১ হাজার ৯৫৮টি, শাহেদ সিকিউরিটিজ থেকে ৪০ হাজার ৬৬০টি, টোটাল কমিউনিকেশন থেকে ৩৯ হাজার ৮৮০টি, শার্প সিকিউরিটিজ থেকে ৩৬ হাজার ৩২৬টি, ফারইস্ট ইসলামি সিকিউরিটিজ থেকে ৩৪ হাজার ২৭০টি, পিএফআই সিকিউরিটিজ থেকে ৩১ হাজার ১৪৩টি, রয়েল ক্যাপিটাল থেকে ২৭ হাজার ৬৬৮টি, ওয়াইফেং সিকিউরিটিজ থেকে ২৭ হাজার ৬৫৮টি, লংকাবাংলা সিকিউরিটিজ থেকে ২৭ হাজার ৪১৩টি, এম সিকিউরিটিজ থেকে ২৬ হাজার ৪০টি, এনসিসিবি সিকিউরিটিজ থেকে ২৩ হাজার ৬৮০টি, সিটি ব্রোকারেজ হাউজ থেকে ২১ হাজার ২৭০টি ও আইএলএসএল থেকে ২০ হাজার কেনা হয়েছে।

এদিকে একইদিনে ৯ ব্রোকারেজ হাউজ থেকে ডরিন পাওয়ার জেনারেশনের শেয়ার বিক্রয়ের তথ্য প্রকাশ করা হয়। এই হাউজগুলো থেকে কোম্পানিটির ৫ লাখ ৫১ হাজার শেয়ার বিক্রয় করা হয়।

দেখা গেছে, এমটিবি সিকিউরিটিজ থেকে ডরিন পাওয়ার জেনারেশনের ২ লাখ ২১ হাজার ২৫০টি শেয়ার বিক্রয় করা হয়। এ ছাড়া পিএফআই সিকিউরিটিজ থেকে ১ লাখ ২৮ হাজার ৬৬৩টি, শাহজালাল ইসলামি ব্যাংক সিকিউরিটিজ থেকে ৫৩ হাজার ৩১০টি, এআইবিএল ক্যাপিটাল মার্কেট সার্ভিসেসের ৩৯ হাজার, বিডি সানলাইফ সিকিউরিটিজের ২৩ হাজার ৯০০টি, ইবিএল সিকিউরিটিজের ২৩ হাজার ৮০টি, লংকাবাংলা সিকিউরিটিজের ২২ হাজার ১৫০টি, স্কয়ার সিকিউরিটিজ ম্যানেজম্যান্টের ২১ হাজার ৭১০টি ও ব্র্যাক ইপিএল স্টক ব্রোকারেজের ১৮ হাজার ৩৫০টি।

এদিকে ১৮ ডিসেম্বর লেনদেন শেষে ডরিন পাওয়ারের শেয়ার দর দাড়ায় ১০৭.৬ টাকায়। যা পরের দিন বেড়ে দাড়ায় ১০৯.৯ টাকায়। এর আগে ৩০ নভেম্বর থেকে টানা দর পতন হয় কোম্পানির শেয়ারে। এ দিনের ১২৫.১ টাকার শেয়ার দর ১৫ ডিসেম্বর লেনদেন শেষে ১০৫.৭ টাকায় নেমে যায়। আর সর্বশেষ ২৩ জানুয়ারি লেনদেন শেষে ১১০.৭ টাকায় রয়েছে।

২০১৬ সালের নভেম্বর মাস থেকে শেয়ারবাজারে ষাঁড়ের দৌড় লক্ষ্য করা যায়। ওই সময় ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ছিল ৪ হাজার ৫৯২ পয়েন্ট। আর আর্থিক লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৩৫০-৪৫০ কোটি টাকার ঘরে। তবে আড়াই মাসের ব্যবধানে এ সূচক এখন ১ হাজার ৭৮ পয়েন্ট ৫ হাজার ৬৭০ পয়েন্টে অবস্থান করছে। যা ডিএসইএক্স সূচকের ৪ বছরের যাত্রার সর্বোচ্চ। আর লেনদেন ২ হাজার কোটি টাকার মাধ্যমে ৬ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে উঠে গেছে। এই উত্থানের পেছনে শেয়ার লেনদেনের গোপন তথ্য ফাঁসকারীদের কৃত্রিম প্রভাব থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম জানান, তদন্ত করে বিএসইসির সঠিক তথ্য বের করা উচিত। এক্ষেত্রে কারা যোগসাজশ করছে তাদেরকে আইনের আওতায় এনে শাস্তি দিতে হবে।

এদিকে শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়ের তথ্য প্রকাশ করে নির্দিষ্ট কোন শেয়ারে আগ্রহ তৈরি করা চক্রের লক্ষ্য হতে পারে বলে মনে করেন আজিজুল ইসলাম। এক্ষেত্রে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকে পড়লে তারা লাভবান হবেন। যা শেয়ারবাজার ও বিনিয়োগকারীদের জন্য দুঃসংবাদ হবে। এক্ষেত্রে ফাঁস হওয়া তথ্যের শেয়ারে কেনার আগ্রহ থেকে বেরিয়ে বিচার বিশ্লেষণ করার জন্য বিনিয়োগকারীদেরকে পরামর্শ দেন তিনি।

বিএসইসির আরেক সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, এ বিষয়ে আমি এখনো কোন কিছু শুনিনি। তাই মন্তব্য করা ঠিক হবে না।

বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সাইফুর রহমান বলেন, শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়ের তথ্য ফাঁস হচ্ছে এমন অভিযোগ শুনে আসছি। বিষয়টি খতিয়ে না দেখে মন্তব্য করা ঠিক হবে না।

ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেএএম মাজেদুর রহমান বলেন, ঘটনার সত্যতা যাছাই না করে মন্তব্য করা ঠিক হবে না। তবে এ ধরনের ঘটনা ঘটলে অবশ্যই এর বিপরীতে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শেয়ারের যাবতীয় তথ্য সংরক্ষিত থাকে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল), ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেড (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেড (সিএসই)। এর মধ্যে সিডিবিএলে বিনিয়োগকারীদের সব শেয়ার সংরক্ষিত থাকে। অন্যদিকে বিএসইসি, ডিএসই ও সিএসই তাদের সফটওয়্যারের মাধ্যমে লেনদেন মনিটর করে থাকে।

এই চারটি প্রতিষ্ঠানের যে কোনো এক বা একাধিক জায়গা থেকে এসব তথ্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারিরা টাকার বিনিমিয়ে লেনদেনের তথ্য ফাঁস করে দিয়েছেন বলে জানা গেছে। এ খবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বাজারে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের স্বার্থে লেনদেনের তথ্যের গোপনীয়তা বজায় রাখা উচিত। লেনদেন ও শেয়ার ধারণের তথ্য হচ্ছে বিনিয়োগকারীদের আমানত। এই আমানত রক্ষা করা সংশ্লিষ্টদের পবিত্র দায়িত্ব। যেহেতু চারটির বেশি জায়গা থেকে তথ্য ফাঁসের সুযোগ নেই, তাই ওই চারটি জায়গায় নজর দিলেই তা বন্ধ করা সম্ভব।

(দ্য রিপোর্ট/আরএ/এপি/জানুয়ারি ২৩, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর