thereport24.com
ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল 24, ১১ বৈশাখ ১৪৩১,  ১৫ শাওয়াল 1445

প্রেসিডেন্ট পদক পেলেন শের আলী

২০১৭ জানুয়ারি ২৩ ২১:৩৪:৫৩
প্রেসিডেন্ট পদক পেলেন শের আলী

চট্টগ্রাম অফিস : দুর্ঘটনাকবলিত শিশুকে বাঁচানোর আকুতি নিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়া চট্টগ্রামের পুলিশ কনস্টেবল শের আলী ভাল কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রেসিডেন্ট পুলিশ পদক (পিপিএম) পেয়েছে। সোমবার (২৩ জানুয়ারি) দুপুরে পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শের আলীকে পদক পরিয়ে দেন। পুলিশ বিভাগের গৌরবময় এ সম্মানে ভূষিত হয়ে অত্যন্ত আনন্দিত শের আলী।

পুলিশ কনস্টেবল শের আলী (নম্বর ২৫৪৬) চট্টগ্রাম নগর পুলিশের গোয়েন্দা ইউনিটের উত্তর-দক্ষিণ বিভাগের বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিটে কর্মরত আছেন। কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলার রশিদনগর ইউনিয়নের পানিরছড়া গ্রামে তার বাড়ি।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার মো. ইকবাল বাহার প্রেসিডেন্ট পুলিশ পদকের (পিপিএম) জন্য পুলিশ কনস্টেবল শের আলীর পক্ষে সুপারিশ করেন।

গত বছরের ১১ ডিসেম্বর (রবিবার) দুপুরে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের রামু উপজেলার পানিরছড়া এলাকায় শের আলীর বাড়ির কাছাকাছি বাস উল্টে নিহত হন ৪ জন। ওই দুর্ঘটনায় আহত হন কমপক্ষে ২৩ জন। এ সময় ছুটিতে গ্রামের বাড়ি গিয়েছিলেন শের আলী। ওই ঘটনায় আহত একটি পাঁচ বছরের শিশুকে বাসের ভিতর থেকে বের করে দ্রুত হাসপাতালে নেন তিনি। হাসপাতালে নেওয়ার সময় শিশুটিকে কোলে নিয়ে শের আলীর কান্নার ছবি ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে। এতে আহত শিশুকে বাঁচানোর জন্য শের আলীর এ ভূমিকা সারাদেশে ব্যাপক আলোচিত হয়। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে স্থান করে নেয় শের আলীর ছবিটি।

জানা যায়, শের আলী এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক। কনস্টেবল হিসেবে পুলিশের চাকরিতে যোগদান করেন ১৯৯৮ সালে। প্রশিক্ষণ শেষে সিএমপিতেই কর্মরত আছেন দীর্ঘদিন থেকে। এর আগে র‌্যাবে ছিলেন আড়াই বছর। ২০০৮ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছেন জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে। সেখানে মূলত একজন নার্স হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। তখন থেকে মানুষের সেবা করাকে আনন্দের সাথে গ্রহণ করেছেন। যে কোন মানুষের সেবা করতে পারলে আত্মতৃপ্তি অনুভব করেন শের আলী। কারো বিপদের কথা শুনলে দৌড়ে যান তিনি।

সেদিনের ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে শের আলী বলেন, ছুটিতে বাড়িতে গিয়েছিলাম। এরপর একটা সড়ক দুর্ঘটনার খবর শুনে ছুটে যাই সেখানে। যাওয়ার পর দেখি এক হৃদয় বিদারক দৃশ্য। এরপর শাবল খুন্তি যার কাছে যা ছিল তা দিয়ে গাড়িটির বিভিন্ন অংশ কেটে যাকে যেভাবে পেরেছি বের করেছি। দুটি লোককে ধরতে পারছিলাম না, টেনেও আনতে পারছিলাম না। আর একটা লোক আর্তনাদ করতেছিল। তবুও বাসের বডি কেটে কয়েকজনকে বের করে আনতে পেরেছিলাম।

এরপর সেনাবাহিনীর রেকার দিয়ে দুর্ঘটনাকবলিত গাড়িটি উপরে উঠিয়ে লোকজনকে বের করে আনি। গাড়িটি একটু উপরে ওঠানোর পর ভিতরে প্রবেশ করে দেখি একজন অজ্ঞাতনামা মহিলার নিথর দেহ পড়ে আছে। তার পাশেই একটি রেকের নিচে চাপা পড়েছিল উম্মে হাবিবা নামের ৬ বছরের একটি কন্যা শিশু।

শের আলী বলেন, তখন তাকে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে নিয়ে কোনমতে বাইরে বেরিয়ে আসি। রাস্তায় সূর্যের আলোতে আসার পর মেয়েটির জ্ঞান ফিরে আসে। তখন মেয়েটি বলল ‘আব্বু পানি খাব’। তার বয়সী আমার নিজের একটা মেয়ে আছে, তার কথা মনে পড়ে গেল। তখন আমার আবেগ এসে গেল, আমি নিজের অজান্তে কেঁদে কেঁদে মেয়েটিকে নিয়ে দৌড়ালাম যেদিকে এ্যাম্বুলেন্স বা হাসপাতাল আছে সেদিকে। তখন যে আমি কেঁদেছিলাম তাও আমার মনে নেই।

তিনি বলেন, পরে সংবাদ মাধ্যমে আমার সেই কান্নার ছবি দেখে একটু লজ্জাও পেয়েছি। এরপর মেয়েটিকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে চিকিৎসার পর সে মোটামুটি সুস্থ হয়। রাতে আমি হাসপাতালে তাকে দেখতে যাই। সে সময় ডাক্তার আমাকে ভিতরে প্রবেশ করতে দিচ্ছিল না। পরে আমি পরিচয় দিই যে আমি তার অপরিচিত বাবা। এরপর ডাক্তার ফারজানা আমাকে হাসপাতালের ওয়ার্ডে নিয়ে যায়।

হাসপাতালে মেয়েটির জন্য নগদ ২ হাজার টাকা এবং কিছু কাপড়-চোপড় কিনে দেই। সে এখন আমার সাথে সব সময় মোবাইলে কথা বলে। আমাকে তাদের বাড়িতে বেড়াতে যেতে বলে। আমাকে এখন আঙ্কেল ডাকে।

শের আলী জানান, তবে এখন আমি আনন্দিত যে মেয়েটি হাসছে, সুস্থ আছে এবং তার মা-বাবার কোলে ফিরে গেছে। আমি মেয়েটির পরিবারের কাছে কৃতজ্ঞ। তার কারণে আজকে আমি সারাদেশে আলোচিত হয়েছি। সেদিন মেয়েটি তার বাবা মাদরাসা শিক্ষক আবুল হোসেনের সাথে চট্টগ্রাম শহর থেকে টেকনাফ গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছিল বলে জানান শের আলী।

মেয়ের বাবা আবুল হোসেন বলেন, ভবিষ্যতে আর কোন গাড়িতে চড়ে কোথাও যাব না। মেয়েকে নিয়ে বাড়িতেই থাকবো। শের আলীর কারণে আমার মেয়েকে ফিরে পেয়েছি।

এদিকে সিএমপি’র পক্ষ থেকে পিপিএম পদকের জন্য সুপারিশের পর সকালে পিপিএম পদক পেয়ে এ প্রতিবেদককে মুঠোফোনে নিজের খুশির কথা জানান শের আলী। এ সময় তিনি বলেন, সকলের দোয়ায় পিপিএম পদক পেয়ে ভাল লাগছে। এজন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী এবং পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

(দ্য রিপোর্ট/এমএইচএ/এপি/এনআই/জানুয়ারি ২৩, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর