thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ২৯ মার্চ 24, ১৫ চৈত্র ১৪৩০,  ১৯ রমজান 1445

অমর মুদির কবিতা

২০১৭ ফেব্রুয়ারি ০২ ১৯:২৯:১৪
অমর মুদির কবিতা

সাকিন-১

আমি এখনো বিশ্বাস করি
আমার ছোট্ট গ্রাম-ফুলবনি
এখনো অপেক্ষা করে আছে
নদীর ধারে বুড়ো বটগাছটার তলায়।
তেমনি আছে সেই পথ, যার ওপর দিয়ে
খালিপায়ে অজস্র ধুলো উড়িয়ে
ছুটে বেড়িয়েছি দিনের পর দিন, মাস, বছর।

এখানেই এসে বাসা গেড়েছিল ঠাকুর্দা
হাজার হাজার উদ্বাস্তুদের একজন।
নিরুপায় হয়ে আপন করে নিয়েছিল
অচেনা এই মাটিকে, আর ভেবেছিল
এই মাটিতে আবার জন্ম নেবে সে, আর তখন-
একেবারে অন্যরকম হবে জীবনটা।

তারপর যা ঘটল, ঠাকুর্দা সেটা স্বপ্নেও ভাবেনি।
এ এক আলাদা সময়, অন্য মানুষজন।
মাঝরাতে জঙ্গল থেকে বেরিয়ে এল ওরা।
মাথায় কালো রুমাল বাঁধা,আগুনে নল কাঁধে।
ঝড়ের মত গুলি চলল।
এদিকে ওদিকে ছিটকে পড়ল কয়েকটা লাশ।
ভয়ে সিঁটিয়ে গেল সারা ফুলবনি

কিছু লাভ হল, কিছু ক্ষতি।
দেশী চোর ছ্যাঁচড় গুলো ভোল বদলাল
অচেনা মানুষ জন ঘাঁটি গেড়ে বসল
ভাঙাচোরা ইসকুল ঘরে
বেঞ্চিগুলো জুড়ে তৈরি হল তক্তপোষ।
মাটির উনুনে হাঁড়িয়ে বসিয়ে
রান্না হলো ভাত আর মুরগী মাংস।
মো মো করে উঠল সারা ফুলবনি

শহর থেকে পাশ করা হাদাম বুড়ার নাতি
প্রেম করত জবা মাহতর সাথে।
এখানে ওখানে ঘুরত, বকবক করত সারাদিন।
চাকরি-পেলেই নাকি বিয়ে করত ওরা।

একরাতে হারিয়ে গেল জবা;
ক্ষত-বিক্ষত শরীরটা পাওয়া গেল জঙ্গলে
পরের দিন বিকেল। কাটা পাঠার মত
হাত পা বাঁধা ছেলেটা পড়ে রইল দাওয়ায়
বেশ কয়েকদিন, তারও পরে।
কুয়াশা ঢাকা এক ভোরে একটা পুঁটলি হাতে
কনকনে হাওয়া চিরে জঙ্গলে মিশে গেল সে।

সাকিন-২

আমার শাদামাটা বুদ্ধিতে এতদিন বুঝেছি
জীবনকে নিয়ে চূড়ান্ত কিছু ভাবা সহজ নয়।
নদীর মত সেও একে বেঁকে চলে।
দেশ,কাল, ধর্মের দেওয়ালে ঘা খেয়ে
পথ বদলায়, যাকে পারে বেমালুম গিলে ফেলে।
চল্লিশ বছর সময়টা অতীতকে খতিয়ে দেখার মত
যথেষ্ট লম্বা সময় নয়। তবুও চোখ বুজলে দেখি
মেথির ডগা চিবোচ্ছি;ঘাসে মুছছি কাদা।
হলুদ মৌচাকের খোঁজে পেরিয়ে গেছি মাঠ।
মেঘের দল বিকেলের লাল আলোর সাথে
লুকোচুরি খেলতে খেলতে হারিয়ে গেল আকাশে।
গভীর রাতে কান পেতে শুনছি
গাই বাছুরের ফিসফাস কথা।
ফুলবনিতে সব সমস্যা আপনা আপনি
মিটে যায়, পাওয়া যায় সব প্রশ্নের উত্তর

তাই ফিরে যাচ্ছি ফুলবনি।
জটিল প্রশ্নগুলোকে নিয়ে দাঁড়াব
সহজ সেই সময়টার মুখোমুখি
পুরুষ আর নারী যেমন দাঁড়ায় বিয়ের মণ্ডপে।
শৈশব আর যৌবন চোখ পাকিয়ে দেখবে
একে অন্যকে, চাইবে অন্যজন শুরু করুক।
শেষমেশ ফুলবনি বলে উঠবে,
“ তোকে তো আমি চিনতেই পারি নি!
তোকে নিয়ে কত স্বপ্ন দেখতাম।
এখন তোকে দেখে আমার ভয় হচ্ছে।”

“ আমিও নিজেকে ভয় পাই।
অনাহারে অর্ধাহারের ভয়;
অসম্মানের জীবন কাটাবার ভয়;
বিক্রি হয়ে যাওয়ার ভয়!
মুক্তি চাই এই ভয় থেকে-
পারবে ফিরিয়ে দিতে সাহস?”

মুচকি হেসে সে বলবে,
“ সৎমা যতই ভালোবাসুক, নিজের মা হবে না।
তোর বড়শি, রাংতা মোড়া তলোয়ার, তীর ধনুক
সবই তোলা আছে কার্নিশে।
ফিরে এসে পেড়ে নিস।
যুদ্ধ করিস নিজের সঙ্গে, ভয়ের সঙ্গে।
আমি তো আছি। তুই জিতবি!”


[অমর মুদি: ১৯৫৫ সালে মেদিনীপুর জেলার রাণসিরাই গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।পিতা নারায়ণচন্দ্র, মা জ্যোৎস্নার সাহিত্যে অনুরাগ এবং পুস্তক সংগ্রহ শৈশবে সাহিত্যের প্রতি আকৃষ্ট করে।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজির স্নাতক, সাংবাদিকতায় ডিপ্লোমা এবং জনসঞ্চার মাধ্যমে মাস্টার্স ডিগ্রি, বর্তমানে দিল্লিতে কর্মরত। ২০১০ সালে প্রকাশ পায় কবিতার বই ‘জীবন যাত্রা’। দিল্লিতে‘ব্রাত্যজন’ গোষ্ঠিতে অভিনয় এবং নির্দেশনা, ‘ক্রিয়েটিভ মাইন্ড’ পত্রিকার নাট্য সমালোচনা করেন।ওরহান পামুকের উপন্যাস My Name is Red তিনি অনুবাদ করেছেন ‘আমার নাম লাল’ নামে। এছাড়া তার আরো কিছু কর্মের মধ্যে রয়েছে, ‘Selected Bangla One Act Plays’ ‘বড়দের ছোটবেলা। ইংরেজি উপন্যাস Curse of Badam Pahar: Savages of the East।]


পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর