thereport24.com
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল 24, ১২ বৈশাখ ১৪৩১,  ১৬ শাওয়াল 1445

উত্তরায় কিশোর-তরুণদের ৩০ গ্যাং

২০১৭ ফেব্রুয়ারি ০৮ ২০:১৮:৫৯
উত্তরায় কিশোর-তরুণদের ৩০ গ্যাং

রাজধানীর উত্তরা ও এর সংলগ্ন এলাকাগুলোতে কিশোর-তরুণদের প্রায় ৩০ টির মতো ছোট-বড় বিভিন্ন গ্যাং বা গ্রুপ সক্রিয়। এ সব গ্যাংয়ে বিভিন্ন যুক্ত হচ্ছে বিভিন্ন বয়সের ছেলেরা। এসব গ্যাংয়ের নিজস্ব লোগো রয়েছে। বিভিন্ন দেয়াল লিখন ও ফেইসবুকে পেজে সেই লোগোগুলো ব্যবহার করে গ্যাং সদ্যসার। জানা গেছে, ওই সব এলাকায় আনুমানিক ২০০১ সাল থেকে এ গ্যাংগুলোর কার্যক্রম শুরু হয়ে এখনো চলছে। এমনই ‘গ্যাং কালচার’ সর্বনাশী ফাঁদে পড়ে চলতি বছর ৬ জানুয়ারি উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরে প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে প্রাণ হারাতে হয়েছে ট্রাস্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র আদনান কবিরকে।

র‌্যাবের গোয়েন্দা, গ্রেফতার হওয়া গ্যাং সদস্য ও স্থানীয়দের তথ্যানুসারে—কিশোর-তরুণদের সক্রিয় এই গ্যাংগুলোর মধ্যে রয়েছে-কাকরা গ্রুপ, জি ইউনিট গ্রুপ, ব্ল্যাক রোজ গ্রুপ, রনো গ্রুপ, কে নাইট গ্রুপ, ফিফটিন গ্রুপ, ডিসকো বয়েজ গ্রুপ, নাইনস্টার গ্রুপ, নাইন এম এম বয়েজ গ্রুপ, পোটলা বাবু গ্রুপ, সুজন গ্রুপ, আলতাফ গ্রুপ, ক্যাসল বয়েজ গ্রুপ, ভাইপার গ্রুপ, বিগ বস ইত্যাদি। এ সব গ্রুপের বর্তমান সদস্য শতাধিক।

২০১৫ সালে কয়েকটি গ্যাং সুসংগঠিত হয়ে বৃহৎ আকারে ‘ফিফটিন গ্রুপ’ নামে আত্মপ্রকাশ করে। পরবর্তী সময়ে অন্তঃকোন্দলের ফলে মূল তিনটি ধারায় বা ভাগে ভাগ হয় গ্রুপটি; ডিস্কো এবং এর সহযোগী (বিগবস), নাইন স্টার ও নাইন এমএম গ্রুপ নামে বিভক্ত হয়। এ সব গ্রুপে বিভিন্ন বয়সের তরুণরা থাকলেও, কিশোরদের সংখ্যাই বেশি।

গ্যাং কালচারে আসক্ত এই সব কিশোর-তরুণরা নিজ গ্রুপের লোগো দেয়াল লিখন ও ফেসবুকে ব্যবহারের পাশাপাশি মাদক সেবনের (মদ ও সীসা খাওয়া) ছবিও ফেসবুকে আপলোড করে। ফেসবুকে এক গ্রুপ অন্য গ্রুপকে হুমকি প্রদান করে স্ট্যাটাস দেয় এবং পরস্পরের আইডি হ্যাক করার চেষ্টা করে।

এ বিষয়ে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেছেন, ‘উত্তরার বিভিন্ন গ্যাং গ্রুপের উৎপত্তি ও অপরাধমুলক কর্মকাণ্ড মূলত আজ থেকে প্রায় ১৫ বছর পূর্বে, আনুমানিক ২০০১ সালে, শুরু হয়েছিল। উত্তরায় ও উত্তরা সংলগ্ন এলাকায় প্রায় ৩০টির মতো ছোট-বড় বিভিন্ন গ্যাং বা গ্রুপ রয়েছে।’

তিনি আরও বলেছেন, ‘রাজধানীর উত্তরায় কিশোর আদনান কবীর (১৩) হত্যাকাণ্ডের মূল কারণ ছিল এ ধরণের গ্যাং গ্রুপ। কিশোর আদনানকে সরাসরি আক্রমণ করে ডিস্কো গ্রুপের সদস্যরা। ডিস্কো গ্রুপের সদস্যদের আক্রমণের ফলে মারা যায় আদনান। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে কথিত ডিস্কো বয়েজ ও বিগবস গ্রুপের দলনেতাসহ মোট ৮ জনকে মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারি) রাতের বিভিন্ন সময় উত্তরা থেকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-১।’

গ্রেফতাকৃতরা হলো—আদনান হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত ৩ নম্বর আসামি ও কথিত ডিস্কো বয়েজ গ্যাং গ্রুপের দলনেতা শাহরিয়ার বিন সাত্তার সেতু ওরফে রায়হান আহম্মেদ সেতু ওরফে ডিস্কো সেতু (২২)। এজাহারভুক্ত অপর আসামি ও কথিত বিগবস গ্যাং গ্রুপের দলনেতা মো. আক্তারুজ্জামান ছোটন (১৯), মো. শাহীনুর রহমান (১৭), মো. রমজান মোবারক (১৭), মো. সেলিম খান (২৩), মো. ইব্রাহীম হোসেন ওরফে সানি (২৮), মিজানুর রহমান সুমন (২২) ও জাহিদুল ইসলাম জুইসকে (২১)। তাদের কাছ থেকে ৩টি চাকু, ২টি চাপাতি, ২টি রড, ৩টি চেইন, ৩টি স্প্রে কালার বোতল, ২টি স্কুল ব্যাগ ও ৪ পুরিয়া গাঁজা উদ্ধার করা হয়েছে।

মুফতি মাহমুদ বলেছেন, ‘উত্তরায় ২০০৯ সালে ডিস্কো সেতুর নেতৃত্বে ডিস্কো বয়েজ গ্রুপ আত্মপ্রকাশ করে। এরা মূলত উত্তরা কেন্দ্রিক। অন্যদিকে ২০১৬ সালের শুরুর দিকে আক্তারুজ্জামানের নেতৃত্বে ডিস্কো বয়েজ গ্রুপের সহযোগী গ্রুপ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে বিগবস গ্রুপ। আর এদের প্রতিদ্বন্দ্বী গ্যাং গ্রুপ হলো নাইন স্টার গ্রুপ। এটা তালাচাবি রাজুর নেতৃত্বে ২০১৩ সালে আত্মপ্রকাশ করে। তদন্তে উঠে আসে, এই একেকটি গ্রুপের সদস্য সংখ্যা ২০ থেকে ২৫ জন।’

মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক আরো বলেছেন, ‘গ্রুপগুলো উত্তরার বিভিন্ন এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, মাদক ও চাঁদাবাজিসহ নানা কারণে বিরোধে লিপ্ত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৩ জানুয়ারি ডিস্কো বয়েজ গ্রুপ ও বিগবস গ্রুপের সদস্যরা মিলে নাইন স্টার গ্রুপের গ্যাং লিডার তালাচাবি রাজুকে মারধর করে মারাত্মকভাবে আহত করে। এর পাল্টা প্রতিশোধ হিসেবে ৫ জানুয়ারি নাইন স্টার গ্রুপের সদস্যরা বিগবস গ্যাং গ্রুপের লিডার আক্তারুজ্জামানকে আক্রমণ করে। আবারো প্রতিশোধ নিতে তৃতীয় দফায় ৬ জানুয়ারি ডিস্কো বয়েজ গ্রুপ ও বিগবস গ্রুপের সদস্যরা মিলে নাইন স্টার গ্রুপের গ্যাং লিডার তালাচাবি রাজুকে আক্রমণ করে। এ সময় রাজুর সাথে ছিল আদনান। তার সাথে তালাচাবি রাজুর সখ্যতা ছিল। আক্রমণের পর রাজু পালাতে পারলেও আদনান তাদের হাতে ধরা পরে। তখন ডিস্কো বয়েজ গ্রুপ ও বিগবস গ্রুপের সদস্যরা মিলে আদনানকে নির্দয়ভাবে পিটিয়ে ও খুঁচিয়ে আঘাত করে। এতে আদনান মারা যায়। তবে তারা (গ্রেফতারকৃতরা) স্বীকার করেছে, তাদের টার্গেট ছিলো রাজু। আদনান তার সহযোগী হিসেবে এ হামলার শিকার হয়েছে।’

প্রসঙ্গত, গত ৬ জানুয়ারি সন্ধ্যায় উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের ১৭ নম্বর রোডে ট্রাস্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র আদনান কবিরকে খেলার মাঠে পিটিয়ে এবং কুপিয়ে মারাত্মক আহত করে প্রতিপক্ষ গ্রুপের সদস্যরা। চিকিৎসার জন্য তাকে উত্তরা লুবানা হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আদনানকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনার পর প্রকাশ পায় উত্তরার ‘গ্যাং-কালচার’ এ আসক্ত গ্রুপগুলো আধিপত্য বিস্তারকে ঘিরে মারামারি-হানাহানির মতো ঘটনা প্রায়ই ঘটিয়ে থাকে। এ ঘটনায় আদনানের বাবা কবীর হোসেন বাদী হয়ে উত্তরা পশ্চিম থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় এর আগেও তিনজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের মধ্যে একজন জড়িত থাকার কথা আদালতে স্বীকারও করেছে।

(দ্য রিপোর্ট/এমএসআর/জেডটি/ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর