thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল 24, ৬ বৈশাখ ১৪৩১,  ১০ শাওয়াল 1445

‘আলো সুন্দর, কিন্তু জন্ম নেয় ভয়ংকর আগুন থেকে’

২০১৭ ফেব্রুয়ারি ১০ ১৮:০৩:৩০
‘আলো সুন্দর, কিন্তু জন্ম নেয় ভয়ংকর আগুন থেকে’

বরিশাল প্রতিনিধি : শুরুতেই কুশল জিজ্ঞাসা, তোমরা কেমন আছো? শিক্ষার্থীরা ভালো বললেও স্বর ছিল ক্ষীণ। স্যার ফের বললেন, তার তো কোনো প্রমাণ দেখি না। গায়ে জোর নেই, জোরালো আওয়াজ নেই। জোরে একটা চিৎকার চাই। এবার সমস্বরে চিৎকার দিয়ে পুরস্কার নিতে আসা শিক্ষার্থীরা জানান দিল যে তারা দুর্বল নয়। এমন কথোপকথনের মধ্য দিয়ে বক্তব্য শুরু করেন আলোকিত মানুষ গড়ার কারিগর বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ।

শুক্রবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নগরীর ব্যাপ্টিস্ট মিশন বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে বই পড়ে নিজের উৎকর্ষতার প্রমাণ দিয়ে এক হাজার ৩১৬ জন শিক্ষার্থীর উপস্থিতিতে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দিচ্ছিলেন তিনি।

আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেছেন, ‘১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা স্বাধীন হয়েছি এবং লাল সবুজের পতাকা পেয়েছি। জাতি হিসেবে আমাদের এগিয়ে যাওয়ার জন্য প্রথমেই প্রয়োজন শিক্ষা। শিক্ষা থাকলে সবকিছুই মানুষের মধ্যে এসে যায়। শিক্ষার আলো তোমাদের মধ্যে পৌঁছে দিতে চাই।’

এ সময় তিনি উপমায় বলেছেন, ‘আলো সুন্দর কিন্তু জন্ম নেয় ভয়ংকর আগুন থেকে। তোমাদের মধ্যে জ্ঞানের আগুন, শক্তির আগুন, ভালোবাসার আগুন থাকতে হবে। আমরা তোমাদের মধ্যে আলো চাই বলে পৃথিবীর সেরা লেখকদের বই পৌঁছে দিয়েছি।’

এ সময় উপস্থিত ছাত্র-ছাত্রীরা হাত উঁচিয়ে এতে একাত্মতা প্রকাশ করে। প্রধান অতিথি ঘোষণা করেছেন, আলোকিত মানুষ গড়তে এখন থেকে প্রতিবছর বরিশালে অনুষ্ঠিত হবে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের বই পড়া কর্মসূচির এই পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান।

বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের দেশভিত্তিক উৎকর্ষ কার্যক্রমের আওতায় বই পড়ার জন্য বরিশালে এই প্রথম পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান হচ্ছে বেসরকারি টেলিফোন অপারেটর গ্রামীণফোনের সহায়তায়। এখানে বরিশাল নগরীর ৩১টি বিদ্যালয়ের ১ হাজার ৩১৬ জন শিক্ষার্থীকে পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।

অনুষ্ঠানে পুরস্কার নিতে আসা শিক্ষার্থী রূপন্তি বলেছেন, “এখান থেকে এক বছরে ১২টি বই নিয়ে পড়েছি। এর মধ্যে বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়ের ‘পথের পাঁচালি’ বেশ লেগেছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখাও ছিল। আমি মনে করি পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি সাহিত্যের বই পড়ে আমার বেশ উপকার হয়েছে। আর পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়ে পুরস্কার নিতে পারছি বলে আরো ভালো লাগছে।”

এখানেই কথা হয় ৩১টি বিদ্যালয়ের মধ্যে প্রথম হওয়া শেরে বাংলা নগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. মেহেদি হাসান ও মো. জুনায়েদ হোসেনের সঙ্গে। তাদের বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা নিয়মিত বই পড়তে এবং প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে বেশ উৎসাহ দিয়েছেন। বিদ্যালয়টির ১৮১ জন শিক্ষার্থী বই পড়া প্রতিযোগিতার পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সবাই উত্তীর্ণ হয়েছে। এতে তাদের আনন্দের সীমা নেই।

বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র থেকে বই নেওয়া এবং শিক্ষার্থীদের পড়াতে উদ্বুদ্ধ করার ক্ষেত্রে বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাই সংগঠকের ভূমিকা পালন করেন। এমনই একজন দুর্গাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা বিথীকা চ্যাটার্জী।

তিনি বলেছেন, ‘ছাত্রছাত্রীরা এখন অবসর সময়ে মোবাইল ফোন নিয়ে ব্যস্থ হয়ে পড়ে। এর চেয়ে বই পড়ার এই কর্মসূচির মাধ্যমে তারা অবসর সময়ে অনেক কিছু জানতে পারছে। এই কর্মসূচি আরও প্রসারিত করা উচিত। কেবল নগর নয়, গ্রাম অঞ্চলেও এর প্রভাব পড়লে সমাজ গঠনে তা ইতিবাচক হবে।’

সংগঠক মাহাবুবুর রহমান বিথীকার সঙ্গে সহমত পোষন করে বলেছেন, ‘বই পারে সমাজ বদলাতে আর জাতি গঠনে ভূমিকা রাখতে। এই কর্মসূচির মাধ্যমে অপসংস্কৃতি রুখে দেওয়া সম্ভব।’

অনুষ্ঠানস্থলে বাহাউদ্দিন গোলাপ নামের এক অভিভাবকের অভিব্যক্তি হলো, ‘আমার সন্তান চমৎকার এক কর্মসূচির মধ্যদিয়ে আলোকিত এক পথযাত্রার সাথী হতে যাচ্ছে। আমি সত্যিই আনন্দিত।’

আরেক অভিভাবক হেনরী স্বপন বলেছেন, ‘জঙ্গীবাদকে যদি রুখতে হয়, ছেলে-মেয়েদের সুস্থ সংস্কৃতির জায়গায় আনতে হলে বই পড়ানো দরকার। কেননা বই পড়লে তার মনোজগতে নরম জায়গা তৈরি হবে। যা ই-বুক বা ফেসবুকের মাধ্যমে তৈরি হয় না।’ বই পড়লে মানুষের জন্য ভালোবাসা তৈরি হয় বলে এই আয়োজন বেশ লাগে তার কাছে।

অনুষ্ঠানে অতিথি হয়ে এসেছিলেন বরিশালে বিভগীয় কমিশনার মো. গাউস, বরিশালের জেলা প্রশাসক গাজী মো. সাইফুজ্জামান, শিশু সাহিত্যিক আলী ইমাম, গ্রামীণফোনের বরিশাল রিজিওনাল প্রধান মো. আহসান হাবিব, বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের পরিচালক মো. মাসুম। এরপর অতিথিদের কাছ থেকে সারিবদ্ধ হয়ে মূল্যবান পুরস্কার গ্রহণ করে বিজয়ী প্রতিযোগীরা।

(দ্য রিপোর্ট/এম/এস/জেডটি/ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর