thereport24.com
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল 24, ৫ বৈশাখ ১৪৩১,  ৯ শাওয়াল 1445

‘উন্নয়নের নামে বুড়িগঙ্গাকে ঝিলে পরিণত করা যাবে না’

২০১৭ ফেব্রুয়ারি ১০ ১৯:১৩:০৩
‘উন্নয়নের নামে বুড়িগঙ্গাকে ঝিলে পরিণত করা যাবে না’

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : উদ্ধার ও উন্নয়নের নামে বুড়িগঙ্গা নদীকে ঝিলে পরিণত করা যাবে না, বলে অভিমত ব্যক্ত করেছে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন-বাপা এবং বুড়িগঙ্গা রিভারকিপার নামের দু’টি পরিবেশবাদী সংগঠন।

শুক্রবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ডিআরইউর সাগর-রুনি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে দুই সংগঠনের নেতারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন ও বুড়িগঙ্গা রিভারকিপার এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে।

লিখিত বক্তব্যে বাপার যুগ্ম সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, বেপরোয়া দখলে বিপর্যস্ত বুড়িগঙ্গার দ্বিতীয় শাখাকে হাতিরঝিলের মতো দৃষ্টিনন্দন করার প্রকল্প নিয়েছে সরকার। নাগরিকদের সঙ্গে আলোচনা না করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন বিশ্বব্যাংক ও বাংলাদেশ মিউনিসিফিইয়েল ডেভেলপমেন্ট ফান্ডের (বিএমডিএফ) আর্থিক সহায়তায় সিঙ্গাপুরের কালং ও সিঙ্গাপুর নদী এবং হাতিরঝিলের আদলে বুড়িগঙ্গার দুই তীর সাজানোর ঘোষণা দিয়েছে। ইতোমধ্যে ‘‘ঢাকা ইনটিগ্রেটেড আরবান ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড স্মার্ট সিটি ম্যানেজমেন্ট প্রজেক্ট” নামের প্রকল্পটির মাধ্যমে বুড়িগঙ্গার তীর ঘেঁষে হাজারীবাগ থেকে পাগলা পর্যন্ত অধুনিকায়ন করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

সরকারের এই আধুনিকায়ন ও সৌন্দর্যবর্ধনের উদ্যোগকে স্বাগত এবং এই প্রকল্পের নকশা ও পরিকল্পণা জনসমক্ষে তুলে ধরার আহ্ববান জানান শরীফ জামিল। তিনি বলেন, ইতিপুর্বে বিআইডাব্লিউটিএ-এর একাধিক প্রকল্পের মাধ্যমে দেড় হাজার কোটি টাকা বুড়িগঙ্গার জলে ফেলা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, প্রকল্পগুলোতে বিভিন্ন জায়গায় অবৈধ দখলকে বৈধতা দিয়ে নকশা তৈরী করা হয়েছে। বছিলার যে অংশে বিরাট প্লাবন অঞ্চলের মধ্য দিয়ে আদি-বুড়িগঙ্গা লালবাগ লোহারপুলে মিশেছে সেই অংশকে দখলদারদের কবলে রেখে একটি কৃত্রিম খালের মাধ্যমে বুড়িগঙ্গাকে প্রবাহমান বুড়িগঙ্গার সঙ্গে যুক্ত করার কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি নদীর দুইপাড় বাঁধাইয়ের নামে নদীর স্বাভাবিক চরিত্র বদলে ফেলার পরিকল্পণা করা হয়েছে। যা মহানগরীর জন্য ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনবে। কারণ এতে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নীচে নেমে যাওয়াকে আরও তরান্বিত করবে। তাই নদীর পাড় বাঁধাই বা অপরিকল্পিত নদী শাসনের নামে সৌন্দর্যবর্ধন করে নদীকে ঝিলে রুপান্তর করার পরিকল্পণা কোনোভাবেই গ্রহনযোগ্য নয়।

তিনি আরও বলেন, বুড়িগঙ্গার চলমান দখল অব্যাহত রাখার সুযোগ দিয়ে, আদালতের রায় যথাযথভাবে মেনে নদীর সীমানা চিহ্নিত না করে এবং দখলবাজদের অবৈধ দখলকে উচ্ছেদ না করে প্রকল্পের নকশা তৈরী করায় আমরা বুড়িগঙ্গার শেষকৃত্য সম্পন্নের আশংঙ্কা করছি।

বুড়িগঙ্গা নদী রক্ষায় পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরে শরীফ জামিল বলেন, নদী সংশ্লিষ্ট সকল নকশা জনসমক্ষে প্রকাশ করতে হবে। অবিলম্বে তলদেশ, ঢাল ও পাড়ের সকল প্রকার দখল, ভরাট ও নির্মাণ কাজ বন্ধ করতে হবে। আদালতের রায় অনুযায়ী যথাযথভাবে নদীর সীমানা চিহ্নিত করার কাজ শেষ করতে হবে। নদীকে উদ্ধার ও উন্নয়নের নামে লেকে বা ঝিলে পরিণত করার পরিকল্পণা বন্ধ করতে হবে। নদী বিষয়ক যে কোনো উন্নয়ন পরিকল্পণায় নাগরিকদের সম্পৃক্ত করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন, বাপা’র সহ-সভাপতি প্রফেসর মোয়াজ্জেম হোসেন ও স্থপতি মোবাশ্বের হাসান, সাধারণ সম্পাদক ডা. আব্দুল মতিন, মিহির বিশ্বাস প্রমুখ।

মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, বাংলাদেশের জনমানুষের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে উন্নয়নের নামে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। হাজার হাজার কোটি টাকার এসব প্রকল্পের অধিকাংশই জনগণের উপকারের পরিবর্তে অপকার ডেকে এনেছে। অপরিকল্পিত ও উদ্দেশ্যমূলক এসব প্রকল্পের হাত থেকে জাতি বাঁচতে চায়। যে প্রকল্প কল্যাণের পরিবর্তে অকল্যাণ ডেকে আনে সে প্রকল্প নেওয়ার কোনো দরকার নেই।

স্থপতি মোবাশ্বের হাসান বলেন, বাংলাদেশকে বিকলঙ্গ রাষ্ট্রে পরিণত করতে নদী মেরে ফেলার উদ্যোগ দেওয়া হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারীদের চেয়ে নদী দখলকারীরা দেশের বেশী ক্ষতি করছে। তারা দেশের ভবিষ্যত প্রজন্মকে অন্ধকারে ঠেলে দিচ্ছে। তাই এসব দখলবাজদেরও যুদ্ধাপরাধিদের মতো বিচার করতে হবে।

(দ্য রিপোর্ট/এমএম/এস/কেআই/ফেব্রুয়ারি১০, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর