thereport24.com
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল 24, ১২ বৈশাখ ১৪৩১,  ১৬ শাওয়াল 1445

যাবজ্জীবনের মেয়াদ নিয়ে ফের বিতর্ক

২০১৭ ফেব্রুয়ারি ১৪ ১৭:০২:৪৯
যাবজ্জীবনের মেয়াদ নিয়ে ফের বিতর্ক

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের মেয়াদ নিয়ে ফের বিতর্ক তৈরি হয়েছে। মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) এক হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তিন আসামির আপিল শুনানিকালে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘যাবজ্জীবন মানে আমৃত্যু (ন্যাচারাল লাইফ) করাবাস।’

তবে যাবজ্জীবন দণ্ডের এই মেয়াদ সব ধরনের আসামির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য কি না, তা নিয়ে ফের বিতর্ক তৈরি হয়েছে। তবে এ নিয়ে লিখিত রায়ের কপি না পাওয়া পর্যন্ত শেষ কথা বলতে চান না আইন বিশেষজ্ঞরা।

২০০১ সালে সাভারে জামান নামের এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় ২০০৩ সালে দ্রুত বিচার আদালত তিন জনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন বিচারিক আদালত। এই তিন আসামি হলেন- আতাউর, আনোয়ার ও কামরুল। আসামিদের মধ্যে কামরুল পলাতক রয়েছেন।

পরে আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের শুনানি শেষে হাইকোর্টেও তাদের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন। ওই মামলায় আজ আপিল বিভাগ তিনজনের মৃত্যুদণ্ডাদেশের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন দণ্ড দেন। এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘যাবজ্জীবন মানে আমৃত্যু (ন্যাচারাল লাইফ) কারাবাস।’

এর আগে ২০১৪ সালে জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলার আপিলের রায়ের সময়ও একই বিতর্ক উঠেছিল। ২০১৬ সালে কাশিমপুর কারাগার পরিদর্শনে গিয়ে যাবজ্জীবন মানে আমৃত্যু কারাদণ্ড বলে মন্তব্য করেছিলেন প্রধান বিচারপতি। তখনও বিতর্ক হয়েছিল।

এবার যাবজ্জীবনের মেয়াদ নিয়ে নতুন করে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। মঙ্গলবার জামান হত্যা মালার রায়ের পর আসামিপক্ষের আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘প্রধান বিচারপতি যাবজ্জীবন মানে আমৃত্যু (ন্যাচারাল লাইফ) কারাবাস উল্লেখ করেছেন। তখন আমি এর প্রতিবাদ করেছি। আমি বলেছি দণ্ডবিধির ৫৭ ধরায় যাবজ্জীবন দণ্ড অর্থ সর্বোচ্চ ৩০ বছর। এছাড়া যাবজ্জীবনের আসামিরা কারাগারের রেয়াত পেয়ে দণ্ড আরও কমে আসে।’

তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘যদি যাবজ্জীবন বলতে আমৃত্যু কারাদণ্ডই হয়ে থাকে তাহলে এদের রেয়াতের কি হবে। আমি আরও বলেছি প্রধান বিচারপতির এ মন্তব্য যেন মূল রায়ে না থাকে। তবে এটা যদি থাকে তাহলে সব আসামির ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য হবে।’

এ বিষয়ে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমও অপেক্ষা করতে চান পূর্ণাঙ্গ রায় আসা পর্যন্ত। তিনি বলেন, ‘এখনই এটা বলা যাবে না যে, যাবজ্জীবন মানে আমৃত্যু। মূল রায় আসার পরে বুঝা যাবে।’

এক প্রশ্নের জবাবে মাহবুবে আলম বলেন, ‘সাভারের ৩ জনের মৃত্যুদণ্ড মওকুফ করে যাবজ্জীবন দণ্ড দিয়েছেন আপিল বিভাগ। তবে আদেশে বলেছেন- যাবজ্জীবন মানে সর্বোচ্চ ৩০ বছর নয়, আমৃত্যু কারাদণ্ড। তখন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বলেছেন পেনাল কোড অনুযায়ী যাবজ্জীবন মানে সর্বোচ্চ ৩০ বছর। জবাবে প্রধান বিচারপতি বলেছেন মূল রায়ে এর ব্যাখ্যা থাকবে।

তবে বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৫৭ ধারায় বলা হয়েছে, ‘দণ্ডের মেয়াদসমূহের ভগ্নাংশসমূহ হিসাব করার ক্ষেত্রে যাবজ্জীবন কারাবাসকে ত্রিশবছর মেয়াদী কারাবাসের সমতুল্য বলে গণ্য হবে।’

এদিকে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে যাবজ্জীবন দণ্ডের মেয়াদ নিয়ে আইনমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আনিসুল হকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘যখন বলা হয় লাইফ ইমপ্রিজনমেন্ট, তখন লাইফ ইমপ্রিজনমেন্ট মানেই হচ্ছে আমৃত্যু কারাদণ্ড। লাইফ ইমপ্রিজনমেন্ট বলতে আগে কিছু ছিল না, ছিল টানসপোর্টেশন ফর লাইফ। এর মানে হলো- যখন দীপান্তর করা। তারপর দীপান্তরের প্রশ্ন ওঠে গেলে তারপর করা হলো ইমপ্রিজনমেন্ট ফর লাইফ। এটা হলো আমৃত্যু।’

কিন্তু সময় বিবেচনার জন্য এখন ৩০ বছর হিসেবে গণ্য করা হয় বলেও উল্লেখ করেন আইনমন্ত্রী তিনি বলেন, ‘দণ্ডটাকে সময় বিবেচনা করার জন্য একটা নিয়ম করা হলো, ৩০ বছর খাটার পর ভাল আচরণের কারণে ছাড়া পাওয়ার যোগ্য হলে সেই বিবেচনায় ছেড়ে দেওয়া হয়। সেইজন্যই সেটাকে লিমিট করে দেওয়া হয়েছে ৩০ বছর। সেই ৩০ বছরও ৩০ বছর নয়। অনেকে বলেন জেলের বছর হলো ৯ মাসে। তাই সাড়ে ২২ বছর খাটলেই এটা বিবেচনা করা হয়।’

কিন্তু ২০১৩ সালের পর ২২ থেকে ২৩ বছর জেল খেটেও অনেক যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি মুক্তি পাচ্ছেন না, সেক্ষেত্রে তাদের কি হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমি শুধু এটুকু বলতে পারি সেই ব্যাপারেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।’

(দ্য রিপোর্ট/কেআই/এপি/ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর