thereport24.com
ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল 24, ৩ বৈশাখ ১৪৩১,  ৭ শাওয়াল 1445

পঞ্চগড়ের ৩৩ নদী এখন মরা খাল

২০১৭ ফেব্রুয়ারি ১৪ ২২:৩৩:০৪
পঞ্চগড়ের ৩৩ নদী এখন মরা খাল

রাজিউর রহমান রাজু, পঞ্চগড় : আজকের যে পঞ্চগড় জেলা শহর, এক সময় এর গোড়াপত্তন হয়েছিল করতোয়া নদীকে ঘিরেই। করতোয়া তখন ছিল স্রোতস্বিনী। সময়ের বিবর্তনে সেই প্রমত্তা নদীটিই বর্তমানে ধানক্ষেতে পরিণত হয়েছে।

এক সময় যে নদীর একূল-ওকূল দেখা যেত না, বন্যার সময় শো শো শব্দে প্রবাহিত হতো পানি, সেখানে এখন পানিও নেই, মাছও নেই। শুকনো, এক মরা নদী সেটি। সেখানে শোভা পাচ্ছে কৃষকের চাষ করা বোরো ধান।

শুধু করতোয়াই নয়, উজানে ভারতের একতরফা পানি প্রত্যাহারে হারিয়ে যাচ্ছে পঞ্চগড়ের ছোট-বড় মোট ৩৩টি নদী। পানির প্রবাহ না থাকায় মরা খালে পরিণত হয়েছে এসব নদী। নদীগুলোর বিস্তীর্ণ বুকে শোভা পাচ্ছে ধানক্ষেত। নদী শুকিয়ে যাওয়ায় এর প্রভাব পড়েছে মাছ, জলজ উদ্ভিদসহ প্রাণিকুলেও। হুমকিতে পড়েছে নদী কেন্দ্রিক কৃষকদের সেচ ব্যবস্থা। জীবিকা নির্বাহ নিয়ে সঙ্কটে পড়েছেন জেলেরা।

পঞ্চগড় জেলার ৮২ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বয়ে গেছে জেলার সর্ববৃহৎ নদী করতোয়া। উজানে ভারতের একতরফা বাঁধ নির্মাণের কারণে করতোয়া এখন প্রাণ হারাতে বসেছে। এ ছাড়া পঞ্চগড়ের পাঁচটি উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে গেছে ছোট-বড় আরও ৩২টি নদী। চাওয়াই, মহানন্দা, ডাহুক, বেরং, টাঙ্গন, তালমা, গোবরাসহ সব নদীর অবস্থা করতোয়ার মতোই নাজুক। প্রতিটি নদীর উৎসস্থল ভারতের অভ্যন্তরে হওয়ায় বছর জুড়ে এই নদীগুলোতে পানি থাকে না।

অপরদিকে, নদীর নাব্য রক্ষায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ না থাকায় নদীর বুকে চর জেগে উঠেছে। নদীগুলো বালুকাময় মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। এর মধ্যে মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে শুরু করেছে কিছু নদী। বেশির ভাগ নদীই এখন দখল হয়ে আবাদী জমিতে রূপান্তরিত হয়েছে। ভূমিহীন কৃষকদের ফসলের ক্ষেত হয়ে ওঠা পানিশূন্য এসব নদীতে মাছ না থাকায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন স্থানীয় জেলেরা। সারাদিন জাল নিয়ে নদীতে ঘুরেও কোনো মাছ না পাওয়ায় পেশা বদলানোর কথা ভাবছেন তারা।

করতোয়া নদীতে মাছ ধরতে আসা জেলে শামসুল হক বলেন, ‘আমি ৩৫ বছর ধরে এই এই পেশায় আছি। আগে নদীতে প্রচুর মাছ ধরতে পারতাম, কিন্তু এখন উজানে বাঁধের কারণে নদীতে পানিও নেই, মাছও নেই। এখন আর এই কাজ করে সংসার চালানো যায় না। আর বেশিদিন মনে হয় এই পেশায় থাকা যাবে না।’ তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘অন্য কি কাজ করবো বলেন? দিনমজুরের কাজে মানুষ আমাদের নিতে চায় না। তারা ভাবে, আমরা মাছ ধরে অভ্যস্ত, অন্য কাজ হয়ত পারবো না।’

পঞ্চগড় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘পঞ্চগড় জেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়া ৩৩টি নদীর প্রায় প্রতিটিরই উৎপত্তিস্থল ভারত। দীর্ঘদিন ধরে খনন না করা এবং উজানের বিভিন্ন স্থানে বাঁধ নির্মাণের কারণে তাদের এই নদীগুলো নাব্য হারাতে বসেছে। আমরা জেলা নদী রক্ষা কমিটির মাধ্যমে জাতীয় নদী কমিশনের কাছে জেলার নদীগুলোর নাব্য রক্ষায় ড্রেজিং করার জন্য প্রস্তাব পাঠিয়েছি। ইতোমধ্যে পঞ্চগড় জেলার অভ্যন্তরে বহমান ৮২ কিলোমিটার করতোয়া নদীর ৫ কিলোমিটার খননের অনুমোদন হয়েছে। এই খনন কাজ চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে শুরু হতে পারে। এ ছাড়া জেলার প্রায় প্রতিটি নদীই খনন করে নাব্য ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে পর্যায়ক্রমে প্রস্তাব পাঠানো হবে।’

(দ্য রিপোর্ট/জেডটি/এনআই/ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর