thereport24.com
ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল 24, ৭ বৈশাখ ১৪৩১,  ১১ শাওয়াল 1445

পুরুষের অক্ষমতায় স্টেম সেল চিকিৎসা

২০১৭ ফেব্রুয়ারি ১৯ ১৫:১৭:১৬
পুরুষের অক্ষমতায় স্টেম সেল চিকিৎসা

ডা. মো. ইয়াকুব আলী

পুরুষের যৌন অক্ষমতাকে (Erectile Dysfunction) এক সময় চিকিৎসকরা মানসিক সমস্যা হিসেবে বিবেচনা করতেন। কিন্তু বর্তমানে চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ডায়াবেটিস, অথেরোসক্লেরোসিস (atherosclerosis) ও বার্ধক্যজনিত রোগ কিংবা রক্তসঞ্চালন সমস্যা, নাইট্রিক এসিডের অভাব বা নার্ভ ইনজুরির কারণে যৌন অক্ষমতা দেখা দেয়।

উল্লেখিত রোগগুলোর মধ্যে বার্ধক্য, পেইরোনির সমস্যা (Peyronie’s disease), পুরুষাঙ্গের কাণ্ডের স্নায়ুর (cavernous nerve) আঘাতজনিত সমস্যা শারীরিক অবস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত। এগুলোকে প্র্যোস্টাট ক্যান্সারের অন্যতম প্রধান কারণ বিবেচনা করা হয়।

এই সমস্যাগুলো লিঙ্গের নিউরোভাসকুলার (neurovascular bundles) ধ্বংস এবং লিঙ্গের স্বাভাবিক উত্থান ক্ষমতাকে নষ্ট করে দেয়। এর ফলে কার্পাস ক্যাভারনাসে (corpus cavernosa) যে ক্ষত সৃষ্টি হয়, সেখান থেকে আর কোনোভাবেই স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাওয়া সম্ভব নয় বলে এখন পর্যন্ত সকলের ধারণা।

অটোলোগাস স্টেমসেল বা নিজ দেহ থেকে সংগৃহীত স্টেম সেল যে কোনো কারণে দেখা দেওয়া যৌন অক্ষমতা থেকে মুক্তি দিতে নতুন আশার আলো হিসেবে দেখা দিয়েছে, যার প্রমাণ লক্ষণীয়।

যৌন অক্ষমতার চিকিৎসা

স্বীকৃত যে নাইট্রিক অক্সাইড ফসফোডাইস্টিরেস টাইপ-৫ ইনহিবিটর বাড়াতে মূল ভূমিকা পালন করে এরমধ্যে রয়েছে সিলডেন ফিলা (ভায়াগ্রা, রিভাটিও), ভারডেনফিল (লেভিট্রা) ও টাডালাফিল (এডসিরকা ও সিয়ালিস)। কিন্তু নাইট্রিক অক্সাইড প্রবাহ ব্যহত হলে এসব ওষুধ কোনো কাজ করে না। এছাড়া এসব ওষুধে যৌন অক্ষমতার অন্তর্নিহিত কারণ দূর হয়না।

নিউরোপ্যাথি ও এন্ডোথেলিয়াল কর্মহীনতা (neuropathy and endothelial dysfunction) সহ উচ্চমাত্রার ডায়াবেটিস, মেটাবলিক সিনড্রোম, নাইট্রিক অক্সাইড সিনথেসের নিম্নগামী নিষ্ক্রিয় প্রবণতাসহ নাইট্রিক অক্সাইডের মাত্রা কমে যায়, এমন কোনো রোগ থাকলে তা সাধারণ প্রোস্ট্যাটেকটমি (radical prostatectomy), atherosclerosis, অতিরিক্ত বয়স এবং hypogonadism এর পর লিঙ্গের টিস্যুকে অক্ষম করে দিতে পারে। চাহিদানির্ভর চিকিৎসার দিক থেকে বর্তমানে উল্লেখিত ওষুধগুলোর (PDE5-i) কার্যকারিতার হার ৬০-৭০ শতাংশ।

যেসব পুরুষ PDE5-i ব্যবহার করেও কোনো সুফল পান না তাদের জন্য প্রোস্ট্যাগ্লানডিন ই-১ (prostaglandin E1) ও পাপাভেরাইন (papaverine e.g. bimix, trimic, etc) vasoactive substances –এর ইন্ট্রাকেভারনাস (intracavernous) ইনজেকশন দেয়া হয়। এতে ব্যর্থ হলে রোগীকে শল্য চিকিৎসা বা সার্জারির পরামর্শ দেয়া হয়। এটা পরিস্কার যে যৌন অক্ষমতার বিদ্যমান সকল চিকিৎসাই সাময়িক উপশমের জন্য, এর কোনটিই সমস্যার পূর্ণাঙ্গ নিরাময়ের জন্য নয়।

তা সত্ত্বেও রোগীরা সব সময়ই চিকিৎসার মাধ্যমে সর্বোচ্চ আরোগ্য লাভের আশা করেন। তারা যে কোনো চিকিৎসা পদ্ধতির সক্ষমতা বা কার্যকারিতা পরিমাপের ক্ষেত্রে রোগ সম্পূর্ণ নিরাময় হয়েছে কিনা তা দিয়ে। ফলে যৌন অক্ষমতার ভবিষ্যৎ চিকিৎসা পদ্ধতি উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে রোগের সম্পূর্ণ নিরাময়কে প্রধান বিবেচনা করা হয়েছে। এক্ষেত্রে নিজ দেহ থেকে সংগৃহীত বা অটোলোগাস (autologous) স্টেমসেলের মাধ্যমে পুরুষের যৌন সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব এবং ইতোমধ্যেই এটি প্রমাণিত হয়েছে।

বিশ্ব জুড়ে অসংখ্য গবেষক দল সেল-ভিত্তিক চিকিৎসা পদ্ধতি, বিশেষ করে নিজ দেহের স্টেম সেল ব্যবহার করে কীভাবে যৌন অক্ষমতার বিভিন্ন প্যাথেফিজিওলজিক্যাল প্রক্রিয়া বন্ধ করে যৌন সক্ষমতা পুরোপুরি ফিরিয়ে আনার পদ্ধতি উন্নয়নে গবেষণারত রয়েছেন।

পুরুষের সমস্যা সমাধানে স্টেম সেল

স্টেম সেল হলো মানবদেহের একটি আদি কোষ। মানুষের দেহে প্রায় ২০০ রকমের কোষ আছে- এর সবগুলো মূলত একটি কোষ থেকে উৎপন্ন হয়। মানবদেহের মূল উৎস সেই কোষটিই হলো স্টেম সেল। জন্মের পর থেকে মানুষের শরীরে নতুন নতুন কোষ তৈরি হলেও, আদি সেই কোষটি শরীরে থেকে যায়। এটিকে ব্যবহার করে নতুন যে কোনো ধরনের কোষ তৈরি করা যায়। স্টেম সেলের এই গুণটি কাজে লাগিয়েই আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষকরা নতুন নতুন চিকিৎসা ব্যবস্থা উদ্ভাবন করছেন। স্টেম সেল ব্যবহার করে পুরুষের অক্ষমতার স্থায়ী সমাধান দেয়া হচ্ছে।

স্টেম সেল নিজে নিজে অবিকল নতুন সেল তৈরি করতে পারে এবং মেরামত বা প্রতিস্থাপনের জন্য সহজেই পৃথক করা যায়। কোনো স্টেম সেলকে যখন মূল সেল থেকে পৃথক করা হয় তখন এর দুই অংশই স্টেম সেলের সমতুল্য হয়ে উঠে অথবা পেশী, হাড়, তরুনাস্থি, রক্তনালী, স্নায়ু বা মস্তিস্কের মতো বিশেষ ধরনের কোনো সেলে পরিণত হয়। ফলে এ ধরনের স্টেম সেল শরীরের অকেজো হয়ে যাওয়া রক্তনালী সচল করা, ক্ষত সারানো, ক্ষতিগ্রস্ত স্নায়ু পুনরুজ্জীবীত করা, স্বাস্থ্যকর নাইট্রিক অক্সাইড রিসেপেকটর ফিরিয়ে আনতে ভূমিকা রাখতে পারে। একইভাবে স্টেম সেল ব্যবহার করে পুরুষাঙ্গের মৌলিক গঠনকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে এনে তরুণ বয়সের মতো যৌন সক্ষমতা ধরে রাখা সম্ভব।

লেখক

ডা. মোহাম্মদ ইয়াকুব আলী
লেজার সার্জারী বিশেষজ্ঞ ও পরিচালক, ইনস্টিটিউট অব লেজার সার্জারী এন্ড হসপিটাল
ফোন: ০১৭৭১২৫৯৭২০-১
ই-মেইল: myalibd@hotmail.com

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর