thereport24.com
ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল 24, ৭ বৈশাখ ১৪৩১,  ১১ শাওয়াল 1445

১১২ দোকান উচ্ছেদ, ৬০ দোকানে নোটিশ

কুয়াকাটার ক্ষুদে ব্যবসায়ীদের পেশা হারানোর শঙ্কা

২০১৭ ফেব্রুয়ারি ১৯ ২১:৩৪:৪৬
কুয়াকাটার ক্ষুদে ব্যবসায়ীদের পেশা হারানোর শঙ্কা

কুয়াকাটা প্রতিনিধি : কুয়াকাটায় কয়েকশ’ ক্ষুদে ব্যবসায়ী পেশা হারানোর শঙ্কায় পড়েছেন। ইতোমধ্যে শতাধিক ব্যবসায়ীকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। এসব ব্যবসায়ীদের অধিকাংশ কুয়াকাটা জিরো পয়েন্টের দুই দিকে বেড়িবাঁধের স্লোপে অস্থায়ীভাবে দোকানপাট করে জীবন-জীবিকা চালিয়ে আসছিল। চা-পান-সিগারেটের দোকান, সবজি বিক্রি, মাছ-মাংসের দোকান, খাবার হোটেল, মুরগি, স্টেশনারীসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য-সামগ্রীর ব্যবসা করছিল এসব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুয়াকাটার কৃষিজমি বিক্রির কারণে এসব মানুষ কৃষি শ্রমিকসহ জেলে পেশা থেকে ক্ষুদে ব্যবসায় নামে। বিভিন্ন এনজিও এবং ব্যাংক থেকে লোন এনে ব্যবসায় লগ্নী করা এসব মানুষ এখন নিঃস্ব হয়ে গেছে। বেড়িবাঁধ সংস্কারের লক্ষ্যে বিশ্ব ব্যাংক এদেরকে ঘর-দোকানপাট সরিয়ে নেওয়ার জন্য ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য এসব দোকানির তালিকা করেছে প্রায় এক বছর আগে। কিন্তু বাঁধের কাজ শুরু হয়নি। অথচ তাদের উচ্ছেদ করায় এখন ক্ষতিপূরণ পাওয়া নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করছেন উচ্ছেদ হওয়া ব্যবসায়ীসহ তাদের পরিবার পরিজন। পর্যটক নির্ভর এসব ক্ষুদে ব্যবসায়ীরা এখন চরম মানবেতর জীবনযাপন করছেন। পেশা হারানোর ভয়ে রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে।

ক্ষুদে ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম জানান, মাসিক এক হাজার টাকায় ভাড়া নিয়ে দোকান চালাতেন। আট বছরের ব্যবসা ছিল তার। পান বিক্রির দোকান, পানের সঙ্গে কিছু সবজিও বেচতেন। দৈনিক দুই-আড়াই হাজার টাকা বিক্রি নামত। এখন বলতে গেলে নিঃস্ব তিনি। ১১ দিন আগে তার দোকান ভেঙে দেওয়া হয়। সাত হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। পুঁজি আটকে গেছে। তারপরও স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ছয় জনের সংসারের যোগান দিতে একজনের একটি ধার করা চৌকিতে খোলা আকাশের নিচে ফের বসেছেন। তাও সরিয়ে নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। এখন দুচোখে অন্ধকার দেখছেন। অর্থাভাবে ষষ্ঠ শ্রেণির সন্তানের লেখাপড়া বন্ধের উপক্রম হয়েছে। বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে বেড়িবাঁধ মেরামতের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হলে দোকান সরানো হলে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার তালিকায় নুরুল ইসলামের নম্বর ১২৫৬।

একই দশা লামিয়া স্টোর্সের দুলাল মিয়ার। আট মাস আগে লাখ টাকার পুঁজি নিয়ে মুদি-মনোহরি দোকান করেন। বেড়িবাঁধের স্লোপের দোকানটি বন্ধ করে চালসহ বেড়া খুলছিলেন। শনিবার বিকেলে কথা হয় তার সঙ্গে। কৃষিকাজ করতেন এ মানুষটি। কুয়াকাটায় কৃষি জমি এখন হাতছাড়া তাই বর্গাচাষীর পেশা বদলে গেছে। দক্ষিণ মুসল্লিয়াবাদ গ্রামের আব্দুল খালেকের একই দশা। ভূমিহীন এ মানুষটি এখন পেশাহীন হওয়ার শঙ্কায় পড়েছেন। পাঁচ হাজার টাকা ধার নিয়ে আলগা একটি বাক্সে চায়ের দোকান নিয়ে খোলা আকাশের নিচে সংসারের যোগান দেওয়ার চেষ্টা করছেন। এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়া সন্তানের লেখাপড়াসহ পাঁচজনের সংসারে অচলাবস্থা চলছে। একই দশা খাবার হোটেল মালিক খাজে আহম্মদের। দুই-আড়াই লাখ টাকার পুঁজি হারিয়ে এখন বেকার তিনি। এনজিওর কিস্তির টাকা শোধ দেওয়ার চিন্তায় কাহিল।

একই দুর্দশার কথা জানালেন, চায়ের দোকানি আবুল বাশার। কাচামাল মুদি-মনোহরি দোকানি মোঃ শাকিব। মোঃ আনছার হাওলাদার, মুরগির দোকানি মোঃ ফারুক, পান দোকানি সোহরাব, কাঁচামালের দোকানদার আল-আমিন, চায়ের দোকানি সালেহা বেগম। শত শত ক্ষুদে দোকানির দূরাবস্থার ধরন এক। এদের চোখে-মুখে পেশা হারানোর অনিশ্চয়তা। প্রত্যেকে একাধিক এনজিওর লোনী। কিস্তির তাগাদায় বিপদগ্রস্ত। বিশ্ব ব্যাংকের ক্ষতিপূরণ পাওয়ার জন্য তালিকাভূক্তির জন্য পৌরসভার ট্রেড লাইসেন্সসহ ব্যাংকে একাউন্ট খুলতে প্রত্যেকে প্রায় দুই হাজার টাকা খরচ করেছেন। কিন্তু ক্ষতিপূরণ পাওয়ার আগেই পাউবোর হস্তক্ষেপে তারা উচ্ছেদ হয়ে গেল। এভাবে প্রথম পর্যায়ে ১১দিন আগে উচ্ছেদ করা হয় ১১২ দোকানিকে। আরও ৬০ জনকে উচ্ছেদে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। কুয়াকাটায় পর্যটকনির্ভর এসব হাজারো ক্ষুদে দোকানি নিশ্চিত ছিল বিশ্ব ব্যাংক বাঁধ মেরামত করার আগে তাদের দোকানঘর বাবদ ক্ষতিপূরণ দেবে। প্রত্যেকের তালিকাও করা হয়। কিন্তু কেন তড়িঘরি করে উচ্ছেদ করা হলো তা ভেবে পাচ্ছেন না হতদরিদ্র মানুষগুলো। হাজারো পরিবারের এখন পেশা হারানো শঙ্কায় রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। তাদের সন্দেহ স্থানীয় এক নেতার রাজনৈতিক বৈরিতার শিকার এসব ক্ষুদে ব্যবসায়ীরা। তাদের অভিযোগ, বিশ্ব ব্যাংকের বাঁধ মেরামতের কাজ শুরুর আগে কেন খালি হাতে আগেভাগেই তাদের রাতারাতি উচ্ছেদ করা হলো। তবে এসব ব্যবসায়ীরা তাদেরকে পুনর্বাসনের দাবি জানিয়েছেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ড কলাপাড়ার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবুল খায়ের সাংবাদিকদের জানান, কুয়াকাটার ৪৮ নম্বর পোল্ডারের সম্পূর্ণ বেড়িবাঁধ খুব শিগগিরই আধুনিকভাবে বন্যা কিংবা জলোচ্ছ্বাস প্রতিরোধের মতো করে পুনঃনির্মাণ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রায় ৩৯ কিমি বেড়িবাঁধ পুনঃনির্মাণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। আর যাদের দোকানপাটসহ স্থাপনা অপসারণ করা হয়েছে তাদের সম্পূর্ণ তালিকা রয়েছে। ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করা আছে। সবাই টাকা পাবেন বলে তিনি আশ্বস্ত করেছেন।

(দ্য রিপোর্ট/এপি/ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর