thereport24.com
ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল 24, ৭ বৈশাখ ১৪৩১,  ১১ শাওয়াল 1445

সিদ্দিকার ক্যানভাস জুড়ে নারীর অব্যক্ত বেদনা

২০১৭ ফেব্রুয়ারি ১৯ ২২:২২:৫৩
সিদ্দিকার ক্যানভাস জুড়ে নারীর অব্যক্ত বেদনা

দেবু মল্লিক, যশোর : এসিড দগ্ধ নারীর অব্যক্ত বেদনা, গভীর রাতে ল্যাম্পের আলোয় সুই-সুতোয় স্বপ্ন বোনা, বর্ষণমুখর দিনে কচুপাতায় মাথা গুজে দাঁড়িয়ে উদাস কিশোরী- এমন ছবিতে ভর্তি গ্যালারি। গ্রাম-বাংলার নারীর জীবনদর্শন যেন রঙ তুলির আঁচড়ে ফুটে উঠেছে আয়শা সিদ্দিকার ছবির ক্যানভাসে। শিল্পকলা একাডেমির আর্ট গ্যালরিতে একক প্রদর্শনীতে স্কুল-কলেজের শিক্ষক শিক্ষার্থীসহ অনেকেই ভিড় জমিয়েছেন।

রবিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে প্রিয় ছবি ‘স্বপ্নের ঘর’ নেড়েচেড়ে দেখছেন আয়শা গভীর অভিনিবেশে। ‘সৃষ্টিগুলো মানুষের সামনে তুলে ধরতে পেরে আমার ভিতরটা ভরে যাচ্ছে।’ দেশে প্রথম এক্সিবিশন নিয়ে তার অনুভুতিটা এমনই। ‘ছবির মাধ্যমে বাঙালি নারীর উপর নির্যাতন, নিপীড়ন কখনো বা তাদের সংগ্রামী মূর্তি তুলে ধরার প্রয়াস চালিয়েছি। ভাল লাগছে দর্শনার্থীরা এসে কখনো প্রশংসা করছেন। আবার কেউ কেউ পরামর্শ দিচ্ছেন। এই উৎসাহ-পরামর্শে আমার শিল্পীজীবন সমৃদ্ধ হচ্ছে।’

আলাপচারিতার এক ফাঁকে আয়শা সিদ্দিকা ডুব দিলেন তাঁর জীবনের অলিগলিতে। ফিরে গেলেন কিশোরী জীবনে। ‘১২ বছর বয়সে বিয়ের পিঁড়িতে বসি। তখন আমি সবে সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। একে একে হিরা, অনু, নুন নামে তিনটি কন্যা সন্তানের মা হলাম। তবে কিশোরী মনের রঙটা তখনো আমার বিদ্যমান। মেয়েদের সাথে নাচতাম, গাইতাম, খেলতাম। মেয়েদের সাথে ছবি আঁকার প্রতিযোগিতা করতাম।’

কিন্তু জীবনে ঝড় ওঠে আয়শা সিদ্দিকার। মানসিক প্রতিবন্ধী হিসেবে মূল্যায়িত হন সংসারে। স্বামী সরাফত হোসেনও তাই ভাবা শুরু করেন। স্বামীর সাথে মনোমালিন্য দানা বাঁধে। চিকিৎসার জন্য নিজেই পাড়ি দেন ভারতের বঁনগা শহরে। সেখান থেকে ট্রেনে চাপেন কলকাতার উদ্দেশে। ট্রেনের কামরায় এক বাঙালির সাথে পরিচয় হয়। লোকটির সিগারেটের বোটকা গন্ধে বেহুশ হয়ে পড়েন আয়শা। যখন জ্ঞান ফেরে তখন নিজেকে আবিষ্কার করেন কেরালার কোঝিকোড় মালাবার হাসপাতালে। পরে সরকারি মহিলা মন্দিরাম আশ্রয় কেন্দ্র হয়ে ঠাঁই হয় বেসরকারি নির্ভয়া আশ্রয়কেন্দ্রে। আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা অবস্থায় তিনি ডায়েরি লেখা শুরু করেন। আঁকেন বেশ কিছু ছবি। লেখেন একগুচ্ছ কবিতা আর ছোট গল্প। কেরালার একটি এনজিও আয়শার আঁকা ছবি ও গল্প কবিতা নিয়ে ৮০ পৃষ্ঠার একটি বই বের করে। আঁকা ছবি নিয়ে সেখানকার ললিতকলা একাডেমিতে আয়োজন হয় এক জমজমাট প্রদর্শনী। পুরস্কার হিসেবে পান চোখ ও সূর্যের আদলে তৈরি একটি ক্রেস্ট। বই ও ছবি বিক্রি বাবদ পান ৮৫ হাজার রুপী। মালয়ালাম ভাষায় প্রকাশিত ‘আহত আমি’ বইটি পরবর্তীতে অনুবাদ করে প্রথমা পাবলিকেশনস।

আয়শা সিদ্দিকার জীবনের দ্বিতীয় ও বাংলাদেশে প্রথম প্রদর্শনী শুরু হয়েছে ১৭ ফেব্রুয়ারি। ২৬টি ছবি নিয়ে শুরু হওয়া এই প্রদর্শনী চলবে ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। যশোর শিল্পকলা একাডেমির এই প্রদর্শনীতে এসে মুগ্ধ অনেকেই। তেমনই একজন যশোর সরকারি এমএম কলেজের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক বিধান ভদ্র। তিনি মন্তব্য বইয়ে লিখেছেন, ‘প্রদর্শনীতে সৃজনশীলতার চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। নিজ চেষ্টায় একজন নারী শক্তির এই বিকাশ সত্যিই মুগ্ধ করে। সেলাইরত নারী হয়তো আত্মপ্রতিকৃতি। যা প্রকৃতপক্ষে বাংলার সামাজিক প্রেক্ষাপটে সকল নারীর প্রতিকৃতি। পুরুষতান্ত্রিক সমাজের জাল ছিঁড়ে বেরিয়ে আসার প্রেরণা।’ তাসফিয়া তাবাসুম পৃথা নামে একজন লিখেছেন, ‘ছবি যেন মন ছুঁয়ে যায়।’ আর সাব্বির রহমান নামে একজনের মন্তব্য, ‘সব ছবিতে নারীর আবেগী মনের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। ছবিগুলো যেন গ্রামীণ নারীর জীবন প্রবাহ আর নারী মুক্তির বিমূর্ত মূর্তি। নারীর বিপ্লব।’

(দ্য রিপোর্ট/এপি/এনআই/ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর