thereport24.com
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল 24, ৫ বৈশাখ ১৪৩১,  ৯ শাওয়াল 1445

ভাষা শহীদদের স্মরণে প্রস্তুত শোকার্ত জাতি

২০১৭ ফেব্রুয়ারি ২০ ২০:৩০:৫৩
ভাষা শহীদদের স্মরণে প্রস্তুত শোকার্ত জাতি

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : ভাষার জন্য আত্মদান ও অধিকার বুঝে নিয়ে স্বকীয়তায় মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর গৌরবোজ্জ্বল চেতনার একুশে ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার। বাংলাদেশের শহীদ দিবস হলেও সারাবিশ্ব দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করবে।

ভাষা শহীদদের স্মরণে শোকার্ত জাতি প্রস্তুত। একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরেই ফুলে ফুলে ভরে উঠবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। ১৯৫২ সালে ভাষার জন্য বুকের রক্ত ঢেলে দেওয়া শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে ফুল হাতে দাঁড়াবে শহীদ মিনারে। ভাই হারা শোক বেদনার শক্তিতে জাতি আরেকবার শাণিত হবে দেশকে এগিয়ে নেওয়া দৃপ্ত শপথে।

আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/আমি কি ভুলিতে পারি- সাংবাদিক ও লেখক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর লেখা ও আলতাফ মাহমুদের সুর করা অমর এ গান প্রভাত ফেরি থেকে শুরু করে দিনভর শোক ছড়িয়ে বাজবে সবখানে।

দেশ বিভাগের পর বাংলা ভাষা-ভাষীদের মধ্যে যে ভাষা চেতনা বেড়ে উঠতে থাকে। পাকিস্তানী শাসকদের কূটকৌশলের মধ্যে এ চেতনা পূর্ণতার দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। পাকিস্তানী শাসকদের উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার অপচেষ্টার মধ্যে ১৯৫২ সালের এই দিনে (৮ ফাল্গুন, ১৩৫৮) বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ এলাকায় আন্দোলনরত ছাত্রদের ওপর পুলিশ গুলিবর্ষণ করে। এতে রফিক, জব্বার, সালাম, বরকম, সফিউরসহ কয়েকজন তরুণ শহীদ হন।

বলা হয়ে থাকে, ভাষা আন্দোলনের পূর্ণতায়ই বপিত হয়েছিল স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রেরণার বীজ।

ভাষা শহীদদের আত্মদান এখন বিশ্ব চেতনার প্রতীক হয়ে উঠেছে। ১৯৯৮ সালে কানাডার ভ্যানকুভার শহরে বসবাসরত দুই বাংলাদেশি রফিকুল ইসলাম ও আবদুস সালাম প্রথম তখনকার জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আনানের কাছে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণার আবেদন জানিয়েছিলেন।

১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কোর প্যারিস অধিবেশনে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ২০০০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে দিবসটি জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোতে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হচ্ছে।

তবে বাংলাদেশে ভাষা চেতনার বাস্তবায়নের অপূর্ণতা রয়েছে। প্রশাসনসহ সর্বস্তরে এখনও বাংলা ভাষা চালু করা যায়নি। রাজধানীতে পথে পথে চোখে পড়ে ইংরেজি ভাষার নামফলক। পয়লা বৈশাখ নববর্ষ উদযাপন করা ছাড়া বাংলা সনের ব্যবহার নেই বললেই চলে। এ বিষয়ে আদালতের নির্দেশনাও উপেক্ষিত। ভাষা শহীদদের আত্মদানের দিন বাংলা সনের ৮ ফাল্গুন হলেও দিনটি উদযাপিত হয় ইংরেজি সনের ২১ ফেব্রুয়ারি।

শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আলাদা বাণী দিয়েছেন। শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপনের জন্য দেশব্যাপী নানা কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। এ দিন দেশে সাধারণ ছুটি।

একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি ভবনসমূহে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে। ঢাকা শহরের বিভিন্ন সড়কদ্বীপ ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বাংলা বর্ণমালা সংবলিত ফেস্টুন দিয়ে সাজানো হয়েছে।

সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, আজিমপুর কবরস্থানে ফাতেহা পাঠ ও কোরানখানির আয়োজনসহ দেশের সকল উপাসনালয়ে ভাষা শহীদদের রুহের মাগফিরাতের জন্য প্রার্থনার আয়োজন করা হবে।

ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য ২১ ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করবেন। এছাড়া কূটনৈতিক, মন্ত্রিসভার সদস্য, ভাষা সৈনিক, স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেত্রী, বিএনপি নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন রাজনৈতিকদল শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। তাদের শ্রদ্ধা নিবেদনের পর শহীদ মিনার সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।

একুশের প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রীয় কর্মসূচির পরই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ও দিবসটি পালনে নিয়োজিত সকল প্রতিষ্ঠান ও সংলগ্ন এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের প্রবেশ পথগুলো ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার আওতায় আনা হবে।

দিবস উদযাপন উপলক্ষে বাংলা একাডেমি, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, নজরুল ইনস্টিটিউট, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর, গণগ্রন্থাগার অধিদফতর, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট, আর্কাইভস্ ও গ্রন্থাগার অধিদফতর, বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ শিশু একাডেমী, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও রাঙামাটি, কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গ্রন্থমেলা, আলোচনাসভা, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, আবৃত্তি ও রচনা প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে বলে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে।

শহীদ মিনার ও আজিমপুর কবরস্থানে যাতায়াতের রুট

দিবস উদ্‌যাপনে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও আজিমপুর কবরস্থানে জনসাধারণের যাতায়াতের জন্য বিকল্পপথ নির্ধারণ করে দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘একুশে উদ্‌যাপন কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটি’।

রুট-ম্যাপ অনুযায়ী ২০ ফেব্রুয়ারি সোমবার রাত আটটা থেকে জনসাধারণ পুরোনো হাইকোর্টের সামনের রাস্তা দিয়ে দোয়েল ক্রসিং, বাংলা একাডেমি, টিএসসি মোড়, উপাচার্য ভবনের পাশ দিয়ে নীলক্ষেত পুলিশ ফাঁড়ি মোড়, নিউমার্কেট ক্রসিং পার হয়ে আজিমপুর কবরস্থানের উত্তর দিকের গেট দিয়ে কবরস্থানে প্রবেশ করবে এবং শহীদদের কবর জিয়ারতের পর আজিমপুর কবরস্থানের মূল গেট (দক্ষিণ দিকের) দিয়ে বের হয়ে আজিমপুর সড়ক হয়ে পলাশী মোড় ও ফুলার রোড মোড় হয়ে অর্থাৎ সলিমুল্লাহ হল ও জগন্নাথ হলের সামনে দিয়ে শহীদ মিনারে যাবে।

কবরস্থানে না গিয়ে বিকল্প পথে যারা শহীদ মিনারে যেতে চায়, তারা উপাচার্য ভবন পার হয়ে নীলক্ষেত পুলিশ ফাঁড়ি মোড় থেকে বাঁ দিকের রাস্তা দিয়ে (জহুরুল হক হলের পশ্চিমের রাস্তা) সলিমুল্লাহ হল ও জগন্নাথ হলের সামনের রাস্তা হয়ে শহীদ মিনারে যেতে পারবে।

নিউমার্কেট ক্রসিং থেকে গার্হস্থ্য অর্থনীতি ও ইডেন কলেজের সামনের রাস্তা দিয়েও আজিমপুর (বেবী আইসক্রিম) মোড়, পলাশী মোড় হয়ে সলিমুল্লাহ হল ও জগন্নাথ হলের সামনের রাস্তা হয়ে শহীদ মিনারে যাওয়া যাবে।

চাঁনখারপুল এলাকা থেকে বকশিবাজার মোড় হয়ে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ পাশের রাস্তা দিয়েও পলাশী মোড় হয়ে সলিমুল্লাহ হল ও জগন্নাথ হলের সামনের রাস্তা দিয়ে শহীদ মিনারে যাওয়া যাবে।

এদিকে টিএসসি মোড় থেকে জগন্নাথ হলের পূর্ব পাশের রাস্তা অর্থাৎ শিব বাড়ির পশ্চিম পাশ দিয়ে শহীদ মিনারে ও মেডিকেল কলেজে যাওয়ার রাস্তা সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে। উপাচার্য ভবন গেট থেকে ফুলার রোড হয়ে ফুলার রোড মোড় পর্যন্ত রাস্তা এবং চাঁনখারপুল থেকে কার্জন হল পর্যন্ত রাস্তা জনসাধারণের যাতায়াতের জন্য সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে।

শহীদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণের পর সেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয় খেলার মাঠের সামনের রাস্তা দিয়ে দোয়েল চত্বর ও পেছনের রাস্তা দিয়ে চাঁনখারপুল হয়ে শুধু প্রস্থান করা যাবে, শহীদ মিনারের দিকে আসা যাবে না।

(দ্য রিপোর্ট/আরএমএম/এপি/ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর