thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল 24, ৬ বৈশাখ ১৪৩১,  ১০ শাওয়াল 1445

শৌচাগার সংকটে বরিশাল সরকারি মহিলা কলেজে

২০১৭ ফেব্রুয়ারি ২০ ২১:২৪:১২
শৌচাগার সংকটে বরিশাল সরকারি মহিলা কলেজে

বিধান সরকার, বরিশাল : শৌচাগারে ঢুকেই যে কেউ ধাক্কা খেতে পারেন এটা কোনো পাবলিক টয়লেট কি না! এমনই অবস্থা বরিশাল সরকারি মহিলা কলেজের ছাত্রীনিবাসে। নোংরা, দুর্গন্ধ আর পানি জমায় ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে ছাত্রীনিবাসের শৌচারগারগুলো। তাদের বক্তব্য- শৌচারগার যাওয়ার প্রয়োজনবোধ করলেও নোংরা হওয়াতে এড়িয়ে যান। এতে করে কিডনি ও শ্বাসনালিতে ইনফেকশন আর জননতন্ত্রে সমস্যা হতে পারে এমনটা জানান গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. মো. শাহরিয়ার। মহিলা কলেজের এই বাথরুম কোনো ‘মানুষের’ ব্যবহারযোগ্য নয়-অভিভাবকদের এমন বক্তব্যের বিষয়ে কলেজ অধ্যক্ষ বললেন, তারা একাডেমিক কাউন্সিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে শৌচাগার নির্মাণ করার।

একাদশ, দ্বাদশ, অনার্স আর মাস্টার্স মিলিয়ে ছয় হাজার শিক্ষার্থী বর্তমানে অধ্যয়ন করছে বরিশাল সরকারি মহিলা কলেজে। একাডেমিক তিনটি আর প্রশাসনিক একটি মিলিয়ে চারটি ভবনে চলছে কলেজের কার্যক্রম। একাডেমিক ভবনের সংকট হওয়াতে প্রশাসনিক ভবনেও চালাতে হচ্ছে পাঠদানের কার্যক্রম। তবে নিয়ম আর প্রয়োজন অনুযায়ী ভবনগুলোর সব তলাতে শৌচাগারের ব্যবস্থা নেই। যা আছে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল আর অপরিচ্ছন্ন বলে বেশিরভাগ টয়লেট ব্যবহারের অনুপযোগী।

এবার একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়া এক শিক্ষার্থী কলেজের শৌচাগার নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ায় জানান, দরজা ভাঙা, কোনোটার ছিটকিনি নেই, বেসিন আছে পানির সংযোগ নেই, অপরিচ্ছন্ন, আবার কোনোটায় পানি পড়ছে অনবরত। সমাজকল্যাণ বিভাগের এক ছাত্রী বলেন, শৌচাগার নোংরা হওয়াতে তারা কলেজে নয়; কষ্ট হলেও বাসায় গিয়ে শৌচাগার ব্যবহার করেন। তবে কিছু বলার নেই, মুখ খুললে শিক্ষকরা এর রেশ ধরে ফলাফলের বেলায় বিপর্যয় ঘটাবেন বা প্র্যাকটিকালে মার্কস কম দেবেন এমনটা বলেন বিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থী। এই শিক্ষার্থী আরো বলেন, আমরা তো চলে যাচ্ছি; তবে প্রথম বর্ষে যারা ভর্তি হয়েছে ওদের সঠিক সময়ে শৌচাগারের কষ্ট বইতে হবে আরো অনেকদিন।

সরেজমিন কলেজের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ভবনে গেলে দেখা যায়, দোতলায় ওঠার সিঁড়ি লাগোয়া শৌচাগার রয়েছে বটে, তবে তা নোংরা দরজা ভাঙা ও ছিটকিনি নেই। ছাত্রীদের ব্যবহারের পরিবেশ পুরোটাই অনুপস্থিত। এখানেই কথা হয়, অনার্স প্রথম বর্ষে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীর অভিভাবক মাহাবুব আলম মজুমদারের সাথে। তিনি বলেন, শৌচাগারের যা অবস্থা, এটা কোনো মানুষ ব্যবহার করতে পারে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের টয়লেটের এমন হাল হলে শিক্ষক বা কর্ণধারদের মানসিকতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক। এসব দেখভালের কেউ আছে বলে মনে হয় না। প্রতিবাদ করলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীর ফলাফলে পড়তে পারে বলে অভিভাবকরা চুপসে যান। না দেখার ভান করেন অনেকটা। এই ভবনেই পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক অমলকৃষ্ণ বড়ালের সাথে কথা হয় নোংরা শৌচাগারের বিষয়ে। তিনি বলেন, প্রায় দিনই বিকেলের দিকে এই কলেজের একাডেমিক ভবনে পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এসব পরীক্ষার্থী শৌচাগার নোংরা করে রাখেন। তা ছাড়া পরিচ্ছন্নকর্মীর অভাব হওয়াতে শৌচাগার এই হাল হয়েছে। এটা ছাত্রীদের জন্য ব্যবহারে মারাত্মক ক্ষতিকর জেনেও মনিয়ে নেওয়ার কথা বলেন এ সময় উপস্থিত ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক জোহরা মমতাজ।

কলেজ ক্যাম্পাসে ১৯৭৭ সালে নির্মিত রওশন জাহান ছাত্রী নিবাসের শৌচাগারের বেহাল অবস্থা। বর্ষা মৌসুমে পানি জমে থাকে গোসলখানায়। শুকনো মৌসুমে শৌচাগারের প্যানে পানি থাকায় নিচতলার ছাত্রীদের অন্য হোস্টেলে যেতে হয়। ছাত্রী নিবাসের বেসিন ভাঙা, পানির কল দিয়ে অনবরত পানি পড়ে। এ নিয়ে হোস্টেল সুপার শরীফ মোর্শেদ রেজা বলেন, আসনের চেয়ে বসবাসরত ছাত্রীর সংখ্যা বেশি হওয়াতে এ অবস্থা। এ ছাড়াও শৌচাগার ব্যবহারের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের অনিয়মকেও দায়ী করেন তিনি।

জেনারেল হাসপাতালের গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. মো. শাহরিয়ার বলেন, অপরিচ্ছন্ন শৌচাগার ব্যবহার করলে বিশেষ করে নারীদের বেলায় সমস্যা বেশি দেখা দেয়। দীর্ঘক্ষণ প্রস্রাব আটকে রাখলে ফিমেল অর্গানগুলোয় ইনফেকশন হতে পারে। ইউরিন ব্লাডার সময় অনুযায়ী পরিষ্কার না হলে মূত্রতন্ত্রের সমস্যা থেকে কিডনি বিকল হতে পারে। এ ছাড়াও টলয়েটের দুর্গন্ধের কারণে শ্বাসতন্ত্রে সহজেই ইনফেকশন দেখা দেয়। যার প্রভাবে পরবর্তীতে প্রজননতন্ত্রের সমস্যায় ভুগতে হয়।

কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর একেএম এনায়েত হোসেন বলেন, কলেজে পরিচ্ছন্নকর্মী মাত্র একজন থাকায় শৌচাগারের এই হাল। কলেজ পরিচালনায় ১০জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী রয়েছেন বটে, তাদের অনেকেই বয়োবৃদ্ধ অবস্থায়। মাস্টাররোলে ১৩-১৪ কর্মচারী রেখেছেন তারা অন্য কাজ করেন। সর্বশেষ ২০০৪ সালের ২২ ডিসেম্বরের পর সরকার চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগ দিচ্ছে না। তারপরও সরকারি সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় না থেকে তারা একাডেমিক কাউন্সিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে নতুন শৌচাগারের নির্মাণ ও পরিচ্ছন্ন করার। এ জন্য এবারের টেন্ডারে শৌচাগার নির্মাণের বিষয়টি রেখেছেন তারা।

বরিশাল সরকারি মহিলা কলেজের শৌচাগারের এমন বেহাল দশা বছরে পর বছর ধরে চলমান হলেও এ বিষয়ে নজরদারি করতে সরকারের আলাদা মন্ত্রণালয় আছে বলে জানালেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শিক্ষা ও আইসিটি আবুল কালাম তালুকদার। এ ক্ষেত্রে তাদের কিছু করার নেই। তবে শিগগিরই তিনি কলেজে গিয়ে বিষয়টি দেখবেন ও কর্তৃপক্ষের সাথে বিষয়টি নিয়ে কথা বলবেন বলে জানান।

(দ্য রিপোর্ট/এম/এপি/ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর