thereport24.com
ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল 24, ১০ বৈশাখ ১৪৩১,  ১৪ শাওয়াল 1445

ঢাবিতে প্রথম কালোপতাকা তোলেন মোহাম্মদ সুলতান

২০১৭ ফেব্রুয়ারি ২০ ২২:৩৯:০০
ঢাবিতে প্রথম কালোপতাকা তোলেন মোহাম্মদ সুলতান

রাজিউর রহমান রাজু, পঞ্চগড় : ভাষা সৈনিক মোহাম্মদ সুলতান। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম কালো পতাকা উত্তোলনকারী ছাত্র তিনি।

মাতৃভাষার দাবিকে স্তব্ধ করার জন্য তৎকালীন সরকার যে নির্মম নির্যাতনের আশ্রয় নিয়েছিলেন, তারই অংশ হিসেবে বিনাবিচারে মোহাম্মদ সুলতানকে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছিল।

ভাষা আন্দোলনে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ ১৪৪ধারা ভঙ্গ না করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর যে ১১ জন সংগ্রামী ছাত্র নেতা ফজলুল হক হলের পুকুর পাড়ে বসে রাত ১টায় ১৪৪ ভঙ্গের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন মোহাম্মদ সুলতান ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম।

দেশপ্রেম আর মাতৃভাষার টানে গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল নিবেদিত প্রাণ ভাষা সৈনিক মোহাম্মদ সুলতান ১৯২৬ সালের ২৪ ডিসেম্বর পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলার মাঝগ্রাম এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মোহাম্মদ শমসের আলী ছিলেন একজন পুলিশ অফিসার।

মোহাম্মদ সুলতান ১৯৪২ সালে ম্যাট্রিক, ১৯৪৬ সালে আইএ এবং ১৯৫৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। মোহাম্মদ সুলতান কৈশোরেই ‘ভারত ছাড়’ ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে রাজনীতিতে পা রাখেন। ১৯৪৬ সালে তিনি পাকিস্তান আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। পরবর্তীতে ১৯৪৮ সালে রাজশাহীতে ভাষা আন্দোলন ও ছাত্র আন্দোলনে মোহাম্মদ সুলতান অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ১৯৫১ সালে তিনি যুবলীগে যোগ দেন এবং যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-সম্পাদক নির্বাচিত হন।

জীবনের কিছুটা সময় তিনি শিক্ষকতা ও সাংবাদিকতা করে কাটিয়েছেন। শেষ জীবনে তিনি প্রকাশনার কাজে যুক্ত হয়েছিলেন।

ভাষা আন্দোলনের পর তিনি এমআর আক্তার মুকুলের অংশীদারিত্বে পুস্তক বিক্রয়কেন্দ্র ‘পুথিপত্র’ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৫৩ সালে তিনি কবি হাসান হাফিজুর রহমানের সম্পাদনায় ভাষা আন্দোলনের ঐতিহাসিক সংকলন ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’ প্রকাশ করেন। এ প্রকাশনার জন্য তাকে কারাবরণ করতে হয়েছিল।

১৯৮৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজের ৩নং ওয়ার্ডের করিডোরে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। বাংলাদেশ সরকার তার প্রতি সম্মান জানিয়ে রাচধানীর ধানমন্ডিতে তার নামে একটি সড়কের নামকরণ করেন।

পঞ্চগড়ের অহঙ্কার ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম কালোপতাকা উত্তোলনকারী ছাত্র ভাষাসৈনিক মোহাম্মদ সুলতান ৬৫ বছরেও পাননি কোন রাষ্ট্রীয় পদক।

অসাম্প্রদায়িক ও বিপ্লবী এ ভাষা সৈনিককে ২০১১ সালে মৃত্যুর ২৮ বছর পর পঞ্চগড় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মরণোত্তর একটি সম্মাননা প্রদান করা হয়েছিল। তৎকালীন জেলা প্রশাসক বনমালী ভৌমিক ভাষাসৈনিক মোহাম্মদ সুলতানের কন্যা ডা. চন্দনা সুলতানার হাতে এই সম্মাননা স্মারকটি তুলে দেন। এ সময় জেলা প্রশাসক বনমালী ভৌমিকের একান্ত প্রচেষ্টায় তার নামে পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলা সদরের একটি সড়কের নামকরণ করা হয়। সেই সময় ভাষা সৈনিক মোহাম্মদ সুলতানের একটি ম্যুরাল তৈরি করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হলেও তা আজও বাস্তবায়িত হয়নি।

এরপর ২০১২ সাল থেকে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে প্রতিবছর পঞ্চগড়ে ভাষাসৈনিক সুলতান বইমেলার আয়োজন করছে। যা এ বছরও একুশে ফেব্রুয়ারি পঞ্চগড় জেলা শহরের সরকারি অডিটরিয়াম চত্বরে শুরু হবে।

ভাষাসৈনিক মোহাম্মদ সুলতানের ভাতিজা স্কুল শিক্ষক মো. কামরুজ্জামান রুবেল বলেন, ‘ভাষা সৈনিক মোহাম্মদ সুলতানকে এ প্রজন্মের মানুষের কাছে পরিচিত করতে দ্রুত একটি ম্যুরাল তৈরি করা উচিত এবং তার বীরত্বের ইতিহাস পাঠ্য পুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করলে জাতি ভাষা আন্দোলনে তার অবদানের কথা জানতে পারবে। ছাত্রজীবন থেকেই বার বার কারাভোগ করে মাতৃভাষাসহ দেশের গণতান্ত্রিক সকল আন্দোলন সংগ্রামে অংশ নিলেও তিনি নতুন প্রজন্মের কাছে এখনো অজানাই রয়ে গেছেন।’

পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক অমলকৃষ্ণ মন্ডল বলেন, ভাষা আন্দোলনে মোহাম্মদ সুলতানের অবদানের কথা বিবেচনা করে তাকে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা দেওয়া উচিত। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গত কয়েকবছর থেকে তার নামে বই মেলার আয়োজন করা হচ্ছে। এছাড়াও ভাষাসৈনিক মোহাম্মদ সুলতানের একটি ম্যুরাল তৈরির পরিকল্পনা জেলা প্রশাসনের রয়েছে।

(দ্য রিপোর্ট/এস/এপি/ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর