thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ২৯ মার্চ 24, ১৪ চৈত্র ১৪৩০,  ১৯ রমজান 1445

নির্মিত হয়নি একুশে ফেব্রুয়ারি নিয়ে চলচ্চিত্র

২০১৭ ফেব্রুয়ারি ২০ ২৩:১৬:০২
নির্মিত হয়নি একুশে ফেব্রুয়ারি নিয়ে চলচ্চিত্র

ভাষা আন্দোলনের ৬৫ বছর পেরিয়ে গেলেও নির্মিত হয়নি মহান একুশে ফেব্রুয়ারি নিয়ে কোনো চলচ্চিত্র। স্বাধীন বাংলাদেশে সেলুলয়েডের ফ্রেমে গাঁথা হয়নি বাঙালির জীবনের সেই অমর মহাকাব্য। কেন হয়নি? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে কেউ কেউ বলেন ভাষা আন্দোলন অনেক বড় ক্যানভাস। এই ঘটনা নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ ব্যয় সাপেক্ষ। সরকারি কিংবা বেসরকারি বড় রকমের পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া ভাষা আন্দোলন নিয়ে সিনেমা নির্মাণ সম্ভব নয়।

আবার নির্মাতাদের অনাগ্রহকেও দায়ী করেন কেউ কেউ। কারণ এ ধরণের সিনেমায় বাণিজ্যিক লাভের সম্ভাবনা নেই। তাই প্রযোজকরা বিনিয়োগ করেন না। তবে এমন সংকট উত্তরণে কয়েক দশক আগেই একজন মাথা তুলে দাঁড়িয়েছিলেন। তিনি নন্দিত চলচ্চিত্রকার জহির রায়হান। পরাধীন পাকিস্তানেই ১৯৬৫ সালে জাহির রায়হান নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন মহান একুশ নিয়ে চলচ্চিত্র।

কিন্তু পাকিস্তান সরকার এ ধরণের সিনেমা নির্মাণের অনুমতি দেয়নি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর যদি জহির রায়হান বেঁচে থাকতেন তবে হয়তো এই আক্ষেপে পুড়তে হতো না। জহির রায়হানের স্ত্রী ও এক সময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী সুচন্দা দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জহির রায়হানের লেখাতে বিভিন্ন সময় একুশে ফেব্রুয়ারি এসেছে। ‘জীবন থেকে নেয়া’ সিনেমাতেও তিনি একুশে ফেব্রুয়ারি দেখিয়েছেন। তিনি একুশ নিয়ে পূর্ণাঙ্গ সিনেমা নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন। সেটার অনুমতি পাননি। তিনি বেঁচে থাকলে হয়তো স্বাধীন দেশে একুশে ফেব্রুয়ারি নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করতেন।’

জহির রায়হান একুশে ফেব্রুয়ারি নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে না পারলেও ১৯৭০ সালে ‘জীবন থেকে নেয়া’ চলচ্চিত্রে একুশে ফেব্রুয়ারির দৃশ্য সংযোজন করে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন।‘জীবন থেকে নেয়া’ চলচ্চিত্রে রবীন্দ্র সঙ্গীত ‘আমার সোনার বাংলা/আমি তোমায় ভালোবাসি’ ব্যবহার করেছিলেন।

পরবর্তীতে দেশ স্বাধীনের পর বঙ্গবন্ধু সরকার এই গানটির প্রথম ১০ লাইনকে স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতের স্বীকৃতি দেন। ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান সরকার রেডিও-টিভিতে রবীন্দ্রসঙ্গীত প্রচার নিষিদ্ধ করার মাত্র কয়েক বছর পর জহির রায়হান গানটি ‘জীবন থেকে নেয়া’ চলচ্চিত্রে ব্যবহার করেন। এটি ছিল সাহসের অনন্য উদাহারণ।

‘জীবন থেকে নেয়া’ চলচ্চিত্রে জহির রায়হান ব্যবহার করেছিলেন ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/আমি কি ভুলিতে পারি’। পরবর্তীতে এই গানটি একুশের গান হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা পায়। এ ছাড়া ছবিটিতে ব্যবহার করা কাজী নজরুল ইসলামের কালজয়ী গান ‘কারার ওই লৌহ কপাট’ এবং খান আতাউর রহমানের বিখ্যাত গান ‘এ খাঁচা ভাঙব আমি কেমন করে’ দারুণ আলোচিত হয়।

ভাষা আন্দোলনের পটভূমি নিয়ে জহির রায়হান লিখেছিলেন উপন্যাস ‘আরেক ফাল্গুন’। জহির রায়হান ছাড়া ভাষা আন্দোলন পটভূমি নিয়ে সিনেমা নির্মাণের উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি তেমন কাউকে। তবে শহিদুল ইসলাম খোকন স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে তার ‘বাঙলা’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে কিছুটা চেষ্টা করেছিলেন।

বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সঙ্গে মিশে আছে জহির রায়হানের নাম ও তার নির্মিত চলচ্চিত্র। ভাষা আন্দোলন নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণের সম্ভাবনার দ্বারও উন্মোচন করেছেন জহির রায়হান। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে শহিদুল ইসলাম খোকন নির্মাণ করেন ‘বাঙলা’ নামের একটি চলচ্চিত্র। এ ছাড়া বেশ কয়েকজন চলচ্চিত্র নির্মাতা ভাষা আন্দোলন নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিলেন। সেই ঘোষণা আর পরবর্তীতে বাস্তবের মুখ দেখেনি।

অভিনয়শিল্পী ও নির্মাতা রোকেয়া প্রাচী ২০১০ সালে নির্মাণ করেছিলেন তথ্যচিত্র ‘বায়ান্নর মিছিলে’। ভাষা আন্দোলনের শহীদ আবুল বরকতকে মুখ্য প্রেক্ষাপট ধরে মূলত ভাষা আন্দোলনকেই তুলে ধরা হয়েছে এ তথ্যচিত্রটিতে। রোকেয়া প্রাচী জানান, মাতৃভাষার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা আর মমত্ববোধ থেকেই তিনি নির্মাণ করেছেন ‘বায়ান্নর মিছিলে’।

রোকেয়া প্রাচী দ্য রিপোর্টকে বলেন, 'ভাষা আন্দোলন নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করার ক্ষেত্রে প্রযোজকরা আগ্রহী হননা। কারণ ব্যবসায়িকভাবে লোকসান হওয়ার সম্ভাবনায় বেশি। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রকেই এগিয়ে আসতে হবে। আমি একটা চলচ্চিত্র নির্মাণের পরিকল্পনা করেছি। কিন্তু অর্থ-সংকটের জন্য শুরু করতে পারছি না।’

ভাষা আন্দোলনকে উপজীব্য করে প্রত্যাশিত চলচ্চিত্র নির্মিত হয়নি স্বাধীন বাংলাদেশের চলচ্চিত্রশিল্পে। এটা আমাদের চলচ্চিত্রের জন্য চরম ব্যর্থতারই একটি অধ্যায়। বিভিন্ন সময় ভাষা আন্দোলন নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিলেন একাধিক নির্মাতা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেগুলো আর আলোর মুখে দেখেনি।

সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্ব ও চলচ্চিত্র নির্মাতা নাসির উদ্দিন ইউসুফ দ্য রিপোর্টকে বলেন, “ভাষা আন্দোলন নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মিত হয়নি এটা আমাদের জন্য লজ্জার। প্রতি বছর একুশ এলে ‘জীবন থেকে নেয়া’ চলচ্চিত্র ছাড়া আর কোনো চলচ্চিত্র খুঁজে পাই না। এ বিষয়টি নিয়ে সরকারের বিভিন্ন দায়িত্বশীল লোকদের সঙ্গে অনেকবার কথা বলেছি। ৬৫ বছর পেরিয়ে গেলো, আমাদের এখানে ভাষা আন্দোলন নিয়ে সিনেমা নির্মিত হলো না। এ দায় মোচনে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। মেধাবী নির্মাতাদেরও এগিয়ে আসতে হবে।’

(দ্য রিপোর্ট/পিএস/জেডটি/ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর