thereport24.com
ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল 24, ৭ বৈশাখ ১৪৩১,  ১১ শাওয়াল 1445

১১ মাসেও হয়নি পূর্ণাঙ্গ রায়

শহীদ মিনার সংলগ্ন মাজারের মূল অংশ এখনো অক্ষত

২০১৭ ফেব্রুয়ারি ২০ ২৩:৪৫:৫০
শহীদ মিনার সংলগ্ন মাজারের মূল অংশ এখনো অক্ষত

শহীদ মিনারের পাশে একটি কবরকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা (মাজারসহ) অপসারণে হাইকোর্ট রায় দিয়েছিলেন গত বছর মার্চে। তবে এগারো মাসের ব্যবধানেও সেই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়নি বলে জানা গেছে। যে কারণে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ‘তেল শাহ’ এর মাজারটি এখনও পর্যন্ত পুরোপুরি অপসারিত হয়নি।

মামলার আইনজীবী মনজিল মোরসেদ দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন, রায়ের অনুলিপি তারা এখনও হাতে পাননি।

আদালত ৭২ ঘণ্টার মধ্যে এই অবৈধ স্থাপনা যাদের অপসারণে নির্দেশ দিয়েছিলেন, তার মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) এবং শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাও (ওসি) রয়েছেন। তারা উভয়েই রায়ের ব্যাপারে জানেন না বলে দ্য রিপোর্টকে জানিয়েছেন।

২০১৬ সালের ২৪ মার্চ হাইকোর্ট এক রায়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাশে একটি কবরের আশপাশে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা স্থাপনা ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেন। ২০১২ সালে জারি করা এক রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রায় দেন।

রায়ের অনুলিপি পাওয়ার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে অবৈধ স্থাপনা সরাতে বলা হয়েছে আদালতের রায়ে। তবে কবরটি ঠিক রাখতে বলা হয়।

‘বেড়ে উঠছে কথিত মাজার/হুমকিতে শহীদ মিনার’ শিরোনামে ২০১২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি দৈনিক কালের কণ্ঠে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেই প্রতিবেদন যুক্ত করে একই বছর ২২ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে একটি রিট করেন ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন।

সেই রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ‘কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের জমি রক্ষার নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না’- তা জানতে চেয়ে একইদিনে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ঢাকা সিটি করপোরেশন, গণপূর্ত বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী, নির্বাহী প্রকৌশলী (সিভিল ডিভিশন), ঢাকার জেলা প্রশাসক ও শাহবাগ থানার ওসিসহ বিবাদীদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়।

রুলের সঙ্গে দেওয়া অন্তর্বর্তীকালীন আদেশে কবর ঠিক রেখে সংলগ্ন অবৈধ স্থাপনা ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। আদালতের আদেশ পাওয়ার পর ২০১২ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি গণপূর্ত বিভাগ ওই মাজারের খাদেমের বসার জায়গা, অজুখানাসহ বিভিন্ন স্থাপনা ভেঙে দেয়।

মামলার বাদী ও ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন অবশ্য বলছেন তাদের যেটুকু দাবি ছিল মাজারের সেটুকু ইতোমধ্যেই অপসারণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘আমরা শহীদ মিনারের মাজারের যতটুকু অপসারণ চেয়েছিলাম ততোটুকু অপসারিত হয়েছে।’

অন্তর্বর্তীকালীন আদেশের পর ২০১২ সালে কিছু স্থাপনা ভাঙার পর মূল মাজারে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়। সেসব এখনো সেভাবেই আছে। বিষয়টি আদালতে গড়ানোর চার বছর পর রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে রায় দেন আদালত।

রায়ের পর আইনজীবী মনজিল মোরসেদ জানিয়েছিলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, নির্বাহী প্রকৌশলী (সিভিল ডিভিশন), ঢাকার জেলা প্রশাসক ও শাহবাগ থানার ওসিকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে কবরটি ছাড়া অবৈধ সব স্থাপনা ভেঙে অপসারণের নির্দেশ দেন। কবরটি মর্যাদার সঙ্গে সংরক্ষণ করতে হবে। শহীদ মিনারের পবিত্রতা ও মর্যাদা রক্ষায় আদালত এ রায় দিয়েছে।’

গত ১৭ ফেব্রুয়ারি সরেজমিনে দেখা যায় মূল মাজারটি এখনো অক্ষত রয়েছে। তবে সেখানে তালা লাগানো রয়েছে। মাজারের পেছন দিকে শহীদ মিনার লগ্ন একটি মাঠ রয়েছে। যেখানে ব্যাডমিন্টন খেলার জাল টানানো রয়েছে।

রায়ের বিষয়ে মামলার আইনজীবী মনজিল মোরসেদ দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘সেই রায়টি এখনো আমরা হাতে পাইনি। তবে অন্তর্বর্তীকালীন আদেশের পর কিছুটা বাস্তবায়ন হয়েছে। রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি না পাওয়ায় এ ব্যাপারে আমরা কোনো পদক্ষেপ নিতে পারিনি।’

হাইকোর্টের এই রায়ের পর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কি না, জানতে চাইলে শাহবাগ থানার ওসি আবু বকর সিদ্দিক দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘হাইকোর্ট কি রায় দিয়েছে সেটা আমি জানি না। শহীদ মিনারের পাশে এখন যেসব স্থাপনা আছে সেগুলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধীনে। পাশে একটি কবরস্থান ও মাজার রয়েছে। এগুলো বাদে ওখানে অন্য কোনো স্থাপনা নাই। এর আগে যা ছিল সেগুলো অপসারণ করা হয়েছে। এখন যা আছে সেগুলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পত্তি। সেখান থেকে কিছু অপসারণ করার কথা বলা হয়ে থাকলে এবং তা অপসারণে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাদের সহযোগিতা চাইলে তা দেওয়া হবে।’

মাজার অপসারণে হাইকোর্টের রায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘আমাদের দায়িত্ব শহীদ মিনারের পবিত্রতা সংরক্ষণ। আমরা সেটা করছি। ওই জমির মালিক গণপূর্ত অধিদফতর।’

এদিকে ২০১০ সালে অপর এক রায়ে হাইকোর্ট ভাষা সৈনিকদের তালিকা প্রণয়ন ও জীবিত ভাষা সৈনিকদের যথাযথ মর্যাদা প্রদান, শহীদ মিনারের পবিত্রতা রক্ষা, ভাষা সংগ্রাম ও শহীদদের স্মৃতি সংরক্ষণে মিউজিয়াম তৈরির নির্দেশ দিয়েছিলেন।

সেই রায় পুরোপুরি বাস্তবায়ন না হওয়ায় সম্পূরক আবেদন করেছিলেন রিটকারী সংগঠন হিউম্যান রাইটস এন্ড পিস ফর বাংলাদেশের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। সেই আবেদনের উপর শুনানি শেষে রবিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) বাস্তবায়িত না হওয়া নির্দেশনা সমূহ বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্টদের ৬ মাসের সময় দেন হাইকোর্ট।

এই রায়ের বিষয়ে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি মনে করে শহীদ মিনারের পাশে মিউজিয়াম করা সম্ভব, তাহলে করবে। আর যদি মনে করে এতটুকু জায়গায় মিউজিয়াম সম্ভব নয়, তবে আপিল করবে।’

(দ্য রিপোর্ট/কেআই/এস/জেডটি/ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর