thereport24.com
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল 24, ৫ বৈশাখ ১৪৩১,  ৯ শাওয়াল 1445

ফজলুল হক : এক অগ্রগামী ভাষা সৈনিক

২০১৭ ফেব্রুয়ারি ২১ ০৪:২৪:৫৫
ফজলুল হক : এক অগ্রগামী ভাষা সৈনিক

নাজমুল হাসান, নাটোর : ৫২’-র ভাষা আন্দোলন। সারাদেশের মতো এ আন্দোলনের ঢেউ নাটোরেও লেগেছিল। সে সময়ে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করতে নাটোরে সক্রিয়ভাবে যারা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন, তাদের মধ্যে ভাষা সৈনিক ফজলুল হক উল্লেখযোগ্য একজন। নিজের স্কুল ও পাশ্ববর্তী স্কুলের শিক্ষার্থীদের সংগঠিত করে ভাষা রক্ষায় জোরালো আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন তিনি। এজন্য তার বিরুদ্ধে হুলিয়াও জারি করা হয়েছিল।

তৎকালীন পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী পূর্ব পাকিস্তানের (বাংলাদেশের) অধিকাংশ মানুষের মাতৃভাষা বাংলাকে বাদ দিয়ে উর্দুভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চাপিয়ে দিতে চাইলে ছাত্র-জনতা তা মেনে নিতে পারেনি। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করতে শুরু হয় তুমুল আন্দোলন। ৫২’র ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ছাত্র-জনতা। শাসকগোষ্ঠী ভাষার দাবিতে মিছিলরত ছাত্রদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালালে সালাম, রফিক, শফিক, বরকতসহ বেশ ক’জন মারা যান। তখন সে সংবাদ এসে পৌঁছালে নাটোরের ছাত্র-জনতা মায়ের ভাষা রক্ষায় রাস্তায় নেমে পড়েন। তখন সামনের সারিতে ছিলেন নাটোরের কিশোর ফজলুল হক। সেই সময়কার জিন্না স্কুলের (বর্তমানে সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয়) নবম শ্রেণির ছাত্র ক্লাস ক্যাপ্টেন ফজলুল হক ভাষার জন্য তার স্কুলের সকল ছাত্রকে সংগঠিত করেন। তারপর সবাই মিলে মিছিল সহকারে শহরের বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে যান। সেখান থেকে ওই স্কুলের ছাত্রীদের নিয়ে চলে যান মহারাজা জে.এন উচ্চ বিদ্যালয়ে। পরে তিনটি স্কুলের সব শিক্ষার্থী মিলে ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ এই শ্লোগান দিয়ে শহরে মিছিল ও সমাবেশ করেন।

এজন্য হুলিয়া মাথায় নিয়ে দিনের পর দিন পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে ফজলুল হককে। সেদিনের মিছিল-মিটিংয়ে অগ্রগামী ফজলুল হক সেই স্মৃতি চারণ করতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তার অগ্রজ দুই ভাষাসৈনিক মাইদুল ইসলাম এবং দৌলতজ্জামান দৌলার কথা স্বরণ করে অশ্রুসজল হয়ে তিনি বলেন, ‘ভাষা আন্দোলনে আমার মতো এই দুই ভাষা সৈনিকের অবদান অনেক।’

ভাষা সৈনিক ফজলুল হকের প্রত্যাশা, অনেক ত্যাগ আর প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত ভাষার উন্নতিকল্পে বাংলা ভাষার সঠিক চর্চা অব্যাহত থাকুক। মহান এই ভাষা সৈনিকের জন্য গর্বিত সবাই।

ভাষা সৈনিক ফজলুল হকের ছেলে ওয়াসিফ-উল-হক জানান, তার বাবা ভাষা অন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছেন। ভাষা সৈনিকের ছেলে পরিচয়টা গর্বভরে দিতে তার ভাল লাগে।

ফজলুল হকের নাতি তাহমিদ-উল হক বলেন, ‘দাদুর জন্য আমিও গর্বিত। স্কুলের সহপাঠীরা দাদুর সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে চায়। তখন আমি দাদুর কাছ থেকে শোনা ভাষা আন্দোলনের গল্প শোনাই তাদের।’

নাটোরের সচেতন নাগরিক কমিটির (টিআইবি) সভাপতি রেজাউল করিম ভাষা সৈনিক ফজলুল হকের দীর্ঘায়ু কামনা করে বলেন, ‘মহান ভাষা আন্দোলনে ফজলুল হক অসামান্য অবদান রেখেছেন। নতুন প্রজন্মের অনেকেই তার অবদান সম্পর্কে জানেনা। সঠিক ইতিহাস জানাতে, তাকে পরিচিত করে তুলতে, প্রশাসনের উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।’

এ বিষয়ে নাট্যকর্মী রফিকুল ইসলাম নান্টু বলেন, ‘ফজলুল হক নাটোরের একমাত্র জীবিত ভাষা সৈনিক। ভাষা রক্ষায় তার অবদান অনস্বীকার্য।’

১৯৩৮ সালে সিংড়া উপজেলার দমদমা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ফজলুল হক। তিন মেয়ে ও এক ছেলের জনক ফজলুল হক বর্তমানে নাটোরের কান্দিভিটুয়া এলাকায় বসবাস করেন। তিনি বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সাথেও যুক্ত। ২০১০ সালে নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শতবর্ষ পূর্তিতে বিশেষ সম্মাননা দেওয়া হয় তাকে।

ভাষা সৈনিক হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি না পাওয়ায় কোনো ক্ষোভ নেই বরে জানিয়েছেন ফজলুল হক। মায়ের ভাষা রক্ষা করতে পারা এবং মানুষের ভালবাসা পাওয়াটাই বড় অর্জন বলে মনে করেন তিনি।

(দ্য রিপোর্ট/জেডটি/ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর