thereport24.com
ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল 24, ৭ বৈশাখ ১৪৩১,  ১১ শাওয়াল 1445

আল্লাহ্ ও রাসূলের অবাধ্যরা পথহারা

২০১৭ ফেব্রুয়ারি ২২ ২৩:৪২:০৬
আল্লাহ্ ও রাসূলের অবাধ্যরা পথহারা

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : রাসূল (সা.) মক্কার জীবনে প্রবল বিপত্তির মাঝে সদা ব্যতিব্যস্ত ছিলেন। তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়নি জুমার নামাজের ব্যবস্থা করার। কাফের ও মুশরিকদের অনবরত ঝামেলা তৈরির কারণে তিনি ছিলেন বিপর্যস্ত। অবশেষে সুযোগ এলো অফুরন্ত। আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের নির্দেশে তিনি পাড়ি জমালেন মদিনার পথে। কুবা ও মদিনার মধ্যখানে অবস্থান বনু সালিম মহল্লার। এখানে যেদিন পৌঁছান সেদিনটি ছিল জুমাবার। মহানবী (সা.) কায়েম করলেন সর্বপ্রথম জুমা আর প্রদান করলেন ইসলামের ইতিহাসের প্রথম খুতবা।

এ দিনটি ছিল ১২ রবিউল আওয়াল, মোতাবেক ২৭ ডিসেম্বর ৬২২ খ্রিস্টাব্দ। তখন মুসল্লির সংখ্যা ছিল ১০০। রাসূলের ( সা.) প্রত্যেকটি ভাষণ সব সময় যুগোপযোগী। বুজুর্গ পাঠক, লক্ষ্য করুন, বর্তমান খুতবাটি কতটা তাজা। মনে হচ্ছে এখনই যেন শুনতে পারছি খুতবাটি। তাহলে আসুন খুতবাটি বাংলা তরজমায় চোখ বুলিয়ে নিই।

রাসূল (সা.) এ দিন তাঁর ভাষণে বলেন, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহুর প্রাপ্য। আমি তাঁর প্রশংসা করি এবং তাঁরই সাহায্য, পুরস্কার ও পথ প্রদর্শন চাই। তাঁর ওপরই আমার ঈমান ও বিশ্বাস। আমি তাঁর অবাধ্যতা করি না এবং যারা তাঁর অবাধ্যতা করে তাদের মোটেই পছন্দ করি না। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। তিনি একক সত্তা । তাঁর কোনোই তুলনা নেই। মুহাম্মদ তাঁর বান্দাহ ও রাসূল। তিনিই আমাকে হিদায়াত ও নূর দিয়ে এ যুগে প্রেরণ করেছেন। এর আগে দীর্ঘদিন পর্যন্ত নবীদের আগমন বন্ধ ছিল। জ্ঞান লোপ পেয়েছে ও গোমরাহী (মূর্খতা) বেড়ে গেছে। তাঁকে নবী (সা.) কে শেষ যুগে এবং কিয়ামত ও মৃত্যুর নিকটবর্তী যুগে প্রেরণ করা হয়েছে। যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করবে, সে সাফল্য লাভ করবে। আর যে আল্লাহ ও রাসূলের অবাধ্য হবে, সে পথহারা ।

তিনি আরও বলেন, হে মুসলমানগণ আল্লাহকে ভয় করার জন্য আমি তোমাদের তাকিদ দিচ্ছি। আর সেটাই হচ্ছে শ্রেষ্ঠ তাকিদ, যা একজন মুসলমান অপর একজন মুসলমানের আখিরাতের মঙ্গলের জন্য করে থাকে। হে মানুষ, আল্লাহ তায়ালা যে কথা থেকে তোমাদের বিরত রেখেছেন, তোমরা তা থেকে বিরত থাক। এর চাইতে ভালো না কোনো নসীহত (উপদেশ) আছে, আর না কোনো জিকর। স্মরণ রাখো, আখিরাতে তাকওয়া (আল্লাহ ভীতি) তোমাদের শ্রেষ্ঠ সাহায্যকারী প্রমাণিত হবে। যখন কোনো ব্যক্তি তার এবং আল্লাহর মুআমালাকে গোপনে ও প্রকাশ্যে সঠিক রাখবে, তার এই আচরণ দুনিয়ায় তার জন্য জিকর এবং মৃত্যুর পর তার জন্য ঐশ্বর্যে পরিণত হবে। আল্লাহ্তায়ালা তোমাদের তাঁর দিক থেকে ভীতি প্রদর্শন করছেন। আর আল্লাহ আপন বান্দাদের প্রতি অতিশয় দয়ালু। যে আল্লাহর আদেশ নির্দেশকে সত্য বলে জেনেছে ও আপন অঙ্গীকার পূর্ণ করেছেন, তার সম্পর্কে আল্লাহর বাণী, ‘আমার এখানে কোনো কথার নড়চড় হয় না এবং আমি বান্দাদের ওপর জুলুম করি না।’ হে মুসলমানগণ, বর্তমান এবং ভবিষ্যতের গোপনীয়, প্রকাশ্য সব কাজেই আল্লাহভীতিকে প্রাধান্য দাও। কেননা মুত্তাকীদের পাপকর্মসমূহ উপেক্ষা (মার্জনা) করা হয়। ফলে তাদের পুরস্কারের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। মুত্তাকী অত্যন্ত বিরাট মর্যাদার অধিকারী হবে। তাকওয়া আল্লাহর অসন্তুষ্টি, উষ্মা এবং শাস্তি দূর করে। তাকওয়া চেহারাকে আলোকিত, আল্লাহকে সন্তুষ্ট ও বান্দাহকে উচ্চ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করে।

রাসূলে করীম (সা.) মুসল্লিদের উদ্দেশে আরও বলেন, ‘মুসলমানগণ, জীবন থেকে আপন ভোগের অংশ অবশ্যই গ্রহণ কর। কিন্তু আল্লাহর হক আদায়ের ব্যাপারে অবহেলা করো না। এ জন্যই আল্লাহ্তায়ালা তোমাদেরকে আপন কিতাব শিক্ষা দিয়েছেন এবং আপন পথপ্রদর্শন করেছেন যাতে তোমরা সত্য ও মিথ্যার মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করতে পার। হে মানুষ, আল্লাহ তোমাদের সাথে অত্যন্ত ভালো ব্যবহার করেছেন। তোমরাও মানুষের সাথে অনুরূপ ব্যবহার কর। যে আল্লাহর শত্রু, তোমরা তাকে শত্রু মনে করো এবং আল্লাহর দীন প্রতিষ্ঠার জন্য তোমরা সর্বশক্তি নিয়োগ করো। আল্লাহ তোমাদের (শ্রেষ্ঠ উম্মাত হিসাবে) নির্বাচিত করেছেন এবং তোমাদের নাম মুসলিম রেখেছেন-যাতে যারা ধ্বংস হওয়ার, তারা যেন পরিষ্কার নিদর্শন দেখে টিকে থাকে। এ সব কিছুই হয় আল্লাহর সাহায্যে। হে মানুষ, আল্লাহকে স্মরণ কর এবং আগত জীবনের (আখিরাতের) জন্য আমল কর। যে ব্যক্তি নিজের এবং আল্লাহর মুআমালাকে (ব্যাপারকে) সঠিক রাখে, আল্লাহতায়ালা ওই ব্যক্তির মুআমালা সুন্দর ও সঠিক করে দেন। আল্লাহ্ তাঁর নির্দেশ অবশ্যই কার্যকর করেন। এক্ষেত্রে অন্য কারো নির্দেশ চলে না। আল্লাহ্ বান্দাদের দণ্ড-মুণ্ডের কর্তা; তাঁর ওপর বান্দাদের কোনো জোর জবরদস্তি চলে না। আল্লাহ্ সর্বশক্তিমান। তাঁর ওপর কোনো শক্তি নেই। [হাফিজ ইবনুল কায়্যিম, যাদুল মা’আদ ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৫]

সম্মানিত পাঠক, উল্লিখিত ভাষণ পাঠোদ্ধারে এটা প্রমাণিত হয়, আজও এ বিষয়-আশয়গুলো সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। মানবের মুক্তির জন্য মহনবীর (সা.) আগমন ঘটেছিল এই পৃথিবীতে। তিনি মানবমণ্ডলীকে তার সমস্ত কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে এটাই সমঝে দিতে চেয়েছেন, মানুষের দুনিয়ার জীবনে অতি ক্ষণস্থায়ী, সামনের দিন অর্থাৎ পরকালই স্থায়ী। সে কালের জন্য প্রত্যেকের প্রস্তুতি নেওয়া দরকার। সত্যের মশাল জ্বালিয়ে সে পথকেই আপন পথ হিসেবে প্রতিপন্ন করে প্রত্যেকটি সফর সেই মঞ্জিলের দিকে হওয়া একান্ত আবশ্যক।

এ কথার সারবত্তা খুঁজে পাওয়া যায় তাঁর মদিনা আগমনের পর সর্বপ্রথম ভাষণে। যেখানে তিনি তাঁর বক্তব্যের এক জায়গায় বলছেন,‘...তুমি আজকের জন্য কী সামগ্রী সেদিন তৈরি করে রেখেছিলে? তখন বান্দাহ আপন ডান দিকে তাকাবে, কিন্তু কিছুই দেখতে পাবে না। কেননা সেদিন তার সামনে জাহান্নাম ছাড়া আর কিছুই থাকবে না। অতএব যার সামর্থ্য আছে, সে যেন আগুন থেকে নিজেকে রক্ষা করে-যদি তা এক টুকরা খেজুরের বিনিময়েও হয়। যার এটুকুও নেই, সে যেন অন্তত মানুষের সাথে মিষ্ট ভাষায় কথা বলে। তাহলে তার একটি পুণ্যকর্মের বদলা দশগুণ থেকে সাতশ’গুণ পর্যন্ত দেওয়া হবে। তোমাদের ওপর নাজিল হোক আল্লাহর রহমত, শান্তি ও কল্যাণ। [সীরাতুন্নবী : ইবনে হিশাম, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৪১]

(দ্য রিপোর্ট/এফএস/এনআই/ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর