thereport24.com
ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল 24, ৩ বৈশাখ ১৪৩১,  ৭ শাওয়াল 1445

‘স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পুরোপুরি প্রস্তুত খাদিজা’

২০১৭ ফেব্রুয়ারি ২৩ ১৪:৩০:৫৮
‘স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পুরোপুরি প্রস্তুত খাদিজা’

সাভার প্রতিনিধি : ‘আমি সাভারে সিআরপিতে চিকিৎসা নিতে এসেছিলাম হুইল চেয়ারে বসে। তখন আমি হাঁটতে পারতাম না, ঠিকমতো কথা বলতে পারতাম না, ধীরে ধীরে কথা বলতাম, হাত দিয়ে কোনো কাজ করতে পারতাম না। সিআরপির তিন মাসের চিকিৎসায় প্রায় সুস্থ হয়ে এখন আমি নিজের কাজগুলো নিজেই করতে পারি।’

বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সকালে সাভারে পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্র (সিআরপি) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এভাবেই নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করছিলো সিলেট শাহজালাল প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক বদরুলের হামলায় আহত হওয়া শিক্ষার্থী খাদিজা আক্তার।

তার স্বপ্নের বিষয়ে বলেন, ‘বাড়িতে ফিরে নিজের অসমাপ্ত পড়ালেখা শেষ করে ব্যাংকার হতে চাই। এ জন্য আমি প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতার পাশাপাশি দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই।’

এ ছাড়া তার ওপর হামলাকারী বদরুলের দৃষ্টন্তমূলক ও সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন খাদিজা।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সিআরপির নির্বাহী পরিচালক মো. সফিকুল ইসলাম, মেডিকেল সার্ভিসেস উইংয়ের প্রধান ডা. সাইদ উদ্দিন হেলাল, প্রশাসনপ্রধান মো. শহিদুর রহমান, সকল থেরাপিস্ট, কাউন্সিলর এবং খাদিজা ও তার পরিবারের সদস্যরা।

সংবাদ সম্মেলনে ডা. সাইদ বলেন, ‘গত ৩০ নভেম্বর খাদিজা সিআরপিতে ভর্তি হয়। এ সময় সিআরপির মাল্টি ডিসিপ্লিনারি টিম খাদিজাকে পর্যবেক্ষণের পর ডাক্তার, ফিজিওথেরাপিস্ট, অকুপেশনালথেরাপিস্ট এবং কাউন্সিলরদের নিয়ে আট সদস্যের একটি বিশেষ মেডিকেল টিম গঠন করা হয়। এই বিশেষ টিমের পরিকল্পনা অনুযায়ী তিন মাসের চিকিৎসার পর খাদিজা এখন স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়ার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। দু-এক দিনের মধ্যেই বাড়ি ফিরবে খাদিজা।’

সিআরপির নিউরোলজি বিভাগের ক্লিনিক্যাল ফিজিওথেরাপিস্ট সুলক্ষনা শ্যামা বিশ্বাস বলেন, ‘খাদিজাকে শুরুতে পর্যবেক্ষণ করে আমরা তার হেড ইঞ্জুরি ও বাম হাতের টেন্ডন ইঞ্জুরি পাই। এ ছাড়া তার বাম কাঁধের ব্যথা, বাম পাশের কাঁধ, আঙুল, হিপ ও গোড়ালির সীমিত নড়াচড়া এবং তার আঘাতপ্রাপ্ত পাশের টোন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ছিল। তখন ভারসাম্যের স্কোর ছিল ৫৬ এর মধ্যে ১৩, যার ফলে সে চলাফেরার জন্য হুইলচেয়ারের ওপর নির্ভরশীল ছিল। এ ছাড়া কাত হওয়া, শোয়া থেকে বসা, বসা থেকে দাঁড়ানো, হাঁটাসহ সবকিছুর জন্য সে পরিবারের ওপর নির্ভরশীল ছিল। কিন্তু তিন মাসের ট্রিটমেন্ট প্ল্যান সম্পন্ন করার পর বর্তমানে তার কাঁধে কোনো ব্যাথা নেই, বাম পাশের প্রত্যেক জয়েন্টের মুভমেন্ট বেড়েছে। তার ভারসাম্যের স্কোর ১৩ থেকে বেড়ে ৪৫-এ দাঁড়িয়েছে যার অর্থ সে সম্পন্ন স্বাধীনভাবে চলাচলে সক্ষম।’

স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি বিভাগের ক্লিনিক্যাল স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপিস্ট তাহমিনা সুলতানা বলেন, ‘এখানে চিকিৎসার শুরুতে খাদিজার মুখের মাংসপেশিতে, জিহবা নড়াচড়াতে দুর্বলতা ছিল, যে কারণে তার কথায় জড়তা ছিল এবং কণ্ঠস্বর নিচু থাকার কারণে কথা ধীরে শোনা যেত। এ ছাড়াও খাদিজার অন্যের কথা বুঝতে সমস্যা হতো, স্মৃতিশক্তি কমে গিয়েছিল, মনোযোগে সমস্যা ছিল। নিয়মিত থেরাপি নেওয়ার পর বর্তমানে খাদিজা স্পষ্টভাবে কথা বলতে পারে, অন্যের কথা ভালোভাবে বুঝতে পারে, তার স্মৃতিশক্তি ও মনোযোগ আগের থেকে অনেক উন্নত হয়েছে। সে এখন গুছিয়ে কথা বলা, যেকোনো সমস্যার বিভিন্ন ধরনের সমাধান বলা, ক্যালকুলেশন করা, যেকোনো প্রশ্নের উত্তর দেওয়া, ভালো-মন্দ পার্থক্য করাসহ প্রায় সব কাজই খুব ভালোভাবে করতে পারেন।’

ক্লিনিক্যাল অকুপেশনাল থেরাপিস্ট মানসুরা আক্তার বলেন, ‘খাদিজা আমাদের কাছে আসার পর তার শরীরের বাম পাশটা দুর্বল থাকার কারণে খাওয়া-দাওয়া করা, ব্রাশ করা, চুল আচড়ানো, এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় চলাফেরা করা, লেখাপড়া করাসহ কোনো কাজই সে নিজে নিজে করতে পারত না। এসব সমস্যার আলোকে আমরা তার জন্য স্বল্প মেয়াদি ও দীর্ঘ মেয়াদি চিকিৎসা পরিকল্পনা করি। সে অনুযায়ী তাকে বিভিন্ন রকম সিমুলেটেড কাজে অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধি করানো হয়। অকুপেশনাল থেরাপির বিভিন্ন চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে প্রায় তিন মাসের মধ্যে খাদিজা এখন তার দৈনন্দিন জীবনের সমস্ত কাজেই স্বনির্ভর। কলেজে যাওয়া ও পড়াশোনা করাসহ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে প্রস্তুত খাদিজা।’

সিআরপির কাউন্সিলর মো. আব্দুল জব্বার বলেন, ‘চিকিৎসা পরিকল্পনার অংশ হিসেবে খাদিজার মানসিক সমস্যা নিরূপণ ও চিকিৎসা প্রদান করা হয়। মানসিক চিকিৎসা, কাউন্সেলিং ও সাইকোথেরাপি দেওয়ায় বর্তমানে তার মানসিক অবস্থা খুবই ভালো। তিনি বাস্তবকে মেনে নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য দৃঢ় প্রত্যয়ী। মানসিকভাবে খুবই শক্তিশালী খাদিজা ভবিষ্যৎ জীবনে সকল প্রতিকূলতার মুখোমুখি হওয়ার ইচ্ছাপোষণ ইঙ্গিত করায় আমরা তার সুস্বাস্থ্য ও সাফল্য কামনা করি।’

উল্লেখ্য, গত বছরের ৩ অক্টোবর শাহজালাল প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক বদরুল চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করেন খাদিজাকে। গুরতর অবস্থায় প্রথমে সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং পরবর্তীতে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয় খাদিজাকে। সেখানে প্রায় ২ মাস ধরে কয়েকটি অপারেশনের পর পুনর্বাসনের জন্য সাভারের সিআরপিতে পাঠানো হয়। এখানে সিআরপির মাল্টি ডিসিপ্লিনারি টিমের চিকিৎসা সেবা পেয়ে খাদিজা এখন স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে প্রস্তুত।

(দ্য রিপোর্ট/এম/এস/ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর