thereport24.com
ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল 24, ৩ বৈশাখ ১৪৩১,  ৭ শাওয়াল 1445

বন্দি জঙ্গিদের সংশোধনে উদ্যোগ নেবে কারা কর্তৃপক্ষ

২০১৭ ফেব্রুয়ারি ২৩ ২৩:৫১:০৫
বন্দি জঙ্গিদের সংশোধনে উদ্যোগ নেবে কারা কর্তৃপক্ষ

কারাগারে বন্দি জঙ্গিদের সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার জন্য, তাদের ভ্রান্ত ধারণা দূর করার জন্য উদ্যোগ নিচ্ছে কারা কর্তৃপক্ষ।

কারা সূত্রে জানা গেছে, ‘বন্দির হাত হোক কর্মীর হাত’ এ মন্ত্রে দীক্ষিত হতে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ এ ‘বন্দি পুনর্বাসন প্রশিক্ষণ স্কুল’ স্থাপন করা হয়েছে এবং বন্দিদেরকে বিভিন্ন মেয়াদী প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশের সকল কারাগারে এ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম সম্প্রসারিত হবে। বাংলাদেশের কারাগারগুলোকে সংশোধনাগারে পরিবর্তিত করা হবে এ প্রত্যাশা নিয়ে কারা বিভাগ নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। কারাগার থেকে মুক্তির পর একজন বন্দি যাতে সমাজে পুনর্বাসিত হয়ে অন্য দশ জন মানুষের সাথে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে সে উদ্দেশ্যে কারাগারে আটক বন্দিদের বিভিন্ন ট্রেনিং; যেমন- প্লাম্বার, টাইলস, লেইস, মেসনরী, মোকাসিন তৈরি, হাউসহোল্ড ইলেকট্রিক ওয়্যারিং, এসি/ফ্রিজ মেরামত, ভারমি কমপোস্ট, মাশরুম চাষ, পুরুষ-মহিলা মেক ওভার কোর্স, বিউটিশিয়ান ইত্যাদি বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে।

তবে সাধারণত বন্দি জঙ্গির সঙ্গে অন্য সাধারণ বন্দি বা হাজতিদের মিশতে দেওয়া হয় না। তাদেরকে আলাদা রাখা হয়। জঙ্গিদের চলাফেরায় রাখা হয় সীমাবদ্ধতা। কারা কর্তৃপক্ষ সাধারণ বন্দিদের সংশোধনের জন্য সর্বপ্রথম উদ্যোগ নিচ্ছে। কারণ, সাধারণ বন্দিদের কারা কর্তৃপক্ষ ‘লো-রিস্ক’ মনে করে। এদের চারিত্রিক ও মানসিক সংশোধনে সফলতা এলে ‘মিডিল-রিস্ক’ লেভেলের বন্দিদের সংশোধনে উদ্যোগ নেবে কারা কর্তৃপক্ষ। এর পর নেওয়া হবে ‘হাই-রিস্ক’ লেভেলের বন্দিদের সংশোধনে উদ্যোগ। জঙ্গিদের ‘হাই-রিস্ক’ হিসেবে ধরে কারা কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন বলেছেন, ‘শুধু পুনর্বাসন করে বন্দিদের শোধরানো সম্ভব নয়। কারণ, বন্দিদের মধ্যে চারিত্রিক ও মানসিক অপরাধ বোধ থাকে। এ জন্য তাদের চারিত্রিক ও মানসিক সংশোধন প্রয়োজন। এ শিক্ষা দেওয়ার জন্য লোকবল প্রয়োজন। আমরা শুধু এখন বন্দিদের পুনর্বাসন এবং প্লাম্বার, টাইলস লেইন, মেসনরী, মোকাসিন তৈরি, হাউসহোল্ড ইলেকট্রিক ওয়্যারিং, এসি/ফ্রিজ মেরামত, ভারমি কমপোস্ট, মাশরুম চাষ, মেকওভার কোর্স ইত্যাদি প্রশিক্ষণের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছি। বন্দিদের মানসিক উন্নতির লক্ষ্যে তাদেরকে ধর্মীয় ও আত্মিক শিক্ষা প্রদান করার পাশপাশি মাদকাসক্তদের মোটিভেশনের লক্ষ্যেও কারাগারে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।’

‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন জেলকে সংশোধনাগার করার জন্য’ এমনটা উল্লেখ করে আইজি প্রিজন আরো বলেছেন, ‘জেল থেকে বন্দিদের সংশোধিত না করা পর্যন্ত পরিবর্তন সম্ভব নয়। শুধু জনসাধারণ ও কারা কর্তৃপক্ষের নয়, নীতি-নির্ধারকদেরও চিন্তা-ধারণার পরিবর্তন প্রয়োজন। জেল থেকে সংশোধনাগার চিন্তাধারাকে সবার মধ্যে আনতে হবে। আর একবার কেউ জেলে এলে সমাজের সবাই জানে ওই ব্যক্তি জেলে গেছে। তখন সবাই তাকে অন্য নজরে দেখে। কেউ ব্যাপারটি স্বাভাবিকভাবে নেয় না। তাই অন্য অপরাধীরা ওই ব্যক্তিকে কাছে টানে। তখন সে আর সঠিক পথে ফিরতে পারে না। তাই বন্দিদের চারিত্রিক ও মানসিক সংশোধনের পরও সমাজের মানুষের চিন্তাধারায়ও পরিবর্তন আনতে হবে। জেল থেকে বের হওয়ার পর তাদের (বন্দিদের) কর্মক্ষেত্রে সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে।’

আইজি প্রিজন আরো বলেছেন, ‘জঙ্গি বন্দিদের সাধারণ বন্দিদের সঙ্গে মিশতে দেওয়া হয় না। কারণ জঙ্গিদের আমরা লো-রিস্ক মনে করি না। জঙ্গিদের সংশোধন নিয়েও আমরা আপাতত কাজ করছি না। কারণ তাদের মধ্যে রিরেডিক্যালাইজড করার প্রবণতা রয়েছে। তাদের সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার জন্য এবং ভ্রান্ত ধারণা দূর করার জন্য খুব ভাল জ্ঞানী (আলেম-ওলামা) লোক প্রয়োজন। এ কাজ চলছে, আমরা সে রকম কাউকে খুঁজছি। এমন কাউকে পেলে যে কিনা জঙ্গিদের ‍বুঝিয়ে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে এবং তাদের ভ্রান্ত ধারণা দূর করতে পারবে, তাহলে জঙ্গিদের একটি ছোট গ্রুপকে নিয়ে চেষ্টা করা যাবে। তবে এ ব্যাপারটি বন্দি জঙ্গিদের আগে জানানো যাবে না। তাহলে তারা তাদের ব্রেইনের সুইচ অফ করে দেবে। এজন্য তাদের এ ব্যাপারটি বুঝতে দেওয়া যাবে না। ব্যাপারটি নিয়ে আলোচনা চলছে। অন্য কয়েকটি দেশ এ ধরণের পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। তাদের সঙ্গে আমরা কথা বলছি।’

তিনি আরও বলেছেন, ‘তবে বিষয়টি এখনও প্রাথমিক পরিকল্পনা পর্যায়েই রয়েছে। জঙ্গিদের মোটিভেশন করতে হলে তারা যেসব বিষয়ে বা যার মাধ্যমে ভুল ধর্মীয় ব্যাখ্যা পেয়েছে সেই ভুল ব্যাখ্যার বৃত্ত থেকে বের করে আনতে হবে। জঙ্গিদের ক্ষেত্রে লক্ষণীয় বিষয় হলো তারা যা ভাবে, সেটাকেই ঠিক বলে ধরে নেয়। তাদেরকে যে ধর্মীয়ভাবে ভুল বুঝানো হচ্ছে সেটা বুঝিয়ে বলতে হলে উচ্চ পর্যায়ের ধর্মীয় দক্ষতা, মেধা ও জ্ঞান রয়েছে এমন আলেম-ওলামা প্রয়োজন। জঙ্গিরা যে রেফারেন্সে কথা বলবে, তার বিপরীতে প্রতিটি রেফারেন্সের ব্যাখ্যা দেওয়ার যোগ্যতা ওই জ্ঞানী ব্যক্তিদের থাকতে হবে। কিভাবে কাদের মাধ্যমে মোটিভেশন করলে জঙ্গিরা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে, সাধারণ জীবনযাপন ও চিন্তাভাবনায় ফিরে আসবে, তা নিয়ে প্রাথমিক কাজ শুরু হয়ে গেছে।’

(দ্য রিপোর্ট/এমএসআর/জেডটি/এনআই/ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর