thereport24.com
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল 24, ৫ বৈশাখ ১৪৩১,  ৯ শাওয়াল 1445

‘মেগা চুরির অংশ হিসেবে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে’

২০১৭ ফেব্রুয়ারি ২৫ ১৬:২৭:৩৯
‘মেগা চুরির অংশ হিসেবে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে’

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : পুকুর চুরি, সাগর চুরি ও মেগা চুরির অংশ হিসেবে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তেল-গ্যাস খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) কমিটির গণঅবস্থান কর্মসূচিতে আনু মুহাম্মদ এ মন্তব্য করেন। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ সুন্দরবন বিনাশী যে কোন অপতৎপরতা বন্ধের দাবিতে সারাদেশে সড়ক, মহাসড়ক ও রাজপথে বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়।

কমিটির সদস্য সচিব বলেন, ‘অর্থমন্ত্রী বলেছেন মেগা প্রকল্প নেওয়া হয় মেগা চুরির জন্য। অর্থমন্ত্রী আরও বলেছেন বাংলাদেশে শুধু পুকুর চুরিই নয়, সাগর চুরি হয়। আমরা তার সঙ্গে একমত। সেই পুকুর চুরি, সাগর চুরি ও মেগা চুরির অংশ হিসেবে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘গ্যাসের দাম বাড়ানো যে সম্পূর্ণ অযৌক্তিক এটা বিইআরসির (বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন) গণশুনানিতে প্রমাণিত হয়েছে। সরকার নানান গল্প বানিয়ে গ্যাসের দাম বাড়াচ্ছে। বিইআরসিকে এখন একটা প্রহসনে পরিণত করা হয়েছে।’

গ্যাসের দাম বাড়ার কারণে ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের যেখানে গ্যাসের সংযোগ আছে সেখানকার নাগরিকদের শতকরা ৫০ ভাগ বাড়তি টাকা দিতে হবে জানিয়ে আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘দেশের যে সব প্রান্তে গ্যাসের কোনো সংযোগ নেই তাদেরকেও অনেক ক্ষেত্রে ব্যয় বাড়াতে হবে। সারাদেশের মানুষকে পরিবহন ব্যয় বাড়ার বোঝা বহন করতে হবে। পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধির কারণে জিনিসপত্রের দাম বাড়বে।’

তাই বলা যায় বাংলাদেশের উন্নয়ন বিরোধী সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার- মন্তব্য বলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের এ শিক্ষক বলেন, ‘গ্যাসের দাম বৃদ্ধির কারণে উৎপাদন ব্যয় বাড়বে। এতে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতার ক্ষমতা, উৎপাদনশীলতার ক্ষমতা ব্যাপকভাবে বিপর্যস্ত হবে। ভারত ও চীনকে মোকাবেলার পথ কঠিন হয়ে যাবে।’

তিনি বলেন, ‘গ্যাসের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের জন্য জাতীয় কমিটির শরিক বিভিন্ন দল আগামী মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত হরতাল ঘোষণা করেছে। আমরা জাতীয় কমিটির পক্ষ থেকে তাদের সঙ্গে সংহতি জানাই।’

গত ২৩ ফেব্রুয়ারি গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছে বিইআরসি। মার্চ থেকে প্রতি চুলার খরচ হবে ৬০০ টাকার পরিবর্তে ৭৫০ টাকা, এটা জুনে বেড়ে গিয়ে দাঁড়াবে ৯০০ টাকায়। আর মার্চ থেকে দুই চুলার জন্য ৬৫০ টাকার পরিবর্তে ৮০০ টাকা দিতে হবে, যা জুনে গিয়ে আরও বেড়ে হবে ৯৫০ টাকা।

রামপাল প্রকল্পে ৫ কোটি মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় পড়বে

কমিটির সদস্য সচিব বলেন, ‘বঙ্গোপসাগরে বিপুল পরিমাণ গ্যাস থাকলেও সরকার বলছে আমাদের গ্যাসের খুব সংকট। সেজন্য আমরা রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র করছি। একদিকে গ্যাসের সংকটের কথা বলে সুন্দরবন বিনাশী প্রকল্প, দেশধ্বংসকারী রূপপুর প্রকল্প কিংবা মানুষ খুন করে বাশখালী প্রকল্প করা হচ্ছে। অন্যদিকে বাংলাদেশের গ্যাস সম্পদ রফতানির বিধান রেখে বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করা হচ্ছে।’

যারা বাপেক্স ও পেট্রোবাংলার সক্ষমতার কথা বলেন তারা ওই সব প্রতিষ্ঠানে থাকতে পারেন না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এটা বলা তাদের জন্য অপরাধ। এরকম অপরাধেরই বাপেক্সে দায়িত্ব পালন করছিলেন এমন একজনকে অন্যত্র বদলি করা হয়েছে। এমন লোককে বসানো হয়েছে যিনি দুর্নীতির দায়ে দণ্ডিত।’

আনু মুহম্মদ বলেন, ‘কতিপয় লুটেরা গোষ্ঠী বিদেশি কোম্পানির স্বার্থ রক্ষা করে নিজেদের ক্ষমতা রক্ষার করার চেষ্টা করছে। এজন্য তাদের কাছে সুন্দরবনের কোনো গুরুত্ব নেই। তাদের কাছে যুক্তির কোনো গুরুত্ব নেই, তাদের কাছে তথ্যের কোনো গুরুত্ব নেই। তাদের কাছে বিজ্ঞানের কোনো গুরুত্ব নেই। তাদের কাছে জনস্বার্থের কোনো গুরুত্ব নেই।’

সুন্দরবনে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কারণে পানি ও বায়ু দূষিত হলে সেখানকার ৩৫ থেকে ৪০ লাখ মানুষ বেকার হয়ে যাবে জানিয়ে এ অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘পরিবেশগত উদ্বাস্তুতে পরিণত হবে লাখ লাখ মানুষ, রামপাল প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে ঢাকার পরিবেশ উদ্বাস্তু এখনকার চেয়ে দ্বিগুণ হবে। প্রকল্পে এক লাখ মানুষের কর্মসংস্থানও হবে না। সেখানে কাজ করাও হবে কোন মানুষের জীবনের জন্য ঝুঁকিস্বরূপ।’

‘শুধু তাই নয় সুন্দরবন বিনাশী প্রকল্পের জন্য ওই অঞ্চলের সব স্তরের ৫ কোটি মানুষের জীবন ও সম্পদ সম্পূর্ণ রূপে নিরাপত্তাহীনতায় পড়বে।’

দেশের বিভিন্ন স্থানে গণঅবস্থান কর্মসূচিতে বাধা দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পুলিশ ও সন্ত্রাসী দিয়ে আক্রমণ এবং মিথ্যাচারের বিজ্ঞাপন দিয়ে সরকার বাংলাদেশ ধ্বংসী প্রকল্প নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে।’

আনু মুহাম্মদ সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘মিথ্যাচার, ভয়ভীতি ও সন্ত্রাস দিয়ে আপনারা একটা কৃত্রিম আবহাওয়া তৈরি করে রেখেছেন, কৃত্রিম আবহাওয়া দিয়ে জনমত উড়িয়ে দেওয়া যায় না। জনগণের মধ্যে যে ঘৃনা যে ক্রোধ, জনগণের মধ্যে যে মত, সেই মতকে হাওয়ায় উড়িয়ে দিতে পারবেন না। সেটা তৈরি হচ্ছে, সংগঠিত হচ্ছে, সংহত হচ্ছে।’

সুন্দরবন বিনাশী তৎপরতার পক্ষে দাড়ানো সকল মানুষের কর্তৃব্য বলেও মন্তব্য করে তিনি।

বিকল্প মহাপরিকল্পনা উপস্থাপন ১৮ মার্চ

কমিটির সদস্য সচিব বলেন, ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নিয়ে সরকারের মহাপরিকল্পনা ভুল ও স্ব-বিরোধীতায় ভরা। এ মহাপরিকল্পনা বাংলাদেশ ধ্বংসের মহাপরিকল্পনা। উন্নয়নের নামে বাংলাদেশে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাত দেশি-বিদেশি লুটেরাদের হাতে তুলে দেওয়ার পুরো নকশা হচ্ছে এ মহাপরিকল্পনা।’

‘আমরা এর বিরুদ্ধে বাংলাদেশের স্বাধীন বিশেষজ্ঞসহ সব পর্যায়ের মানুষের সম্মতি নিয়ে বিকল্প মহাপরিকল্পনা উপস্থিত করব। আমাদের বিশেষজ্ঞরা কাজ করছেন। বাংলাদেশের জনস্বার্থকে কেন্দ্রে রেখে পরিবেশকে সমুন্নত রেখে, সুলভ ও টেকসই জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধানের মহাপরিকল্পনা আমরা আগামী ১৮ মার্চ উপস্থাপন করব’ বলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এ শিক্ষক।

তিনি জানান, আরও কম দামে বিদ্যুৎ ও গ্যাস দেওয়া যে সম্ভব সেটা আমার মহাপরিকল্পনায় তুলে ধরব।

উপকূলীয় মহাসমাবেশ এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে

রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ বন্ধের দাবিতে উপকূলীয় এলাকার মানুষদের নিয়ে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে মহাসমাবেশ করা হবে বলে জানিয়েছেন আনু মুহাম্মদ।

তিনি বলেন, ‘উপকূলীয় অঞ্চলে যত বাধাবিঘ্ন থাকুক, যত ভয়ভীতি থাকুক না কেন তা অতিক্রম করে আমার মহাসমাবেশের কর্মসূচি নিয়েছি এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে।’

জাতীয় গণফ্রন্টের সমন্বয়ক টিপু বিশ্বাস, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক শ্রমিক নেত্রী মোশরেফা মিশুসহ সিপিবি, বাসদ, ছাত্র ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা গণঅবস্থানে অংশ নেন।

(দ্য রিপোর্ট/আরএমএম/এস/ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর