thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল 24, ৫ বৈশাখ ১৪৩১,  ১০ শাওয়াল 1445

চতুর্থ ও পঞ্চদশ সংশোধনী

সংশোধিত পাঁচটি অনুচ্ছেদ নিয়ে হাইকোর্টের রুল

২০১৭ ফেব্রুয়ারি ২৬ ২০:৪৩:২৮
সংশোধিত পাঁচটি অনুচ্ছেদ নিয়ে হাইকোর্টের রুল

খাদেমুল ইসলাম, দ্য রিপোর্ট : বিচারকদের নিয়োগ ও শৃঙ্খলা বিধান সংক্রান্ত সংবিধানের এমন পাঁচটি অনুচ্ছেদে আনা সংশোধনের বৈধতা নিয়ে এবার প্রশ্ন তুলেছেন হাইকোর্ট। যে দুটি সংশোধনীর একটি স্বাধীনতার পর ১৯৭৫ সালের জানুয়ারি মাসে প্রথম সংসদে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সময়ে এবং অপরটি বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সময়ে ২০১১ সালে নবম সংসদে আনা হয়েছিল।

পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রাষ্ট্রপতির পরামর্শ সংক্রান্ত সংবিধানের আরেকটি অনুচ্ছেদ সংশোধনে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, সে বিষয়েও রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। আইনজীবী ড. ইউনুছ আলী আকন্দের করা এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে রবিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রুল জারি করেন।

আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে আইন সচিব, মন্ত্রী পরিষদ সচিব, জাতীয় সংসদের স্পিকার ও সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রারকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

পরে আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ জানিয়েছেন, ১৯৭২ সালের মূল সংবিধানে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছিল, এমন কয়েকটি অনুচ্ছেদ ১৯৭৫ সালের জানুয়ারি মাসে চতুর্থ সংশোধনীতে সংশোধনের মাধ্যমে সেই স্বাধীনতা খর্ব করা হয়েছে। এমন অনুচ্ছেদ সমূহের মধ্যে ৯৫ (২), ৯৮, ১১৫ ১১৬ এর অংশ বিশেষ সংবিধানের চতুর্থ ও পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংশোধন করা হয়। আর ১১৬ (ক) অনুচ্ছেদটি চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এসব অনুচ্ছেদের সংশোধন কেন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও বেআইনী ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।

অনুচ্ছেদ ৯৫- এ আছে, (১) রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেবেন। প্রধান বিচারপতির সঙ্গে পরামর্শ করে রাষ্ট্রপতি অন্যান্য বিচারককে নিয়োগ করবেন।

এবং (২) (বি) অনুযায়ী বাংলাদেশে ন্যূনতম ১০ বছর কোনো বিচার বিভাগীয় পদে দায়িত্ব পালন না করলে সুপ্রিম কোর্টের বিচারক হওয়ার যোগ্য হওয়া যাবে না। এর সঙ্গে ১৯৭২ সালের সংবিধানে বিচারপতি নিয়োগে জেলা জজ হিসাবে ৩ বছরের অভিজ্ঞতা ছিল। পঞ্চদশ সংশোধনীতে জেলা জজের ক্ষেত্রে তিন বছর অভিজ্ঞতার ওই বিধান বাতিল করা হয়। একইসঙ্গে বিচারক নিয়োগ সংক্রান্ত বিধানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সীমানার মধ্যে অন্যূন দশ বছর কোন বিচার বিভাগীয় পদে অধিষ্ঠান থাকার শর্ত প্রতিস্থাপন করা হয়।

সংবিধানের ৯৮ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি উপযুক্ত বিবেচনা করলে হাইকোর্ট বিভাগের কোনো বিচারককে যে কোনো অস্থায়ী মেয়াদের জন্য আপিল বিভাগে আসন গ্রহণের ব্যবস্থা করতে পারবেন। কিন্তু এই অনুচ্ছেদে বিচারপতি নিয়োগে প্রধান বিচারপতির সাথে আলোচনার বিধান ছিল। কিন্তু চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে পরামর্শ সংক্রান্ত বিধানটি বাতিল করা হয়।

১১৫ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, বিচার বিভাগীয় পদে বা বিচার বিভাগীয় দায়িত্ব পালনকারী ম্যাজিস্ট্রেট পদে বিধি অনুযায়ী নিয়োগ দেবেন রাষ্ট্রপতি। ১৯৭২ সালের সংবিধানে এই অনুচ্ছেদে ছিল- সুপ্রিম কোর্টের সুপারিশ ছাড়া নিম্ন-আদালতের জেলা জজ নিয়োগ দেওয়া যাবে না। অন্যান্য পদে পাবলিক সার্ভিস কমিশন এবং সুপ্রিম কোর্টের সাথে আলোচনা করে নিয়োগ দিতে হবে এবং কমপক্ষে ৭ বছর জুডিসিয়াল অফিসার না থাকলে তাকে জেলা জজ হিসাবে নেওয়া যাবে না। কিন্তু ঐ সকল বিধান বাতিল করে ১৯৭৪ সালের ৪র্থ সংশোধনীর মাধ্যমে সমস্ত ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে নেওয়া হয়।

আর ১১৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে- বিচার বিভাগে নিযুক্ত ব্যক্তিদের এবং বিচার বিভাগীয় দায়িত্বপালনরত ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ (কর্মস্থল নির্ধারণ, পদোন্নতি ও ছুটি মঞ্জুরিসহ) ও শৃঙ্খলাবিধান রাষ্ট্রপতির ওপর ন্যস্ত থাকবে এবং সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক তা প্রযুক্ত হবে। অথচ মূল সংবিধানে এই নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা ছিল সম্পূর্ণ সুপ্রিম কোর্টের হাতে। সংশোধিত সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদকে সম্প্রতি এক বিবৃতিতে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা ‘দ্বৈত শাসন’ বলে অভিহিত করেছিলেন।

সংশোধিত এসব অনুচ্ছেদকে কেন সংবিধানের ২২ ও ১০৯ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হবে না, রুলে তা জানতে চাওয়া হয়েছে। ২২ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রের নির্বাহী অঙ্গসমূহ থেকে বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ রাষ্ট্র নিশ্চিত করবেন। আর ১০৯ অনুচ্ছেদে অধঃস্তন সকল আদালত ও ট্রাইব্যুনালের উপর তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণ-ক্ষমতা হাইকোর্ট বিভাগকে দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া সংবিধানের ৪৮ (৩) অনুচ্ছেদ নিয়েও হাইকোর্ট রুল দিয়েছেন। সেই অনুচ্ছেদের রুলের বিষয়বস্তু সম্পর্কে রিটকারী আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ বলেন, ‘সংবিধানের ৪৮ (৩) অনুচ্ছেদে একটি সংশোধনী আনার নির্দেশনা কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়েছে। বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতি নিয়োগ ব্যতীত অন্য সব ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতিকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করতে হয়। এখন অন্যান্য বিচারপতি ও অতিরিক্ত বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রেও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শের যেন প্রয়োজন না হয়, সেটি সংবিধানে অন্তর্ভুক্তের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, আদালত রুলে তাও জানতে চেয়েছেন।’

রিট আবেদনের বিষয়ে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম রবিবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘আকন্দ সাহেব (ইউনুছ আলী আকন্দ) তার রিট পিটিশনে যেটা মূলত বলতে চেয়েছেন সেটা হলো প্রধান বিচারপতির ক্ষমতা বৃদ্ধি। প্রধান বিচারপতির সঙ্গে পরামর্শ করে নিয়োগ করার যে বিধানগুলো ছিল, চতুর্থ সংশোধনীতে এটা বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই বাদ দেওয়াটাকেই উনি অবৈধ বলে ঘোষণা চান।’

তবে রুলের বিষয়বস্তু সম্পর্কে অ্যাটর্নি জেনারেল কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেন, ‘রিটকারী আইনজীবী তার আবেদনে যেগুলো লিখেছেন এগুলো অনুধাবন করে আদালত কি আদেশ দিয়েছেন, এটা এই মুহূর্তে বলা সঠিক হবে না। কাজেই আমাদের অপেক্ষা করা উচিত আদালত কি মর্মে রুল ইস্যু করেছেন লিখিত আদেশের জন্য।’

তবে সংবিধানের এসব সংশোধন সত্ত্বেও বিচার বিভাগের মর্যাদা সমুন্নত রয়েছে বলে মনে করেন অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘চতুর্থ সংশোধনীর এ সমস্ত বিধান হয়ে গেছে ১৯৭৫ সালে। তারপর অনেক পরিবর্তন পরিবর্ধন হয়েছে এবং প্রধান বিচারপতির সঙ্গে পরামর্শের বিধান পুনঃস্থাপিত হয়েছে। আমার মনে হয় বর্তমানে যে বিধানগুলো আছে, সেই বিধানের ফলে বিচার বিভাগের মর্যাদা সমুন্নত আছে বলে আমি মনে করি।’

উল্লেখ্য, গত বছর ৩ নভেম্বর সংবিধানের এসব অনুচ্ছেদের সংশোধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ। সেই আবেদনের শুনানি শেষে ২২ নভেম্বর আদেশের জন্য রেখেছিলেন হাইকোর্টের একই বেঞ্চ। তবে সেদিন মামলাটি মূলতবি রাখা হয়। সবশেষ গত ২০ ফেব্রুয়ারি মামলাটি কার্যতালিকায় আসলে আদেশের জন্য ২৬ ফেব্রুয়ারি দিন নির্ধারণ করা হয়। সে অনুযায়ী রবিবার এই রুল জারি করা হল।

(দ্য রিপোর্ট/কেআই/এপি/ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর