thereport24.com
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল 24, ১২ বৈশাখ ১৪৩১,  ১৬ শাওয়াল 1445

সার্বিক উচ্চশিক্ষায় নেতৃত্ব দিতে হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে

২০১৭ ফেব্রুয়ারি ২৬ ২২:৩৯:১৫
সার্বিক উচ্চশিক্ষায় নেতৃত্ব দিতে হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে

অধ্যাপক ড. আবু আহসান মোহম্মদ সামসুল আরেফিন সিদ্দিক, যিনি আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক নামে পরিচিত। জন্ম ১৯৫৩ সালের ২৩ অক্টোবর। তাঁর পৈতৃক নিবাস নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলায়। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৭তম উপাচার্য হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন ২০০৯ সালের ১৫ জানুয়ারি থেকে। ঢাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।

অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক ১৯৬৯ সালে এসএসসি এবং ১৯৭১ সালে ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তিনি ১৯৭৩ সালে বিএ এবং ১৯৭৫ সালে সাংবাদিকতায় এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৮৬ সালে ভারতের মহীশুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয় ও কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর পেশাগত প্রশিক্ষণ লাভ করেন। তিনি সাউদার্ন ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিজিটিং ফেলো হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ঢাবিতে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষকতা শুরু করেন ১৯৮০ সালে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আদেশক্রমে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হয় রাজধানীর সরকারি ৭টি কলেজ। কলেজগুলো হলো-ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ।

এই নিয়ে ঢাবি শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক ধরনের ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। কেন এই অন্তর্ভুক্তি, তাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাভই কতটুকু এবং এখন থেকে অধিভুক্ত কলেজগুলোর অবস্থান কি হবে, সেসব বিষয় নিয়ে অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক মুখোমুখি হয়েছিলেন দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকম এর। সম্প্রতি তার নিজবাসভবনে গিয়ে সাক্ষাতকারটি নিয়েছেন দ্য রিপোর্টের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি ওমর হায়দার।

দ্য রিপোর্ট : কোন সময় থেকে সরকারি সাতটি কলেজ আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হবে?

ঢাবি ভিসি : গত ১৬ ফেব্রুয়ারি তারিখে রাজধানীর সরকারী সাতটি কলেজ আনুষ্ঠানিকভাবে অধিভুক্ত হয়ে গেছে। এখন বাকি কার্যক্রম চলছে।

দ্য রিপোর্ট : নতুন করে রাজধানীর সরকারী সাতটি কলেজের এক লাখ ৬৭ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনে কি নতুন লোক নিয়োগ হবে?

ঢাবি ভিসি : আমাদের প্রশাসনের অনেক কার্যক্রম ডিজিটালাইজড হয়েছে। নতুন শিক্ষার্থীদের জন্য প্রশাসনিক দীর্ঘসূত্রিতা বাড়বে না। আমাদের যে লোক আছে তা দিয়ে কাজ শুরু হয়ে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাথে কথা বলে লোক নিয়োগ হবে। তবে এটা এখনই নয়, পর্যায়ক্রমে প্রয়োজন হলে করা হবে।

দ্য রিপোর্ট : ১৯৯২ সাল পর্যন্ত সরকারি কলেজগুলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ছিলো। ২৫ বছর পর কেনো আবার অধিভুক্ত করা হলো?

ঢাবি ভিসি : ১৯৯২ সালে খালেদা জিয়া দায়িত্ব গ্রহণকালে হঠাৎ একটা অদ্ভুত কাঠামো নিয়ে এলেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বলতে আসলে কী। যেটা টিচিং ইউনিভার্সিটি, সেটা হতে পারে জাতীয় ইউনিভার্সিটি। যেমন অস্ট্রেলিয়ায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, সিঙ্গাপুর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। কিন্তু এখানে খালেদা জিয়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে এসে শিক্ষাব্যবস্থাকে শেষ করে দিলেন। অতীতে জগন্নাথ কলেজ, ঢাকা কলেজ, বড় বড় কলেজগুলো, বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্ডারে স্বাধীনভাবে কাজ করেছে। ১৯৯২ সালে যখন খালেদা জিয়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় নামকরণ করেন, তখন আমরা সিনেট থেকে প্রতিবাদ করেছিলাম, আমরা বলেছিলাম, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় নামে যা করা হচ্ছে তা শিক্ষাব্যবস্থাকে দুর্বল করে দেবে। এবং আমরা ১৯৯২ থেকেই দেখছি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশনজট, ক্লাস নেই, শিক্ষক নেই, ল্যাব নেই ইত্যাদি সমস্যায় জর্জরিত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এসব সমস্যা দেখে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন যত সরকারি কলেজ আছে, সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করার জন্য। এবং সেই ধারাবাহিকতায় সাতটি কলেজকে অধিভুক্ত করা হয়েছে।

দ্য রিপোর্ট : জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় মান উন্নয়নে সেশনজট বন্ধে আরও কী নতুন উপায় আছে?

ঢাবি ভিসি : মান উন্নয়নের বিষয়টি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বা শিক্ষা মন্ত্রণালয় ভালো বলতে পারবে। আমি যেটা মনে করি, যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনার্স-মাস্টার্স চালু হলো, সেটা থাকবে টিচিং ইউনিভার্সিটির শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে। এতে যথাযথভাবে বিদ্যাতৈনিক পর্যবেক্ষণ বা একাডেমিক মনিটরিং হবে।

দ্য রিপোর্ট : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং অধিভুক্ত সাতটি কলেজের সার্টিফিকেটে কী ধরনের পার্থক্য থাকবে?

ঢাবি ভিসি : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যারা পাস করবে তাদের সার্টফিকেটে ডিপার্টমেন্ট, হল লেখা থাকবে। অধিভুক্ত কলেজগুলোর সার্টিফিকেটে তারা যে কলেজ থেকে পাশ করেছে সেই কলেজের নাম উল্লেখ থাকবে।

দ্য রিপোর্ট : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজগুলোর জন্য কী ধরনের কাজ করবে?

ঢাবি ভিসি : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজগুলোর একাডেমিক তত্ত্বাবধান, সিলেবাস প্রণয়ন, ভর্তি কার্যক্রম, ফলাফল ইত্যাদি পর্যবেক্ষণ করবে। অধিভুক্ত কলেজগুলোর পরীক্ষার খাতা দেখা হবে । তবে এ ধরনের কার্যক্রমগুলো শিক্ষকদের প্যানেল তৈরি করে করা হবে।

দ্য রিপোর্ট : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন অধিভুক্ত কলেজগুলোর অধিভুক্থিত প্রক্রিয়ার জন্য এ বছর নতুন কোনো বাজেট দেওয়া হবে কি না?

ঢাবি ভিসি : নতুন অধিভুক্ত কলেজগুলোর পরিচালনার জন্য বাজেট প্রয়োজন।যতটুকু আছে, কলেজগুলোর যে ভর্তি প্রক্রিয়া তার থেকে কিছু বাজেট আসবে। সরকারের পক্ষ থেকে কিছু বাজেট দেওয়া হবে। আসলে এটা বাজেটের বিষয় নয়। দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে উন্নতির দিকে নিয়ে নেওয়ার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নেতৃত্ব দিতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য না, বাংলাদেশের সার্বিক উচ্চশিক্ষাকে নেতৃত্ব দেওয়ার দায়িত্ব তাদের এবং সে কারণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঢাকা বিশ্ববিদালয়ের দায়িত্বে এই সাতটি কলেজ দিয়ে তিনি বলেছেন, অন্যান্য কলেজগুলো পর্যায়ক্রমে আসবে। যেখানকার যে কলেজ সেগুলো সেখানকার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হবে।

দ্য রিপোর্ট : তাদের ভর্তি কার্যক্রম কি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো হবে?

ঢাবি ভিসি : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান যে অধিভুক্ত কলেজ রয়েছে, তাদের ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। নতুন অধিভুক্তদের ভর্তি পরিক্ষার মাধ্যমে তাদের ভর্তি কার্যক্রম চলবে।

দ্য রিপোর্ট : অধিভুক্ত কলেজগুলোর বর্তমান যারা তৃতীয়-চতুর্থ বর্ষে অধ্যয়ন করছে তাদের কি সিলেবাস পরিবর্তন হবে? তাদের সার্টিফিকেট কি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দেবে?

ঢাবি ভিসি : এই বিষয়ে এখনো সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে এ ধরনের পরিস্থিতি আমরা ছাত্রদের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়েই দেখব।

দ্য রিপোর্ট : যদি তাদের সিলেবাস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আদলে করা হয় সে ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের পড়ানোর ক্ষেত্রে সাময়িক কোনো সমস্যা হবে কিনা?

ঢাবি ভিসি : শিক্ষার্থীদের পড়ানোর ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হবে না। আমরা শুধু সরকারি কলেজগুলো নিয়েছি, সেখানকার কলেজের শিক্ষকরা সবাই বিসিএস কর্মকর্তা। তারা মেধার ভিত্তিতে বিসিএস দিয়ে শিক্ষক হয়েছে। এত দিন তারা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাস অনুসরণ করেছে, এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাসের সাথে সঙ্গতি রেখে অধিভুক্ত কলেজের সিলেবাস প্রণয়ন করা হবে। তারা সেই সিলেবাস অনুসরণ করবেন।

দ্য রিপোর্ট : অধিভুক্ত কলেজগুলোর ভর্তি ফি, কলেজ ফি কি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো হবে?

ঢাবি ভিসি : সেগুলো এখন বলা যাবে না। যখন কার্যক্রম শুরু হবে তখন বলা যাবে।

দ্য রিপোর্ট : অধিভুক্ত কলেজগুলোর এত শিক্ষার্থীকে অন্তর্ভুক্ত করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কীভাবে উপকৃত হবে?

ঢাবি ভিসি : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সব সময় দেশের স্বার্থে, দশের স্বার্থে, কাজ করে। যেমন-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জুওলজি ডিপার্টমেন্টে ৩০ জন পিএইচডিধারী শিক্ষক রয়েছেন। এমন অনেক কলেজ আছে, যেখানে জুওলজিতে শিক্ষক আছেন ২ জন। তাদের মধ্যে কারোই পিএইচডি নেই। সেখান থেকে অনার্স মাস্টার্স করে বের হচ্ছে। এই যে বড় ধরনের বৈষম্য থেকে যাচ্ছে, কিছুটা হলেও এ ধরনের বৈষম্য কমাতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে পিএইচডি ডিগ্রিধারী শিক্ষকরা আছেন, তারা তাদের কিছুটা সময় দেবেন অধিভুক্ত কলেজগুলোর অনার্সের সিলেবাস প্রণয়নে।

দ্য রিপোর্ট : অধিভুক্ত হওয়ার মাধ্যমে সরকারি কলেজগুলোর সেশনজট কমবে কি না?

ঢাবি ভিসি : অবশ্যই অধিভুক্ত কলেজগুলোর সেশনজট কমবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশনজট ছিল; আমরা সেটা কমিয়ে নিয়ে এসেছি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজগুলোর কীভাবে সেশনজট কমানো যায়, তা নিয়ে কাজ করব।

দ্য রিপোর্ট : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শুধু অধিভুক্ত কলেজগুলোর একাডেমিক তত্ত্বাবধান করবে। কিন্তু বর্তমান জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের যে শিক্ষক সংকট, ল্যাব সংকট, শিক্ষার্থীরা ক্লাসে অনুপস্থিত থাকা, আবাসন সংকট, ক্লাস সংকটের সমস্যা রয়েছে। এ সকল সমস্যার সমাধানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কী ভূমিকা রাখবে?

ঢাবি ভিসি : অবশ্যই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজগুলোর মান উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোর মান উন্নয়নে যা যা করার প্রয়োজন সব করা হবে।

(দ্য রিপোর্ট/এস/জেডটি/এনআই/ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর