thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ২৯ মার্চ 24, ১৫ চৈত্র ১৪৩০,  ১৯ রমজান 1445

দীর্ঘসূত্রিতায় কমে যাচ্ছে ‘রোড শো’র কার্যকারিতা

২০১৭ মার্চ ০১ ২২:২২:২৩
দীর্ঘসূত্রিতায় কমে যাচ্ছে ‘রোড শো’র কার্যকারিতা

শেয়ার দর নির্ধারণে সহযোগিতার জন্য ‘রোড শো’ আয়োজন করা হলেও নিলামের (বিডিং) অনুমোদন পেতে অপেক্ষা করতে হয় প্রায় আরও ১ বছর। এই সময়ের ব্যবধানে ‘রোড শো’ আয়োজন করা কোম্পানি সম্পর্কে মনে রাখা যেমন কঠিন, ঠিক একইভাবে প্রতিষ্ঠানেও আসতে পারে বড় পরিবর্তন। ফলে ‘রোড শো’তে প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে যে ধারণা পাওয়া যায়, তা পাল্টে যেতে পারে। এমন অবস্থায় ‘রোড শো’ আয়োজনের কার্যকারিতা নিয়ে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে শেয়ারবাজার থেকে টাকা সংগ্রহের জন্য কোম্পানিগুলোর ‘রোড শো’ আয়োজন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। যাতে টাকা সংগ্রহ করতে ইচ্ছুক প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে যাবতীয় বিষয়ে যোগ্য বিনিয়োগকারীরা অবহিত হতে পারেন এবং নিলামে (বিডিং) শেয়ার দর নির্ধারণে যোগ্য বিনিয়োগকারীদের জন্য তা সহায়ক হবে।

প্রিমিয়ামসহ শেয়ারবাজারে আসতে চাইলে ‘পাবলিক ইস্যু রুলস-২০১৫’তে বুক বিল্ডিং পদ্ধতিকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর এই পাবলিক ইস্যু রুলস জারি করা হয়েছে। এরই আলোকে বেশ কিছু কোম্পানি ‘রোড শো’ সম্পন্ন করেছে। তবে এ পর্যন্ত শুধুমাত্র একটি কোম্পানি বিডিংয়ের অনুমোদন পেয়েছে। এক্ষেত্রে অপেক্ষা করতে হয়েছে প্রায় ১০ মাস।

‘রোড শো’ সম্পন্ন করা কোম্পানিগুলোর মধ্যে ২০১৬ সালের ৪ এপ্রিল অ্যাপোলো হাসপাতাল ‘রোড শো’ সম্পন্ন করেছে। এ ছাড়া একই বছরের ১২ এপ্রিল আমরা নেটওয়ার্ক, ৩০ জুন বসুন্ধরা পেপার মিলস, ৯ অক্টোবর বেঙ্গলপলি অ্যান্ড পেপার স্যাক লিমিটেড, ১৯ অক্টোবর রানার অটোমোবাইলস, ২৪ অক্টোবর পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালস ও ১৮ অক্টোবর ইনডেক্স অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ ‘রোড শো’ সম্পন্ন করেছে।

ব্যবসা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে অ্যাপোলো হাসপাতাল শেয়ারবাজার থেকে ৭৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করতে চায়। এক্ষেত্রে ২০১৬ সালের ৪ এপ্রিল ‘রোড শো’ আয়োজন করে তারা। যেখানে ২০১৫ সালের ব্যবসায়িক চিত্র তুলে ধরা হয়। ‘রোড শো’ করার ১১ মাস অতিবাহিত হতে চললেও বিডিংয়ের অনুমোদন পায়নি অ্যাপোলো হাসপাতাল। তবে এরই মধ্যে আরেকটি ব্যবসায়িক বছর পার হয়ে গেছে।

বসুন্ধরা পেপার মিলস ২০০ কোটি টাকা উত্তোলনের লক্ষ্যে ‘রোড শো’ করেছে। কারখানার আধুনিকায়ন ও মেশিনারি আমদানি করার জন্য এ টাকা সংগ্রহ করতে চায় প্রতিষ্ঠানটি। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের ‘রোড শো’তে ২০১৬ সালের (জানুয়ারি-মার্চ) ব্যবসায়িক অবস্থা তুলে ধরা হয়।

এদিকে আমরা নেটওয়ার্ক ২০১৬ সালের ১২ এপ্রিল ‘রোড শো’ সম্পন্ন করে। এতে ঋণ পরিশোধ, আধুনিকায়ন এবং ব্যবসা সম্প্রসারণে পুঁজিবাজার থেকে ৫৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা সংগ্রহ করার কথা জানানো হয়। যেখানে ২০১৫ সালের ব্যবসায়িক চিত্র তুলে ধরা হয়। আর প্রতিষ্ঠানটি বিডিংয়ের অনুমোদন পায় ওই বছর ২১ ডিসেম্বর এবং চলে চলতি বছরের ৫-৮ ফেব্রুয়ারি। এখনো আইপিও অনুমোদন ও তালিকাভুক্তি বাকি রয়েছে। এ ছাড়া ইতোমধ্যে আরেকটি ব্যবসায়িক বছর পার হয়ে গেছে।

এএফসি ক্যাপিটালের সিইও মাহবুব এইচ মজুমদার দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, “একটি কোম্পানির ‘রোড শো’ করার পরেও এক বছরের বেশি সময় লেগে যায় বিডিংয়ের অনুমোদন পেতে। এতে ‘রোড শো’তে অংশগ্রহণ করা যোগ্য প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের পক্ষে ওই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে মনে রাখা কঠিন। একইভাবে এই এক বছরের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির অনেক পরিবর্তন আসতে পারে। তাই বিএসইসি’র উচিত হবে ‘রোড শো’ সম্পন্ন করার ২-৩ মাসের মধ্যে বিডিং করার অনুমোদন দেওয়া।’

বিডিংসহ ফিক্সড পদ্ধতিতে আইপিও অনুমোদন পেতে দীর্ঘ সময় লাগার কারণে উদ্যোক্তাদের মনোবল ভেঙ্গে যায় বলেও অভিমত ব্যক্ত করেন মাহবুব এইচ মজুমদার।

আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান বলেছেন, ‘রোড শো করার পরে বিডিং পেতে দীর্ঘ সময় লাগলে, স্বাভাবিকভাবেই তার প্রভাবটা কমে যায়। এক্ষেত্রে যত কম সময়ের মধ্যে বিডিং অনুমোদন বা বিডিং অনুমোদনের পরে রোড শো করলে ভালো হয়। এতে ভালো কোম্পানিগুলো শেয়ারবাজারে আসতে উৎসাহিত হবে। এ ছাড়া বিডিং অনুমোদনের পরে দ্রুত ট্রেডিং চালু করলে ভালো হয়। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও বিডিং অনুমোদনের কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই ট্রেড শুরু হয়ে যায়। ফরেন ইনভেস্টররা সব সময় বিডিং ও ট্রেডিংয়ে সময়ের কম ব্যবধান চান।’

এদিকে রোড শো করার পরে বিডিং অনুমোদনে দীর্ঘ সময়ের ক্ষেত্রে কোম্পানির উদ্দেশ্য অনেক সময় ব্যাহত হয় বলে জানিয়েছেন মনিরুজ্জামান। তার মতে, একটি কোম্পানির টাকার দরকার এখন, কিন্তু শেয়ারবাজার থেকে যদি এক বছর পরে পায় তাহলে তা কাজে লাগানো কঠিন। এ ছাড়া আগে আইপিও প্রক্রিয়া শুরু করে কোম্পানিগুলো ঋণ নিয়ে কাজ সম্পন্ন করতো। যা আইপিওর টাকা দিয়ে পরিশোধ করা হতো। কিন্তু এখন আইপিওর টাকায় ঋণ পরিশোধে সীমাবদ্ধতা থাকায় তাও সম্ভব হচ্ছে না।

আমরা নেটওয়ার্কের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) মো. এনামুল হক বলেছেন, ‘রোড শো করার পরে বিডিং অনুমোদন ও তা সম্পন্ন করতেই ১০ মাস সময় লেগে গেছে। এটা দীর্ঘ সময়। এই সময়ের মধ্যে একটি কোম্পানির অনেক পরিবর্তন হতে পারে। কোম্পানির মোটিভও পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে।’

বিডিং হলেও এখনো আইপিও অনুমোদন বাকি রয়েছে বলে জানিয়েছেন এনামুল হক। তিনি বলেছেন, ‘এই অনুমোদন কবে হবে এর নিশ্চয়তা নাই। এরপরে আবার তালিকাভুক্তি হতে লাগে প্রায় আড়াই মাস। এরপরে গিয়ে শেয়ারবাজার থেকে টাকা নিয়ে ব্যবহার করা যাবে। এ হিসাবে শেয়ারবাজার থেকে টাকা সংগ্রহ করা একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া। কিন্তু একটি প্রজেক্ট নিয়ে শেয়ারবাজার থেকে টাকা সংগ্রহ করতে চাচ্ছি। তবে দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়ার কারণে প্রজেক্টে বিলম্ব হচ্ছে। এক্ষেত্রে আইপিও প্রক্রিয়াটি দ্রুত হলে ভালো হয়।’

এ বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সাইফুর রহমান বলেছেন, ‘রোড শোর কত পরে বিডিং অনুমোদন হয়েছে সেটা বিষয় না। একটি কোম্পানি অনুমোদন পাওয়ার মতো সব শর্ত পূরণ করেছে কিনা সেটি গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে কোম্পানিগুলো যত দ্রুত শর্ত পরিপালন করবে, তত দ্রুত বিডিংয়ের অনুমোদন পাবে। ফলে রোড শো ও বিডিংয়ের মাঝে সময় লাগাকে কোনো সমস্যা বলে মনে হচ্ছে না।’

(দ্য রিপোর্ট/আরএ/জেডটি/এনআই/মার্চ ০১, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর