thereport24.com
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ 24, ১৪ চৈত্র ১৪৩০,  ১৮ রমজান 1445

হলি আর্টিজানে হামলা

২৫ জনের সম্পৃক্ততা, এখনও পলাতক দায়িত্বপ্রাপ্ত ৭ ‘জঙ্গি’

২০১৭ মার্চ ০৩ ২২:১৯:৫১
২৫ জনের সম্পৃক্ততা, এখনও পলাতক দায়িত্বপ্রাপ্ত ৭ ‘জঙ্গি’

গত বছর (২০১৬ সাল) ১ জুলাই হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে জঙ্গি হামলার ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২৫ জনের সম্পৃক্ততার বিষয়ে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে। এদের মধ্যে দায়িত্বপ্রাপ্ত ৭ জন ‘জঙ্গি’ এখনও পলাতক রয়েছে। এরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এ হামলার সঙ্গে জড়িত। তাদের খুঁজছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।

কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটি) ইউনিট সূত্রে জানা যায়, হলি আর্টিজানে হামলার সঙ্গে চিহ্নিত জড়িতরা হলেন— নিহত নব্য জেএমবির সমন্বয়ক তামিম চৌধুরী, অর্থদাতা সারোয়ার জাহান, তানভীর কাদেরী, নুরুল ইসলাম মারজান, জাহিদুল ইসলাম, তারেক, রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, নিবরাস ইসলাম, মীর সাবিহ মোবাশ্বের, শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল, খায়রুল ইসলাম পায়েল, আবদুল্লাহ ও ফরিদুল ইসলাম আকাশ, গ্রেফতার রাজিব গান্ধি, রিগ্যান, বড় মিজান ও আবুল কাশেম, পলাতক সোহেল মাহফুজ, রাশেদ ওরফে র‌্যাশ, চকলেট, ছোট মিজান, মামুন, মুসা ও একজন চিকিৎসক। এ ছাড়াও ওই হামলার পরদিন (২ জুলাই) বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কমান্ডো অভিযানের আগে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে আসা নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক হাসনাত করিমকে প্রথমে আটক করা হয় এবং পরে এ মামলায় তাকে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো হয়।

এদের মধ্যে হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে জঙ্গি হামলার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছর ২ জুলাই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো পরিচালিত ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’ এ নিহত হয় রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, নিবরাস ইসলাম, মীর সাবিহ মোবাশ্বের, শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল ও খায়রুল ইসলাম পায়েল। গত বছরের ২৭ আগস্ট নারায়ণগঞ্জ শহরের পাইকপাড়ায় সোয়াট ও সিটি ইউনিটের এক অভিযানে গুলশানে জঙ্গি হামলার সমন্বয়কারী ও অন্যতম ‘পরিকল্পনাকারী’ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডিয়ান নাগরিক তামিম চৌধুরী নিহত হন। একই বছর ২ সেপ্টেম্বর রাজধানীর রূপনগরের একটি বাড়িতে পুলিশের অভিযানে নিহত হয় জঙ্গি নেতা ও সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর জাহিদুল ইসলাম ওরফে মুরাদ। গুলশান ও শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলায় অংশগ্রহণকারীদের তিনি গাইবান্ধার চরাঞ্চলে প্রশিক্ষণ দিতেন। নারায়ণগঞ্জে তামিম চৌধুরী নিহত হওয়ার পর নব্য জেএমবিতে তার স্থলাভিষিক্ত হওয়ার কথা ছিল জাহিদুল ইসলামের। ওই বছর ১০ সেপ্টেম্বর রাজধানীর আজিমপুরের একটি বাড়িতে সিটি ইউনিটের অভিযানে নব্য জেএমবির অন্যতম শীর্ষ নেতা ও আশ্রয়দাতা তানভীর কাদেরী নিজেই গলায় ছুরি চালিয়ে আত্মহত্যা করেন।

হলি আর্টিজানে হামলায় অংশগ্রহণকারী জঙ্গিদের গাইবান্ধার সাদুল্যাপুরের দুর্গম চরাঞ্চলে প্রশিক্ষণ ও মগজধোলাইয়ের দায়িত্ব পালন করেন রায়হান কবির ওরফে তারেক ও আবদুল্লাহ ওরফে ইকবাল। ২৬ জুলাই রাজধানীর কল্যাণপুরের একটি ভবনে অপারেশন স্টর্ম-২৬ এ নিহত হয় রায়হান কবির ওরফে তারেক ও আবদুল্লাহ ওরফে ইকবাল। একই বছর ৮ অক্টোবর গাজীপুরের জয়দেবপুরে জঙ্গি আস্তানায় ‘অপারেশন স্পেট ৮’ এ জেএমবির ঢাকা বিভাগের অপারেশন কমান্ডার ফরিদুল ইসলাম ওরফে আকাশ ওরফে প্রভা ওরফে সানোয়ার ওরফে জয়নাল আবেদীন আকাশ ওরফে কমান্ডার আকাশ নিহত হন। একই দিন আশুলিয়ায় র‌্যাবের জঙ্গিবিরোধী অভিযানের সময় পালাতে গিয়ে নিহত হন জঙ্গিদের অর্থদাতা সারোয়ার জাহান ওরফে আব্দুর রহমান ওরফে নয়ন ওরফে মোক্তার ওরফে প্রকাশ ওরফে বাবু। গুলশান হামলার ‘অন্যতম হোতা’ নব্য জেএমবির নেতা নুরুল ইসলাম ওরফে মারজান ২০১৭ সালের ৬ জানুয়ারি রাজধানীর মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকায় সিটি ইউনিটের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন।

একই বছর ২৬ জুলাই রাজধানীর কল্যাণপুরের একটি ভবনে অভিযানের সময় সিটি ইউনিটের কাছে গ্রেফতার হয় রাকিবুল হাসান রিগ্যান। সে ওই হামলার ঘটনায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছে সে। ২০১৭ সালের ১৩ জানুয়ারি হলি আর্টিজান হামলার অন্যতম মাস্টারমাইন্ড নব্য জেএমবির নেতা জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজিব ওরফে জাহিদ ওরফে শান্ত ওরফে গান্ধিকে গ্রেফতার করে সিটি ইউনিট। ২৮ ফেব্রুয়ারি বনানীর কাকলী ক্রসিংয়ের কাছাকাছি একটি বাসা থেকে নব্য জেএমবির প্রধান অস্ত্র ও বিস্ফোরক সরবরাহকারী অভিযুক্ত মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজানকে (৬০) গ্রেফতার করে সিটি ইউনিট। হলি আর্টিজান হামলায় ব্যবহৃত গ্রেনেড ও পিস্তলগুলো বড় মিজানের সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ঢাকায় নিয়ে আসা হয় এবং বসুন্ধরার তানভির কাদেরীর বাসায় তামিম চৌধুরীর কাছে পৌঁছানো হয়। বড় মিজান নব্য জেএমবির চাঁপাইনবাবগঞ্জের সীমান্তবর্তী শিবগঞ্জ এলাকার প্রধান দায়িত্বশীল।

সর্বশেষ শুক্রবার (২ মার্চ) নব্য জেএমবির ‘আধ্যাত্মিক নেতা’ মাওলানা আবুল কাশেম ওরফে বড় হুজুরকে গ্রেফতার করে সিটি ইউনিট। তার সঙ্গে ২০১৫ সালে নব্য জেএমবির সমন্বয়ক তামিম চৌধুরীর বৈঠক হয়। এর আগে ২০১৪ সালে কতিপয় বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থা তার সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য দেয়। নব্য জেএমবির প্রধান তামিম চৌধুরী, মারজান, হাতকাটা মাহফুজ, রাজীব গান্ধী ওরফে জাহাঙ্গীরসহ জেএমবির অনেক বড় নেতা এই বড় হুজুরের অনুরক্ত ছিল। ইতোপূর্বে গ্রেফতার হওয়া অনেক সদস্যের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দীর্ঘদিন ধরে তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছিল। মনগড়া ধর্মীয় মতবাদ দিয়ে নিষিদ্ধ সংগঠন নব্য জেএমবিকে আরও হিংস্র করে তুলেছিলেন তিনি। জেএমবির গ্রেফতার হওয়া বেশ কয়েকজন নেতা পুলিশকে জানিয়েছিলেন সংগঠনের দু’একজন ছাড়া কেউ বড় হুজুরকে দেখেননি। তবে তার নির্দেশেই সকল কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়। আবুল কাশেমের গ্রামের বাড়ি কুড়িগ্রামে। তিনি দিনাজপুরের রানীর বন্দর এলাকার একটি মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল ছিলেন। নব্য জেএমবির উত্তরাঞ্চলের সামরিক কমান্ডার রাজিব গান্ধী গ্রেফতারের পর তার কাছ থেকে বড় হুজুর সম্পর্কে তথ্য পায় পুলিশ। পরে দিনাজপুরের ওই মাদ্রাসায় অভিযান চালানো হয়। কিন্তু দেড় বছর আগেই ওই মাদ্রাসা থেকে পালিয়ে যাওয়ায় সেখান থেকে তাকে গ্রেফতারে ব্যর্থ হয় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গত বুধবার বনানী থেকে জঙ্গি নেতা বড় মিজান গ্রেফতার হওয়ার পর কাশেমের সন্ধান পাওয়া যায়। বৃহস্পতিবার রাতে মিরপুরের পর্বতা এলাকার একটি দোকানের বিকাশ নম্বরে এক ভক্তের পাঠানো ১৫ হাজার টাকা নিতে এসে তিনি গ্রেফতার হন।

সিটি সূত্রে জানা গেছে, এ ছাড়াও হলি আর্টিজানে হামলার ঘটনায় জড়িত, এমন আরও ৭ জন পলাতক রয়েছেন। এরা হলেন— সোহেল মাহফুজ, রাশেদ ওরফে র‌্যাশ, চকলেট, ছোট মিজান, মামুন, মুসা ও একজন চিকিৎসক।

গুলশান হামলার আরও আগে থেকেই জঙ্গি হিসেবে চিহ্নিত ছিল সোহেল মাহফুজ ওরফে হাতকাটা সোহেল ওরফে নাসিরুদ্দিন ওরফে ভাগিনা সোহেল। সে জেএমবির পুরনো ধারার একজন শীর্ষ সদস্য। সে গুলশান হামলায় ব্যবহৃত গ্রেনেড সরবরাহ করেছে। ‘নিও জেএমবি’ নামে জঙ্গিদের যে নতুন তৎপরতা শুরু হয়েছে, এই তৎপরতার সঙ্গে তার সম্পৃক্ততার প্রমাণ রয়েছে। জেএমবির প্রতিষ্ঠাকালীন শুরা সদস্য হিসেবে নাম ছিল সোহেল মাহফুজের। ২০১০ সালে নিষিদ্ধ সংগঠনটির আমীর সাইদুর রহমান গ্রেফতার হওয়ার পর সে নিজেকে আমীর হিসেবে ঘোষণা করে। কিন্তু কারাগারে থেকেও সাইদুর আমিরের পদ ছাড়তে না চাওয়ায় তাদের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। পলাতক সোহেল পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানে আত্মগোপনে থেকেও জেএমবির নতুন একটি গ্রুপ তৈরি করে। সে দেশে আছে কিনা তা খতিয়ে দেখছেন গোয়েন্দারা। সোহেল মাহফুজ গুলশান হামলার আরেক মাস্টারমাইন্ড নুরুল ইসলাম মারজানের ঘনিষ্ঠ। নিহত তামিম চৌধুরী গ্রেনেড ও অস্ত্র সংক্রান্ত বিষয়ে সোহেল মাহফুজের সঙ্গে যোগাযোগ করে। বোমা তৈরি করতে গিয়ে সোহেলের বাম হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সে এক হাত দিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র চালাতে পারে। জেএমবির এ নেতার গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ায়।

গুলশানের ঘটনার তদন্তে রাশেদ ওরফে র‌্যাশ নামের এক জঙ্গির তথ্য পাওয়া গেছে। আজিমপুরে অভিযানে নিহত তানভীর কাদেরীর ছেলে তাহরীম কাদেরী ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে এ নামটি জানায়। তাহরীমদের বাসায় যাতায়াত ছিল রাশেদ ওরফে র‌্যাশের। উত্তরার বাসায় জাহিদের সঙ্গে রাশেদ আসত। আশকোনা অভিযানের পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কপালে নতুন করে ভাঁজ সৃষ্টি করে সুইসাইডাল স্কোয়াড প্রধান মইনুল ইসলাম ওরফে আবু মুসা। গত ২৩ ডিসেম্বর আশকোনায় মুসার আস্তানায় অভিযান চালানো হলে তার স্ত্রী তৃষামনি ওরফে উম্মে আয়েশা পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করে। সে পুলিশকে জানিয়েছে, সুসাইডাল স্কোয়াডের পুরো তত্ত্বাবধানকারী হলো মুসা। অস্ত্র চালনা এবং বোমা তৈরিতে সিদ্ধহস্ত এই ভয়ঙ্কর মুসা সংগঠিত করছে নব্য জেএমবির অন্য সদস্যদের। রাজধানীতেই ছিল তার বেশকয়েকটি আস্তানা। এ সব আস্তানা কোন কোন এলাকায় তা নিশ্চিত হলেও সেখানে তাদের খুঁজে পাওয়া যায়নি। পলাতক মুসাই এখন নব্য জেএমবিকে সক্রিয় রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মারজান জীবিত থাকার সময়ে তার নির্দেশেই দায়িত্ব পালন করত কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার বাসারুজ্জামান ওরফে আবুল বাশার ওরফে রাহুল ওরফে চকলেট। সংগঠনে নানা যোগাযোগ তদারকের পাশাপাশি গুলশান হামলার আগে নব্য জেএমবির কাছে বিদেশ থেকে আসা টাকা গ্রহণ ও বণ্টন করেছিল সে। অস্ত্র সংগ্রহেও ছিল তার ভূমিকা। গোয়েন্দারা ধারণা করছেন, মারজান নিহত হওয়ায় চকলেটকে এসব দায়িত্ব এখন একাই পালন করতে হবে। স্ত্রী ফেরদৌসী আফরিনকে নিয়ে বাসারুজ্জামান আমেরিকায় রয়েছে বলে স্বজনরা জানালেও গত সেপ্টেম্বরে আজিমপুরের আস্তানা থেকে তার স্ত্রীকে গ্রেফতারের পরই বেরিয়ে আসে আসল ব্যাপার।

জানা যায়, ওই দম্পতি দেশে থেকেই জঙ্গি কার্যক্রম চালাচ্ছে। নতুন জঙ্গিদের মগজ ধোলাইয়ের কাজ করছে। গোয়েন্দারা নিশ্চিত সংগঠনের আইটি-বিষয়ক কাজগুলোও তদারক করে চকলেট। গুলশান হামলায় জঙ্গিদের জন্য হুন্ডির মাধ্যমে আসা ১৪ লাখ টাকার একটি চালান চকলেটের কাছে আসে।

জবানবন্দিতে তানভীর কাদেরীর ছেলে তাহরীম জানায়, পল্লবীর বাসায় থাকা অবস্থায় চকলেট, মুসা আর র‌্যাশ আসত। র‌্যাশ ওই বাসায় চকলেট ও কল্যাণপুরে নিহত আকিফুজ্জামানের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। মুসা আংকেলের বয়স ৩৮ বছরের মতো। মুখে দাড়ি, স্বাস্থ্য মাঝারি, দেখতে শ্যামলা। সে শার্ট-প্যান্ট পরে। মুসা আংকেল কখনো একা আসত আবার কখনো চকলেট ও র‌্যাশ সঙ্গে থাকত। জিহাদ ইমান নিয়ে কথা বলত। সিরিয়ায় যুদ্ধের ভিডিও দিত। আমরা তা দেখতাম। দাবিক ম্যাগাজিন পড়তে দিত। এই ম্যাগাজিন কয়েকটা বাংলায় ছিল। চকলেট ও র‌্যাশের কথামতো গত রমজান মাসে তার বাবা বারিধারায় একটি বাসা নেন।

মিজানুর ওরফে ছোট মিজান ওরফে তারা গুলশান হামলাসহ নব্য জেএমবির দেশব্যাপী হামলায় ব্যবহৃত অস্ত্র ও গ্রেনেডের যোগানদাতা। তিনি নব্য জেএমবির মধ্যম সারির নেতা। বড় মিজান ও ছোট মিজানের নির্দেশে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সীমান্ত এলাকা থেকে বিপুল পরিমাণ ডেটোনেটর ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। ভারতে অবস্থানকারী জঙ্গিদের মাধ্যমে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও জয়পুরহাটের সীমান্ত এলাকা দিয়ে এসব বিস্ফোরক দেশে নিয়ে আসত ছোট মিজান, বড় মিজান ও সোহেল মাহফুজ। ছোট মিজান ও বড় মিজানের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ। এ কারণে খুব সহজেই আন্তঃদেশীয় অপরাধী ও অস্ত্র ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে। এই সুবিধা কাজে লাগিয়ে তারা নিউ জেএমবির অস্ত্র ও বিস্ফোরক সংগ্রহ করছে। ভারতে তাদের কাজে সহায়তা করে পালিয়ে থাকা জঙ্গিরা। এই তিন জঙ্গি নিজেরাও অবৈধভাবে ভারতে যাওয়া-আসা করে।

গুলশান হামলার তদন্তে বেরিয়ে এসেছে মামুনুর রশিদ রিপন ওরফে মামুনের নাম। দুর্ধর্ষ এই জঙ্গি ভারতে পালিয়ে গেছে বলে তথ্য পেয়েছেন গোয়েন্দারা। গত বছরও রাজশাহীর বাসিন্দা ও উত্তরাঞ্চলের কমান্ডার হিসেবে কাজ করা মামুন কয়েকটি ছদ্মনাম নিয়ে পালিয়ে ছিল। জেএমবির দণ্ডিত কয়েকজন নেতা তার আত্মীয়। গুলশান হামলাসহ বেশ কয়েকটি ঘটনায় তার পরোক্ষ সম্পৃক্ততার তথ্য মিলেছে। মিরপুরের কল্যাণপুরে জঙ্গি আস্তানায় পুলিশের অভিযানের সময় পালিয়ে যাওয়া জঙ্গিদের মধ্যে মামুনের নামও পাওয়া যায়।

হলি আর্টিজানসহ নব্য জেএমবি’র কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য কয়েক কোটি টাকার তহবিল গড়েছিলেন পুরো পরিবার নিয়ে সিরিয়ায় পলাতক ডা. খন্দকার রোকনউদ্দিন নামে একজন চিকিৎসক। এ তহবিল গড়তে তার সঙ্গে ছিল মিরপুরের রূপনগরে নিহত জাহিদুল ইসলাম ও আজিমপুরে নিহত তানভীর কাদেরী। সপরিবারে সিরিয়ায় পালানোর আগে রোকনুজ্জামান নব্য জেএমবি’র তহবিলে জমা দেন ৮০ লাখ টাকা। তাদের এ তহবিল গুলশান হামলায়ও ব্যবহার করা হয়, কেনা হয় অস্ত্র-গোলাবারুদ। ঢাকা শিশু হাসপাতালের চিকিৎসক রোকনুদ্দীন (৫০) খিলগাঁও চৌধুরী পাড়ায় থাকতেন। তার স্ত্রী নাইমা আক্তার (৪৫) যশোর সরকারী এম এম কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ছিলেন এবং কবি নজরুল কলেজের অধ্যাপক। তাদের সঙ্গে তাদের দুই মেয়ে রেজওয়ানা রোকন (২৩) ও রামিতা রোকন (১৫) এবং জামাতা সাদ কায়েস (২৬)। রেজওয়ানা ও সাদ একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং রামিতা ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী। গত এক বছর ধরে তারা নিখোঁজ। পুলিশের ধারণা, তারা সিরিয়া হয়ে আইএস নিয়ন্ত্রিত এলাকায় পাড়ি জমিয়েছেন। ডা. রোকনউদ্দিন গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলা বাস্তবায়নে জেএমবির তহবিলে ৮০ লাখ টাকা দিয়েছেন বলে প্রাথমিক তদন্তে এ তথ্য পেয়েছে পুলিশ। জেএমবির তহবিলে টাকা দিয়ে ডা. রোকনউদ্দিন দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। গত ১৮ জুলাই রাজধানীর খিলগাঁওয়ের চৌধুরীপাড়ার বাসিন্দা ঢাকা শিশু হাসপাতালের চিকিৎসক রোকনউদ্দিন তার পরিবারসহ নিখোঁজ হন।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার ও কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্র্যান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটি) ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম শুক্রবার বলেছেন, ‘চলতি বছরের শেষ দিকে হলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় করা মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হতে পারে। এ ঘটনায় প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকজনের সম্পৃক্ততার বিষয়ে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকজন পুলিশের অভিযানে নিহত হয়েছে। অনেকে গ্রেফতার হয়েছে। বাকিরা পলাতক রয়েছে। তবে এর বাইরেও আরও কেউ কেউ থাকতে পারে। আমরা তদন্ত করছি, আরও নতুন তথ্য পাচ্ছি। তবে হামলার ঘটনার দিন হামলাকারী ওই ৫ জনই ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল।’

গত বছরের ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলা চালানো হয়। পুলিশ জানায় এ ঘটনার সঙ্গে নব্য জেএমবি সম্পৃক্ত। এ ঘটনায় হামলাকারীদের হাতে ১৭ জন বিদেশি, একজন আমেরিকান বাংলাদেশি, দুজন বাংলাদেশি ও দুজন পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হন। অন্যদিকে, কমান্ডো অভিযানে হামলাকারী ৫ জঙ্গিসহ ৬ জন নিহত হয়। এ ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে গুলশান থানায় মামলা দায়ের করা হয়। মামলাটি বর্তমানে সিটি ইউনিট তদন্ত করছে।

(দ্য রিপোর্ট/এমএসআর/জেডটি/এনআই/মার্চ ০৩, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর