thereport24.com
ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল 24, ১০ বৈশাখ ১৪৩১,  ১৪ শাওয়াল 1445

থাকছে ভুল তথ্য

বিনিয়োগকারী বোঝে না বিএসইসির পাঁচ বছরের ইপিএস

২০১৭ মার্চ ০৭ ২১:৫৩:২৪
বিনিয়োগকারী বোঝে না বিএসইসির পাঁচ বছরের ইপিএস

পাচ বছরের ওয়েটেড এভারেজ নামে নতুন এক ধরনের শেয়ারপ্রতি মুনাফা বা ইপিএস প্রকাশ করছে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই ইপিএস প্রকাশ করা হচ্ছে। তবে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা এ ধরনের ইপিএসের হিসাব বুঝতে পারছেন না। অনেকে এটাকে উদ্ভট বলে মন্তব্য করেছেন। কেননা আন্তর্জাতিক হিসাব মান (আইএএস) ও বাংলাদেশ হিসাব মানে (বিএএস) ৫ বছরের ওয়েটেড এভারেজ বলে কোন ইপিএস নাই।

নিয়মিত কমিশন সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত নিয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে থাকে বিএসইসি। প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) ও রাইট শেয়ার অনুমোদনের ক্ষেত্রে ৫ বছরের ওয়েটেড এভারেজ হিসাব করে ইপিএসের তথ্য প্রকাশ করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশ কিংবা আন্তর্জাতিক কোনো হিসাবমানেই এ জাতীয় ইপিএস নেই। এ ছাড়া কোন ৫ বছরের ইপিএস, তা উল্লেখ করা হয় না। আবার একেক কোম্পানির ক্ষেত্রে একেক ধরনের ইপিএস প্রকাশ করে। একইসঙ্গে অসম্পূর্ণ তথ্য প্রকাশের ঘটনাও ঘটে থাকে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি ইস্যু ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা দ্য রিপোর্টকে বলেন, বিএসইসি পাচ বছরের ওয়েটেড এভারেজ নামে নতুন এক ধরনের শেয়ারপ্রতি মুনাফা বা ইপিএস প্রকাশ করছে। এ জাতীয় ইপিএস ও ভুল তথ্য প্রকাশে আমরা হতাশ। আমাদের ২৫০-৩০০ পৃষ্টার প্রসপেক্টাসে কোন ভুল হলে, কৈফিয়ত দিতে দিতে শেষ হয়ে যাই। কিন্তু সেই প্রসপেক্টাস থেকে নিয়ে বিএসইসি একটি তথ্য সঠিকভাবে প্রকাশ করতে পারে না। এরপরেও নিয়ন্ত্রক সংস্থা হওয়ায় চুপচাপ থাকি।


দ্য ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্টেন্টস অব বাংলাদেশের (আইসিএমএবি) সাবেক সভাপতি এ এস এম শায়খুল ইসলাম দ্য রিপোর্টকে বলেন,‘ বিএসইসি যখন হিসাব মানের বাহিরে গিয়ে নিজে একটা ইপিএস আবিস্কার করছে, তখন সাধারন বিনিয়োগকারীদের কথা মাথায় রাখতে হবে। এছাড়া এ জাতীয় ইপিএসে বিনিয়োগকারীদের কোন উপকার নাই। সবাই জানতে চায় সর্বশেষ ইপিএস সম্পর্কে। একইসঙ্গে তুলনা করার জন্য আগের বছরের ইপিএস।’


তিনি আরও বলেন, ‘কোম্পানির ইপিএস ও এনএভিপিএস নিয়ে বিএসইসির যে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে, তা বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ সিদ্ধান্তে সহযোগিতা করে। এ ক্ষেত্রে ভুল সংশোধনের মাধ্যমে সঠিক তথ্য প্রকাশ করা বিএসইসির দায়িত্ব। কিন্তু বিএসইসি যদি ভুল তথ্য প্রকাশ করে, তাহলে তা অনাকাঙ্ক্ষিত। এ ক্ষেত্রে বিএসইসিকে আরও সচেতন হতে হবে।’


বাংলাদেশের প্রখ্যাত হিসাববিদ মো. মনোয়ার হোসেন (এফসিএমএ, সিপিএ, এফসিএ, এসিএস, সিআইপিএফএ) দ্য রিপোর্টকে বলেন, আন্তর্জাতিক হিসাব মান (আইএএস) ও বাংলাদেশ হিসাব মানে (বিএএস) ৫ বছরের ওয়েটেড এভারেজ বলে কোন ইপিএস নাই। তবে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে বিএসইসি চাইলে নিজে থেকে এ জাতীয় ইপিএস প্রকাশ করতে পারে। তবে দেখতে হবে সাধারন বিনিয়োগকারীরা ৫ বছরের ওয়েটেড এভারেজ ইপিএস জিনিসটা বুঝে কি না।


দেখা গেছে, ৯ ফেব্রুয়ারি বিএসইসির ৫৯৭তম কমিশন সভায় নূরানি ডাইং অ্যান্ড সোয়েটার এর আইপিও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে কোম্পানির বিগত ৫টি আর্থিক বিবরণী অনুযায়ি ওয়েটেড এভারেজ ইপিএস ১.৭৯ টাকা হয়েছে বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়। আর ইস্যু ম্যানেজার হিসেবে ইমপেরিয়াল ক্যাপিটাল ও সিএপিএম অ্যাডভাইজারি লিমিটেড এর নাম জানানো হয়।


প্রকৃতপক্ষে নূরানি ডাইংয়ের ১৫ মাসের ব্যবসায় (এপ্রিল ২০১৫-জুন ২০১৬) ইপিএস হয়েছে ১.৮৬ টাকা। আর প্রতিষ্ঠানটির ইস্যু ম্যানেজার হিসেবে রয়েছে ইমপেরিয়াল ক্যাপিটাল, ইবিএল ইনভেষ্টমেন্ট ও সিএপিএম অ্যাডভাইজারি লিমিটেড।



গত ১৭ জানুয়ারি রাইট শেয়ার ছাড়ার অনুমোদন পেয়েছে সাইফ পাওয়ারটেক। এক্ষেত্রে আবার ২০১৬ সালের নিরীক্ষিত হিসাব অনুযায়ি সাইফ পাওয়ারটেকের ইপিএস ৪.৩৮ টাকা হয়েছে বলে তথ্য প্রকাশ করা হয়। কিন্তু নূরানি ডাইংয়ের ক্ষেত্রে উল্লেখ করা হয় ৫ বছরের ওয়েটেড এভারেজ ইপিএস।



এদিকে ৫৯৪ তম কমিশন সভায় আমরা নেটওয়ার্কসের বিডিং অনুমোদন দেয় বিএসইসি। এক্ষেত্রে ৫ বছরের ওয়েটেড এভারেজ ইপিএস হিসাবে ২.৫২ টাকা দেখানো হয়েছে। এক্ষেত্রে ‘আর্নিংস বেজড ভ্যালু পার শেয়ার’ নির্ণয়ের ইপিএস দেখানো হয়েছে। কোম্পানিটি ২০১৫ সালে ইপিএস করেছে ৩.১৬ টাকা।



বিএসইসির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে প্রতিটি আইপিও এবং রাইট অনুমোদনের সময় নেট অ্যাসেট ভ্যালুর নামে পার শেয়ার নেট অ্যাসেট ভ্যালুর তথ্য প্রকাশ করে।



দেখা গেছে, ২০১৬ সালের ৩০ জুন নূরানি ডাইং অ্যান্ড সোয়েটার নেট অ্যাসেট ভ্যালু (এনএভি) ১৪.৩৭ টাকা দাড়িয়েছে বলে বিএসইসি তথ্য প্রকাশ করে। কিন্তু এ সময় এনএভি ছিল ৫৭ কোটি ৪৯ লাখ টাকার। তবে নেট অ্যাসেট ভ্যালু পার শেয়ার (এনএভিপিএস) ছিল ১৪.৩৭ টাকা।



বিনিয়োগকারী জোবায়ের আহমেদ বলেন, বিএসইসি বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে লিটারেসি প্রোগ্রাম করছে। অথচ তারা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ৫ বছরের ওয়েটেড এভারেজ নামে যে ইপিএস প্রকাশ করে, তাই আমাদের মতো বিনিয়োগকারীদের কাছে বোধগম্য নয়। এটা দিয়ে আসলে তারা কি বোঝায় আমরা তা বুঝিনা’।


এ বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো: সাইফুর রহমান জানান, বিএসইসি হিসাব মান মেনেই তথ্য প্রকাশ করে। পাঁচ বছরের যে ইপিএস প্রকাশ করা হয় তা ওয়েটেড এভারেজ করেই করা হয়। তবে বাংলাদেশ অথবা আন্তর্জাতিক হিসাবে মানে পাঁচ বছরের ওয়েটেড এভারেজ ইপিএস আছে কি না, তা আমার সঠিক জানা নেই। আপনি যেহেতু বলছেন বিষয়টি আমরা দেখবো। তবে ভূল তথ্য প্রকাশের বিষয়ে তিনি কোন মন্তব্য করেননি।


(দ্য রিপোর্ট/আরএ/জেডটি/মার্চ ০৭, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর