thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ২৯ মার্চ 24, ১৫ চৈত্র ১৪৩০,  ১৯ রমজান 1445

আইনে থাকা পদেরও সম্মতি মেলেনি

জনবল সংকটে কার্যকর হচ্ছে না নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ

২০১৭ মার্চ ০৮ ২২:২৭:১২
জনবল সংকটে কার্যকর হচ্ছে না নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ

জনবল সংকটে কার্যকর হতে পারছে না নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। সারাদেশে কর্তৃপক্ষের জন্য এক হাজার ৪ জনবল চেয়ে অনুমোদন মিলেছে ৩৬৫ জনের।

আইনে থাকা নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শকের পদটি বাদ দিয়ে জনবল কাঠামোটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব ও কার্যাবলী সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনে সাংগঠনিক কাঠামোতে সাতটি বিভাগের প্রস্তাব করা হলেও তিনটি বিভাগ অনুমোদন পেয়েছে। আইন দ্বারা সৃষ্ট পদের জনবলের সম্মতিও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া যায়নি। সমস্যা রয়েছে আন্তঃসংস্থা সমন্বয়েও।

কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বর্তমানে জনবলের মধ্যে একজন চেয়ারম্যান, চারজন সদস্য, একজন সচিব ও চারজন পরিচালকসহ ১১ জন রয়েছেন। এছাড়া বিভিন্ন দফতরের আরও সাত-আট জন অস্থায়ীভাবে কাজ করছেন। কর্তৃপক্ষের প্রধান কার্যালয়, আটটি মেট্রোপলিটন ও ৬৪টি জেলা কার্যালয়ের জন্য যে জনবল অনুমোদন দেওয়া হয়েছে তাতে এটি আইনের উদ্দেশ্য পূরণে ভূমিকার রাখতে পারবে না।

২০১৩ সালের ১০ অক্টোবর ‘নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩’ প্রণয়ন করা হয়। আইনে বলা হয়েছে, বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতির যথাযথ অনুশীলনের মাধ্যমে নিরাপদ খাদ্যপ্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিতকরণে খাদ্য উৎপাদন, আমদানি, প্রক্রিয়াকরণ, মজুদ, সরবরাহ, বিপণন ও বিক্রয় সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম সমন্বয়ের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ এবং এজন্য একটি দক্ষ ও কার্যকর কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে এ আইন করা হয়েছে।

২০১৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ‘নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩’ বাস্তবায়নের ঘোষণা দেয় খাদ্য মন্ত্রণালয়। একদিন পর ২ ফেব্রুয়ারি সরকার ‘নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ’ গঠন করে গেজেট জারি করা হয়।

ভারপ্রাপ্ত খাদ্য সচিব মো. কায়কোবাদ হোসেন দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘বলতে গেলে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ যাত্রা শুরু করেছে। ধীরে ধীরে এটি মহীরুহ আকার ধারণ করবে। লোকবলের বিষয়টি আমরা দেখছি। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় হয়তো পর্যায়ক্রমে জনবল বাড়ানোর বিষয়টি অনুমোদন দেবে। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষকে কার্যকর করতে যা যা করার আমরা করব।’

কর্তৃপক্ষের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘প্রথম পর্যায়ে ৩ হাজার ৩৬৫ জনের জনবল কাঠামো প্রস্তুত করা হয়েছিল। পরে উপদেষ্টা পরিষদ (খাদ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন জাতীয় নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থাপনা উপদেষ্টা পরিষদ) জনবল কমিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর নির্দেশ দেয়। সে অনুযায়ী এক হাজার ৪ জনের প্রস্তাব করা হয়।’

তিনি বলেন, ‘কর্তৃপক্ষের প্রধান কার্যালয়, মেট্রোপলিটন ও জেলা কার্যালয়ের জন্য ৪২২টি পদ রাজস্ব খাতে অস্থায়ীভাবে সৃজনে সম্মতি দেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। পরবর্তী সময়ে অর্থ বিভাগ থেকে আরও কমিয়ে ৩৬৫ জনের সম্মতি পাওয়া যায়। ৩৬৫ জনবলের স্কেল ভেটিংয়ের জন্য প্রস্তাবটি এখন অর্থ মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। সম্মতিপ্রাপ্ত জনবল প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।’

আরও জানা গেছে, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ থেকে প্রস্তাবিত জনবল কাঠামোতে সাতটি বিভাগের প্রস্তাব করে সাতজন পরিচালক নিয়োগের প্রস্তাব করা হয়। ‘নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩’ এর ১৪(৪) ধারায় পাঁচটি বিশেষায়িত বিভাগের নেতৃত্বে ৫ জন পরিচালক নিয়োজিত থাকার কথা বলা হয়েছে। তবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে তিন জন পরিচালকের নেতৃত্বে তিনটি বিভাগের সম্মতি দেওয়া হয়েছে।

একজন কর্মকর্তা জানান, আধুনিক নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থাপনা পরিচালনার সব কার্যক্রম ফুড সেফটি নেটওয়ার্ক সিস্টেমের আওতায় আনা প্রয়োজন। ফলে আইটিতে অভিজ্ঞ জনবলের অভাবে এ কার্যক্রম ব্যাহত হবে। প্রস্তাবিত সাতটি পরিচালক পদের মধ্যে অতিগুরুত্বপূর্ণ পরিচালক (পরিসংখ্যান ও তথ্য প্রযুক্তি) পদটি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

এছাড়াও কর্তৃপক্ষের প্রশাসনিক ও আর্থিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) প্রয়োজনীয়তাও অপরিহার্য। এ পদটিও বাদ দেওয়া হয়েছে বলেও জানান ওই কর্মকর্তা।

তিনি আরও জানান, ৭০ জন নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রস্তাবিত জনবলে পরিদর্শকের পদ নেই। অথচ আইনের ৫১ ধারায় নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক নিয়োগ ও দায়িত্ব প্রদানের সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। মাঠ পর্যায়ে খাদ্য ব্যবস্থাপনা পরিদর্শন, নমুনা সংগ্রহ, সন্দেহজনক খাদ্যদ্রব্য জব্দ বা ধ্বংস করা, এক কথায় নিরাপদ খাদ্য কার্যক্রম বাস্তবায়নে নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও অত্যাবশ্যক।

আইন দ্বারা সৃষ্ট পদের জনবলের সম্মতিও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া যায়নি বলেও জানান ওই কর্মকর্তা।

কেন্দ্রীয় নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থাপনা সমন্বয় কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আন্তঃসংস্থা সমন্বয়ে সমস্যা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো থেকে যথাযথ মনোনয়ন না পাওয়ায় ওয়ার্কিং কমিটিগুলো যথাযথভাবে কাজ করতে পারছে না বলেও কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে।

নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মাহফুজুল হক দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আমাদের কিছু সমস্যা রয়েছে। সেগুলো কাটিয়ে উঠে আমরা কর্তৃপক্ষকে কার্যকর করার চেষ্টা করছি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় সরকার বিভাগ, শিল্প মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফতরের জনবল ও অবকাঠামো ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।’

চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘আমরা প্রকল্পের মাধ্যমে কিছু সাপোর্ট পাচ্ছি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় সরকারের ২২৪ জন সেনেটারি ইন্সপেক্টরকে নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেটরাও কাজ করছেন। ৬৪ জেলায় একটি করে খাদ্য আদালত ও সাত সিটি করপোরেশনে সাতটি আদালত স্থাপন করা হয়েছে।’

জনবল অনুমোদনের বিষয়ে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব উম্মুল হাছনা দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘কাজের ধরন, অবকাঠামোসহ বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করে আমরা জনবল কাঠামো অনুমোদন করে থাকি। যাদের জনবল কাঠামো তাদের সঙ্গে আমরা মিটিংও করি। সরকারের যাতে ভাল হয় আমরা সে বিষয়টি মাথায় রেখেই সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকি।’

অতিরিক্ত সচিব আরও বলেন, ‘নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের জনবল অনুমোদনের সময় আগের খাদ্য সচিব স্যার তো আমাদের সঙ্গে বৈঠকও করেছিলেন। কোন সমস্যা হওয়ার তো কথা নয়। জনবল অনুমোদনের ক্ষেত্রে ডুপ্লিকেশনের বিষয়টিও আমরা মাথায় রাখি। যাতে একই কাজের জন্য দুই ধরনের জনবল না হয়ে যায়। উপযুক্ততা প্রমাণ করে আবার প্রস্তাব করলে আমরা বিবেচনা করব। কোন কোন ক্ষেত্রে আমরা পর্যায়ক্রমে জনবল অনুমোদন করে থাকি। একবার পদ সৃজন করা হলে আবার করা যাবে না এমনটা তো নয়।

নিরাপদ খাদ্য আইনের অধীনে ২৩টি বিভিন্ন অপরাধে এক থেকে ৫ বছর কারাদণ্ড অথবা ৪ থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রয়েছে।

কর্তৃপক্ষের একটি বিধিমালা চূড়ান্ত করা হয়েছে। আরও একটি বিধিমালা ও ছয়টি প্রবিধানমালা প্রণয়নের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানা গেছে।

বর্তমানে রাজধানীর ইস্কাটনে প্রবাসীকল্যাণ ভবনে ভাড়া করা ফ্লোরে কর্তৃপক্ষের অফিস চলছে।

(দ্য রিপোর্ট/আরএমএম/এপি/এনআই/মার্চ ০৮, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর