thereport24.com
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল 24, ১২ বৈশাখ ১৪৩১,  ১৬ শাওয়াল 1445

দুই সিটি কর্পোরেশনের জন্য নতুন প্রকল্প

২০১৭ মার্চ ১০ ২২:৪৩:৫৮
দুই সিটি কর্পোরেশনের জন্য নতুন প্রকল্প

ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের জন্য আসছে নতুন দুটি প্রকল্প। এর মধ্যে রয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) জন্য উন্মুক্ত স্থানসমূহের আধুনিকায়ন, উন্নয়ন ও সবুজায়ন প্রকল্প এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) জন্য মাতুয়াইলে স্যানিটারি ল্যান্ডফিল্ড সম্প্রসারণসহ ভূমি উন্নয়ন প্রকল্প।

এ দু’টি প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৩ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। প্রকল্প দু’টি বাস্তবায়িত হলে একদিকে যেমন পার্ক, খেলার মাঠ ও খোলা জায়গাগুলো আধুনিকায়ন এবং সবুজায়ন হবে, অন্যদিকে তেমনি বর্জ্য অপসারণ ব্যবস্থা উন্নত করার মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব প্রক্রিয়ায় বর্জ্য চূড়ান্ত অপসারণ করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ইতিমধ্যেই প্রকল্প দু’টির প্রক্রিয়াকরণ শেষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে উপস্থাপনের প্রস্তুতিও চূড়ান্ত করা হয়েছে। অনুমোদন পেলে ২০২০ সালের মধ্যে প্রকল্প দু’টি বাস্তবায়ন করবে দুই সিটি কর্পোরেশন।

পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য জুয়েনা আজিজ এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে বলেছেন, ‘প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে শিশুদের মানসিক বিকাশের সুযোগ সৃষ্টি হবে। অন্যদিকে, সর্বসাধারণ স্বাস্থ্য পরিচর্যাসহ সুস্থ্য পরিবেশে পরিবার-পরিজনসহ অবসর সময় কাটানোর সুযোগ পাবে। এ ছাড়া প্রাত্যহিক নগর জীবনের প্রাকৃতিক প্রয়োজন মিটানো সহজ হবে।’

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ক্রমবর্ধমান ঢাকা শহর বর্তমানে পৃথিবীর অন্যতম জনবহুল মহানগরী। প্রায় ৩৫০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এ মহানগরীতে ১ কোটি ৭০ লাখ মানুষের বসবাস। অপরিকল্পিত নগরায়ন এবং উন্মুক্ত স্থান কমার কারণে শহরের সবুজের সমারোহ দিন দিন কমে যাচ্ছে। ফলে এ শহরের ইকোলজি (পরিবেশের ভারসাম্য) মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

সূত্র আরো জানিয়েছে, বর্তমানে ঢাকা উত্তর কর্পোরেশন এলাকায় ৫০টি পার্ক ও খেলার মাঠ রয়েছে, যার মধ্যে ২২টি পার্ক ও ৪টি খেলার মাঠ ডিএনসিসি’র মালিকানাধীন। এসব খেলার মাঠ ও পার্কগুলোতে অবকাঠামোগত দুর্বলতা এবং নিরাপত্তার অভাব রয়েছে। প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় এসব খেলার মাঠ ও পার্কগুলোর আধুনিকায়ন, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং সবুজায়মান করে ঢাকা শহরকে উন্নতমানের বাসযোগ্য শহর হিসেবে গড়ে তোলা হবে। এ ছাড়া ডিএনসিসি এলাকায় ২৩টি পাবলিক টয়লেট রয়েছে। এ পাবলিক টয়লেটগুলো দীর্ঘদিন যাবৎ মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া নগরীর অনেক ব্যস্ততম স্থানে পাবলিক টয়লেট নেই। ফলে পথচারী, বিশেষ করে নারীরা স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্য পড়ছে। এ সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য ডিএনসিসি এলাকার বিদ্যমান টয়লেটগুলোর সংস্কার এবং নতুন, আধুনিক ও স্থাস্থ্যসম্মত পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করা প্রয়োজন। শুধু তাই নয়, ঢাকা নগরীর বিভিন্নস্থানে বর্তমানে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে পশু জবাই হয়। জবাইকৃত পশুর মাংস স্বাস্থ্য সম্মতভাবে তৈরি না হওয়ায় নগরবাসীর স্বাস্থ্য ঝুঁকি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। জনসাধারণের কাছে হালাল পদ্ধতিতে জবাই করা নিরাপদ পশুর মাংস প্রাপ্তি সহজলভ্য করার জন্য ডিএনসিসি আওতাধীন এলাকায় নতুন ও আধুনিক পশু জবাইখানা নির্মাণ জরুরি। এসব প্রেক্ষাপটে ডিএনসিসি’র উন্মুক্ত স্থানসমূহের আধুনিকায়ন, উন্নয়ন ও সবুজায়ন প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হচ্ছে। এটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২৭৯ কোটি ৫১ লাখ টাকা। অনুমোদন পেলে ২০১৭ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রমগুলো হচ্ছে-ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ২২টি পার্ক ও ৪টি খেলার মাঠের উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন, বিদ্যমান ২৩টি পাবলিক টয়লেটের উন্নয়ন, আধুনিক, স্বাস্থ্যসম্মত ও ব্যবহার উপযোগী নতুন ৫০টি পাবলিক টয়লেট নির্মাণ, ৪টি কবরস্থান উন্নয়ন, ১৫টি ফুটওভার ব্রিজের মেরামত ও সৌন্দর্যবর্ধন এবং ৪টি আধুনিক ও স্বাস্থ্যসম্মত পশু জবাইখানা নির্মাণ করা হবে।

এদিকে, মাতুয়াইল স্যানিটারি ল্যান্ডফিল সম্প্রসারণ এবং উন্নয়ন সংক্রান্ত একটি প্রকল্প হাতে নিচ্ছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বর্জ্য অপসারণ নির্বিঘ্ন রাখার জন্য ভূমি নিশ্চিতকরণ এবং বর্জ্যের পরিমাণ কমার জন্য বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিবেশ-বান্ধব ইনসিনারেটর স্থাপনের জন্য ভূমি উন্নয়ন, মাতুয়াইল স্যানিটারি ল্যান্ডফিলের বিদ্যমান এবং সম্প্রসারিত এলাকার অবকাঠামো উন্নয়ন, পরিবেশ বান্ধবভাবে বর্জ্য চূড়ান্ত অপসারণ এবং দীর্ঘ মেয়াদে পরিবেশ দূষণ রোধকল্পে বিদ্যমান ল্যান্ডফিলের ভরাটকৃত অংশের পরিবেশসম্মত সমাপ্তি করা হবে।

প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৭২৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। একনেকে অনুমোদন পেলে ২০২০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে তা বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

প্রকল্পের আওতায় মুল কার্যক্রম হচ্ছে-৮১ একর ভূমি অধিগ্রহণ। এর মধ্যে ৫০ একর ল্যান্ডফিল সম্প্রসারণের জন্য এবং ৩১ একর ভবিষ্যতে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ, কম্পোস্ট ও রিফিউজড ডিরাইভড ফুয়েল (আরডিএফ) উৎপাদনের জন্য বরাদ্দ রাখা; ৮১ একর ভুমি ব্যবহারের জন্য প্লান তৈরি করা, ভৌত অবকাঠামো নির্মাণে বিভিন্ন পাইপ স্থাপনসহ আনুসাঙ্গিক কার্যক্রম।

এ বিষয়ে জুয়েনা আজিজ পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে বলেছেন, ‘প্রস্তাবিত প্রকল্পটি অনুমোদিত হলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্য অপসারণ, বর্জ্যের পরিমাণ হ্রাস ও বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ইনসিনারেটর স্থাপনের ভূমি উন্নয়ন, মাতুয়াইল স্যানিটারি ল্যান্ডফিলের বিদ্যমান ও সম্প্রসারিত এলাকার অবকাঠামো উন্নয়ন, পরিবেশ-বান্ধবভাবে বর্জ্য চূড়ান্ত অপসারণ, বিদ্যমান ল্যান্ডফিলের ভরাটকৃত অংশের পরিবেশসম্মত সমাপ্ত করা হবে।’

(দ্য রিপোর্ট/জেজে/জেডটি/মার্চ ১০, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর