শরীয়তপুর শিল্পকলা একাডেমির বেহাল দশা

শরীয়তপুর প্রতিনিধি : শরীয়তপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমি নানা সমস্যায় জর্জরিত হওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে সকল কার্যক্রম।

মানসম্মত একাডেমিক ভবন না থাকায় এবং প্রয়োজনীয় বাদ্যযন্ত্রের অভাবে সঙ্গীতে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। ব্যবহারের অনুপযোগী একটি পুরানো একচালা টিনের ঘরে চলছে জেলা শিল্পকলা একাডেমির কার্যক্রম। এতে সমস্যায় জর্জরিত হয়ে পড়েছে শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকরা।

অতিসত্বর এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে দাবি রেখেছেন শিল্পকলা কতৃপক্ষ।

জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৮০ সালে জেলা শহরের প্রাণ কেন্দ্রে তুলাসার মৌজায় শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের সামনে সরকারি ৬৩ শতাংশ জমির উপর নির্মিত হয়েছে শরীয়তপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমি।

একটি আধা পাকা ভবন নির্মাণ করে শুরু হয় সাংস্কৃতিক চর্চা। এরই মধ্যে পার হয়ে গেছে তিন যুগ। অদ্যাবধি সেই আধা পাকা ভবনেই চলছে সাংস্কৃতিক চর্চা। তিন কক্ষ বিশিষ্ট এ ছোট্ট ভবনের বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে ফাটল, দেয়ালের পলেস্তরা খসে পড়ছে, একটু জোরে বৃষ্টি হলেই চাল দিয়ে দমকলের ন্যায় অঝোরে পানি পড়ে। আর প্রতিটি কক্ষের দরজা জানালাতেই উইপোকায় বাসা বেঁধেছে। একটি টয়লেট রয়েছে যা ব্যবহারের অনুপোযোগী। নেই অভিভাবকদের বসার স্থান।। নুতন করে একাডেমিক ভবন নির্মাণের কোন ব্যবস্থা এখনো হয়নি।

বার বার উদ্যোগ নেয়ার পরেও কেন যেন ফসকে যায় প্রকল্পটি। কোটি টাকা বরাদ্ধ পাওয়ার পরে ও সে টাকার বরাদ্ধ বাতিল হয়ে যায়। এখানে কোন তদবিরের অভাব নাকি রাজনৈতিক কোন কারণ রয়েছে তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।

শরীয়তপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণের জন্য যে যন্ত্রপাতিগুলো ছিল তাও পুরাতন। সংগীত পরিবেশনের ক্ষেত্রে সাউন্ড সিস্টেমের প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু শিল্পকলা একাডেমিতে নেই কোন সাউন্ড সিস্টেম। জরুরি ভিত্তিতে জেলা শিল্পকলা একাডেমির ভবন নির্মাণ এবং প্রয়োজনীয় বাদ্যযন্ত্র ক্রয় করে সংস্কৃতি চর্চায় সহযোগিতা করার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন শরীয়তপুর জেলা শিল্পকলা কর্তৃপক্ষ।

এ দিকে শরীয়তপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমি মাঠে শুরু থেকেই এক শ্রেণির প্রভাবশালী অসাদু গাড়ি ব্যবসায়ীরা পুরো মাঠ জুড়ে যত্রতত্র ফেলে রাখছে রেন্ট এ কারের গাড়ি। সকাল নেই বিকেল নেই, নেই কোন টাইম টেবিল, যেখানে সেখানে আবার শিল্পকলা ভবনের সামনে গাড়ি রাখছে। কোন বিধি নিষেধের তোয়াক্কা করছেনা তারা।

যত্রতত্র গাড়ি রাখার কারনে শিক্ষার্থীরা ঠিকমত ক্লাসে ঢুকতে পারছে না। অভিভাবকদের ও সমস্যা হচ্ছে। মাঝে মধ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে চাপ দিলে ২/১ দিন বন্ধ থাকে এরপর আবার শুরু হয় বিড়ম্বনা। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।

এ ব্যাপারে শরীয়তপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমির সিনিয়র শিক্ষক আব্দুর রব কোতোয়াল দ্য রিপোর্ টুয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, শরীয়তপুর শিল্পকলায় ভাল একাডেমিক ভবন না থাকায় নিয়ম অনুযায়ী সাংস্কৃতিক চর্চা করা যাচ্ছে না। বর্তমানে তিনটি কক্ষের মধ্যে দুটি কক্ষে ক্লাশ করতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। একটু বৃষ্টি হলেই পানি পড়ে।

জেলা শিল্পকলা একাডেমির শিক্ষক আলমগীর হোসেন বাহার জানান, একটু বৃষ্টি হলেই চাল দিয়ে পানি পড়তে থাকে। এতে করে যন্ত্রপাতি গুলো নষ্ট হয়ে গেছে। বর্তমান একাডেমিতে তিনটি হারমোনিয়াম রয়েছে। তার মধ্যে দুইটি হারমোনিয়ামই অচল। পাঁচ জোড়া তবলার মধ্যে চার জোড়াই ব্যবহারের অনুপযোগী। একটি মাত্র ঢোল রয়েছে তার অবস্থাও শোচনীয়।

শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক এম.এম জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, একাডেমিতে নানা সমস্যা আছে। সেই সমস্যা সমাধানের জন্য মহা পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তিনি অল্প সময়ের মধ্যে ভবন নির্মাণের ব্যবস্থা করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। ভবনটা হয়ে গেলে অন্যান্য ছোট খাট সমস্যা স্থানীয় ভাবে পূরণ করা সম্ভব।

শরীয়তপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমির সভাপতি এবং জেলা প্রশাসক মো. মাহমুদুল হোসাইন খান বলেন, জেলা শিল্পকলা একাডেমির বর্তমান অবস্থা আশাব্যঞ্জক নয়। এ বিষয়ে শীঘ্রই উদ্যোগ নেয়া হবে।

(দ্য রিপোর্ট/একেএ/এআরই/মার্চ ১১, ২০১৭)