thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল 24, ৬ বৈশাখ ১৪৩১,  ১০ শাওয়াল 1445

১০০ কোটি টাকা অপচয়ের আশঙ্কা

ফেরি-পন্টুন নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম

২০১৭ মার্চ ১৩ ২৩:০০:১৬
ফেরি-পন্টুন নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম

ফেরি ও পন্টুন নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম খুঁজে পেয়েছে বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)। এসব ফেরি-পন্টুন নির্মাণে অদক্ষতা এবং নিম্নমানের কাজ করায় ১০০ কোটি টাকা অপচয়ের আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে। প্রকল্প শেষ হওয়ার এক বছরের মাথায় ফেরি-পন্টুনগুলোতে মরিচা ধরা, পানি জমে থাকাসহ নানা ধরনের ত্রুটি দেখা দিয়েছে। ফলে এ ক্ষেত্রে অর্থের অপচয় হয়েছে বলে মনে করছে সংস্থাটি।

বিআইডব্লিউটিসি’র জন্য রো রো ফেরি, রো রো পন্টুন, কে-টাইপ ফেরি, ইউটিলিটি টাইপ-১ ফেরি ও ইউটিলিটি টাইপ পন্টন নির্মাণ প্রকল্পে এসব অনিয়ম পাওয়া গেছে। সম্প্রতি প্রকাশিত প্রকল্পটির মূল্যায়ন প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ চিত্র।

এ বিষয়ে প্রকল্পটি পরিদর্শন করে প্রতিবেদন তৈরির দায়িত্বে দেওয়া হয়েছিল আইএমইডির সহকারী পরিচালক লসমী চাকমাকে। এ বিষয়ে দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেছেন, ‘প্রকল্পটির কেনাকাটা সংক্রান্ত তথ্য একাধিকবার টেলিফোনে চাওয়া হলেও তা দেওয়া হয়নি। পরবর্তীতে তথ্য সরবরাহের অনুরোধ জানিয়ে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এ পর্যন্ত (প্রতিবেদন চূড়ান্ত করার সময় পর্যন্ত) কোনো তথ্য সরবরাহ করা হয়নি।’

সূত্র জানিয়েছে, প্রকল্পটির মূল ব্যয় ধরা হয়েছিল ১১১ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে খরচ হয়েছে ১০০ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৩ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়নের লক্ষ্য ছিল। পরবর্তীতে মেয়াদ এক বছর বাড়িয়ে ২০১৪ সালের জুনে তা শেষ হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব পালন করে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্পোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি)। পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া, মাওয়া-চরজানাজাত-মাওয়া, মাওয়া-গলমাঝি-মাওয়া-চাঁদপুর-শরীয়তপুর-চাঁদপুর ইত্যাদি ঘাটের জন্য এসব ফেরি ও পন্টুন কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়। প্রকল্পের আওতায় একটি রো রো ফেরি, একটি রো রো পল্টুন, দুটি কে-টাইপ ফেরি, সাতটি ইউটিলিটি টাইপ-১ ফেরি এবং চারটি ইউটিলিটি টাইপ পল্টুন নির্মাণ করা হয়েছে।

আইএমইডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকল্পের আওতায় নির্মিত রো রো ফেরিতে পুরাতন মরিচা ধরা রড, নিম্নমানের শিট ও ডায়নামো ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়েছে। এতে সরকারের আর্থিক অপচয় হয়েছে এবং ফেরিগুলো কাঙ্ক্ষিত আয়ুষ্কাল পাবে না। এ ছাড়া ফেরি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের ফেরি নির্মাণে অদক্ষতা বা অধিক মুনাফা লাভের আকাঙ্ক্ষায় পন্টুন নির্মাণে বড় ধরনের ত্রুটি ধরা পড়েছে। পন্টুনের খন্দে পানি ভরে থাকার কারণে পন্টুনের খন্দে মরিচা ধরেছে। এতে অল্প সময়ে পন্টুন কার্যক্ষমতা হারাবে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, কৃষ্ণচূড়া নামের ফেরিটির ডেক নিচু হয়ে গেছে। এতে বৃষ্টির পানি জমে থাকে। ডেকের পাত গুণগত ও মানসম্পন্ন না হওয়ায়এ অবস্থা হয়েছে। ডেকে জমে থাকা পানি ইঞ্জিন রুমে প্রবেশ করে। ইঞ্জিন রুমে দেখা যায়, ড্রাইভারের সামনে অনেক ছোট ছোট জানালা রয়েছে। ফেরি চলাচলের সুবিধার্থে এতগুলো ছোট জানালার পরিবর্তে একটি বড় জানালা থাকা প্রয়োজন ছিল। এ ছাড়া উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) পানি নিরোধী (ওয়াটার প্রুফ) জানালার সংস্থান থাকলেও ফেরির সব জানালা দিয়ে বৃষ্টির পানি প্রবেশ করে। ডিপিপিতে দুটি উইন্ডো উইপার থাকার কথা থাকলেও তা বসানো হয়নি। ফলে ড্রাইভারের সহযোগীকে বৃষ্টির সময় কাপড় দিয়ে গ্লাস মুছে দিতে হয়।

ফেরিগুলোর প্রধান ইঞ্জিনের চার্জিং ডায়নামো কাজ করে না। ফেরি চলাচলের শুরু থেকেই এ সমস্যা ছিল। ইতোমধ্যেই ওয়ারেন্টি পিরিয়ডের মধ্যে একটি ডায়নামো মেরামত করানো হয়েছে। এতেও কার্যকর না হওয়ায় পরবর্তীতে বিআইডব্লিউটিসি’র রাজস্ব বাজেট থেকে মেরামত করা হয়েছে। এক ইঞ্জিন রুম থেকে আরেক ইঞ্জিন রুমে যাওয়ার জন্য অভ্যন্তরীণ রাস্তা রাখা হয়নি। এ ছাড়া ফেরির হাইড্রোলিক পাইপ পুরনো এবং চাপের কারণে এটি খুলে যায়। ফেরির সিঁড়িগুলোতে মরিচা ধরে গেছে।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) বেগম জিকরুর রেজা খানম দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, ‘আইএমইডি যে প্রতিবেদন দিয়েছে সেটি আমার মনে হয় ঠিক আছে। তবে প্রতিবেদন পেলে তা ক্ষতিয়ে দেখা হবে।’

(দ্য রিপোর্ট/জেজে/জেডটি/এনআই/মার্চ ১৩, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর