thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল 24, ৫ বৈশাখ ১৪৩১,  ১০ শাওয়াল 1445

ঝালকাঠিতে ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় শিশুরা

২০১৭ মার্চ ১৬ ২৩:২৬:৪৭
ঝালকাঠিতে ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় শিশুরা

ঝালকাঠি প্রতিনিধি : ঝালকাঠিতে অসংখ্য শিশু শ্রমিক নানা ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় নিয়োজিত রয়েছে। এসব কাজের মধ্যে ইটভাটা, হোটেল-রেস্তোরাঁ, রিকশা চালানোর মতো কঠিন কাজ করছে। এমনকি সবচেয়ে বিপজ্জনক এবং স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে বিড়ি কিংবা তামাকজাত পণ্য উৎপাদনের কারখানায় নিয়োজিত রয়েছে শিশু শ্রমিকরা। এ ছাড়া অনেক দুগ্ধপোষ্য শিশু কাজ না করলেও শ্রমজীবী মায়েদের সঙ্গে বিষাক্ত পরিবেশে সময় কাটাতে বাধ্য হচ্ছে।

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ শিশুদের তামাকজাত পণ্য উৎপাদনের কারখানায় কাজ করায় মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা স্বীকার করে এদের পুনর্বাসনের চেষ্টা করার কথা জানিয়েছে।

সালমা, আছিয়া, সুমাইয়া, সাথি, হাফিজা, সুমন ওদের কারোর বয়সই পনেরো হয়নি আবার কারো বয়স আট থেকেও কম। বাইরে যখন শিশু দিবসের আনন্দ উৎসব চলছে তখন জীবিকার তাগিদে বিড়ি কারখানার মত মারাত্মক বিষাক্ত পরিবেশে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে ঐ শিশুরা।

ঝালকাঠি শহরের শ্মশানঘাট এলাকায় অবস্থিত একটি বিড়ি কারখানায় গিয়ে এমন দেখা গেছে, প্রায় আলো বাতাসহীন বিষাক্ত পরিবেশে এখানে কমপক্ষে ২০০ শিশু কাজ করছে। যাদের অনেকেই সুযোগ পেলে লেখাপড়া শিখে বড় হতে চায়। তারা কেউ খোলে তামাক ভরছে, কেউ মুখ মুড়ছে, কেউ প্যাকেট করছে আবার কেউ বান্ডেল লেবেল লাগাচ্ছে। এ কাজ করে দৈনিক জনপ্রতি ৭০ থেকে ১০০ টাকা পায়। এখানে বয়স্ক শ্রমিকও রয়েছে যাদের ছেলে মেয়েরাও কাজ করে। এ কাজের পরিণতি সম্পর্কে সবাই জানলেও বিকল্প না থাকায় জীবিকার প্রয়োজনে এখানে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে। অন্য কোন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হলে তারা এ কাজ ছেড়ে দেবে বলে জানিয়েছে।

বিড়ি কারখানায় কর্মরত শিশু কাজল আক্তার (১২) এবং কবিতা আক্তার (১০) দ্য রিপোর্টকে জানায়, মা-বাবা এই কারখানায় কাজ করার কারণে জন্মের পর থেকেই তাদের সঙ্গে এখানেই সময় কাটাতে হয়েছে। একটু বড় হয়ে তারা ৩-৪ বছর বয়স থেকে এখানে কাজ করছে। তবে তারা জানিয়েছে এই বিষাক্ত পরিবেশে তাদের কাজ করতে ভাল লাগে না। তারা লেখা-পড়া করে বড় হয়ে চাকরি করতে চায়।

কারখানায় শিশু শ্রমিকদের পাশাপাশি অনেক নারী ও পুরুষ শ্রমিকও রয়েছে। যারা বাধ্য হয়ে তাদের দুগ্ধপোষ্য শিশুদের তামকজাত পণ্যের বিষাক্ত পরিবেশে নিয়ে আসছে। ঐসব শিশুদের কাউকে তামাকের মধ্যে হামাগুড়ি দিতেও দেখা গেছে। আবার কাউকে দেখা গেছে তামাক তুলে মুখে দিতে। এসব শিশুদের অভিভাবকরা সন্তানের স্বাস্থ্য ও অনাগত ভবিষ্যত নিয়ে ভাবনার থেকে অভাবের তাড়ণাকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।

কারখানার শ্রমিক নাদিরা বেগম, কুদ্দুস মৃধা, নাসির উদ্দিন মোল্লাসহ আরো অনেকে জানায়, এখানে ৩ থেকে ১৫ বছর বয়সী বেশি শিশু কাজ করছে। এছাড়া দুগ্ধপোষ্য শিশুও রয়েছে অনেক। শিশুদের কোথাও রেখে আসার মত জায়গা না থাকায় তাদের এখানে নিয়ে আসতে হচ্ছে। অন্য কোন কর্মসংস্থান না থাকায় বাধ্য হয়ে এ কাজ করতে হচ্ছে। সরকার বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করলে এ কাজ ছেড়ে দিবে।

তবে এসব বিষয়ে কথা বলার জন্য মালিকপক্ষের কাউকে পাওয়া যায়নি।

এ ব্যাপারে ঝালকাঠির সিভিল সার্জন ডা. শ্যামলকৃষ্ণ হাওলাদার দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, বিড়ি কারখানায় কাজ বয়স্কদের জন্যই ঝুঁকিপূর্ণ। সেখানে শিশুদের জন্য আরো মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। এসব শ্রমিকদের হাঁপানি, কাশি, শ্বাসকষ্ট এমনকি যক্ষ্মার মতো মারাত্মক রোগও হতে পারে।

তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে এসব শ্রমিকদের বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য চেষ্টা করবেন বলে জানান।

(দ্য রিপোর্ট/কেএনইউ/এপি/মার্চ ১৬, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর