thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল 24, ৬ বৈশাখ ১৪৩১,  ১০ শাওয়াল 1445

মনগড়া আর্থিক হিসাব প্রকাশ

কে অ্যান্ড কিউ’র উৎপাদন বন্ধের তথ্য গোপন

২০১৭ মার্চ ২১ ২৩:০৩:০১
কে অ্যান্ড কিউ’র উৎপাদন বন্ধের তথ্য গোপন

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কে অ্যান্ড কিউ এর উৎপাদন বন্ধ থাকলেও তা গোপন করেছে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। একইসঙ্গে মনগড়া আর্থিক হিসাব প্রকাশ করেছে তারা। তবে বিষয়টি জানে না শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো।

কে অ্যান্ড কিউ এর উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায় গত বছরের ৮ আগস্ট। যা ওই বছর ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত থাকে। সময়ের হিসাবে তা ৪ মাসের বেশি। এতে বিক্রয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। কিন্তু কে অ্যান্ড কিউ কোম্পানির পক্ষ থেকে এই মূল্য সংবেদনশীল তথ্য জানানো হয়নি নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে। একইসঙ্গে এই তথ্য থেকে আড়ালে ছিল বিনিয়োগকারীরা।

এদিকে, মনগড়া আর্থিক হিসাব প্রকাশ করা হয়েছে কে অ্যান্ড কিউ’র প্রোফাইলে। কোম্পানির ১ম প্রান্তিকে ১ কোটি ১৪ লাখ টাকার বিক্রয় দেখালেও ৬ মাসে দেখিয়েছে ১ কোটি ২ লাখ টাকা। এ হিসাবে কোম্পানির ২য় প্রান্তিকে কোনো বিক্রয় হয়নি, বরং কমেছে। এমন আর্থিক হিসাবকে মনগড়া ও অস্বাভাবিক বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

কে অ্যান্ড কিউ’র অ্যাকাউন্টস বিভাগের ম্যানেজার তপন বাবু দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, ‘২০১৬ সালের আগস্ট মাসের ৮ তারিখ থেকে ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত উৎপাদন বন্ধ ছিল। যে কারণে ১ম প্রান্তিকের তুলনায় ৬ মাসে বিক্রয় বাড়েনি।’

তবে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ওয়েবসাইটে কোম্পানির প্রোফাইলে ৬ মাসের বিক্রয়ের পরিমাণ ঠিক আছে বলে তিনি জানিয়েছেন। তবে ১ম প্রান্তিকের বা ৩ মাসের তুলনায় ৬ মাসে বিক্রয় তো কমে যাওয়ার কথা নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি। বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলে তিনি জানান।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুর রহমান মজুমদার দ্য রিপোর্টকে বলেছেন, ‘কোনো কোম্পানির উৎপাদন বন্ধ হলে তা অবশ্যই স্টক এক্সচেঞ্জকে জানাতে হয়। এক্ষেত্রে কে অ্যান্ড কিউ কর্তৃপক্ষ কেন জানায়নি তা খতিয়ে দেখা হবে।’

এ প্রসঙ্গে এএফসি ক্যাপিটালের সিইও মাহবুব এইচ মজুমদার দ্য রিপোর্টকে বলেছেন, ‘৩ মাসের ব্যবসায় থেকে ৬ মাসের ব্যবসায় বিক্রয় বৃদ্ধি পাওয়া স্বাভাবিক। তবে সেটা নাও বাড়তে পারে। কিন্তু কোনোভাবেই কমতে পারে না। কমে গেলে বুঝতে হবে কোম্পানি ইচ্ছামত আর্থিক হিসাব প্রকাশ করে।’

অসম্পূর্ণ আর্থিক হিসাব প্রকাশ করেছে কে অ্যান্ড কিউ কর্তৃপক্ষ। চলতি অর্থবছরের ২য় প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর ২০১৬) এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ওয়েবসাইটে কোম্পানির প্রোফাইলে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

এ কোম্পানি চলতি অর্থবছরের ১ম প্রান্তিকের মতো ২য় প্রান্তিকেও লোকসান করেছে। এ ক্ষেত্রে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ১ম প্রান্তিকের আর্থিক হিসাবে বিক্রয়, লোকসানের পরিমাণ ও শেয়ারপ্রতি লোকসানের পরিমাণ প্রকাশ করে। তবে ২য় প্রান্তিকে শুধুমাত্র শেয়ারপ্রতি লোকসানের মাধ্যমে অসম্পূর্ণ তথ্য প্রকাশ করেছে।

কোম্পানির ২য় প্রান্তিকে অসম্পূর্ণ তথ্য প্রকাশে ৬ মাসের মোট যোগফলে গরমিল দেখা দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি ২য় প্রান্তিকে বিক্রয় ও লোকসান না দেখালেও ১ম প্রান্তিকের সঙ্গে ৬ মাসের আর্থিক হিসাবে ভিন্ন তথ্য প্রকাশ করেছে। যার কোনো সত্যতা না থাকার ফলে এই হিসাবকে ডিএসই কর্তৃপক্ষ লাল চিহ্নিত করে রেখেছে।

১৯৯৬ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া কে অ্যান্ড কিউ সর্বশেষ ২০১০ সালে শেয়ারহোল্ডারদের ৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার দিয়েছিল। এরপর থেকে লভ্যাংশ প্রদান বন্ধ রয়েছে। একইসঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে লোকসানের মধ্যে রয়েছে এই কোম্পানি। ফলে অবস্থান করছে সর্বনিম্ন ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে।

কোম্পানির শোচনীয় অবস্থার এমন প্রেক্ষাপটে পরিচালনা পর্ষদ মালিকানা কমিয়ে এনেছে। প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে উদ্যোক্তা/পরিচালকদের ২৪.০৬ শতাংশ মালিকানা রয়েছে। যা ২০১৬ সালের ৩০ জুনেও ছিল ২৫.৪১ শতাংশ। এ হিসাবে প্রতিষ্ঠানটি রাইট বা পুনঃগণপ্রস্তাবের (আরপিও) মাধ্যমে শেয়ারবাজার থেকে টাকা সংগ্রহ করার সক্ষমতা হারিয়েছে।

দীর্ঘদিন ব্যবসায় বন্ধ থাকলেও কে অ্যান্ড কিউ’র প্রতিটি শেয়ারে ৩৭ টাকাতেও বিনিয়োগ করছে বিনিয়োগকারীরা। তবে প্রতিষ্ঠানটি থেকে এই বিনিয়োগ ফিরে পাওয়া যাবে না। কেননা, লোকসানের কারণে কোম্পানির মূল্য-আয় অনুপাত (পিই রেশিও) রয়েছে শূন্যতে।

নিয়মিতভাবে লোকসান ও লভ্যাংশ বন্ধ থাকলেও কে অ্যান্ড কিউ’র শেয়ার দর অস্বাভাবিকভাবেও বাড়তে দেখা গেছে। গত বছর ১৮ ডিসেম্বর শেয়ার দর ছিল ৩১ টাকা। চলতি বছর ১৫ জানুয়ারি দর বেড়ে ৪৬.৭ টাকায় উঠে আসে। এ ক্ষেত্রে দর বাড়ে ১৫.৭ টাকা বা ৫১ শতাংশ। কোনো কারণ ছাড়াই এ দর বাড়ে। কোম্পানির শেয়ার দর কারণ ছাড়াই বাড়ছে বলে স্টক এক্সচেঞ্জের পক্ষ থেকে গত ১২ ডিসেম্বর সতর্কতামূলক তথ্যও প্রকাশ করা হয়।

উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (২১ মার্চ) লেনদেন শেষে কোম্পানির শেয়ার দর দাঁড়িয়েছে ৩০.০৬ টাকা।

(দ্য রিপোর্ট/আরএ/জেডটি/এনআই/মার্চ ২১, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর