thereport24.com
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল 24, ৫ বৈশাখ ১৪৩১,  ৯ শাওয়াল 1445

স্বাধীনতা দিবসে জামায়াত ও মুসলিম লীগের নতুন উপলব্ধি!

২০১৭ মার্চ ২৪ ২৩:১৬:৫৮
স্বাধীনতা দিবসে জামায়াত ও মুসলিম লীগের নতুন উপলব্ধি!

মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস (২৬ মার্চ) উপলক্ষে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে ব্যানার লাগিয়েছে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী প্রধান রাজনৈতিক দল মুসলিম লীগ। বর্তমানে যেটি বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল) নামে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। দলটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর আবদুল মোনেম খানের ছেলে এ.এইচ.এম কামরুজ্জামান খান। স্বাধীনতা বিরোধী হিসেবে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়েই ঢাকার বনানীর বাসায় মুক্তিযোদ্ধারা মোনেম খানকে গুলি করে হত্যা করে।

অন্যদিকে, মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে ‘স্বাধীনতা জাতীয় জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন’ হিসেবে উল্লেখ করেছে আরেক স্বাধীনতা বিরোধী দল জামায়াতে ইসলামী।

রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার মোড়ে মোড়ে টানানো মুসলিম লীগের রঙিন ব্যানারে বড় করে লেখা আছে ‘২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস অমর হোক’। এর নিচেই লেখা আছে ‘মুসলিম লীগ এ যোগ দিন-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার শপথ নিন’। এর নিচে দুই পাশে লেখা এ.এইচ.এম কামরুজ্জামান খান (সভাপতি) ও এ্যাডভোকেট শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী (মহাসচিব) বাংলাদেশ মুসলিম লীগ-বিএমএল।

এ ব্যাপারে বিএমএল সভাপতি ৮৫ বছর বয়সী এ.এইচ.এম কামরুজ্জামান খানকে শুক্রবার (২৪ মার্চ) রাতে ফোন দিলে তিনি রিসিভ করেননি। তবে তার মহাসচিব শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে রাজধানীতে ৫০টির মতো ব্যানার লাগানোর কথা স্বীকার করে বলেন, ‘পুরানা ঢাকা থেকে উত্তরা পর্যন্ত প্রায় অর্ধশত ব্যানার লাগানো হয়েছে।’

তিনি দাবি করেন, এর আগে চলতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ব্যানার লাগানো হয়েছিল।

স্বাধীনতা দিবসে এবারই প্রথম ব্যানার লাগানো হয়েছে কিনা-জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি ৩ বছর ধরে দলের মহাসচিবের দায়িত্বে রয়েছি। এর আগে পোস্টার লাগানো হয়েছে, মিছিল করা হয়েছে। কিন্তু, বড় পরিসরে এবারই প্রথম ব্যানার লাগানো হয়েছে।’

মুসলিম লীগকে প্রধান স্বাধীনতা বিরোধী দল বলা হয়ে থাকে। মোনেম খানকে স্বাধীনতা বিরোধী হিসেবে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়েই মুক্তিযোদ্ধারা গুলি করে হত্যা করেছেন। স্বাধীনতা বিরোধী দলের পক্ষ থেকে স্বাধীনতা দিবসে স্বাধীনতার পক্ষে ব্যানার লাগানো হয়েছে। এটা কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে বিএমএল মহাসচিব দাবি করেন, ‘আবদুল মোনেম খান কোনোভাবেই স্বাধীনতাবিরোধী ছিলেন না।

তিনি আরও দাবি করেন, মোনেম খান ১৯৬২ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে ১৯৬৯ সালের ২৩ মার্চ পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) গভর্নর ছিলেন। এরপর মুসলিম লীগ ক্ষমতায় ছিল না। ইয়াহিয়া খান ছিলেন। মোনেম খান স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন এমন প্রমাণ কেউ দিতে পারবেন না।’

স্বাধীনতা জাতীয় জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন : জামায়াত

এদিকে, গত কয়েক বছরের মতো এ বছরও ২৬ শে মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস যথাযথভাবে পালনে কর্মসূচি দিয়েছে আরেক স্বাধীনতা বিরোধী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলটির ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখার আমির এবং কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন ও নূরুল ইসলাম বুলবুল শুক্রবার পৃথক পৃথক বিবৃতিতে মহানগরের অধস্তন সংগঠনের নেতাকর্মীদের দিবসটি যথাযথভাবে পালনের আহ্বান জানিয়েছেন।

ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন তার বিবৃতিতে বলেন, ‘মহান স্বাধীনতা আমাদের জাতীয় জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন। বিশ্বের ইতিহাসে আমাদের মতো অধিক মূল্য দিয়ে কোনো জাতি স্বাধীনতা অর্জন করেনি।’

দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও অখন্ডতা রক্ষায় দীপ্ত শপথ গ্রহণ এবং স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদ মুক্ত দেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে ২৫ মার্চ আলোচনা সভা, ২৬ মার্চ শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল এবং ২৬ মার্চ-থানা ও ওয়ার্ডের উদ্যেগে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প, ব্লাড গ্রুপিং, রক্তদান কর্মসূচি ও শিশুদের নিয়ে রচনা, চিত্রাঙ্কনসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে বলে বিবৃতিতে জানান সেলিম উদ্দিন।

আরেক বিবৃতিতে জামায়াতের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে ২৫ মার্চ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এর মধ্যে তিনি মহানগরীর উদ্যোগে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের তাৎপর্য শীর্ষক আলোচনা সভা ও দোয়া, থানায় থানায় আলোচনা ও দোয়া অনুষ্ঠান, ব্লাড গ্রুপিং ও ব্লাড ডোনেসন, ফ্রি চিকিৎসা, দুস্থ ও ইয়াতীমদের মাঝে খাবার, বস্ত্র এবং শিক্ষাউপকরণ বিতরণসহ স্বেচ্ছাসেবামূলক কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেন।

রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ভুলে গিয়ে প্রিয় জন্মভূমিকে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তোলা এবং স্বাধীনতা যুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে দেশের বৃহত্তর স্বার্থে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার ওপরও গুরুত্ব দেন তিনি।

মহান স্বাধীনতা দিবসে দুই স্বাধীনতার বিরোধী দলের এমন কর্মকাণ্ডে বিভিন্ন মহলে যে প্রশ্ন উচ্চারিত হচ্ছে, তা হলো- স্বাধীনতা দিবসে জামায়াত ও মুসলিম লীগের কি নতুন উপলব্ধি ঘটেছে?

(দ্য রিপোর্ট/কেএ/জেডটি/এনআই/মার্চ ২৪, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর