thereport24.com
ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ 24, ৫ চৈত্র ১৪৩০,  ৯ রমজান 1445

আইএমইডির প্রতিবেদন

২৬ মার্চ সম্পর্কে অন্ধকারে ৫৬ ভাগ মানুষ!

২০১৭ মার্চ ২৫ ১৯:১১:১২
২৬ মার্চ সম্পর্কে অন্ধকারে ৫৬ ভাগ মানুষ!

জোসনা জামান, দ্য রিপোর্ট : বাঙালি জাতির ইতিহাসে অন্যতম অবিস্মরণীয় দিন ২৬ মার্চ। মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে প্রতিবছর রাষ্ট্রীয়ভাবে এ দিবসটি পালন করা হয়। সেই সঙ্গে বেসরকারি এমনকি ব্যক্তিগতভাবেও এ দিবস পালনের ব্যাপকতা রয়েছে। কিন্তু এত কিছুর মধ্যেও এখনো স্বাধীনতা দিবস বা ২৬ মার্চ সম্পর্কে অন্ধকারে রয়েছেন অনেকেই। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের এক জরিপে উঠে এসেছে এ চিত্র। এতে বলা হয়েছে, জরিপে অংশ নেওয়া ৫৭৬ জনের মধ্যে ৫৬ শতাংশ উত্তরদাতা ২৬ মার্চ সম্পর্কে জানেন না বা ভুল উত্তর দিয়েছেন। এক্ষেত্রে আলাদাভাবে দেখলে দেখা যায়, একেবারেই জানেন না ৩৩ দশমিক ৮০ শতাংশ উত্তরদাতা। শুধু তাই নয় ২৫ মার্চ কি ঘটেছিল সে বিষয়েও জানেন না ৫০ শতাংশ উত্তরদাতা।

প্রতিবেদনটি তৈরির দায়িত্বে যারা ছিলেন তাদের দলনেতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এ এস এম আমানুল্লাহ শনিবার দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকহানাদার বাহিনী এদেশের নিরীহ বাঙালিদের নির্মমভাবে ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করেছিল। তাদের স্মৃতি অম্লান করে রাখার জন্য বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন পর্যায়ে বধ্যভূমি সংরক্ষণ ও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়। এরই অংশ হিসেবে বাস্তবায়িত বধ্যভূমি সংরক্ষণ ও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ প্রকল্পের মূল্যায়ন করতে গিয়ে অতিরিক্ত গবেষণা হিসেবে এই জরিপটি করেছি। সেখানে দুঃখজনক ঘটনা হিসেবে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

আইএমইডির ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আমাদের স্বাধীনতা দিবস কবে? এ প্রশ্নের উত্তরে জরিপে যারা অংশ নিয়েছেন, তাদের মধ্যে ২৬ মার্চ বলতে পেরেছেন ৪৩ দশমিক ৬০ শতাংশ উত্তরদাতা। উত্তর দেননি ৫ দশমিক ৬০ শতাংশ। পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ বলেছেন শূন্য দশমিক ৯০ শতাংশ, ২১ ফেব্রুয়ারি বলেছেন ৫ দশমিক ৭০ শতাংশ এবং বিজয় দিবস বলেছেন ১০ দশমিক ৫০ শতাংশ উত্তরদাতা।

অন্যদিকে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কি হয়েছিল? এ প্রশ্নের উত্তরে জানি না বলেছিলেন ৪০ দশমিক ৪০ শতাংশ উত্তরদাতা। এছাড়া কালরাত্রি বা অপারেশন সার্চলাইট সঠিকভাবে বলতে পেরেছিলেন ৪২ দশমিক ৭০ শতাংশ মানুষ। উত্তরদাতাদের মধ্যে স্বাধীনতা দিবস বলেছিলেন ৩ দশমিক ১০ শতাংশ, গণহত্যা বলেছিলেন ৬ দশমিক ১০ শতাংশ, পাঞ্জাবিরা হামলা করেছিল বলেছেন ৫ দশমিক ৯০ শতাংশ, বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানেধরে নিয়ে গিয়েছিল বলেছেন শূন্য দশমিক ৭০ শতাংশ, অন্যান্য উত্তর দিয়েছিলেন শূন্য দশমিক ২০ শতাংশ এবং উত্তর দেননি শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ উত্তরদাতা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উত্তরদাতাদের মধ্যে ৫২ শতাংশ বা প্রায় অর্ধেকের বেশি মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বীরশ্রেষ্ঠদের সম্পর্কে জানেন না বা কেন তাদেরকে বীরশ্রেষ্ঠ বলা হয় তাও জানেন না। প্রায় ৪৮ শতাংশ বলেছেন, তারা মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন বা বড় অবদান রেখেছেন। উত্তরদাতাদের মধ্যে মাত্র ৪ জন বা ৭ শতাংশ উত্তরদাতা সঠিকভাবে ৭ শহীদ বীরশ্রেষ্ঠর নাম বলতে পেরেছেন। এছাড়া ৩১০ জন বা ৫৪ শতাংশ উত্তরদাতা একজন শহীদ বীরশ্রেষ্ঠর নামও বলতে পারেননি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্টিয়ারিং কমিটির মতামত অনুসারে ৫৭৬ জন উত্তরদাতার কাছে প্রশ্নমালার মাধ্যমে মুখোমুখি সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। উত্তরদাতাদের মধ্যে ২৮৫ জন বিভিন্ন বয়সী নারী এবং ২৯১ জন বিভিন্ন বয়সী পুরুষ ছিলেন। বেশির ভাগ উত্তরদাতাই সর্বনিম্ন পঞ্চম শ্রেণি এবং সর্বোচ্চ স্নাতোকোত্তর পর্যন্ত ছিলেন। উত্তরদাতাদের মধ্যে ২৫ দশমিক ৩ শতাংশ ছিলেন গৃহিণী, ২২ দশমিক ২ শতাংশ ছাত্র, ১২ দশমিক ৮ শতাংশ চাকরিজীবী এবং ১১ দশমিক ৫ শতাংশ ব্যবসায়ী ছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানাতে ব্যাপক প্রচার-প্রকাশনার পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসন বা শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে মুক্তিযোদ্ধাদের মাধ্যমে বিভিন্ন স্তরের (প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক) শিক্ষার্থীদের মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলী শোনানোর সুপারিশ দিয়েছে সংস্থাটি।

এছাড়া আইএমইডির সুপারিশে আরও বলা হয়েছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ১৪ই ডিসেম্বর বধ্যভূমিতে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভ পরিদর্শনে নিয়ে যাওয়া যেতে পারে। এ ব্যাপারে সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি করে জেলার প্রতিটি স্কুল, মাদ্রাসা ও কলেজ থেকে প্রতিবছর একবার করে হলেও স্মৃতিস্তম্ভ পরিদর্শন করা যেতে পারে। এছাড়া যেসব এলাকায় বধ্যভূমিতে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে, সেখানে মুক্তিযুদ্ধ পাঠাগার, জাদুঘর, মুক্তমঞ্চ বা মিলনায়তন তৈরি করে বধ্যভূমিগুলোকে একটি মুক্তিযুদ্ধ কেন্দ্র হিসেবে রূপান্তর করা সম্ভব। সেই সঙ্গে বধ্যভূমির আশেপাশে পর্যটনকেন্দ্র বা পিকনিকস্পট ইত্যাদি দর্শনীয় স্থাপনা গড়ে তোলা যেতে পারে।

সূত্র জানায়, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে মানুষকে জানানোর বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে ইতোমধ্যেই। এগুলোর মধ্যে প্রত্যেক জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে যেসব মুক্তিযুদ্ধ কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হচ্ছে, সেগুলোতে একটি করে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ও পাঠাগার তৈরি করা হবে। যাতে আগামী প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানতে পারে। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধাদের ভয়েস রেকর্ড করে রাখার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে একটি মোবাইল ফোন কোম্পানি একাত্তরের কথা নামে সিডি তৈরি করেছে। স্কুল ও কলেজে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে গিয়ে তাদের মুখেই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরা হচ্ছে।

(দ্য রিপোর্ট/জেজে/এপি/মার্চ ২৫, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর