thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল 24, ৫ বৈশাখ ১৪৩১,  ১০ শাওয়াল 1445

৪৬ বছর পর বাগেরহাটে বধ্যভূমির সন্ধান

২০১৭ মার্চ ২৫ ২৩:২০:২১
৪৬ বছর পর বাগেরহাটে বধ্যভূমির সন্ধান

বাগেরহাট প্রতিনিধি : স্বাধীনতার ৪৬ বছর পর বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার খলিশাখালী গ্রামে বধ্যভূমির সন্ধান পাওয়া গেছে। একাত্তরে পাকবাহিনীর হত্যাযজ্ঞের নানা কাহিনী এখান থেকে উঠে এসেছে। সেই ২৫ মার্চ এখানে অসংখ্য নিরীহ লোককে ধরে হত্যা করা হয়েছিল। সে ইতিহাস এতদিন অনেকের কাছে অজানা ছিল। এখানে সেদিন যাদের হত্যা করা হয়েছিল তাদের অনেকের নাম পরিচয় পাওয়া গেছে। প্রথম বারের মত শনিবার (২৫ মার্চ) সকালে সেখানে শহীদদের স্মরণে পুষ্পার্ঘ্য অপর্ণ করা হয়।

জানা গেছে, ১৯৭১ সালের বাংলা ৫ আষাঢ় রবিবার সকাল ১১টার দিকে পাকবাহিনী ও তাদের দোসররা মিলে ওই এলাকায় হামলা চালায়। বলেশ্বর নদী দিয়ে গানবোড যোগে তারা প্রবেশ করার পথে নির্বিচারে গুলি চালায়। এ সময় গুলির শব্দে লোকজন প্রাণ ভয়ে এদিক-ওদিক পালাতে থাকে। আশপাশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আশ্রয় নিতে আসা লোকজন এবং অনেক গ্রামবাসি উপজেলার চরবানিয়ারী ইউনিয়নের খলিশাখালী ও পূর্বখড়মখালী গ্রামের একটি মাঠের মধ্যে হোগলা ও নলবনে লুকিয়ে থাকার জন্য আশ্রয় নেয়। এ সময় পাকবাহিনী তাদের দেখতে পেয়ে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে অসংখ্য নীরিহ লোকজনকে হত্যা করে। যাদের মধ্যে নিহত অনেকের বাড়ি পিরোজপুর, নাজিরপুর, উজিরপুর ও কচুয়াসহ আশপাশের এলাকায়।

চিতলমারী উপজেলার পূর্ব খড়মখালী গ্রামের প্রবীণ গৌর চন্দ্র মজুমদার সেদিনের নৃশংস হত্যাযজ্ঞের বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, ৭১ সালের ৫ আষাঢ় রবিবার ছিলো দিনটি। সেদিন বলেশ্বর নদী দিয়ে পাকবাহিনী ও তাদের দোসরা আক্রমণ চালায়। গুলির শব্দে চারিদিক কেঁপে ওঠে। অনেকে খলিশাখালী ও পূর্বখড়মখালী গ্রামের একটি মাঠের মধ্যে গিয়ে লুকিয়ে থাকে। এ সময় পাকবাহিনী তাদের দেখে ফেলে তাদের উপর গুলি চালায়। এতে খড়মখালী গ্রামের বিমল কান্তি হীরা, ভদ্র কান্তি হীরা, রাজদেব হীরা, যোগেন্দ্র নাথ মজুমদার, মহেন্দ্র নাথ মন্ডল, আদিত্য মজুমদার, নীল কমল মন্ডল, জিতেন মজুমদার, খগেন মন্ডল (খোকা), অমীয় চৌকিদারের ভাইসহ আশপাশের এলাকা থেকে আশ্রয় নেওয়া অসংখ্য লোক নিহত হয়। স্বাধীনতার ৪৬ বছর পার হলেও এ স্থানটি এতো দিনে সংরক্ষণের কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। এছাড়া এলাকার আরও অনেকে জানান, এ মাঠের জমিতে মাটি খুঁড়ে অনেক মানুষের হাড়গোড় পাওয়া গেছে।

খলিশাখালী গ্রামের বৃদ্ধা প্রমিলা মন্ডল বলেন, আমি নিজেই হত্যাযজ্ঞের সেই ভয়াবহতা প্রত্যক্ষ করেছি। যুদ্ধ চলাকালিন সময়ে অনেক মুক্তিযোদ্ধাদের আমি রান্না-বান্না করে দিয়েছি। আমি ওই জায়গাটিতে শহীদদের স্মরণে স্মৃতিফলক নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি।

চরবানিয়ারী ইউপি চেয়ারম্যান অশোক কুমার বড়াল জানান, সেদিন যাদের হত্যা করা হয়েছিলো তাদের অধিকাংশ লোকজন আশপাশের জেলা থেকে এখানে আশ্রয় নিতে এসেছিলো। তাদের অনেকের নাম পরিচয় জানা যায়নি। তবে সেখানে অসংখ্য লোক প্রাণ হারিয়েছে।

চিতলমারী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা ডেপুটি কমান্ডার মো. আবু তালেব শেখ বলেন, ওইদিন বাগেরহাট থেকে কুখ্যাত রাজাকার রজ্জব আলী ফকিরের নেতৃত্বে পাকবাহিনীর একটি দল এলাকায় প্রবেশ করে বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগসহ গণহত্যা চালায়। এছাড়া বলেশ্বর নদী থেকে গানবোডে সেল নিক্ষেপ করার পাশাপাশি রাইফেলের গুলি চালাতে চালাতে পাকবাহিনী এলাকায় ঢুকে গণহত্যা চালায়।

বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আবু সাঈদ বলেন, মক্তিযোদ্ধা ও এলাকাবাসীর তথ্যানুযায়ী খলিশাখালী এলাকায় গণহত্যার সন্ধান পাওয়া যায়। মুক্তিযোদ্ধা ও এলাকাবাসীর তথ্যমতে এখানে অর্ধশত ব্যক্তিকে নির্যাতন ও গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ওই স্থানটি যথাযথভাবে সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। নিহতদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে একটি স্মৃতিফলক স্থাপন করার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া যারা শহীদ হয়েছেন তাদের খোঁজ নিয়ে একটি তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। শনিবার সকালে গণহত্যা দিবস উপলক্ষে সেখানে শহীদদের স্মরণে পুষ্পার্ঘ্য অপর্ণ করা হয়েছে।

(দ্য রিপোর্ট/এমএইচএ/মার্চ ২৫, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর