thereport24.com
ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল 24, ৭ বৈশাখ ১৪৩১,  ১১ শাওয়াল 1445

একাদশ জাতীয় নির্বাচনের প্রস্ততি

আস্থা অর্জনের চেষ্টায় আ’লীগ, চ্যালেঞ্জে বিএনপি

২০১৭ মার্চ ২৮ ২৩:১৩:০৫
আস্থা অর্জনের চেষ্টায় আ’লীগ, চ্যালেঞ্জে বিএনপি

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখে জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে একাদশ নির্বাচনের প্রায় দেড় বছর আগেই প্রচার-প্রচারণায় নেমেছে। তবে এখনো নির্বাচনী মাঠে নামতে পারেনি বিএনপি; বরং দলটি নির্বাচনকালীন ‘নিরপেক্ষ’ সরকারের দাবি আদায় ও ঘর গোছাতে চ্যালেঞ্জের মুখেই রয়েছে।

আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে-এমনটা ধরেই চলমান উন্নয়নমূলক প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নসহ জনগণের আস্থা অর্জনই ক্ষমতাসীন দলটির মূল লক্ষ্য। তারা মনে করেন, নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ ছাড়া আর কোনো পথ খোলা নেই। গত নির্বাচন বর্জন করে ইতোমধ্যে তারা জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। তাই ভবিষ্যতে এই ভুল আর করবে না বিএনপি। এ ছাড়া ভোটের মাঠে শক্ত প্রতিপক্ষ মোকাবিলার জন্য সাংগঠনিকভাবে আওয়ামী লীগ তৈরি হচ্ছে। আগামী দিনেও আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ থেকে জনগণের পাশে থাকবে। উন্নয়নের ধারা অব্যহত রাখতে শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প নেই।

এদিকে, বিএনপি নেতা-কর্মীরা দাবি করছে-আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটের অধিকার হরণ করে ক্ষমতায় আছে। এই সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। নিরপেক্ষ সরকার ছাড়াএ দেশে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ আদায়ে তাদের অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। ফলে দলকে সেভাবেই প্রস্তুত করতে হবে। তৃণমূল পুনর্গঠনের কাজ চলছে; দীর্ঘদিন কমিটি নেই, নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে।

বিএনপি নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা-এসব চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করে সঠিক সময় নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণায় নামবে বিএনপি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা নিয়ে সংকটের সমাধান না হলে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার প্রয়োজন পড়ে না। এখানে আওয়ামী লীগের কৌশল থাকতে পারে। আগে থেকেই নির্বাচনী প্রচারণায় নেমে হয়তো বিএনপির মনোভাব বুঝতে চাইছে তারা। কারণ, আবারও যদি বিএনপি নির্বাচন বয়কট করে, তাহলে তো আওয়ামী লীগের আর নির্বাচনী প্রচারণায় নামার প্রয়োজন নেই।

এ বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. মিজানুর রহমান শেলী দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, ‘সরকারের কাঠামো অনুযায়ী আওয়ামী লীগ অপ্রতিদ্বন্দ্বী অবস্থায় আছে। এই অবস্থায় নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালানো কিংবা না চালানো নিয়ে কোনো বিশেষ তাৎপর্য নেই। কারণ, বিএনপি মনে করছে, বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় রেখে তাদের জয়ী হওয়ার কোনো আশাই নেই।’

তিনি আরো বলেছেন, ‘এ অবস্থায় আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়েযদি কোনো সমাধানের পথ না বের কথা যায়, তাহলে আগামীতে কী হবে তা কেউ বলতে পারে না। এমন হতে পারে, বিএনপি বা অন্য দলগুলোকে নিয়ে বিচ্ছিন্নভাবে অংশগ্রহণে করতে পারে। এভাবে একটি নির্বাচন করে আবারও সরকার গঠন করতে পারে আওয়ামী লীগ। তবে তা কতটা ধরে রাখতে পারে এটা সময়ই বলে দেবে।’

আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা নিয়ে শেলী মনে করেন, ‘জনগণকে নিয়ে যেহেতু রাজনীতি করতে হয়, সে ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ জনগণের কাছে যাবে এটাই স্বাভাবিক। তবে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আমূল পরিবর্তন না ঘটলে সংকট থেকেই যাবে।’

২০১৪ সালে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মধ্য দিয়ে পরপর দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার। আগামী নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগ উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে ক্ষমতার ধারাবাহিকতার ওপর জোর দিচ্ছে। ২০১৯ সালে বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষ হবে। এর আগে ২০১৮ সালের শেষদিকে জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারণী মহল থেকে তৃণমূলসহ সহযোগী সংগঠনগুলোকে নির্বাচনী প্রস্তুতির জন্য ইতিমধ্যেই দেওয়া হয়েছে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা। আগামী নির্বাচন সামনে রেখে জোরেশোরেই চলছে নির্বাচনী প্রস্তুতি। নির্বাচন সামনে রেখেইপ্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বিভিন্ন জেলায় সফর করছেন।

এর অংশ হিসেবে গত ১৪ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লক্ষ্মীপুর, ২১ মার্চ খুলনা বিভাগের মাগুরায় জনসভা করেন। বুধবার (২৯ মার্চ) ফরিদপুরে এক জনসভাতেও শেখ হাসিনার যোগ দেওয়ার কথা।

চলতি বছর এপ্রিলের ১৫ তারিখে দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে জনসভা করবেন আওয়ামী লীগ-প্রধান। এপ্রিলের ২৩ তারিখ তিনি বরিশাল বিভাগের বরগুনাতে জনসভা করবেন। সর্বশেষ ২৯ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গায় শেখ হাসিনার জনসভার জন্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

গত বছরের অক্টোবরে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দু’দিনব্যাপী আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। মূলত দলীয় সম্মেলনের পর থেকেই প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দেন। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি বগুড়ার শান্তাহার উপজেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভার মধ্য দিয়েই মূলত এ আনুষ্ঠানিকতা শুরু করে দলটি।

গত ১৮ মার্চ রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৭তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বাংলাদেশে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদের কোনো স্থান হবে না। তথ্য সংগ্রহ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহযোগিতা করুন। দেশে গণতন্ত্র আছে বলেই উন্নয়ন হচ্ছে, কিন্তু উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে বারবার ষড়যন্ত্র করা হয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০২১ সালে আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী আমরা পালন করব। ২০২০ সাল জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী আমরা উদযাপন করব। জাতির পিতার স্বপ্ন আমরা বাস্তবায়ন করব, তার জন্মদিনে এটাই হোক আমাদের প্রতিজ্ঞা।’

শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘২০২১ সালে বাংলাদেশ হবে মধ্যম আয়ের দেশ। আর ২০৪১ সালে বাংলাদেশ হবে উন্নত, সমৃদ্ধ। বাংলাদেশে কোনো দরিদ্র থাকবে না, কোনো মানুষ গৃহহারা থাকবে না, কোনো মানুষ রোগে-শোকে কষ্ট পাবে না, সবাই তাদের জীবনের মৌলিক অধিকারগুলো ভোগ করতে পারবে।’

সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ প্রশ্নে সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই বাংলাদেশে কোনো জঙ্গি সন্ত্রাসবাদের স্থান হবে না। যে যেখানে আছেন, সেখানেই তাদেরকে সেভাবে কাজ করতে হবে। আমাদের নেতাকর্মীসহ সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে এ জন্য সতর্ক থাকতে হবে, কারো সন্তান যেন কোনোভাবে জঙ্গিবাদের পথে না যায়।’ কারো এলাকায় কোনো জঙ্গি বা সন্ত্রাসী রয়েছে কিনা, এ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানানোর আহ্বানও জানান তিনি।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কর্নেল (অব.) ফারুক খান দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, ‘নির্বাচনের জন্য সব সময় প্রস্তুত থাকতে হয়। গণতন্ত্রের জন্য যেকোনো সময় নির্বাচন হতে পারে। আমাদের নেত্রী (শেখ হাসিনা) আওয়ামী লীগের সম্মেলনে স্পষ্টভাবে আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে বলে দিয়েছেন। আমরা নির্বাচন সামনে রেখে সাংগঠনিক প্রস্তুতি ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছি।’

আগামী নির্বাচনের প্রস্ততি সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান দ্য রিপোর্টকে বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী দেশের বিভিন্ন জায়গায় যাচ্ছেন, রাজনৈতিক বক্তব্য দিচ্ছেন। বিএনপি বিএনপির মতো করে প্রস্তুত হচ্ছে। বিএনপির কিছু সমস্যা আছে সেগুলো কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। এখন একটা সমন্বয় করে তারা প্রচারণায় নামবে। আওয়ামী লীগ বেশি আগে প্রচারণা শুরু করেছে। যাই হোক সরকার কী চিন্তা করে করছে তারাই বলতে পারবে। বিএনপি আগামী নির্বাচনকে অবশ্যই চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেবে।’

তিনি আরও বলেছেন, ‘সরকারের কৌশল থাকতে পারে।কিন্তু বিএনপিকে একতাবদ্ধ হয়ে জনগণের দাবি আদায়ে মাঠে নামতে হবে। আমাদের প্রচারণার প্রধান উদ্দেশ্যে হবে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন, যেখানে সব দল অংশগ্রহণ করতে পারে। আমাদের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে দলকে শক্তিশালী করা। তৃণমূল থেকে শীর্ষ পর্যন্ত দলকে সংগঠিত করা।’

দলকে সুসংগঠিত করে বিএনপি সঠিক সময়েই নির্বাচনী প্রচারণায় নামবে বলেও জানান সাবেক এই সেনাপ্রধান।

আগামী নির্বাচনে সরকারের মনোভাব বুঝে এগুতে চায় বিএনপি। এ বিষয়ে দলের নেতারা বুঝেশুনেই নির্বাচনী প্রচারণায় মাঠে নামতে চান। দলটির শীর্ষ নেতাদের বক্তব্যেও এমটা উঠে এসেছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, ‘সরকারি দল ভোটের প্রচারণা চালালেও বিএনপির নেতাকর্মীদের মিথ্যা মামলা হয়রানি করা হচ্ছে। সভা-সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয় না। সুতরাং এখনই বুঝতে পারছি, আগামী নির্বাচন আপনারা (আওয়ামী লীগ) কেমন করতে চান। কিন্তু বিএনপিকে নির্বাচনের বাইরে রেখে মামলা মোকদ্দমা দিয়ে সেই ধরনের একদলীয় নির্বাচন করার চেষ্টা করলে সেটি সুষ্ঠু হবে না।’

এ ছাড়া বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করে দিয়েছে। উনারা সমাবেশ করবেন আর আমরা ঘরের মধ্যে ক্লোজড ডোর মিটিং করতেও অনুমতি নিতে হবে। নির্বাচন করবেন ভালো কথা, এর জন্য আগে পরিবেশ তৈরি করতে হবে। সভা-সমাবেশ করার মৌলিক অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। গণতান্ত্রিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে। তাহলে নির্বাচন হবে, না হলে নির্বাচন হবে না। বর্তমান অবস্থা রেখে কোনো নির্বাচন হবে না।’

বিএনপি নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার পরিবর্তন চায় জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেছেন, ‘সেটি অবশ্যই নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের একটি নির্বাচন হতে হবে। অন্যথায় এ দেশের মানুষ কোনো নির্বাচন মেনে নেবে না।’

(দ্য রিপোর্ট/এমএইচ/এম/জেডটি/এনআই/মার্চ ২৭, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর