thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল 24, ৬ বৈশাখ ১৪৩১,  ১০ শাওয়াল 1445

তমা কন্সট্রাকশনের এমডি’র দাবি

জুনের মধ্যেই শেষ হবে মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার

২০১৭ এপ্রিল ০২ ২২:৫২:১৭
জুনের মধ্যেই শেষ হবে মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার

যানজট নামক মহাভোগান্তি থেকে মুক্তি পাবে রাজধানীবাসী, সেই লক্ষ্যে মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার নির্মাণ প্রকল্পটি হাতে নেয় বর্তমান সরকার। প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৩ সালের ১৫ জানুয়ারি। এরপর তিন দফায় এই প্রকল্পে সমাপ্তির সময় ও ব্যয় বাড়ানো হয়। সেই অনুযায়ী চলতি বছর জুন মাসে এই ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হওয়ার কথা। কিন্তু অদৌ কি নির্ধারিত সময় তা শেষ হবে? বাস্তবিক পরিস্থিতিতে জনমনে দেখা দিয়েছে এমন প্রশ্ন। এমন পরিস্থিতিতে এই ফ্লাইওভার নির্মাণে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান তমা কনস্ট্রাকশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আতাউর রহমান ভুঁইয়া মানিক আশ্বস্ত করেছেন যে জুন মাসের মধ্যেই ফ্লাইওভারটির নির্মাণ কাজ শেষ হবে।

দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে আতাউর রহমান ভুঁইয়া মানিক বলেছেন, ‘আগামী জুন মাসে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হবে।’

গত ৪ বছরের বেশি সময় ধরে মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ চলায় এই রুট ব্যবহারকারী বিভিন্ন এলাকার সাধারণ মানুষের চলাচল চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষত ফ্লাইওভার নির্মাণ এলাকায় বসবাসকারীদের দৈনন্দিন জীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে। নির্মাণ কাজ চলায় চলাচলের রাস্তাগুলো হয়ে পড়েছে সরু। সেগুলো আবার খানা-খন্দে ভরে গেছে। বৃষ্টি হলে পানি জমে থাকে। বৃষ্টি না হলেও কাঁদা-পানির উপস্থিতি সেখানে থাকেই। এরওপর আবার কখনো একদিকের রাস্তা বন্ধ করে চলে নির্মাণ কাজ। সেই সময়টায় অপরদিকের রাস্তা দিয়েই আসা-যাওয়া করতে হয় বাস-সিএনজি-রিকশাসহ বিভিন্ন পরিবহনকে। সেক্ষেত্রে নিত্যদিনই তীব্র যানজট লেগে থাকে। এমনকি মধ্যরাতেও সেই যানজটে পড়ে ভোগান্তি পোহাতে হয় বাড়িফেরা মানুষকে। পাশাপাশি নির্মাণ কাজের আশপাশে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় দুর্ঘটনার ভয় তো আছেই!

ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ কেন্দ্র করে এই যখন অবস্থা, ঠিক সেই মুহূর্তে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে ঢাকা ওয়াসার ড্রেন নির্মাণ প্রকল্প। সব মিলিয়ে মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার নির্মাণ সংলগ্ন এলাকায় (শান্তিনগর মোড় থেকে শুরু করে মালিবাগ রেলগেট ও শান্তিনগর থেকে শুরু করে মগবাজার ওয়ারল্যাস পর্যন্ত) যেন মানুষের দুঃখ-কষ্ট-ভোগান্তির চলমান দৃশ্য বিরাজমান। ফ্লাইওভার নির্মাণের পর কি সুবিধা পাওয়া যাবে, এরচেয়ে এই নির্মাণ কাজ শেষ কবে হবে; মানুষের কাছে এটাই হয়ে দাঁড়িয়েছে বড় প্রশ্ন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, মৌচাক থেকে শান্তিনগর মোড় পর্যন্ত গার্ডার বসানোসহ অন্যান্য কাজ এগিয়ে চলছে। একইভাবে কাজ চলছে প্রকল্পটির অন্যান্য স্থানেও। মগবাজার-মৌচাক কিংবা মালিবাগ-মৌচাক হয়ে চলাচলকারীদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। মৃত্যুঝঁকি নিয়ে চলাচল করছে যাত্রীবাহী বাস,প্রাইভেট কার, রিকশাসহ অন্যান্য যানবাহন ও পথচারীরা।

ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজের মাঝেই চলছে ঢাকা ওয়াসার ড্রেন নির্মাণ প্রকল্প। ফলে রাস্তাগুলো ভরে গেছে খানা-খন্দে, কাদায়। একটু বৃষ্টি হলেই মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার প্রকল্প এলাকার রাস্তায় পানি জমে যাচ্ছে। কোথাও কোথাও যানবাহন চলাচলই কঠিন হয়ে পড়ছে। রাস্তায় পানি জমে থাকা ও খানা-খন্দের কারণে তৈরি হচ্ছে দীর্ঘ যানজটও।

জানা গেছে, মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার প্রকল্পটি ২০১১ সালের ৮ মার্চ একনেক বৈঠকে অনুমোদন পায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি প্রকল্পের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। প্রথমে প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় নির্ধারণ করা হয়েছিল ২০১১ থেকে ২০১৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। পরে প্রকল্পের মেয়াদ ডিসেম্বর ২০১৬ পর্যন্ত বাড়ানো হয়। কিন্তু এই সময়েও কাজ শেষ না হওয়ায় সময় বাড়ানো হয় চলতি বছরের (২০১৭) জুন পর্যন্ত।

দেশের সবচেয়ে বড় এই ফ্লাইওভার নির্মাণে প্রথমে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৪৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা। দ্বিতীয় ধাপে তা বেড়ে ৭৭২ কোটি টাকা ধরা হয়। বর্তমানেপ্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২১৮ দশমিক ৮৯ কোটি টাকা।

তবে শেষ পর্যন্ত এই প্রকল্পটি নির্ধারিত সময়ের (আগামী জুন মাসে) মধ্যে শেষ হচ্ছে কিনা? কিংবা সময় বাড়ানোর পাশাপাশি আবারও নির্মাণ ব্যয় বাড়ানো হবে কিনা-এ নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

এ বিষয়ে বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মেহেদী আহমেদ আনসারী বলেছেন, ‘রাজধানীতে যতগুলো ফ্লাইওভার হয়েছে সবই যানজট দূর হওয়ার চেয়ে দুর্ভোগ বেড়েছে বেশি। এজন্য আমাদের এলিভেটেড ও আন্ডারগ্রাউন্ড ব্যবস্থা নিয়ে ভাবতে হবে।’

তিনি আরও বলেছেন, ‘২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের একটি কোম্পানি সমীক্ষা করে মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের নকশা তৈরি করেছিল। আট বছর পর ২০১৩ সালে এই নকশা অনুযায়ী কাজ শুরু হয়। কিন্তু কাজ শুরু হলেও প্রকল্প এলাকায় মাটির নিচে বিভিন্ন সেবা সংস্থার পাইপ ও তার বসে যাওয়ায় নকশাও পরিবর্তন করা হয়েছে। যা মোটেও কাম্য নয়। কেননা কোনো কাজ করার আগে নকশা হলো মূল বিষয়। যদি সেটাতে সমস্যা থাকে তাহলে আগে কেন পরীক্ষা না করে কাজ শুরু করা হলো।’

এ প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তমা কনস্ট্রাকশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আতাউর আতাউর রহমান ভূঁইয়া জানিয়েছেন, শ্রমিক ও পথচারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ চলছে। তিনি বলেছেন, ‘এই যে সরকার এত বড় একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প করছে, সাধারণ মানুষের জন্য, এত ঝুঁকি মাথায় নিয়ে এই প্রকল্প; এই কথাটা আপনারা বলেন না যে এই গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পটা শেষ হলে এলাকার লোকের কত উপকার হবে।’

তিনি আরও বলেছেন, ‘সারা ঢাকা শহরে মৌচাকের মতো ট্রাফিক জ্যাম অন্য কোথাও নাই। যে আমলে ঢাকা শহরে এক শ’ গাড়ি ছিল, রিক্সা ছিল সেই আমলেও মৌচাকে যানজট ছিল। সেই যানজটের কথা মাথায় রেখেই সরকার এত বড় প্রকল্প হাতে নিয়েছে। আর আমরা ঝুঁকি মাথায় নিয়ে নিজের শ্রমিক, নিজের ইঞ্জিনিয়ার, নিজের গাড়ি-ঘোড়া সব কিছু রিস্কের (ঝুঁকির মধ্যে) মধ্যে রেখে ৯৫ শতাংশ কাজ শেষ করেছি।’

তমা কনস্ট্রাকশনের এমডি আরও বলেছেন, ‘তিন মাস ধরে নিচে (রাস্তায়) আমাদের কোনো কাজ নাই। সব উপরে চলছে। মৌচাক-মালিবাগে গিয়ে দেখেন, গাড়ি চলাচলের কোনো অবস্থা নাই। ওয়াসার পানিতে তো রাস্তায় ওভার ফ্লো হচ্ছে, কই...? আমি কি করবো। এখন যত কিছু হয় ফ্লাইওভারের দোষ! নিচে তো আমার কোনো কাজ নাই। পানি আমি কিভাবে সরাবো?’

নিজের বক্তব্যের সঙ্গে তিনি যোগ করেছেন, ‘ওয়াসাকে দোষারোপ করছি না। তবে বাস্তব চিত্রটাও আপনারা দেখেন। এখানে আমাদের তো আর নিচের কাজ নাই, সবই উপরে কাজ।’

আতাউর আতাউর রহমান ভূঁইয়া জোর দিয়েই বলেছেন, ‘আগামী জুন মাসের মধ্যেই এই ফ্লাইওভার নির্মাণ প্রকল্প শেষ হবে।’

(দ্য রিপোর্ট/কেএ/জেডটি/এনআই/এপ্রিল ০২, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর