thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল 24, ৬ বৈশাখ ১৪৩১,  ১০ শাওয়াল 1445

দেবীগঞ্জে থাই পেয়ারা চাষে শরবত আলীর সাফল্য

২০১৭ এপ্রিল ০৮ ২০:১৪:৪০
দেবীগঞ্জে থাই পেয়ারা চাষে শরবত আলীর সাফল্য

পঞ্চগড় প্রতিনিধি : পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলায় থাই পেয়ারা চাষ করে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছেন শরবত আলী (৩৫) নামের এক চাষী। মাত্র ১৩ মাস আগে স্বল্প পরিসরে তিনি এই থাই পেয়ারা চাষ শুরু করে এখন ২০ একর জমিতে থাই পেয়ারার বাগান গড়েছেন।

শরবত আলীর বাগানে উৎপাদিত এই সব থাই-পেয়ারা আকারে অনেক বড় এবং সুস্বাদু হওয়ায় বাজারে চাহিদাও অনেক বেশি। প্রতিদিন বাগান থেকেই এই থাই-পেয়ারা পঞ্চগড় জেলা ছাড়াও সরবরাহ হচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের গজপুরী এলাকার বছরউদ্দীনের ছেলে শরবত আলী বাড়ির পার্শ্ববর্তী করতোয়া নদীর তীরে ২০ একর জমিতে গড়ে তুলেছেন দুটি পেয়োরা বাগান। বাগান দুটিতে ১০ হাজার থাই পেয়ারা গাছ এখন ফলে ফলে পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বারমাসী এই পেয়ারা বিক্রি করতে কোন ধরণের সমস্যায় পড়তে হয় না শরবত আলীকে। বাজারে অনেক চাহিদা থাকায় প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ব্যবসায়ীরা বাগান থেকেই কিনে নিচ্ছেন সুস্বাদু এই থাই-পেয়ারা।

৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম ওজনের একেকটি থাই-পেয়ারা বাগানেই বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৮০ থেকে ৯০ টাকা পাইকারী দরে।

পেয়ারা বাগানের ম্যানেজার তহরুল ইসলাম বাবুল বলেন, ‘বর্তমানে যে পরিমাণে ফল ধরেছে এতে আমরা প্রতিটি গাছ থেকে দেড় হাজার থেকে দুই হাজার টাকার পেয়ারা বিক্রি করতে পারবো। মালিকের শুরুটা শুন্য থেকে হলেও থাই-পেয়ারা চাষ করে তার ভাগ্য বদল হয়ে গেছে। এখন তিনি শুধু আমাকেই প্রতিমাসে ৩০ হাজার টাকা বেতন দেন এছাড়া প্রতিদিন তো ২০ থেকে ২৫ জন শ্রমিক বাগানে পরিচর্যার কাজ করেই।’

থাই পেয়ারা বাগানের মালিক শরবত আলী বলেন, ‘আমি ছোট বেলা থেকেই ছোট-খাট ব্যবসা করতাম। প্রথম দিকে আমি আটার ব্যবসা করতাম। এরপর শুরু করি আলুসহ অন্যান্য সবজির ব্যবসা। সবজি ব্যবসার সুবাদে আমাকে চট্রগ্রাম, খুলনা, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যেতে হতো। এভাবেই এক সময় খুলনায় আমার চোখে পড়ে এই থাই পেয়ারা। সেখানে অনেক চাহিদা দেখে আমারও ইচ্ছা জাগে থাই পেয়ারা বাগান করার। সেই ইচ্ছা অনুযায়ী আজ থেকে ঠিক ১৩ মাস আগে খুলনার এক ব্যবসায়ীর মাধ্যমে কিছু থাই পেয়ারার চারা এনে পরীক্ষামুলক একটি বাগান শুরু করি। চারা লাগানোর মাত্র তিন মাসের মাথায় আমার বাগানটি ফল দেওয়া শুরু করে। এরপর আস্তে আস্তে পেয়ারা বিক্রি করি আর নদীর চরে জমি কিনতে থাকি। ধু ধু বালুর মাঠে আমি একটি বাগান করেছি তারপরও অনেক ভাল হয়েছে পেয়ারা বাগানটি। এভাবে এই পর্যন্ত আমি প্রায় ২০ লাখ টাকার পেয়ারা বিক্রি করেছি।’

তিনি বলেন, ‘আমার শুরুটা প্রায় শুন্য থেকে হয়েছে বলা যায়। তারপরও আমি এখন সাবলম্বী। এই বাগানের পরিচর্যার জন্য চাপাইনবাবগঞ্জ থেকে একজন ম্যানেজার নিয়োগ দিয়েছি। এই পেয়ারা বাগান করে আমার যেমন উন্নতি হয়েছে তেমনি এই এলাকার কিছু গরিব দুঃখী মানুষেরও কর্মসংস্থান হয়েছে। আমার এখানে ২০ থেকে ২৫ জন প্রতিদিন কাজ করে। এখন এই এলাকায় আমাকে দেখে অনেকেই পেয়ারা বাগান করতে উৎসাহ পাচ্ছে। থাই পেয়ারা বাগানের পাশাপাশি আমি তেজপাতা ও পেঁপেসহ অন্যান্য বাগানও করেছি।’

পঞ্চগড় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. শামসুল হক বলেন, ‘শরবত আলী দেবীগঞ্জের মাটিতে থাই পেয়ারা বাগান করে চমক সৃষ্টি করেছেন। এই এলাকার মাটি এবং আবহাওয়া থাই পেয়ারার জন্য উপযোগী হওয়ায় তিনি সফলতার মুখ দেখেছেন। শরবত আলীর কঠোর পরিশ্রম আর কৃষি বিভাগের পরামর্শে এই থাই পেয়ারার বাগান এখন পঞ্চগড় জেলায় একটি মডেলে পরিণত হয়েছে। শরবত আলীর এই থাই পেয়ারা বাগানের মাধ্যমে তিনি নিজে যেমন সাবলম্বী হয়েছেন পাশাপাশি কর্মসংস্থানও সৃষ্টি করেছেন এলাকার আরও কিছু হত-দরিদ্র মানুষের। তার এই ভাল উদ্যোগকে আরও সমৃদ্ধ করতে কৃষি বিভাগের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।’

(দ্য রিপোর্ট/এমএইচএ/এপ্রিল ০৮, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর