thereport24.com
ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল 24, ১১ বৈশাখ ১৪৩১,  ১৫ শাওয়াল 1445

শুদ্ধাচারে পুরস্কার পাবেন সরকারি চাকুরেরা

২০১৭ এপ্রিল ০৯ ২১:২৫:২২
শুদ্ধাচারে পুরস্কার পাবেন সরকারি চাকুরেরা

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শুদ্ধাচার চর্চায় উৎসাহ দিতে পুরস্কার প্রদানের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এজন্য ‘শুদ্ধাচার পুরস্কার প্রদান নীতিমালা-২০১৭’ প্রণয়ন করা হয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ চলতি বছর ৩ এপ্রিল নীতিমালাটি জারি করেছে। নীতিমালা অনুযায়ী, সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে কর্মরত ১৫ জন চাকরিজীবী প্রতি বছর শুদ্ধাচার পুরস্কার পাবেন। তবে এ সংখ্যা কম-বেশি হতে পারে বলেও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে।

পুরস্কার হিসেবে একটি সার্টিফিকেট এবং এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ দেওয়া হবে বলে নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে। নীতিমালা অনুযায়ী প্রতি অর্থবছরে (জুলাই-জুন) সরকারি কর্মচারীদের শুদ্ধাচার চর্চার জন্য পুরস্কার দেওয়া হবে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (সংস্কার) সোলতান আহমদ রবিবার দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, ‘প্রশাসনে শুদ্ধাচার চর্চা উচ্চ মাত্রায় নিয়ে যেতে একেবারে মাঠ পর্যায় থেকে প্রশাসনের সচিব পর্যন্ত পুরস্কার দেওয়া হবে। এজন্য একটি নীতিমালা চূড়ান্ত করেছি আমরা।’

চলতি বছর থেকে শুদ্ধাচার পুরস্কার দেওয়া হবে। নীতিমালায় উল্লেখ থাকলেও কতজনকে পুরস্কার দেওয়া হবে তা এ সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় চূড়ান্ত হবে বলেও জানিয়েছেন অতিরিক্ত সচিব।

নীতিমালায় বলা হয়েছে, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শুদ্ধাচার চর্চায় উৎসাহ দিতে সরকার ‘শুদ্ধাচার পুরস্কার প্রদান নীতিমালা-২০১৭’ প্রণয়ন করেছে। সকল মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অন্যান্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের শুদ্ধাচার চর্চায় উৎসাহ প্রদানের ক্ষেত্রে এই নীতিমালা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

‘জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল’ এ বলা হয়েছে-শুদ্ধাচার বলতে সাধারণভাবে নৈতিকতা ও সততা দ্বারা প্রভাবিত আচরণগত উৎকর্ষ বোঝায়। এর দ্বারা একটি সমাজের কালোত্তীর্ণ মানদণ্ড, নীতি ও প্রথার প্রতি আনুগত্যও বোঝানো হয়। ব্যক্তি-পর্যায়ে এর অর্থ হলো কর্তব্যনিষ্ঠা ও সততা, তথা চরিত্রনিষ্ঠা।

নীতিমালা অনুযায়ী মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অন্যান্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র সচিব ও সচিবরা এ পুরস্কারের জন্য বিবেচিত হবেন।

প্রতিটি মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অন্যান্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের গ্রেড-১ থেকে গ্রেড-১০ ভুক্ত একজন কর্মচারী এবং গ্রেড-১১ হতে গ্রেড-২০ ভুক্ত একজন কর্মচারী পুরস্কার পাবেন।

মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অন্যান্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের আওতাধীন দফতর বা সংস্থার প্রধানদের মধ্যে থেকে একজন এবং মাঠ পর্যায়ের বিভাগীয় বা আঞ্চলিক কার্যালয়গুলোর প্রধানদের মধ্য থেকে একজন পুরস্কার পাবেন।

মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অধীন বিভিন্ন দফতর বা সংস্থার গ্রেড-১ থেকে গ্রেড-১০ ভুক্ত একজন কর্মচারী এবং গ্রেড-১১ থেকে গ্রেড-২০ ভুক্ত একজন কর্মচারী শুদ্ধাচারের জন্য পুরস্কার পাবেন।

মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অন্যান্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের আওতাধীন মাঠ পর্যায়ের বিভাগীয় বা আঞ্চলিক কার্যালয়গুলোর গ্রেড-৩ থেকে গ্রেড-১০ ভুক্ত একজন কর্মচারী এবং গ্রেড-১১ হতে গ্রেড-২০ ভুক্ত একজন কর্মচারী পুরস্কারের জন্য বিবেচিত হবেন।

এ ছাড়া মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অন্যান্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের মাঠ পর্যায়ের জেলা কার্যালয়গুলোর প্রধানদের মধ্য থেকে একজন এবং জেলা কার্যালয়গুলোর গ্রেড-৪ থেকে গ্রেড-১০ ভুক্ত একজন ও গ্রেড-১১ হতে গ্রেড-২০ ভুক্ত একজন কর্মচারী পুরস্কার পাবেন।

শুদ্ধাচার পুরস্কারের জন্য আরও বিবেচিত হবেন মাঠ পর্যায়ের উপজেলা কার্যালয়ের প্রধানদের মধ্য থেকে একজন এবং উপজেলা কার্যালয়ের গ্রেড-৫ থেকে গ্রেড-১০ ভুক্ত একজন ও গ্রেড-১১ থেকে গ্রেড-২০ ভুক্ত একজন কর্মচারী।

শুদ্ধাচারের ১৮টি সূচকের ভিত্তিতে কর্মকর্তা-কর্মচারী নির্বাচন করা হবে। পুরস্কারের জন্য সুপারিশের ক্ষেত্রে শুদ্ধাচার চর্চার জন্য নির্ধারিত ১৮টি সূচকে ৯০ নম্বর এবং মন্ত্রণালয়/বিভাগ/অন্যান্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান/দফতর/সংস্থার ধার্য করা অন্যান্য কার্যক্রমে ১০ নম্বরসহ মোট ১০০ নম্বর বিবেচনা করা হবে।

শুদ্ধাচার পুরস্কারের সূচকের মধ্যে পেশাগত জ্ঞান ও দক্ষতায় নম্বর ৫, সততার নিদর্শনে ৫, নির্ভরযোগ্যতা ও কর্তব্যনিষ্ঠায় ৫, শৃঙ্খলাবোধে ৫, সহকর্মীদের সঙ্গে আচরণে ৫, সেবা গ্রহীতার সঙ্গে আচরণে ৫, প্রতিষ্ঠানের বিধি-বিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীলতায় ৫, সমন্বয় ও নেতৃত্ব দানের ক্ষমতায় ৫, তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারে পারদর্শিতায় নম্বর ৫ থাকবে।

এ ছাড়া পেশাগত, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিষয়ক নিরাপত্তা সচেতনতায় ৫, ছুটি গ্রহণের প্রবণতায় ৫, উদ্ভাবন চর্চায় ৫, বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি বাস্তবায়নে তৎপরতায় ৫, সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে ৫, স্বপ্রণোদিত তথ্য প্রকাশে আগ্রহে ৫, উপস্থাপন দক্ষতায় ৫, ই-ফাইল ব্যবহারে আগ্রহে ৫ ও অভিযোগ প্রতিকারে সহযোগিতায় ৫ নম্বর থাকবে।

নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে, পুরস্কারের জন্য বিবেচ্য কর্মচারীকে প্রতি অর্থবছরে ন্যূনতম ছয় মাস সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতে হবে। কোনো চাকরিজীবীর গুণাবলীর সূচকের বিপরীতে প্রাপ্ত সর্বমোট নম্বরের ভিত্তিতে সেরা কর্মচারী হিসাবে মূল্যায়ন করা হবে।

কোনো কর্মচারীর মোট প্রাপ্ত নম্বর কমপক্ষে ৮০ না হলে তিনি শুদ্ধাচার পুরস্কারের জন্য বিবেচিত হবেন না। সর্বোচ্চ নম্বর প্রাপ্ত কর্মচারী শুদ্ধাচার পুরস্কারের জন্য বিবেচিত হবেন। মূল্যায়নের পর একাধিক কর্মচারী একই নম্বর পেলে লটারির ভিত্তিতে সেরা কর্মচারী নির্বাচন করতে হবে।

কোনো কর্মচারী যে কোনো অর্থবছরে একবার শুদ্ধাচার পুরস্কার পেলে তিনি পরবর্তী ৩ অর্থবছরের মধ্যে পুনরায় পুরস্কার পাওয়ার জন্য বিবেচিত হবেন না।

নীতিমালায় বলা হয়েছে, সচিব বা সিনিয়র সচিবদের পুরস্কার দিতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে একটি বাছাই কমিটি থাকবে। মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অন্যান্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের কর্মী ও দফতর বা সংস্থা প্রধানকে পুরস্কার দিতে মন্ত্রণালয় বা বিভাগের সচিবের নেতৃত্বে একটি বাছাই কমিটি থাকবে।

এ ছাড়া পুরস্কার দিতে প্রার্থী বাছাই করতে দফতর বা সংস্থা প্রধানের নেতৃত্বে একটি, বিভাগীয় ও আঞ্চলিক প্রধানের নেতৃত্বে একটি এবং জেলা কার্যালয়ের প্রধানের নেতৃত্বে একটি কমিটি থাকবে বলে নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জানা গেছে, ‘সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয় : জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল’ শিরোনামে ২০১২ সালে জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল মন্ত্রিসভা-বৈঠকে অনুমোদিত হয়। কৌশলে শুদ্ধাচার চর্চার জন্য নির্বাহী বিভাগের কর্মচারীদের প্রণোদনা ও পারিতোষিক ব্যবস্থা প্রবর্তনের সুপারিশ করা হয়। শুদ্ধাচার চর্চায় উৎসাহ দিতে ইতোমধ্যে সব মন্ত্রণালয়/বিভাগ/সংস্থা ২০১৫-২০১৬ এবং ২০১৬-২০১৭ অর্থ-বছরের কর্ম-পরিকল্পনায় শুদ্ধাচার পুরস্কার দেওয়ার কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করেছে।

শুদ্ধাচার কৌশল বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতীয় শুদ্ধাচার উপদেষ্টা পরিষদ এবং অর্থমন্ত্রীর নেতৃত্বে উপদেষ্টা পরিষদের নির্বাহী কমিটি গঠিত হয়েছে। জাতীয় শুদ্ধাচার উপদেষ্টা পরিষদের প্রথম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শুদ্ধাচার কৌশল বাস্তবায়নে সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অন্যান্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে নৈতিকতা কমিটি গঠিত হয়েছে এবং নৈতিকতা কমিটির সদস্য-সচিব শুদ্ধাচার ফোকাল পয়েন্ট হিসাবে কাজ করছেন। জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল বাস্তবায়নে সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অন্যান্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান শুদ্ধাচার কর্ম-পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করেছে। ওই কর্ম-পরিকল্পনায় অন্যান্য কর্মকাণ্ডের সঙ্গে শুদ্ধাচার পুরস্কার প্রদানের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে বলেও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জানা গেছে।

(দ্য রিপোর্ট/আরএমএম/জেডটি/এনআই/এপ্রিল ০৯, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর