thereport24.com
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল 24, ১২ বৈশাখ ১৪৩১,  ১৬ শাওয়াল 1445

নববর্ষ ভাতা: বৈষম্যে বেসরকারি চাকুরেরা

২০১৭ এপ্রিল ১১ ২৩:৫২:৫৬
নববর্ষ ভাতা: বৈষম্যে বেসরকারি চাকুরেরা

পহেলা বৈশাখ, বাঙালির সার্বজনীন উৎসব। প্রতিটি বাঙালির কাছে গুরুত্বপূর্ণ এই উৎসব। গত বছর (২০১৬) থেকে সরকারি চাকরিজীবীরা মূল বেতনের ২০ শতাংশ হারে বৈশাখী ভাতা পাচ্ছেন। বাঙালির সার্বজনীন বৈশাখী উৎসব পালনে বেসরকারি চাকরিজীবিদেরও এ ভাতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞসহ সংশ্লিষ্টরা। তা না হলে সমাজে এ্ক ধরনের বৈষম্য তৈরি হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত।

২০১৫ সালের ১৫ ডিসেম্বর নতুন বেতন কাঠামোর গেজেট জারি করে সরকার। সেখানে সরকারি চাকরিজীবীদের মূল বেতনের ২০ শতাংশ হারে বৈশাখী ভাতা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

সরকারের এ গেজেট অনুসারে ১৪২৩ বঙ্গাব্দ বা ২০১৬ ইংরেজী সাল থেকে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বৈশাখী ভাতা পেয়ে আসছেন। এ বছরও অধিকাংশ ক্ষেত্রে মার্চ মাসের বেতনের সাথেই সরকারি চাকরিজীবীরা বৈশাখী ভাতা পেয়েছেন। আবার মাসিক বেতনের পর আলাদাভাবে অনেকে এই ভাতা পেয়েছেন। হাতে গোনা কিছু ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান বৈশাখী ভাতা চালু করলেও দেশের প্রাইভেট সেক্টরের চাকরিজীবীরা এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ফলে প্রাইভেট সেক্টরে চাকরিজীবীদের বৈশাখী ভাতা প্রাপ্তির দাবি জোরেশোরেই উচ্চারিত হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বৈশাখী ভাতা দেওয়া হলে প্রতিষ্ঠানের প্রতি তাদের দায়িত্ব এবং আন্তরিকতা অনেক বেড়ে যাবে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়ার পাশাপাশি সার্বজনীন উৎসব বৈশাখে পরিবার-পরিজন নিয়ে প্রাণবন্ত থাকবেন তারা।

দ্বিতীয় বছরের মতো দেশের সব সরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার শিক্ষক-কর্মচারীরা বৈশাখী ভাতা পেয়েছেন এবার। সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা থানার বাসুদেবকোল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আব্দুল লতিফ বলেছেন, ‘দ্বিতীয়বারের মতো বৈশাখী ভাতা পেলাম। এটা সরকারের মহত উদ্যোগ।’

কিন্তু, এবারও বৈশাখী ভাতা থেকে বঞ্চিত থেকেছেন দেশের এমপিওভুক্ত বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদরাসায় শিক্ষক-কর্মচারীরা। পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার বিবি আয়েশা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. আব্দুল গাফফার বলেছেন, ‘সরকার আমাদের বেতন ভাতা বাড়িয়েছে, এজন্য আমরা খুশি। গত বছর থেকে সরকার সরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীরা বৈশাখী ভাতা পাচ্ছেন। সরকারি স্কুল-কলেজের মতো আমরা যারা বেসরকারি স্কুলে চাকরি করি তাদেরও বাংলা নববর্ষ ভাতা দেওয়া উচিত বলে মনে করি।’

এ ব্যাপারে শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ সেলিম ভুইয়া দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, ‘সরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার শিক্ষক-কর্মচারীরা বৈশাখী ভাতা পাচ্ছেন। তাহলে এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা পাবেন না কেন? তারাও যেন পায় এ ব্যাপারে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’

এদিকে বৈশাখী ভাতার দাবিতে মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বেসরকারি স্কুল, কলেজ, কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা দুই ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন।

১১টি সংগঠনের ঐক্যবদ্ধ মোর্চা জাতীয় শিক্ষক কর্মচারী ফ্রন্টের প্রধান সমন্বয়কারী অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ বলেছেন, ‘শিক্ষকদের আর্থিকভাবে বঞ্চিত রেখে এসডিজি-৪ বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।’

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তিনি দ্য রিপোর্টকে বলেছেন, ‘আমরা সরকারের কাছে বৈশাখী ভাতার দাবি জানিয়েছি। আশা করি, আগামী বছর থেকে এটি কার্যকর হবে।’

আওয়াজ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ও গার্মেন্টস নেত্রী নাজমা আক্তার দ্য রিপোর্টকে বলেছেন, ‘গার্মেন্টস কর্মীরা ১১দিন উৎসব ছুটি পান। ভাতা তো দূরের কথা, পহেলা বৈশাখে অনেক কারখানাতেই শ্রমিকদের কাজ করতে হয়। যারা প্রাইভেট সেক্টরে কাজ করে বিশেষ করে শ্রমজীবী মানুষ, তাদের উৎপাদন, শ্রম ও ঘামের পরিশ্রমের টাকা দিয়েই তো সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা হয়। তাহলে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বৈশাখী ভাতা পেলে শ্রমিকরা পাবেন না কেন? তাদের অবশ্যই বৈশাখী ভাতা পাওয়া উচিত।’ এ ব্যাপারে তিনি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

এ ব্যাপারে বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান দ্য রিপোর্টকে বলেছেন, ‘গার্মেন্টস সেক্টরে অনেক আগেই শ্রমিকদের বেতন বাড়িয়েছি। আমরা বেতন বাড়িয়েছি বলেই সরকার বেতন বাড়িয়েছে।’

শ্রমিকদের বৈশাখী ভাতা দেওয়ার ব্যাপারে মনোভাব জানতে চাইলে তিনি বলেছেন, ‘বৈশাখী ভাতা কি? সেটা তো আমি জানি না।’

সরকারি চাকরিজীবীরা মূল বেতনের ২০ শতাংশ বৈশাখী ভাতা পাচ্ছেন জানালে তিনি বলেছেন, ‘সরকার ব্যাংক থেকে টাকা নিতে পারে। আমাদের ব্যবসা করে বেতন-ভাতা দিতে হয়। সরকারের সাথে প্রাইভেট সেক্টরের কোনো তুলনা হয় না।’

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী দ্য রিপোর্টকে বলেছেন, ‘গত বছর প্রথমবার কয়েকটি গণমাধ্যম সাংবাদিকদের বৈশাখী ভাতা দিয়েছিল। আমার সঙ্গে কথা হয়েছে; এবার দৈনিক সংবাদ, আমাদের সময়, আমাদের অর্থনীতি, ইত্তেফাক, বণিকবার্তা, অনলাইন মিডিয়া জাগো নিউজ, যমুনা নিউজ, এবিসি নিউজ, একুশে টিভিসহ প্রায় ১৫টি মিডিয়া বৈশাখী ভাতা দিচ্ছে।’

তিনি আরও বলেছেন, ‘এর বাইরে দৈনিক সমকাল সম্পাদক গোলাম সরওয়ার, বিডিনিউজের তৌফিক ইমরোজ খালিদী, বৈশাখী টিভির অশোক চৌধুরী, দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোরের সম্পাদক ও চেয়ারম্যান (ইউনাইটেড মিডিয়া)সহ বেশ কয়েকটি মিডিয়া কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারাও বৈশাখী ভাতা দেওয়ার বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবেই নিয়েছেন।’ অনেকে বাকি সময়ের মধ্যে বৈশাখী ভাতা দিবেন বলে জানিয়েছেন সোহেল হায়দার চৌধুরী।

ডিইউজে সাধারণ সম্পাদক আরও বলেছেন, ‘যেসব প্রিন্ট, ইলেক্ট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়া এবার বৈশাখী ভাতা দিচ্ছেন তাদের একটা তালিকা তথ্য মন্ত্রণালয় এবং প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমরা ইউনিয়নের পক্ষ থেকে পৌঁছে দেবো।’

তিনি বলেছেন, ‘এবার যারা (মিডিয়া) দিচ্ছেন না আগামীতে বাধ্যতামূলকভাবেই সবাইকে দিতে হবে। কারণ অচিরেই ৯ম ওয়েজবোর্ড ঘোষিত হবে। এ ওয়েজবোর্ডের কাঠামোতেই বৈশাখী ভাতার বিষয়টি ঢুকবে। ফলে তা আইন হয়ে যাবে এবং মিডিয়া কর্তৃপক্ষ তা মানতে বাধ্য হবেন।’

এ ব্যাপারে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন আহমেদ দ্য রিপোর্টকে বলেছেন, ‘বৈশাখী ভাতা দেওয়ার বিষয়ে সরকারের এ উদ্যোগটি অত্যন্ত ভালো। সরকারি কর্মজীবীদের পাশাপাশি বেসরকারি কর্মজীবীদেরও এ বোনাসের আওতায় আনা প্রয়োজন।’ নইলে সমাজে এক ধরনের বৈষম্য তৈরি হবে বলে মনে করেন তিনি।

(দ্য রিপোর্ট/কেএ/জেডটি/এনআই/এপ্রিল ১১, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর