thereport24.com
ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল 24, ৬ বৈশাখ ১৪৩১,  ১১ শাওয়াল 1445

বরিশালে ইলিশের আকাল, বাজার চড়া

২০১৭ এপ্রিল ১২ ২৩:২৯:৩৩
বরিশালে ইলিশের আকাল, বাজার চড়া

বিধান সরকার, বরিশাল : সামনে পয়লা বৈশাখ, তবে ইলিশের দেখা নেই বরিশালের মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে। চাহিদার দশ ভাগের এক ভাগ ইলিশ আসায় দেড় কেজি ইলিশের মণ ছুঁয়েছে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকায়। একদিকে ইলিশের অফ সিজন (অসময়) এর সাথে যোগ হয়েছে দীর্ঘ আট মাসের জাটকা রক্ষা অভিযান। এ ছাড়াও দু’মাসের জন্য চলমান আছে অভয়াশ্রমে ইলিশ রক্ষা কার্যক্রম। এই তিনের কারণে এ বছর ইলিশের সংকট। বাজারে বর্তমানে হিমায়িত ও মিয়ানমারের ইলিশ রয়েছে। তবে বাজার চড়া। যদিও যত দামই হোক, বরিশালবাসীর ইলিশ চাই।

চাহিদার কারণে ইলিশের বাজার দিনের ব্যবধানে বেড়ে চলছে বলে দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন মৎস্য আড়ৎদার এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অজিত কুমার দাস।

মৎস্য বিভাগ থেকে পাওয়া তথ্য মতে, আরও দুই মাসেরও বেশি সময় পরে ইলিশের মৌসুম শুরু হবে। সে হিসেবে জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ইলিশ আহরণ করতে পারবেন জেলেরা। আশ্বিনের ভরা পূর্ণিমায় ইলিশের প্রজনন মৌসুমের সময়কাল ২২ দিন চলমান থাকায় সে সময়ও জেলেরা জাল ফেরতে পারেন না নদী কিংবা সাগরে। এরপর পহেলা নভেম্বর থেকে ৩০ জুন টানা ৮ মাস চলমান থাকে খোকা ইলিশ বা জাটকা রক্ষা অভিযান। একই সাথে মার্চ ও এপ্রিল এই ২ মাস বরিশালের তেঁতুলিয়া নদীর ১শ’ কিলোমিটার, মেঘনার ১৯০ কিমি, শরীয়তপুর এলাকার পদ্মায় ২০ কিমি। এ ছাড়া কলাপাড়া উপজেলার আন্ধারমানিক নদীতে নভেম্বর থেকে জানুয়ারি এই ৩ মাস মাছের অভয়াশ্রম ঘোষিত হওয়ায় জাল ফেলা বন্ধ থাকে।

বরিশাল সদর উপজেলার বুখাইনগর গ্রামের জেলে মো. হানিফ বলেছেন, ‘বরিশালে ইলিশের প্রধান ঘাঁটি মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদী। মাছের অভয়ারণ্য ঘোষণা করায় সেখানে জাল ফেলা যাচ্ছে না। এখন ভাসানচর, বামনেরচর, নলচর, ছিপুলি, কালাবদ, বিষখালী- এসব ভিতর গাঙ্গের সাথে ভোলা এলাকার কিছু নদীতে জাল ফেলা যাচ্ছে।’

জেলেদের কাছ থেকে ইলিশ কিনে বরিশালের পাইকারি মোকামে নিয়ে আসা বেপারী হাসান মাঝি ও সোলেমান বেপারী বলেছেন, ‘গেল বছরও এমন সময় ৫ থেকে ৬ মণ মাছ নিয়ে আসতাম। এবারে তা এক থেকে দেড় মণ বা সর্বোচ্চ দুই মণের বেশি হচ্ছে না। পহেলা বৈশাখ সামনে রেখে ইলিশের দর ভালো পাওয়া যায় এই আশায় জেলে থেকে আমরা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা পর্যন্ত অপেক্ষা করি। তবে নিষেধাজ্ঞার কারণে নদীতে জাল ফেলতে না পারায় ইলিশ না পেয়ে জেলে ও আমারাই সমস্যায় রয়েছি।’

বরিশাল নগরীর পোর্ট রোডের পাইকারি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সবমিলিয়ে ৭০ মণ ইলিশ এসেছে। বৈশাখের আর ক’দিন বাকি বলে প্রতিদিন ইলিশের চাহিদা রয়েছে ৫ শতাধিক মণের ওপরে। রাজধানীর পাশাপাশি রাজশাহী, বগুড়া, রংপুর, খুলনা, যশোর, সিরাজগঞ্জের পাইকাররা এখন বরিশালের মোকামে অবস্থান করছেন।

টাকা কোনো বিষয় নয়, বড় সাইজের ইলিশ চাই-একথা বলেন আবুল কালাম আজাদ নামের আড়তদার।

তিনি বলেছেন, ‘৫০০ গ্রাম মাছের মণ উঠেছে ৩৫ হাজার টাকায়। তেমনি রফতানিযোগ্য (৭০০-৯০০ গ্রাম) ইলিশের মণ বিকিয়েছে ৫০ হাজার টাকা। এক কেজি ওজনের মাছের মণ ১ লাখ ৫ হাজার আর দেড় কেজির মণ চলছে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা দরে।।’

চাহিদা বেশ কিন্তু ইলিশের দেখা মিলছে না বলেই বাজার চড়া এমন মন্তব্য এই ব্যবসায়ীর।

এ সময় মো. নাসিমউদ্দিন নামে আরেক আড়তদার বলেছেন, ‘তিনি ১৮শ’ টাকা কেজি দরে ঢাকায় মাছ পাঠিয়েছিলেন, বিক্রি হয়েছে ১৬শ টাকা দরে। কোল্ডস্টোরে মজুদ থাকা এবং মিয়ানমার থেকে আসা ইলিশের কারণে তাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে।’

এই আড়তদার আরও বলেছেন, ‘কোল্ডস্টোরের ও মিয়ানমারের ইলিশের দাম বরিশোলের স্থানীয় নদীর ইলিশের চেয়ে অর্ধেক দামেও বিক্রি হয়। তাই অনেক ক্রেতা দর কম পেয়ে আর ওষুধ দেওয়া ওসব মাছ চিনতে না পেরে কিনে নিচ্ছেন। তবে খাবার পর বুঝতে পারবেন এটি বরিশালের ইলিশ নয়।’

ইলিশের বাজার দর নিয়ে মৎস্য আড়তদার সমিতির সভাপতি অজিত কুমার দাস বলেছেন, ‘এখন মাছ রফতানি না হওয়াতে ব্যবসায়ীরা মাছ কিনে হিমায়িত করে রাখেন পহেলা বৈশাখ বা তার পর বিক্রি করার জন্য। স্থানীয় নদীর মাঝ না থাকার সুযোগে তারা বেশ লাভবান হচ্ছেন। আবার মিয়ানমার থেকেও ইলিশ আমদানি করে দেশের বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করছেন। বরিশালের বাজারেও মিয়ানমারের ইলিশ এসেছে। তবে এর স্বাদ বরিশালের তাজা ইলিশের মতো নয়। এজন্য পাইকাররা হন্যে হয়ে খুঁজছে বরিশালের ইলিশ।’

তিনি আরও বলেছেন, ‘বরিশালের ইলিশের দর যা বেড়েছে সামনে এর চেয়ে খুব একটা বেশি হলে মণে ২ থেকে ৪ হাজার টাকা বাড়তে পারে।’

এই বাজারেই কথা হয় পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে ইলিশ কিনতে আসা মানবেন্দ্র সাহা, কানিজ ফাতিমা ও রেজাউল ইসলামসহ আরও কয়েকজনের সাথে।

তারা বলেছেন, ‘পুরো বছর অপেক্ষায় থাকি পয়লা বৈশাখ পান্তা ইলিশ খাবো। কিন্তু এই সুযোগে পক্ষ কালের ব্যবধানে মাছের দর কেজিতে দ্বিগুণ ছুঁয়েছে। এমন হওয়াতে নিম্নবিত্তদের জন্য ইলিশ কেনা দায় আর মধ্যবিত্তদের নাভিশ্বাস ওঠে বৈকি।’

মৎস্য কর্মকর্তা বিমল চন্দ্র দাস বলেছেন, ‘তাদের নিষেধাজ্ঞা চলমান থাকায় এর সুফল জেলে ও ব্যবসায়ীরাই ভোগ করবেন। কঠোর অভিযান চলায় আর নিষিদ্ধ জাল পুড়িয়ে ফেলায় নদীতে জাটকা ইলিশের দেখা মিলছে খুব করে। তাই পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে ক্রেতাদের পান্তা ইলিশের আয়োজনে একটু বেগ পেতে হলেও মৌসুমে কম দামেই ইলিশ কিনতে পারবেন তারা।’

(দ্য রিপোর্ট/এআরই/জেডটি/এনআই/এপ্রিল ১২, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর