thereport24.com
ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল 24, ১০ বৈশাখ ১৪৩১,  ১৪ শাওয়াল 1445

রমনা বটমূলে হামলার ১৬ বছর

দীর্ঘসূত্রিতায় দোষীদের শাস্তি নিয়ে সংশয়

২০১৭ এপ্রিল ১৩ ২৩:২৬:৩৬
দীর্ঘসূত্রিতায় দোষীদের শাস্তি নিয়ে সংশয়

পহেলা বৈশাখের আগেই রমনার বটমূলে বোমা হামলা মামলার প্রধান হোতা মুফতি আবদুল হান্নানের ফাঁসি জাতিকে স্বস্তি দিয়েছে। তবে এই মামলায় তার ফাঁসি হয়নি। ফাঁসি হয়েছে সিলেটে ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর উপর হামলার ঘটনায়। রমনার বটমূলে বোমা হামলা মামলার অন্য আসামিদের শাস্তি এখনো নিশ্চিত করা যায়নি।

তবে এই ঘটনায় হওয়া দুটি মামলার মধ্যে হত্যা মামলায় ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানি চলছে হাইকোর্টে। আর বিস্ফোরক মামলায় নিম্ন আদালতেই বিচার কাজ এখনো শেষ হয়নি। ঘটনার পর দেড় দশকের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও বিচারে এই বিলম্বে হতাশ খোদ রাষ্ট্রপক্ষ। হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নানের ফাঁসিতে স্বস্তি প্রকাশ করলেও বাকিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে, এমন আশাবাদের কথাও জোর দিয়ে বলতে পারছেন না তারা।

২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল রমনা বটমূলে বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলা চালানো হয়েছিল। হামলায় ঘটনাস্থলেই ৯ জনের মৃত্যু হয়। পরে হাসপাতালে একজন মারা যান। এ ঘটনায় নীলক্ষেত পুলিশ ফাঁড়ির সার্জেন্ট অমল চন্দ্র চন্দ ওইদিনই রমনা থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা দায়ের করেন।

২০০৯ সালে ১৪ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এই ঘটনায় দায়ের হওয়া হত্যা মামলায় ২০১৪ সালের ২৩ জুন ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ রায় ঘোষণা করেন। রায়ে ৮ জনকে ফাঁসি ও ৬ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

ফাঁসির সাজাপ্রাপ্তরা হলেন- মুফতি আব্দুল হান্নান, মাওলানা আকবর হোসেন, আরিফ হাসান সুমন, মাওলানা তাজউদ্দিন, হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, মাওলানা আবদুল হাই, মাওলানা আবু বকর ওরফে মাওলানা হাফেজ সেলিম হাওলাদার ও মাওলানা শফিকুর রহমান।

এছাড়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- শাহাদাত উল্লাহ জুয়েল, মাওলানা ইয়াহিয়া, মাওলানা সাব্বির, শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, মাওলানা আব্দুর রউফ ও মাওলানা আবু তাহের। দণ্ডপ্রাপ্ত সবাইকে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। অনাদায়ে তাদের অতিরিক্ত সাজা দেওয়া হয়।

মামলায় মোট ১৪ জন আসামির মধ্যে ৪ জন আসামি পলাতক রয়েছেন। বাকি আসামিরা বিভিন্ন সময়ে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে রয়েছেন। পলাতক আসামিরা হলেন-মাওলানা তাজউদ্দিন, হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, মুফতি শফিকুর রহমান ও মুফতি আবদুল হাই।

চলতি বছর ৮ জানুয়ারি বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও সহিদুল করিমের হাইকোর্ট বেঞ্চে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) ও দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের আপিল শুনানি শুরু হয়; যা এখন শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আগামী ১৪ মে এই মামলায় পরবর্তী শুনানি হবে। সেদিনই হাইকোর্টের শুনানি শেষ হবে বলে জানিয়েছেন এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের অন্যতম আইনজীবী সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ইউসুফ মাহমুদ মোরশেদ।

হাইকোর্টে মামলার সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে বৃহস্পতিবার দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়েছে। এখন অ্যাটর্নি জেনারেল সমাপনী বক্তব্য দিচ্ছেন। আদালত এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য ১৪ মে দিন নির্ধারণ করেছেন। আশা করছি সেদিনই শুনানি শেষে আদালত মামলাটির রায়ের দিন নির্ধারণ করবেন বা রায়ের জন্য (সিএভি) অপেক্ষমাণ রাখবেন।

তবে এই মামলায় আসামিদের দণ্ড বহাল থাকা নিয়ে দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে পারছেন না রাষ্ট্রপক্ষের এই আইনজীবী। তিনি বলেন, ২০০১ সালের ঘটনা। ২০০৬ সাল পর্যন্ত যারা ক্ষমতায় ছিল তারা তদন্ত করেনি। হামলায় যারা মারা যান তাদের পরিবারের সদস্যদের খুব বেশি পরীক্ষা করেননি তদন্ত কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, ছয় বছরে মামলার অনেক আলামতই নষ্ট হয়ে গেছে। তাই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন খুব দুর্বল। এ অবস্থায় আসামিদের শাস্তি বহাল থাকা নিয়ে কিছুটা সংশয় থাকছে।’

রাষ্ট্রপক্ষ এখন ভরসা করছে আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ও সার্কামস্টেন্সাল (অবস্থাগত) সাক্ষ্যের উপর। সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ইউসুফ মাহমুদ মোরশেদ এ বিষয়ে বলেন, মুফতি হান্নানসহ তিনজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তবে সেখানেও গরমিল রয়েছে। একেকজন একেকরকম স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। তাই এই জবানবন্দিকে অবস্থাগত সাক্ষ্যের সঙ্গে মেলানো অনেক কঠিন হয়ে গেছে। তবে মুফতি হান্নান সব অভিযোগ স্বীকার করেছেন। তার স্বীকারোক্তি আদালত বিবেচনায় নিয়ে আনোয়ার চৌধুরীর উপর হামলার ঘটনায় ফাঁসি বহাল রেখেছেন। সেই জায়গায় আমরা আশাবাদী যে, এই মামলায়ও আদালত বিষয়টি বিবেচনা করে দণ্ড বহাল রাখবেন।

একই ঘটনায় বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে হওয়া মামলায় এখনও বিচার চলছে ঢাকার দ্রুত বিচার আদালতে। সেই মামলার সবশেষ অবস্থা জানতে চাইলে রাষ্ট্রপক্ষের কৌশলী দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ পিপি আবু আব্দুল্লাহ ভূঁইয়া আব্দুল্লাহ বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেছেন, এই মামলায় ৮৪ জন সাক্ষীর মধ্যে ২৪ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। বাকি সাক্ষীরা আদালতে আসতে অনীহা প্রকাশ করেছেন। তাদের আনার চেষ্টা করেও সম্ভব হয় নাই। বৃহস্পতিবার এই বিষয়টি নজরে আনা হলে আদালত সাক্ষীদের হাজির করতে পরোয়ানা জারি করেছেন।

এদিকে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমও এই মামলার বিচার নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, মুখ্য আসামি মুফতি হান্নানের ফাঁসির দণ্ড কার্যকর হয়ে গেছে। এই মামলাটি এতো প্রলম্বিত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এটার বিচারে কি হবে এটা সম্বন্ধে আমি খুবই সন্দিহান। বলতে পারছি না যে সত্যি যারা মারা গেছে তারা বিচার পাবে কি না।

এই ক্ষেত্রে কারো নাম উল্লেখ না করে বিলম্বিত তদন্তকে দায়ী করে তিনি বলেন, ফৌজদারি মামলার গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ঘটনার সাথে সাথেই তদন্ত করা। ঘটনার পর দ্রুততম সময়ে বিচার নিষ্পত্তি করা। কিন্তু যখনই একটি মামলা দীর্ঘদিন যাবৎ তদন্ত বা বিচার না হয় সেই বিচারটাই তখন অকার্যকর হয়ে যায়।

তবে এই হামলার উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয়েছে উল্লেখ করে মাহবুবে আলম বলেন, যারা হামলা করেছে তারা মনে করেছিল এর মাধ্যমে বাঙালিকে আবহমান সংস্কৃতি চর্চা থেকে নিবৃত্ত করা যাবে। কিন্তু ঘটনার পরের বছরই দেখা গেছে পয়লা বৈশাখে রমনার বটমূলে মানুষের সংখ্যা আরও বেড়ে গেছে।

(দ্য রিপোর্ট/কেআই/এপি/এনআই/এপ্রিল ১৩, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর